BN/Prabhupada 0053 - প্রথম জিনিস যা আমাদের শুনতে হবে



Lecture on SB 2.1.5 -- Delhi, November 8, 1973

তাই আমরাও প্রকৃতি। আমরা ঈশ্বরের শক্তি। এবং যেহেতু আমরা জড় সম্পদগুলি ব্যবহার করার চেষ্টা করছি, তাই জড় উপাদানগুলির মূল্য হয়েছে। অন্যথায়, এর কোন মূল্যই নেই, শূন্য। কিন্তু আমাদের কাজ হচ্ছে ... যেটা এখানে বলা হয়েছে, যেহেতু আমরা এখন এই জড় বিষয়ের সঙ্গে জড়িয়ে পরেছি, জড় বস্তুতে আমাদের কোন কাজ নেই। আমাদের একমাত্র কর্তব্য হচ্ছে কিভাবে এই জড় বিষয় থেকে বের হওয়া যায়। সেটিই আমাদের প্রকৃত কাজ। যদি আপনারা সেই কাজটি করতে চান, তাহলে এখানে তার উপায় দেয়া হয়েছে। সেটি কি? শ্রোতব্য কীর্তিতব্যশ্চ। যদি আপনি না শুনবেন, তাহলে আপনার স্থিতি আপনি কিভাবে বুঝতে পারবেন? যখন আপনি ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে বুঝতে পারবেন এবং বুঝতে পারবেন যে আপনি ভগবানের অংশ , অথবা শ্রীকৃষ্ণের অংশ, তবেই আপনি আপনার স্থিতিটি বুঝতে পারবেন: "ওহ, আমরা ভগবানের অবিচ্ছেদ্য অংশ।" শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছে পরমপুরুষ, ষড়-ঐশ্বর্য-পূর্ণং, সমস্ত ঐশ্বর্যে পরিপূর্ণ। ঠিক যেমন রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো একটি পাগলের মতো, যখন সে তার ভালো করে বিবেচনা করে এটি বুঝতে পারে যে, "আমার বাবা কতই না ধনী, কতই না শক্তিশালী," আর কেন তবে আমি পাগলের মতো রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছি? আমার কোন খাবার নেই, আশ্রয় নেই। আমি এই দরজা থেকে অন্য দরজায় যাচ্ছি আর ভিক্ষা করছি, তখন সে তার প্রকৃত চেতনায় ফিরে আসে। একে বলা হয় 'ব্রহ্মভূত' পর্যায় (শ্রীমদ্ভাগবত ৪.৩০.২০) "ওহ, আমি, আমি এই জড়বস্তুটি নই। আমি চিন্ময় আত্মা, ভগবানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ওহ।" সেটি হচ্ছে প্রকৃত চেতনা। আমরা এই চেতনাটিকেই জাগানোর চেষ্টা করছি। এটিই হচ্ছে মানুষের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ কল্যাণমূলক কর্ম, তার হারানো চেতনাকে জাগিয়ে তোলা। সে মূর্খের মতো ভাবছে যে "আমি জড় বস্তু থেকে উৎপন্ন", আর আমাকে এই জড় জগতের সঙ্গেই আমার সবকিছু সামঞ্জস্য করে চলতে হবে।" এটিই হচ্ছে মূর্খতা । প্রকৃত বুদ্ধিমত্তা হচ্ছে, 'ব্রহ্ম-ভূত', অহং ব্রহ্মাস্মি। অহং ব্রহ্মাস্মি " আমি ভগবানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ভগবান হলেন পরম ব্রহ্ম। আমি হচ্ছি ভগবানের অংশ..."যেমন স্বর্ণের একটি অংশ, স্বর্ণ খনি, হতে পারে এটি একটি ছোট্ট কানের দুল, কিন্তু এটাও সোনার। একইভাবে সমুদ্রের একটি ছোট্ট জলের কণাও গুণগতভাবে একই, লবণাক্ত। একইভাবে, আমরাও ভগবানের অবিচ্ছেদ্য অংশ হওয়ায় আমরাও একই গুণ পেয়েছি। গুণগতভাবে আমরা একই। আমরা কেন ভালোবাসার প্রতি এতো লালায়িত? কেন না শ্রীকৃষ্ণের মধ্যেও প্রেম রয়েছে। আমরা শ্রীশ্রীরাধাকৃষ্ণের পূজা করছি। মূলত প্রেম রয়েছে। সুতরাং আমরাও ভগবানের অবিচ্ছেদ্য অংশ হওয়ায় আমরাও ভালোবাসতে চেষ্টা করছি। একজন পুরুষ অন্য একটি নারীকে ভালবাসার চেষ্টা করছে, নারী একটি পুরুষকে ভালবাসার চেষ্টা করছে। এটি স্বাভাবিক। সেটি কৃত্রিম নয়। কিন্তু জড় আবরণের মধ্যে সেটি হচ্ছে বিকৃত অবস্থা। সেটিই হচ্ছে ভুল। যখন আমরা এই জড় আবরণ থেকে মুক্ত হই, তখন কেবল আমরা গুণগতভাবে "আনন্দময়োভ্যাসাৎ"। (বেদান্ত সূত্র ১.১.১২) আনন্দপূর্ণ... শ্রীকৃষ্ণ সর্বদা নৃত্য করছেন... আপনি কখনও শ্রীকৃষ্ণকে এমনটা পাবেন না যে... আপনারা শ্রীকৃষ্ণের ছবি দেখেছেন। তিনি কালীয় নাগের সাথে যুদ্ধ করছেন। তিনি নৃত্য করছেন। তিনি কোন সাপের ভয় পান না। তিনি নৃত্য করছেন। তিনি রাসলীলাতে যেমন গোপীদের সঙ্গে নৃত্য করেছিলেন, ঠিক একইভাবে, তিনি সাপের সাথেও নৃত্য করছেন। কারণ তিনি হলেন 'আনন্দময়োভ্যাসাৎ'। তিনি আনন্দময়, সর্বদাই আনন্দে রয়েছেন। আপনারা শ্রীকৃষ্ণকে দেখবেন... শ্রীকৃষ্ণ...যেমন কুরুক্ষেত্রে যখন যুদ্ধ চলছে, শ্রীকৃষ্ণ তখনও আনন্দময়। অর্জুন বিমর্ষ ছিলেন, কারণ তিনি জীব, কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ বিমর্ষ নন। তিনি আনন্দময়। সেটিই হচ্ছে ভগবানের স্বভাব। 'আনন্দময়োভ্যাসাৎ' এই ব্রহ্মসূত্রে উল্লেখ আছে যে "ভগবান সদা আনন্দময়, সদা সর্বদা আনন্দময়, সর্বদাই আনন্দিত।" তাই আপনিও আনন্দময় হতে পারবেন যখন আপনি ভগবদ্ধামে ফিরে যাবেন। সেটি হচ্ছে আমাদের সমস্যা। অতএব আমরা কিভাবে সেখানে যেতে পারি? প্রথমে আমাদের শুনতে হবে। শ্রোতব্য। ভগবান কি, শুধু তা শুনতে চেষ্টা করুন, তাঁর রাজ্য কি রকম, কিভাবে তিনি লীলাবিলাস করেন, তিনি কিভাবে সদা আনন্দময় থাকেন। এই জিনিসগুলো শুনতে হবে। শ্রবণম্। তারপর যখনই আপনার দৃঢ় বিশ্বাস হবে, "ওহ, ভগবান এত চমৎকার," তখন আপনি সারা বিশ্বে এই কথাটি বাস্তবে করে দেখাতে বা প্রচার করতে আগ্রহী হবেন। তার নাম হচ্ছে কীর্তন। সেটিকে বলা হয় কীর্তন।