BN/Prabhupada 0395 - পরম করুণা - তাৎপর্য



Purport to Parama Koruna -- Los Angeles, January 16, 1969

পরম করুণ পহুঁ দুই জন,নিতাই গৌরচন্দ্র। এই গানটি লোচন দাস ঠাকুর গেয়েছেন, প্রায় সমকালীন ভগবান চৈতন্যের এক মহান ভক্ত। তিনি চৈতন্য-মঙ্গল নামে একটা বই লেখেন, ভগবান চৈতন্যের কার্যক্রমের উপর। এটি একটি খুব বিখ্যাত বই, চৈতন্য-মঙ্গল এবং তিনি অনেক গান রচনা করেছেন। বাস্তবিকভাবে সমস্ত বৈষ্ণব, তারা দিব্য রূপে কাব্যিক। এটা বৈষ্ণব এর ২৬টি গুনের মধ্যে একটা। তাই তিনি বলছেন "এই দুই প্রভু, "নিতাই গৌরচন্দ্র, "প্রভু নিত্যানন্দ এবং প্রভু গৌরাঙ্গ অথবা প্রভু চৈতন্য, তারা খুব দয়ার অবতার।" সব অবতার-সার শিরমনি। "তারা অবতারের সার।" ভগবদ্গীতায় এই অবতার সম্পর্কে বলা হয়েছে, যখনই ধর্মের গ্লানি হয়, এবং অধর্মের কার্যকলাপের লক্ষনী দেখা দেয়, সেই সময়, ভগবা্নের অবতার হয় বা এই জড় জগতের মধ্যে অবতীর্ন হন, সাধুদের রক্ষা এবং অধর্মের বিনাশ করার জন্য। এই হচ্ছে অবতারের উদ্দেশ্য। প্রতিটি অবতারে আপনি দুটি জিনিস দেখতে পাবেন। ভগবান কৃষ্ণ তিনি খুব সুন্দর, খুব দয়ালু কিন্তু তিনি খুব ভয়ঙ্কর অসুরদের কাছে। অসুর উনাকে ব্জ্রের মত দেখছে, এবং গোপীরা তাকে সবচেয়ে সুন্দর কামদেবের মতো দেখছিল। তাই ভগবদ-গীতায় বলা হয়েছে, যে যথা মাম প্রপদন্তে (ভ.গী ৪.১১)। ভগবৎ উপলব্ধি হয়, আসুরিক প্রবৃত্তির সতন্ত্রতার অনুতাপ অনুসারে।

তাই এই যুগে...অবশ্যই, অন্তিম অবতার, কল্কি, শুধু বধ করবে। অনেক বছর পর, তিনি আসবেন। কিন্তু এখানে ভগবান চৈতন্য, তার উদ্দেশ্য হত্যা নয়, শুধু কৃপা করা। এটা ভগবান চৈতন্যের বিশিষ্ট বিশেষতা। কারন এই যুগে, নিশ্চিতরূপে, অধর্মের প্রভাব খুব বেশী। কিন্তু যদি প্রভু চৈতন্য তাঁদের হত্যা করতে চাইতেন, তবে তা্দের পরিত্রাণের কোন প্রশ্নই ছিল না। সেটা হবে ... অবশ্যই, যারা অবতার দ্বারা নিহত হয় তারাও পরিত্রাণ পায়। কিন্তু আধ্যাত্মিক জগতে যেতে পারে না, কিন্তু তারা ব্রহ্ম জ্যোতিতে বিলীন হয়ে যায়, যেমন মায়াবাদীরা চায়। অন্য কথায়, মায়াবাদীদের মুক্তি পাওয়ার লক্ষ্য, ভগবানের শ্ত্রূদের মুক্তির লক্ষ্যের সমান। এটা খুব মুশকিল কাজ নয়। তাই ভগবান চৈতন্য খুব দয়ালু, কারন তিনি কৃষ্ণ প্রেমের দ্বারা সকলকে আলিঙ্গন করছেন। রূপ গোস্বামী ভগবান চৈতন্যকে বর্ননা করেছেন সব অবতারের মধ্যে সবচেয়ে দয়ালু রূপে। কারন তিনি সবাইকে কৃষ্ণ দিচ্ছেন, কোন যোগ্যতা ছাড়াই। তাই লোচন দাস ঠাকুর বলেছেন যে, পরম ক্রুনা পহুঁ দুই জনা, নিতাই গৌরচন্দ্র। এবং তিনি সব অবতারের সার। কেবল আনন্দ-কন্দ।

এবং তাদের প্রচারের প্রক্রিয়া খুব মধুর। চৈতন্য মহাপ্রভু পরামর্শ দেন, "আপনারা হরে কৃষ্ণ জপ করু্ন, সুন্দরভাবে নাচ করুন, এবং যখন আপনি ক্লান্ত হবে, একটু বিশ্রাম নিন এবং কৃষ্ণ প্রসাদ পান। সুতরাং তার সূত্র খুব আনন্দদায়ক। কেবল আনন্দ-কন্দ। যখন তিনি জগন্নাথ পুরীতে ছিলেন, প্রতি সন্ধ্যায়, নাচ, কীর্তন ও জপ অব্যাহত ছিল। নৃত্য শেষ হওয়ার পর, তারা তাদের হৃদয় খুলে দিল জগন্নাথের প্রসাদ বিতরন করত। তাই এত হাজার লোক রোজ রাত্রে একত্রিত হত। তাই এই আন্দোলন শুধুমাত্র দিব্য আনন্দ। কেবল আনন্দ-কন্দ। তারপর তারা পরামর্শ দিচ্ছেন, ভজ ভজ ভাই, চৈতন্য নিতাই। "আমার প্রিয় ভাইয়েরা, চৈতন্য ও নিত্যানন্দ এই দুই ভগবানের উপাসনা করার চেষ্টা করুন।" সুদৃঢ় বিশ্বাস করি, "বিশ্বাস আর দৃঢ়তার সাথে।" আমাদের প্রভু চৈতন্যের কথায় বিশ্বাস থাকা উচিত। প্রভু চৈতন্য বলেছেন, "শুধু জপ করতে থাকো, শুধু জপ করেই আমরা জীবনের সব পূর্ণতা লাভ করব।" সুতরাং এটি একটি সত্য। আমরা জপ না করা পর্যন্ত, আমাদের উপলবদ্ধি হবে না, কিন্তু যাঁরা জপ করছেন, তাঁরা অনুভব করছেন যে তারা খুব শিগগিরই জীবনের বাঞ্ছিত পূর্নতা প্রাপ্ত করতে যাচ্ছে। অতএব, আমাদের এই মন্ত্রকে বিশ্বাস এবং দৃঢ়তার সাথে জপ করা আবশ্যক। কিন্তু এই বিষয়ে একমাত্র প্রয়োজনীয় যোগ্যতা দরকার, তিনি বলেছেন, বিষয় ছাড়িয়া, সে রসে মজিয়া, মুখে বল হরি হরি। আমাদের বিশ্বাস এবং দৃঢ়তার সাথে মন্ত্রকে জপ করা উচিত, এবং একই সময়ে, আমাদের মনে রাখতে হবে, আমাদের ইন্দ্রিয় সন্তুষ্টি থেকে সতর্ক হওয়া উচিত। বিষয় ছাড়িয়া, বিষয় মানে ইন্দ্রিয় সন্তুষ্টি। এবং ছাড়িয়া মানে ত্যাগ করা। ব্যক্তিকে ইন্দ্রিয় সন্তুষ্টি ছেড়ে দিতে হবে। অবশ্যই, এই জড় জীবনে আমরা ইন্দ্রিয় পেয়েছি এবং আমাদের সেগুলি ব্যবহার করার অভ্যাস হয়েছে। আমরা এটা থামাতে পারব না। কিন্তু এটি থামানোর কোন প্রশ্ন নেই, এটি নিয়ন্ত্রিত করতে হবে। ঠিক যেমন আমরা খেতে চাই। বিষয় মানে, আহার, নিদ্রা, যৌনসম্পর্ক এবং আত্মরক্ষা। সুতরাং এই জিনিসগুলি সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ নয়। কিন্তু সেগুলি সমন্বয় করা যেতে পারে, যাতে আমরা কৃষ্ণ ভাবনামৃত পালন করতে পারি। তাই আমাদের নেওয়া উচিত ... খাদ্যের মত .. আমাদের শুধু স্বাদের সন্তুষ্টর জন্য খাওয়া উচিত নয়। কৃষ্ণ ভাবনামৃত অনুসরণ করার জন্য, সুস্থ থাকার জন্য আমাদের কেবলমাত্র খাওয়া উচিত। তাই খাদ্য বন্ধ করতে হবে না, কিন্তু এটি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। একইভাবে, সম্ভোগ, সম্ভোগ থামানো হয় না। কিন্তু নীতি হল যে আপনি বিয়ে করতে হবে, এবং আপনাকে শুধুমাত্র কৃষ্ণ ভাবনামৃত শিশু তৈরি করতে সম্ভোগ আবশ্যক। অন্যথায় কোরো না। তাই সবকিছু নিয়ন্ত্রিত। আত্মরক্ষা বন্ধ করার কোন প্রশ্ন নেই। কৃষ্ণের আদেশ অনুযায়ী অর্জুন যুদ্ধ করেছিলেন, রক্ষাকারী ছিলেন। সুতরাং সবকিছু আছে। কিছুই বন্ধ নয়। এটি শুধু আমাদের কৃষ্ণের ভাবনামৃতে সমন্বয়ের জন্য সামঞ্জস্যপূর্ণ। বিষয় ছাড়িয়া। আমাদের এই বিষয় গ্রহণ করা উচিত নয়, শারীরিক চাহিদার চারটি মূলনীতি, যেমন আহার, নিদ্রা, যৌনসম্পর্ক এবং আত্মরক্ষা, যৌন সন্তুষ্টির জন্য। না। রাজনীতিবিদরা, তারা ইন্দ্রিয় তৃপ্তির জন্য লড়াই করে। তারা মানুষের ভালো দেখতে পায় না। তারা তাদের রাজনৈতিক অগ্রগতির জন্য লড়াই করে। এই যুদ্ধ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু যখন মানুষকে রক্ষা করার জন্য লড়াই করা প্রয়োজন, তখন লড়াই করতে হবে। তাই আমাদের এই ইন্দ্রিয় সন্তুষ্টি বা এই প্রক্রিয়াটি প্রত্যাহার করা উচিত।

দেখো দেখো ভাই ত্রি-ভুবনে নাই। তারপর তিনি বলছেন। "দেখ, এত দয়ালু আর কেউ নেই।" পশুপাখি ঝুরে,পাষাণ বিদরে। কিন্তু তার কৃপায় পশু ও পাখি, তারাও পালিত হয়। প্রকৃতপক্ষে, যখন চৈতন্য মহাপ্রভু ঝাড়খণ্ডের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন, মধ্য ভারতে, তিনি শুধুমাত্র তার ব্যক্তিগত পরিচারকের সঙ্গে ছিলেন, এবং তিনি একা ছিলেন, এবং যখন তিনি বনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি একটি বাঘকে ছুঁলেন। সে ঘুমিয়ে ছিল, এবং বাঘ গর্জনকারী প্রতিক্রিয়া করছিল। আন্দোলন, চৈতন্য মহাপ্রভুর পরিচারক মনে করেন, "এখন আমরা মারা যাব" কিন্তু চৈতন্য মহাপ্রভু বাঘকে জিজ্ঞেস করলো, "কেন তুমি ঘুমাচ্ছ? দাঁড়াও ... হরে কৃষ্ণ মন্ত্র জপ। "এবং বাঘ নাচতে শুরু করে। আসলে, এটা ঘটেছে। চৈতন্য মহাপ্রভু যখন এই হরে কৃষ্ণ আন্দোলন প্রচার করছিলেন, বাঘ, হরিণ, সবাই জড়িত হয়ে যান, সুতরাং, অবশ্যই, আমরা এত শক্তিশালী না। কিন্তু এটা সম্ভব যে ... অন্তত, আমরা দেখেছি, কুকুরেরা কীর্তনের মধ্যে নাচ করছে। তাই এটি গ্রহণ করাও সম্ভব ... কিন্তু আমরা এমন একটি বড় বিপদের সম্মুখীন হতে পারি না। কিন্তু চৈতন্য মহাপ্রভু বাঘকে নাচতে অনুপ্রাণিত করতে পারে, আমরা কমপক্ষে প্রত্যেক মানুষকে নৃত্য করতে অনুপ্রাণিত করতে পারি। এটা একটি চমৎকার আন্দোলন।

তাই পশু পাখি ঝুরে, পাষান বিদরে। পাষান মানে পাথর। তাই হরে কৃষ্ণ জপ করে পাথর-হৃদয় মানুষও গলে যায়। আমাদের এই অভিজ্ঞতা আছে। পাষান বিদরে, শুনি যার গুন-গাঁথা। কেবলমাত্র প্রভু চৈতন্যের দিব্য লীলা এবং গুণ গুলি শুনেই, এমনকি নির্দয় মানুষ, তারা গলিত হয়। অনেক উদাহরণ আছে, জগাই মাধাই। অনেক পতিত আত্মা, তারা সর্বোচ্চ আধ্যাত্মিক স্তর অর্জন করে। তারপর লোচন দাস ঠাকুর বলছেন যে, বিষয়ে মজিয়া রহিলি পড়িয়া। "দুর্ভাগ্যবশত আমি শরীর বা ইন্দ্রিয়ের এই দাবীর মধ্যে আটকা পড়েছি, আমি চৈতন্য মহাপ্রভুর চরনপদ্ম ভুলে গেছি।" বিষয়ে মজিয়া, রহিলি পড়িয়া, সে পদে নহিলো আঁশ। "আমি ভগবান চৈতন্যের চরনপদ্মের সঙ্গে সংযুক্ত থাকতে চাই না।" তাহলে কেন এই ঘটবে? তাই তিনি বিলাপ করছেন যে আপন করম ভুঞ্জায় শমন, যে, "আমি আমার অতীতের কর্মের কারণে কষ্ট পাচ্ছি, যে আমি কৃষ্ণ ভাবনামৃত আন্দোলনের দিকে আকৃষ্ট হতে পা্রি না। এটি আমার জন্য যমরাজের একটি শাস্তি, মৃত্যুর অধ্যক্ষ।" প্রকৃতপক্ষে, এই কৃষ্ণ ভাবনামৃত আন্দোলন, সংকীর্তন আন্দোলন খুব ভাল এবং আকর্ষণীয়, খুব সহজ, আমি বলতে চাচ্ছি, এমনকি অপরিশীলিত ব্যক্তিও আকৃষ্ট হবে। কিন্তু যদি কারো আকর্ষণ না থাকে, তাহলে বুঝতে হবে তিনি মৃত্যুর অধ্যক্ষের দ্বারা শাস্তি প্রাপ্ত হচ্ছেন। যাইহোক, যদি আমরা জপ, এই নীতির সাথে যুক্ত হই, তাহলে যমরাজও, মৃত্যুর অধ্যক্ষ, তিনি শাস্তি দিতে ব্যর্থ হন। এটি ব্রহ্ম সংহিতা সিদ্ধান্ত। ব্রহ্ম-সংহিতা বলছেন, যিনি এই ভক্তিমূলক জীবন গ্রহণ করেন, তার আগের জীবনের প্রতিক্রিয়া অবিলম্বে সমন্বয় করা হয়। সুতরাং প্রত্যেকের উচিত কৃষ্ণ ভাবনামৃতের এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করা, হরে কৃষ্ণ, হরে কৃষ্ণ, কৃষ্ণ কৃষ্ণ, হরে হরে, হরে রাম, হরে রাম , রাম রাম, হরে হরে জপ করে।