BN/Prabhupada 0224 - বড় ঘর নির্মান একটি দোষপূর্ন ভিত্তির উপর



Arrival Address -- Mauritius, October 1, 1975

দর্শন একটি মানসিক জল্পনাকল্পনা নয়। দর্শন হল প্রধান জ্ঞান যা অন্যান্য সকল বিজ্ঞানের উৎস। এটি দর্শনশাস্ত্র। তাই আমাদের কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলন জনগণকে শিক্ষিত করার চেষ্টা করছে এই বিজ্ঞানের বিজ্ঞান দ্বারা বুঝতে হবে "আপনি কে"? আপনি এই শরীর নাকি এই শরীর থেকে আলাদা কিছু?" এটা জানা আবশ্যক। এবং যদি আপনি আপনার বড় ঘর নির্মাণ করতে যান, একটি দোষপূর্ন ভিত দ্বারা, তাহলে এটা টিকবে না, বিপদ হবে। আধুনিক সভ্যতা এই দোষপূর্ন বিচারের উপর আধারিত" যে আমি এই শরীর।" "আমি ভারতীয়, "আমি আমেরিকান,"আমি হিন্দু,"আমি মুসলিম," আমি খ্রীষ্টান।" এগুলি সব শারীরিক ধারনার উপর আধারিত। কারন আমি একজন খ্রীষ্টান পিতা এবং মাতা থেকে এই শরীর পেয়েছি, তাই আমি খ্রীষ্টান।" কিন্তু আমি এই দেহ নই। "কারণ আমি একটি হিন্দু পিতা ও মাতা থেকে এই শরীর পেয়েছি, তাই আমি একটি হিন্দু।" কিন্তু আমি এই দেহ নই। তাই আধ্যাত্মিক তত্ত্ব বুঝতে গেলে, এই মৌলিক নীতি বুঝতে হবে, যে "আমি এই দেহ নই, আমি আত্মা," অহম ব্রহ্মাস্মি। এই বৈদিক শিক্ষাঃ "আপনি একটি আত্মা বুঝতে চেষ্টা করুন, আপনি এই দেহ নন।" যোগ পদ্ধতি অনুশীলন শুধুমাত্র এই জিনিস বোঝার জন্য। যোগ ইন্দ্রিয় সংযম। ইন্দ্রিয়কে নিয়ন্ত্রন করে, বিশেষ করে মনকে... মন হচ্ছে মালিক অথবা ইন্দ্রিয়ের প্রভু। মন ষষ্ঠানি ইন্দ্রিয়ানি প্রকৃতি-স্থানি কর্ষতি (ভ.গী.১৫.০৭)। আমরা অস্তিত্বের জন্য এই মন এবং ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে সংগ্রাম করে যাচ্ছি, মিথ্যা ধারনার মাধ্যমে এই দেহই হচ্ছি আমি। তাই যদি আমরা ইন্দ্রিয় নিয়ন্ত্রণ দ্বারা আমাদের মনকে একাগ্র করতে পারি, তাহলে আমরা ধীরে ধীরে বুঝতে পারব। ধ্যায়নাবস্থিতা-তদ-গতেন মনসা পস্যন্তি যম যোগিনা (শ্রী.ভা.১২.১৩.১) যোগী, তিনি পরম পুরুষের উপর ধ্যান করেন, বিষ্ণুর উপর। এবং সেই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, তারা নিজেদেরকে বুঝতে পারেন। আত্ম উপলব্দি মানব জীবনের মুখ্য উদ্দেশ্য। তাই আত্ম উপলব্দির শুরু হচ্ছে এটা বোঝা যে "আমি শরীর না, আমি আত্মা।" অহম ব্রহ্মাস্মি।

তাই ভগবদগীতাতে এগুলি খুব ভালভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। যদি আপনি কেবলমাত্র ভগবদ গীতা সাবধানে পড়েন, সঠিক নির্দেশিকা অনুযায়ী, তাহলে সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে, কোন অসুবিধা ছাড়াই, "আমি এই দেহ নই, আমি আত্মা।" আমার কাজ জীবনের এই শারীরিক অবধারনা থেকে আলাদা। আমি নিজেকে এই দেহ হিসাবে বিবেচনা করে খুশি হব না। এটি একটি জ্ঞানের ভুল ভিত্তি।" যদি আমরা এভাবে উন্নতি করতে পারি তবে আমরা বুঝতে পারব অহম ব্রহ্মাস্মিঃ "আমি চিন্ময় আত্মা।" তাহলে কোথা থেকে এসেছি? ভগবদ গীতায় সবকিছু বর্ণনা করা হয়েছে, যে আত্মা, শ্রী কৃষ্ণ বলছেন, ভগবান বলছেন, মামৈবাংশ জীব-ভূতাঃ ([Vanisource:BG 15.7 (1972)|ভ.গী.১৫.৭]]) "এই জীব, তারা আমার অবিচ্ছেদ্য অংশ, টুকরা, বা সামান্য স্পার্ক।" বড় অগ্নিকুণ্ড এবং ছোট আগুন, উভয়ই আগুন, তবে বড় অগ্নিকুন্ড এবং ছোটোখাটো আগুন ... যতদূর আগুনের গুনের সন্মন্ধ, ভগবান এবং আমরা এক। তাই আমরা বুঝতে পারি, আমরা নিজেরাই অধ্যয়ন করে ভগবানকে অধ্যয়ন করতে পারি। এটি আরেকটি ধ্যান। কিন্তু এটা একদম সঠিক হবে,যখন আমরা বুঝতে পারব যে "যদিও গুণগত আমি ভগবানের একটি নমুনা অথবা একই মানের, কিন্তু তবুও, তিনি মহান, আমি তুচ্ছ।" এটি একটি সঠিক বোঝা। অনু, বিভু, ব্রহ্ম, পরব্রহ্ম, ঈশ্বর, পরমেশ্বর - এটিই সঠিক বোঝা। কারন আমি গুনগতভাবে এক, এর মানে এই নয় যে আমি পরম। বেদে বলা হয়েছে, নিত্য নিত্যানাম, চেতস চেতনানাম (কঠ উপনিষধ ২.২.১৩) আমরা নিত্য, শাশ্বত; ভগবানও নিত্য। আমরা জীব, ভগবানও জীব। কিন্তু তিনি জীবের মধ্যে মুখ্য, তিনি মুখ্য অনন্ত। আমরা শাশ্বত, কিন্তু আমরা বিশিষ্ট নই। কেন? একো যো বহুনাম বিধধতি কামান। যেমন আমাদের একজন নেতার আব্যশক আছে, তেমনই তিনি সর্ব্বোচ্চ নেতা। তিনি রক্ষণাবেক্ষণকারী। তিনি পালনকারী। তিনি প্রত্যেকের প্রয়োজনগুলি প্রদান করছে। আমরা দেখতে পারি যে আফ্রিকায় হাতি আছে। কে তাদের খাদ্য সরবরাহ করছে? আপনাদের রুমের গর্ত ভিতরে লক্ষ লক্ষ পিঁপড়ে আছে। কে তাদের খাওয়াচ্ছে? একো যো বহুনাম বিধধতি কামান। সুতরাং এই ভাবে যদি আমরা নিজেদেরকে উপলব্দি করি, সেটাই আত্ম উপলব্ধি।