BN/Prabhupada 0055 - শ্রৌত পন্থার দ্বারা শ্রীকৃষ্ণকে স্পর্শ করা
Lecture on BG 2.18 -- Hyderabad, November 23, 1972
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর ভবিষ্যদ্বাণী: "পৃথিবীতে আছে যত নগরাদি গ্রাম, সর্বত্র প্রচার হইবে মোর এই নাম" সেইটিই করা হচ্ছে। সারা পৃথিবী জুড়ে এই হরেকৃষ্ণ সংস্কৃতিকে প্রবর্তন করার জন্য বিশাল ক্ষেত্র রয়েছে। সেইটিই বাস্তব। দুর্ভাগ্যবশত, যদিও শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু প্রত্যেক ভারতীয়কে এই বিষয়ে দায়িত্ব দিয়েছেন ... তিনি বাংলায় আবির্ভূত হয়েছিলেন বলে কেবল বাঙালিদের কাছেই নয়। তিনি কখনও বলেন নি যে এই নির্দেশ কেবল বাঙালিদের জন্য। তিনি বলেছেন, "ভারত-ভূমিতে মনুষ্য-জন্ম হইল যার (চৈ.চ.আদি ৯.৪১) "যে কেউই এই ভারতবর্ষের এই পুণ্য ভূমিতে মানুষ হিসেবে জন্ম নিয়েছে, তার নিজের জীবন সার্থক করা উচিত। "জন্ম সার্থক করি।" প্রথমে আপনার জীবন সার্থক না করে আপনি প্রচার করতে পারেন না । যদি আমি নিজেই সার্থক না হই, তবে আমি প্রচার করতে পারবো না। আগে নিজেকে সার্থক হতে হবে। এটি খুব কঠিন নয়। আমরা মহান ঋষিগণ, সন্ত ব্যক্তিবর্গ এবং স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কাছ থেকে নির্দেশনা পেয়েছি।
তাই আমাদের জীবন সার্থক করাটা খুব একটা কঠিন কাজ নয়। আমরা কেবল অবহেলা করে যাচ্ছি। এটি আমাদের দুর্ভাগ্য। মন্দঃ সুমন্দ-মতয়ো মন্দ ভাগ্যঃ (ভাগবত ১.১.১০) কারণ আমরা মন্দ, মন্দ-মতি, আমরা কিছু আজেবাজে যুক্তি আর মতবাদ গ্রহণ করছি, আর আমাদের সময় নষ্ট করছি। আমাদেরকে প্রকৃত পথ কি, তা শাস্ত্র থেকে নেওয়া উচিত। তাহলেই আমরা বুদ্ধিমান হতে পারব। সুমেধসঃ। যজ্ঞৈ সঙ্কীর্তন-প্রায়ৈঃ যজন্তি হি সুমেধসঃ (ভাগবত ১১.৫.৩২) এটিই হচ্ছে সংক্ষিপ্ত পদ্ধতি। বুদ্ধিমান শ্রেণির মানুষেরা তাদের পারমার্থিক জীবনের উন্নতির জন্য এই সঙ্কীর্তন আন্দোলনকেই গ্রহণ করবেন। এটি একটি বাস্তব সত্য, এটি বৈজ্ঞানিক, এটি অনুমোদিত। সুতরাং এর অবহেলা করবেন না। মনেপ্রাণে এই হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্রকে গ্রহণ করুন, যে কোন জায়গায়... নিয়মিত স্মরণে ন কালঃ। এমন কোনও বিধিনিষেধ নেই যে, "আপনাকে এই সময়েই বা ঐ সময়েই কেবল জপ করতে হবে বা এই অবস্থায় কিংবা ঐ অবস্থায়।" না। কারণ এটি বিশেষভাবে বদ্ধ পতিত জীবেদের জন্য, তাতে কোনও কড়াকড়ি নিয়ম বাঁধা নেই। নাম্নামকারি বহুধা নিজ-সর্ব-শক্তিস্তত্রার্পিতা নিয়মিত স্মরণে ন কালঃ। এই নাম, শ্রীকৃষ্ণের পবিত্র নাম শ্রীকৃষ্ণের মতোই শক্তিশালী। শ্রীকৃষ্ণ এবং তাঁর নামের সঙ্গে কোন পার্থক্য নেই। শ্রীকৃষ্ণ পরম নিত্য। তাই শ্রীকৃষ্ণের নাম ও রূপের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই, শ্রীকৃষ্ণের গুণ, শ্রীকৃষ্ণের ধাম, শ্রীকৃষ্ণের লীলা, সবকিছুই শ্রীকৃষ্ণ থেকে। শ্রীকৃষ্ণই সবকিছুই। যদি তুমি শ্রীকৃষ্ণের সম্পর্কে শ্রবণ করছ, তাহলে তোমাকে জানতে হবে যে তুমি শ্রৌত পন্থার দ্বারা শ্রীকৃষ্ণকেই স্পর্শ করছ। যদি তুমি শ্রীকৃষ্ণের বিগ্রহ দর্শন কর, তার অর্থ এই যে তুমি শ্রীকৃষ্ণকে সাক্ষাৎ দেখছ। কারণ শ্রীকৃষ্ণ হলেন পরম। তিনি যে কোনও উপায়ে তোমার সেবা গ্রহণ করতে পারেন, কারণ তিনিই সবকিছু। ঈশাবাস্যমিদং সর্বম্ (ঈশোপনিষদ.১)। তার শক্তি। পরাস্য ব্রহ্মণঃ শক্তিস্তত্তেদম অখিলং জগৎ। সবকিছুই শ্রীকৃষ্ণের শক্তি। তাই আমরা যদি সামান্য জ্ঞানের দ্বারাও শ্রীকৃষ্ণের শক্তির সংস্পর্শে থাকি, তাহলে আমরা সরাসরিভাবে তাঁর শক্তির সঙ্গেই রয়েছি। এটিই হচ্ছে পন্থা। যেহেতু তুমিই নিরবচ্ছিন্নভাবে শ্রীকৃষ্ণের সংস্পর্শে রয়েছ, তাই সেইটিই কৃষ্ণভাবনামৃত। তাহলে তুমিও শুদ্ধ হয়ে যাবে। পবিত্র। ঠিক যেমন তুমি যদি একটি লৌহদণ্ডকে আগুনে ধর, এটি ক্রমান্বয়ে উত্তপ্ত, অধিকতর উত্তপ্ত, আরও উত্তপ্ত এবং শেষে গরম লাল হয়ে যায়। যখন এটি গরম হয়ে লাল হয়ে যায়, তখন সেইটি আগুন হয়ে যায়। এটা আর লৌহদণ্ড থাকে না। একইভাবে, যদি তুমি সর্বদা কৃষ্ণভাবনায় থাকো, তাহলে তুমিও কৃষ্ণায়িত বা কৃষ্ণময় হয়ে যাবে। সেইটিই হচ্ছে পন্থা। তখনই কেবল সমস্ত কিছু সার্থক হয়ে ওঠে। তাহলেই তোমার পারমার্থিক জীবন বিকশিত হবে এবং তোমার জীবন সার্থক হবে।