BN/Prabhupada 0059 - আপনার প্রকৃত করণীয় ভুলে যাবেন না
Lecture on BG 2.14 -- Mexico, February 14, 1975
পরবর্তী প্রশ্নটি হচ্ছে যে, "আমি যদি নিত্যই হয়ে থাকি, তাহলে জীবনে এতো দুর্দশাপূর্ণ অবস্থা কেন রয়েছে? আর আমি কেন মৃত্যুবরণ করতে বাধ্য?" সুতরাং প্রকৃতপক্ষে এটিই হচ্ছে বুদ্ধিমানের মতো প্রশ্ন যে, "আমি যদি নিত্য হই, তবে আমি কেন এই জড় দেহে রয়েছি যেটি জন্ম, মৃত্যু, জরা এবং ব্যাধির অধীন?" অতএব শ্রীকৃষ্ণ উপদেশ দিচ্ছেন যে এইসব দুর্দশাপূর্ণ অবস্থার কারণ হচ্ছে এই জড় দেহটি। যারা কর্মীলোক, অর্থাৎ যারা ইন্দ্রিয়তৃপ্তি সাধনেই ব্যস্ত, তাদের কর্মী বলা হয়। কর্মীরা ভবিষ্যতের ধার ধারে না, ওরা শুধু জীবনের তাৎক্ষণিক সুযোগ-সুবিধা পেতে চায়। ঠিক যেমন একটি শিশু পিতামাতার পরোয়া না করে সারাদিন কেবল খেলতেই থাকে, আর ভবিষ্যতেরও কোন পরোয়া করে না। কোন শিক্ষা অর্জন করে না। কিন্তু আমরা যদি এই মানব জীবনে প্রকৃতপক্ষে বুদ্ধিমান হয়ে থাকি, তবে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করা উচিত যে আমরা কিভাবে এমন একটি দেহ পেতে পারি যেখানে কোন জন্ম, মৃত্যু, জরা, ব্যাধি থাকবে না। সুতরাং এই কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলনের অর্থ হচ্ছে লোকেদের এই সম্বন্ধে শিক্ষা দান করা। এখন কেউ হয়তো প্রশ্ন করতে পারে যে, "যদি আমি সম্পূর্ণরূপে কৃষ্ণভাবনামৃতে নিজেকে উৎসর্গ করি, তাহলে আমার জাগতিক চাহিদাগুলো কিভাবে সরবরাহ হবে?" শ্রীমদ্ভবদ্গীতায় এই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে বলা হয়েছে যে, যে কোনও ব্যক্তি যিনি এই কৃষ্ণভাবনামৃতে নিযুক্ত হবেন, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তার সমস্ত প্রয়োজনীয়তাগুলোর দেখভাল করবেন। শ্রীকৃষ্ণ সকলেরই ভরণপোষণ করছেন। একো যো বহুনাম্ বিদধাতি কামান্ঃ "একজন পরমেশ্বর ভগবান সকলের সমস্ত প্রয়োজনীয়তাগুলো সরবরাহ করছেন।" সুতরাং একজন ভক্ত যিনি ভগবানের কাছে, তাঁর ধামে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করছেন, তার জন্য কিছুরই অভাব হবে না। এই সম্পর্কে নিশ্চিত হোন। শ্রীকৃষ্ণ ভগবদগীতায় বলেছেন, তেষাম্ সততযুক্তানাম্ যোগক্ষেম বহাম্যহম্ঃ (গীতা ১০/১০) "যে ভক্ত অনন্যচিত্তে আমার সেবায় নিযুক্ত, আমি তার সমস্ত প্রাপ্ত বস্তুর সংরক্ষণ এবং প্রয়োজনীয় বস্তুর সরবরাহ করি।" একটি বাস্তব উদাহরণ হচ্ছে যে, এই কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলনে আমাদের একশো'টি কেন্দ্র রয়েছে, এবং প্রতিটি মন্দিরে কমপক্ষে ২৫ থেকে ২৫০ জন করে ভক্ত বসবাস করছে। আমাদের কোন নির্দিষ্ট আয়ের উৎস নেই, কিন্তু প্রতিটি মন্দিরে আমরা প্রতি মাসে আশি হাজার ডলার করে খরচ করছি। কিন্তু ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কৃপায় আমাদের কোন অভাব নেই, সবকিছুরই সরবরাহ রয়েছে। লোকেরা মাঝে মাঝে অবাক হয় যে, "এই লোকগুলি কোন কাজ করে না, কোন পেশাগত কাজও নেই, শুধু 'হরেকৃষ্ণ' গেয়ে বেড়ায়। এরা জীবনধারণ করে কিভাবে?" সুতরাং সে প্রশ্নই নেই। যদি কুকুর বেড়ালেরা ভগবানের দয়ায় বাঁচতে পারে, তাহলে ভক্তরাও ভগবানের কৃপায় খুব ভালোভাবেই বাঁচতে পারবে। সে সম্বন্ধে কোন প্রশ্নই আসে না। কিন্তু কেউ যদি ভাবে, "আমি এই কৃষ্ণভাবনামৃত গ্রহণ করলাম, কিন্তু আমাকে কতই কিছুই না পোহাতে হচ্ছে" তাদের জন্য অথবা আমাদের সকলের জন্য উপদেশ হচ্ছে, মাত্রাস্পরস্তু কৌন্তেয় শীতোষ্ণসমসুখদুঃখদাঃ (গীতা ২/১৪) "এই সব দুঃখ এবং সুখ ঠিক শীত এবং গ্রীষ্ম ঋতুর মতোই।" শীতকালে জল খুবই কষ্টদায়ক আর গ্রীষ্মকালে জল খুবই আনন্দদায়ক। তাহলে জলের অবস্থাটি আসলে কি? এটি কি সুখদায়ক না কি দুঃখদায়ক? এটি দুঃখকর নয়, আবার সুখকরও নয়, কিন্তু নির্দিষ্ট ঋতুতে, ত্বকের স্পর্শে এটি কখনও দুঃখদায়ক আবার কখনও সুখদায়ক বলে মনে হয়। এই রকম দুঃখ এবং সুখের কথা এখানে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, "এটি আসবে এবং যাবে। এই সব অবস্থা নিত্য নয়।" আগমপায়িনঃ অনিত্যঃ (গীতা ২/১৪) মানে হচ্ছে, "এই সব অবস্থা আসছে এবং যাচ্ছে, তাই এগুলো নিত্য নয়।" তাই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ উপদেশ দিয়েছেন, "তামস্তিতিক্ষসস্বঃ ভারত (গীতা ২/১৪) কিন্তু তোমার আসল কাজ, কৃষ্ণভাবনামৃত, ভুলে যাওয়া চলবে না। এই সব জাগতিক সুখ-দুঃখের পরোয়া কোর না।