BN/Prabhupada 0054 - সবাই শুধু কৃষ্ণকে সমস্যা প্রদান করছে



His Divine Grace Srila Bhaktisiddhanta Sarasvati Gosvami Prabhupada's Appearance Day, SB 6.3.24 -- Gorakhpur, February 15, 1971

মায়াবাদীরা প্রমাণ করতে চায় যে পরম সত্য হচ্ছেন নিরাকার বা নৈর্ব্যক্তিক। সুতরাং শ্রীকৃষ্ণও তোমাকে সেভাবে বুদ্ধি দেবেন, "হ্যাঁ তুমি এটিই মনে কর। এই যুক্তি দাও, ঐ যুক্তি দাও।" একইভাবে শ্রীকৃষ্ণও বুদ্ধি দেন। ভগবান কিভাবে কাজ করেন সে সম্পর্কে বাংলায় একটি প্রবাদ আছে একদিন এক লোক ভগবানের কাছে প্রার্থনা করছে "হে ভগবান, আমার বাড়িতে রাতে যেন কোন চুরি, ডাকাতি না হয়। দয়া করে আমাকে রক্ষা করুন।" এইভাবে একজন মানুষ প্রার্থনা করছেন। আরেকজন লোক, চোর, সে প্রার্থনা করছে, "হে ভগবান আমি আজ রাতে ঐ বাড়িতে ডাকাতি করব। দয়া করে আমাকে কিছু পেতে সাহায্য করুন।" সুতরাং এখন শ্রীকৃষ্ণের অবস্থাটি কি? (হাসি) শ্রীকৃষ্ণ সকলের হৃদয়েই রয়েছেন। তাঁকে বহু রকমের প্রার্থনা পূরণ করতে হয়। ডাকাত, চোর বা গৃহস্থ ... অনেক ধরণের প্রার্থনা। কিন্তু কৃষ্ণ সেসব ব্যবস্থা করেন, তা সত্ত্বেও... সেটিই শ্রীকৃষ্ণের বুদ্ধিমত্তা যে তিনি কিভাবে সেসব কিছুই মানিয়ে নেন। তিনি সকলকেই স্বাধীনতা দেন। সকলকে সুযোগ-সুবিধাও দিয়েছেন, তবুও তাঁকে এসব পোহাতে হয়। তাই শ্রীকৃষ্ণ তাঁর ভক্তদের নির্দেশ দিয়েছেন, "কোন কিছুর পরিকল্পনা কর না। তুমি মূর্খ, বদমাশ, তুমি আমাকে আর বিরক্ত কোর না। (হাসি) কেবল আমার শরণাগত হও। কেবল আমার পরিকল্পনা মোতাবেক চল, তাহলেই তুমি সুখী হবে। তুমি পরিকল্পনা বানাচ্ছ, তুমি অসুখী হচ্ছ। আমিও অসুখী হচ্ছি (হাসি)। আমিও অসুখী। প্রতিদিন আমার কাছে অসংখ্য পরিকল্পনা আসছে আর আমাকে সেগুলো পরিপূর্ণ করতে হচ্ছে।" কিন্তু তিনি কৃপাময়। যে যথা মাম্ প্রপদ্যন্তে তাং (গীতা ৪.১১)

সুতরাং কেবল কৃষ্ণভক্তরা ছাড়া প্রত্যেকেই কৃষ্ণকে শুধু সমস্যাই দিচ্ছে, কেবল সমস্যা, সমস্যা আর সমস্যা। তাই তাদের বলা হয় দুষ্কৃতিন। দুষ্কৃতিন মানে সবচেয়ে দুষ্ট। কোন পরিকল্পনা কোর না। শ্রীকৃষ্ণের পরিকল্পনাকে গ্রহণ করে নাও। নয়তো তা কেবল শ্রীকৃষ্ণকে সমস্যাই দেয়া হবে মাত্র। তাই শুদ্ধ ভক্ত তাঁর নিজের ভরণপোষণের জন্যও কিছু প্রার্থনা করেন না। সেইটিই হচ্ছে শুদ্ধভক্ত। তিনি এমন কি তাঁর সামান্যতম ভরণপোষণের জন্যও শ্রীকৃষ্ণকে সমস্যা করেন না। যদি তাঁর ভরণপোষণের কিছু নাও থাকে, তিনি ভুগবেন, না খেয়ে থাকবেন, তবু তিনি শ্রীকৃষ্ণের কাছে কিছু চাইবেন না। "হে কৃষ্ণ, আমি খুব ক্ষুধার্ত, আমাকে কিছু আহার দিন।" শ্রীকৃষ্ণ অবশ্যই তাঁর ভক্তের জন্য সতর্ক থাকেন। কিন্তু ভক্তের নীতি হচ্ছে ভগবানের কাছে কোন পরিকল্পনা না দেয়া। শ্রীকৃষ্ণ যা চান তাই হোক। আমাদের কেবল শ্রীকৃষ্ণের পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে হবে।

আমাদের পরিকল্পনা কি? আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে, শ্রীকৃষ্ণ বলছেন, সর্বধর্মাণ পরিত্যজ্য মামেকং শরণং ব্রজ (গীতা ১৮.৬৬)। মন্মনা ভব মদ্ভক্ত মদযাজী সুতরাং আমাদের সেই একই পরিকল্পনা । আমরা কেবল শ্রীকৃষ্ণের কথা প্রচার করছি যে "আপনারা কৃষ্ণভাবনাময় হোন।" আমাদের উচিৎ আমাদের নিজেদের উদাহরণ দেখানো যে আমরা কিভাবে কৃষ্ণভাবনাময় হচ্ছি, আমরা কিভাবে শ্রীকৃষ্ণের ভজনা করছি, আমরা কিভাবে দিব্য কৃষ্ণনাম কীর্তন করার জন্য রাস্তায় বেড়িয়ে পড়ছি। আমরা এখন কৃষ্ণপ্রসাদ বিতরণ করছি। যতটা সম্ভব আমাদের কাজ হচ্ছে কিভাবে লোকেদের কৃষ্ণভাবনাময় করা যায়। ব্যাস। সেই উদ্দেশ্যে তুমি পরিকল্পনা করতে পার, কেন না সেইটি শ্রীকৃষ্ণের পরিকল্পনা। কিন্তু সেইটি শ্রীকৃষ্ণের দ্বারা অনুমোদিত হতে হবে। নিজের মনগড়া বানানো পরিকল্পনা নয়। অতএব তোমাকে পরিচালনা করার জন্য শ্রীকৃষ্ণের প্রতিনিধির প্রয়োজন। তিনি হলেন পারমার্থিক গুরুদেব। সুতরাং বিশাল বিশাল পরিকল্পনা রয়েছে। অতএব আমাদেরকে মহাজনদের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে হবে। এখানে যেমন বলা হয়েছে, দ্বাদশৈতে বিজানীমো ধর্মং ভাগবতং ভটাঃ তিনি বলেছেন, "আমরা নির্বাচিত মহাজনেরা যারা শ্রীকৃষ্ণের প্রতিনিধি, আমরা জানি ভাগবত ধর্ম কি, কৃষ্ণধর্ম কি।" দ্বাদশ। দ্বাদশ মানে বার জনের নাম যা ইতিমধ্যেই উল্লেখ করা হয়েছে, স্বয়ম্ভূঃ নারদঃ শম্ভূঃ (ভাগবত ৬.৩.২০) আমি সেটি ব্যাখ্যা করেছি। যমরাজ বলছেন, "কেবল আমরা এই বারো জন, শ্রীকৃষ্ণের প্রতিনিধি, আমরা জানি ভাগবত ধর্ম কি" দ্বাদশৈতে বিজানীমঃ। বিজানীমঃ মানে "আমরা জানি" ধর্মং ভাগবতং ভটাঃ, গুহায়াং বিশুদ্ধং দুর্বোধং যং জ্ঞাত্বামৃতং অশ্নুতে। "আমরা জানি" তাই এটি উপদেশ দেয়া হয়েছে, "মহাজনো যেন গতঃ স পন্থাঃ (চৈতন্য চরিতামৃত ১৭.১৮৬) এইসব মহাজনেরা যেভাবে নির্দেশ করে গিয়েছেন, সেটিই হচ্ছে কৃষ্ণকে জানার বা পারমার্থিক মুক্তিলাভের পন্থা। আমরা ব্রহ্ম সম্প্রদায়কে অনুসরণ করছি। প্রথম স্বয়ম্ভূ। ব্রহ্মা। তারপর নারদ। ব্যাসদেব, তাঁর থেকে এইভাবে মধ্বাচার্য। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু, এইভাবে। তাই আজ যেহেতু আমরা ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর গোস্বামী প্রভুপাদের অনুসরণ করছি, আজ হচ্ছে তাঁর আবির্ভাব তিথি। সুতরাং এই তিথি আমাদের অত্যন্ত সম্মানের সঙ্গে পালন করা উচিৎ এবং ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর গোস্বামী প্রভুপাদের কাছে প্রার্থনা করা উচিৎ যে "আমরা আপনার সেবায় নিযুক্ত, তাই আমাদের শক্তি দিন, বুদ্ধি দিন। আমরা আপনার সেবকের দ্বারা পরিচালিত।" এইভাবে আমাদের প্রার্থনা করতে হবে। আর সন্ধ্যায় আমরা প্রসাদ বিতরণ করব।