BN/Prabhupada 0142 - জড় প্রকৃতির এই হত্যা প্রক্রিয়া বন্ধ করুন



Lecture on SB 6.1.15 -- Denver, June 28, 1975

সুতরাং মানুষ বুঝতে পারে না যে জীবনের লক্ষ্য কি। তারা বর্তমান মুহূর্তের পরোয়া করে না। কোনটা পাপী জীবন বা কোনটা পবিত্র জীবন তাদের কোন যায় আসে না। কিন্তু আমরা এইসব জিনিস হয়ত বিশ্বাস নাও করতে পারি, কিন্তু ব্যাপারটি এইরকম। ঠিক যেমন যদি আপনি কিছু রোগে সংক্রমিত হন, এটি বেরিয়ে আসবে। আপনি বিশ্বাস করুন বা না করুন, কোন যায় আসে না। এখানে আমাদের ডাক্তার বাবু আছেন। তিনি জানেন যে যদি আপনি রোগ দ্বারা আক্রান্ত হন, এটা বেরিয়ে আসবে। তাই আমরা অনেক সংক্রামক গুণাবলীর দ্বারা আক্রান্ত হই। তিনটে গুণ আছে- সত্ত্বগুণ, রজোগুণ, তমোগুণ এবং আমাদের আক্রান্ত অনুযায়ী, আমরা বিভিন্ন ধরনের শরীর গ্রহণ করি। কর্মণা দৈব নেত্রেন (ভাগবত ৩.৩১.১) আমরা প্রত্যেকে জড় প্রকৃতির গুনের অধীনে কাজ করি। এবং সঙ্গপ্রভাবে আমরা নিদিষ্ট ধরনের শরীর গ্রহণ করি, তথা দেহন্তর প্রাপ্তির (ভ.গী.২.১৩) দুভাগ্যবশতঃ, কোন বিজ্ঞান নেই, কোন কলেজ নেই, কোন বিশ্ববিদ্যালয় নেই এই প্রকৃতির এই বিজ্ঞান শেখার জন্য কিভাবে এইসব জিনিস চলছে। প্রকৃতে ক্রিয়মানানি গুনৈ কর্মানি সর্বশ (ভ.গী.৩.২৭) প্রকৃতে হচ্ছে সেখানে।

তাই আমরা জড়া প্রকৃতিতে এই সংক্রামক অবস্থার জন্য আছি। এটা আমাদের সমস্যা এবং আমাদের মরতে হবে। এটি সত্য। যদি তুমি বলো, আমি মৃত্যুকে বিশ্বাস করি না," এই অজুহাত চলবে না। মৃত্যু আছে। আপনাকে মরতে হবে। সুতরাং এইভাবে আমাদের জীবন চলছে। সুতরাং এই মানুষ্য জীবনে আমরা সংশোধন করতে পারি, এই হচ্ছে কৃষ্ণ ভাবনামৃত আন্দোলন। যদি আমরা প্রকৃতির জড় গুণের সাথে আমাদের সঙ্গ সংশোধন করি। এবং এই সঙ্গের ফলে, আমরা একটি শরীর গ্রহণ করি এবং পুনরায় মৃত্যু হয়, আবার আমরা একটি শরীর গ্রহণ করি এবং পুনরায় মৃত্যু হয়। এই কাজ শেষ হয়ে যাবে। যৎ গত্বা ন নিবর্ততে তদ ধাম পরমং মম (ভ.গী. ১৫.৬) যে ভাবেই হোক, আপনি যদি ঘরে যাওয়ার জন্য উপযুক্ত হন ,ভগবদ্ধামে যাবার জন্য উপযুক্ত হন, যৎ গত্বা, তাহলে আপনি আর ফিরে আসবেন না। কিন্তু তারা বুঝতে পারে না যে এই জড় বদ্ধ জীবন হচ্ছে সর্বদা দুর্দশাগ্রস্থ। তারা তা গ্রহণ করছে, এটা খুব ভাল।"পশুরা" পশুরা, যেমন এই কসাইখানার ভিতর, পশুসম্পত্তি গোডাউনে, সেখানে অনেক প্রানী আছে, এবং তারা কসাইখানায় যাচ্ছে। সবাই তা জানে। তারাও জানে, এই প্রাণীরাও, কিন্তু তাদের পশু গুণ অনুযায়ী, তারা কিছু করতে পারে না। তেমনই, আমরাও সেইরকম জড় জগতের কসাইখানায় পতিত হয়েছি। এটাকে বলে মৃত্যুলোক। প্রত্যেকে জানে যে তাকে হত্যা করা হবে। আজ অথবা কাল অথবা পঞ্চাশ বছর পর বা একশ বছর পর প্রত্যেকে জানে যে মরতে হবে। তার মৃত্যু হবে। মৃত্যু মানে হত্যা হওয়া। কেউ মৃত্যু চায় না। পশুরাও মরতে চায় না। কিন্তু তাদের জোর করে মারা হয়, এটাই হচ্ছে কসাইখানায় হত্যা করা। তেমনই, কে মৃত্যু চায়? কেউ মরতে চায় না। কিন্তু প্রকৃতির নিয়মে তাকে মরতে হবে। সেটা হচ্ছে হত্যা হওয়া। সমগ্র জড় জগত হচ্ছে কসাইখানা। এটা আমাদের বুঝতে হবে। এবং এটাকে বলা হয় মৃত্যুলোক। এইটা সমস্যা। কিন্তু তারা পশুদের মতো খুব গুরুত্ব সহকারে তা গ্রহণ করে না। পশুরা এসব গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করেন না। এমনকি যদি তারা জানে যে তারা মারা যাবে, তবু তারা কোন পদক্ষেপ নিতে পারবে না।

সুতরাং আমাদের অবস্থান এইরকম মৃত্যু সংসার সাগরাৎ, তেষাম্‌ অহং অনুকম্পার্থম অহং অজ্ঞান অজং তমঃ (গীতা ১০/১১) তেষামহং সমুদ্ধর্তা মৃত্যু সংসার সাগরাৎ (ভ.গী.১২.৭) সুতরাং আমাদের অবস্থান বুঝতে হবে। কেউ মরতে চায়, কিন্তু তাকে হত্যা করা হয়। আবার তাকে অন্য একটি সুযোগ দেওয়া হয়, আরেকটা শরীর দেওয়া হয়। আবার তাকে হত্যা করা হয়। এই প্রকৃতির আইন, চলছে। দৈবী হেষা গুণময়ী মম মায়া দুরত্যয়া (ভ.গী ৭.১৪) আমরা গম্ভীরভাবে এটা বুঝতে পারি যে কিভাবে জড় প্রকৃতির এই হত্যা প্রক্রিয়া বন্ধ করা যায়। এটা বুদ্ধি। অন্যথায়, বিড়াল এবং কুকুরের মত সুখী হতে হবে, "ওহ, আমি খুব সুন্দরভাবে খাচ্ছি এবং লাফাচ্ছি। আমাকে যে হত্যা করা হবে আমি তার কোন পরোয়া করছি না, " এটা খুব ভাল বুদ্ধির কথা নয়। বুদ্ধিমত্তা হল প্রকৃতির এই প্রক্রিয়াটি কিভাবে বন্ধ করা যায়। এটা বুদ্ধি। যেটা আলোচনা করা হচ্ছে।

তাই ভক্তিমূলক সেবা দিয়ে কেউ হত্যা করার প্রক্রিয়া থেকে বেরিয়ে আসতে পারে। যেটা এখানে বলা হয়েছে, কেশ্চিৎ কেবলয়া ভক্তা(শ্রী.ভা. ৬.১.১৫) কেচিৎ ,এটা খুব সাধারণ নয়। খুব কমই একজন কৃষ্ণভাবনামৃতে আসে, কেচিৎ কেবলয়া ভক্তা কেবলমাত্র ভক্তিমূলক সেবা দ্বারা, একজন হত্যার এই বিপজ্জনক অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে পারে। কেচিৎ কেবলয়া ভক্তা (শ্রী.ভা.৬.১.১৫) এবং তারা কারা? বাসুদেব পরায়ণা, কৃষ্ণের ভক্ত। কৃষ্ণের আরেক নাম হচ্ছে বাসুদেব। তিনি বসুদেবের ছেলে তাই তার আরেক নাম বাসুদেব। সুতরাং বাসুদেব পরায়ণা। পরায়ণা মানে " আমাদের চূড়ান্ত গন্তব্য স্থান হচ্ছে বাসুদেব, আর কিছু নয়।" তাদের বলা হয় বাসুদেব পরায়ণা। বাসুদেব পরায়ণা, অঘং ধুন্বন্তি। অঘং মানে জড় দূষণ। আমরা সবসময় জড় দূষণের সঙ্গে সংযুক্ত। সুতরাং যদি আমরা বাসুদেব পরায়ণা হই... বাসুদেব সর্বং ইতি স মহাত্ম সুদুর্ল্ভ (ভ.গী.৭.১৯) একই জিনিস। এখানে এটা বলা হচ্ছে কেচিৎ-মানে খুব কদাচিৎ। এবং শ্রীকৃষ্ণ ভগবদগীতায় আরও বলেছেন, বাসুদেব সর্বং ইতি স মহাত্মা সুদুর্ল্ভ (ভ.গী.৭.১৯) সুদুর্ল্ভ খুব বিরল।