BN/Prabhupada 0094 - আমাদের কর্তব্য কৃষ্ণের শব্দগুলিকে পুনরাবৃত্তি করা



Lecture on BG 1.20 -- London, July 17, 1973

পাপময় জীবন ভগবান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে পারে না অথবা ভগবান সম্পর্কে বুঝতে পারে না। আমরা বেশ কয়েকবার এই শ্লোকটির পুনরাবৃত্তি করেছি,

যেষাং ত্বন্তগতং পাপং
জনানাং পুণ্যকর্মাণাম্‌
তে দ্বন্দ্ব মোহ র্নিমুক্তা
ভজন্তে মাং দৃঢ়ব্রতাঃ
(ভ.গী ৭.২৮)

পাপী, যারা পাপী, তারা বুঝতে পারে না। তারা শুধু এটাই বোঝে আর ভাবে যে " কৃষ্ণ হচ্ছেন ভগবান তাই আমিও ভগবান। তিনি একজন সাধারণ মানুষ, সম্ভবত সামান্য শক্তিশালী, ঐতিহাসিকভাবে তিনি একজন বিখ্যাত মানুষ। যাই হোক সর্বোপরি তিনি একজন মানুষ, তাই আমিও মানুষ সুতরাং কেন আমি ভগবান নই?" এটা হচ্ছে অভক্ত আর পাপী লোকদের বক্তব্য। সুতরাং কেউ যদি নিজেকে ভগবান বলে ঘোষণা করে, তৎক্ষণাৎ তোমাদের জানা উচিত যে, সে হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ পাপী মানুষ।

তুমি যদি তার ব্যক্তিগত জীবন অধ্যয়ন কর, তাহলে দেখবে যে সে একটা এক নম্বরের পাপী মানুষ। এটাই পরীক্ষা। অন্যথায় কেউ বলবে না যে আমি ভগবান, এটা মিথ্যা কথা। কেউ নয়। কোন ধার্মিক ব্যাক্তি নয়। তিনি জানেন, "আমি কে? আমি একজন সাধারণ মানুষ, কিভাবে আমি ভগবানের অবস্থান দাবি করতে পারি?" এবং তারা বদমাশদের মধ্যে বিখ্যাত হয়ে উঠে।

যেমনটি শ্রীমদ্ভাগবতমে বলা হয়েছে, শ্ববিড়্‌বরাহোষ্ট্রখ্ররৈঃ (শ্রী.ভা.২.৩.১৯) কি সেই শ্লোক? উষ্ট্র-খরৈঃ, সংস্তুতঃপুরুষঃপশুঃ তারা... এই পৃথিবীতে আমরা অনেক মহান মানুষদের দেখতে পাই, তথাকথিত মহাপুরুষ আর তারা সাধারণ মানুষের দ্বারা অনেক প্রশংসিত হয়। সুতরাং ভাগবতে বলা হয়েছে, যে ভক্ত নয়, যে কখনও হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করে না, সে বোকাদের মূল্যায়নে খুব মহান ব্যক্তি হতে পারে, কিন্তু সে একটি পশুর থেকে বেশী কিছু নয়। পশু। শ্ববিড়্‌বরাহোষ্ট্রখ্ররৈঃ। "সুতরাং আপনি কিভাবে একজন মহান ব্যক্তিকে, আপনি তাঁকে পশু বলছেন।" আমাদের কাজ, খুব প্রশংসাহীন কাজ। আমরা বলি, যে ব্যক্তি ভক্ত নয়, সে একটা বদমাশ। আমরা সাধারণ ভাবে বলে থাকি। এটা খুব কঠোর শব্দ, কিন্তু আমাদের এটি ব্যবহার করতে হয়। যখনি আমরা দেখতে পাই, যে কেউ শ্রীকৃষ্ণের ভক্ত নন, তাহলে তিনি একজন বদমাশ। আমরা কিভাবে বলতে পারি? সে আমার শত্রু নয়, কিন্তু আমাদের বলতে হচ্ছে কারণ শ্রীকৃষ্ণ এইরকম বলেছেন। যদি আমরা প্রকৃতই কৃষ্ণভাবনাময় হয়ে থাকি, তাহলে আমাদের কাজ হচ্ছে শ্রীকৃষ্ণের শব্দগুলি পুনরাবৃত্তি করা। ব্যাস। শ্রীকৃষ্ণের প্রতিনিধি এবং অপ্রতিনিধির মধ্যে কী পার্থক্য? শ্রীকৃষ্ণের প্রতিনিধি কেবল শ্রীকৃষ্ণ যা বলেছেন সেই কথারই পুনরাবৃত্তি করে। ব্যাস। তিনি প্রতিনিধি হয়ে যান। এটার জন্য কোন যোগ্যতার প্রয়োজন হয় না। তুমি কেবল দৃঢ়তার সঙ্গে পুনরাবৃত্তি কর। যেমনটি শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, সর্ব ধর্মান পরিত্যজ্য মাম একং শরণং ব্রজ (ভ.গী.১৮.৬৬) সুতরাং যিনি এই সত্য স্বীকার করেছেন যে, "যদি আমি শ্রীকৃষ্ণের প্রতি সমর্পিত হই, তাহলে আমার সমস্ত কাজ সফল হবে," তিনিই শ্রীকৃষ্ণের প্রতিনিধি। ব্যাস।

তোমার খুব উচ্চ শিক্ষিত বা উন্নত হবার প্রয়োজন নেই। তুমি যদি শুধুমাত্র শ্রীকৃষ্ণ যা বলেছেন তা স্বীকার কর... যেমন অর্জুন বলেছেন, সর্বমেতদ ঋতং মন্যে যৎ বদসি কেশবঃ (ভ.গী ১০.১৪) "আমার প্রিয় কৃষ্ণ, কেশব, তুমি যা কিছু বলছো, আমি কোন কিছু পরিবর্তন ছাড়াই তা গ্রহণ করছি।" এটিই ভক্তি। তাই অর্জুনকে বলেছেন - ভক্তোহসি। এটাই ভক্তদের কাজ। কেন আমি শ্রীকৃষ্ণকে আমার মতো একজন সাধারণ মানুষ মনে করবো? এটাই ভক্ত আর অভক্তের মধ্যে পার্থক্য। একজন ভক্ত জানেন যে, আমি হচ্ছি শ্রীকৃষ্ণের অতি নগণ্য আর ক্ষুদ্র স্ফুলিঙ্গ। শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন একজন স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্ব্য। আমিও স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্ব্য। কিন্তু যখন আমরা তাঁর ক্ষমতা এবং আমার ক্ষমতা সম্পর্কে বিবেচনা করি, তখন আমি সবচেয়ে তুচ্ছ।" এটি হচ্ছে শ্রীকৃষ্ণ সম্পর্কে জানা

কঠিন কিছু নয়। আমাদেরকে কেবল সচেতন হতে হবে, পাপী নয়। কিন্তু একজন পাপী মানুষ তাঁকে বুঝতে পারে না। পাপী মানুষ, সে বলবে, "ওহ, কৃষ্ণও মানুষ। আমিও মানুষ। আমি কেন ভগবান নই? তিনিই কেবল ভগবান? না, আমিও ভগবান। আমি ভগবান আপনি ভগবান, আপনি ভগবান, প্রত্যেকে ভগবান। " যেমন বিবেকানন্দ বলেছেন, "কেন তুমি ভগবানকে খুঁজছ? তুমি কি দেখতে পারছ না, রাস্তায় কতো ভগবান ঘোরাঘুরি করছে? দেখ, তাদের ভগবান উপলব্ধি। এই তাদের ভগবান উপলব্ধি। আর তিনি একজন মহান ব্যক্তি হয়ে গেছেন: "ওহ্‌,, তিনি সবাইকে ভগবানরূপে দেখছেন।"

এই মূর্খতা আর বদমাইশিই সারা বিশ্ব ধরে চলছে। কেউ জানে না ভগবান কে, ভগবানের শক্তি কেমন, ভগবান মানে কি। তারা কিছু বদমাশকে ভগবানরূপে গ্রহণ করেছে। আজকাল এইরকমই চলছে। আরেকটা বদমাশ আসবে। সেও নিজেকে ভগবান বলে ঘোষণা করবে। এটি খুব সস্তা জিনিস হয়ে গেছে। কিন্তু তাদের এটা চিন্তা করার মতো বুদ্ধিটুকু নেই যে, "আমি ভগবান হবার দাবী করছি, আমার কি শক্তি আছে?"

সুতরাং এটাই হচ্ছে প্রহেলিকা। এটাই রহস্য। ভক্ত না হলে, ভগবানের রহস্য বোঝা সম্ভব নয়। শ্রীকৃষ্ণ ভগবদ্গী‌তায় বলেছেন কিভাবে একজন তাঁকে জানতে পারবে। ভক্তা মাম্‌ অভিজানাতি যাবান যস্মাসি তত্ত্বতঃ (ভ.গী.১৮.৫৫) শুধুমাত্র ভক্তি দ্বারা, ব্যাস। তিনি বলতে পারতেন, "সর্বোচ্চ জ্ঞান" কিংবা "যোগব্যায়াম প্রক্রিয়ার দ্বারা" অথবা "একজন মহান কর্মী হয়ে তুমি আমাকে বুঝতে পারবে।" না, তিনি কখনও বলেননি, কখনও বলেননি। সুতরাং কর্মী, জ্ঞানী, যোগী তারা সব বদমাশ। তারা শ্রীকৃষ্ণকে বুঝতে পারবে না, সব বদমাশ। কর্মীরা হচ্ছে তৃতীয় শ্রেণীর বদমাশ, জ্ঞানীরা দ্বিতীয় শ্রেণীর বদমাশ। আর যোগীরা প্রথম শ্রেণীর বদমাশ, ব্যাস।