BN/Prabhupada 0400 - শ্রীশ্রী শিক্ষাষ্টক - তাৎপর্য



Purport to Sri Sri Siksastakam, CDV 15

চেতো-দর্পন-মার্জনম ভবো-মহা-দাবাগ্নি-নির্বাপনম
শ্রেয়-কৈরব-চন্দ্রিকা-বিতরনম বিদ্যা-বধু-জীবনম,
আনন্দম্বুধি-বর্ধনম প্রতি-পদম পূর্নামৃতস্বাদনম
সর্বাত্ম-স্নাপনম পরম বিজয়তে শ্রী-কৃষ্ণ-সংকীর্তনম।

ভগবান চৈতন্য তাঁর মিশনের জন্য আমাদের আটটি পদ দিয়েছেন, তিনি কি চেয়েছিলেন আমাদের কাছে। সেই আটটি পদে বোঝান হচ্ছে, এবং সেটি শিক্ষাষ্টকম নামে পরিচিত। শিক্ষা মানে নির্দেশ এবং অষ্টক মানে আট। তাই আটটি পদে তিনি তার শিক্ষা সম্পন্ন করেছেন, এবং তার পরবর্তী শিষ্য, ছয় গোস্বামী, বইয়ের সংস্করণের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করেছেন। তাই ভগবান চৈতন্য বলেছেন যে বিষয় হচ্ছে - পরম বিজয়তে, শ্রী কৃষ্ণ-সংকীর্তনম। হরে কৃষ্ণ মন্ত্র জপ অথবা কৃষ্ণ সংকীর্তন আন্দোলনের জয় হোক। জয় হোক। বিজয় হোক, কিভাবে এই জয়, বিজয়? তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, চেত-দর্পন-মার্জনম। যদি তুমি হরে কৃষ্ণ মন্ত্র জপ করো, তাহলে নোংরা জিনিস যা তোমার হৃদয়ে জমে আছে, জাগতিক কলুষের কারণে, এটি পরিষ্কার হয়ে যাবে। তিনি উদাহরণ দেয় যে মন শুধু একটি আয়নার মত। যদি দর্পনের উপর ধূলো জমে যায়, তাহলে আমরা আয়নার প্রতিফলন দ্বারা বাস্তব মুখ দেখতে পাব না। অতএব, এটিকে পরিষ্কার করা উচিত। তাই আমাদের বর্তমান বদ্ধ জীবনে, আমাদের হৃদয় এত ধুলোয় পরিপূর্ন, প্রাচীন কাল থেকে আমাদের জড় সঙ্গের কারণে যা জমা হয়েছে। তাই যদি আমরা এই হরে কৃষ্ণ মন্ত্র জপ করি, তাহলে ধুলো মুছে ফেলা হবে। অবিলম্বে নয়, এটি বন্ধ করার শুরু হবে। এবং যেই মাত্র মনরূপী আয়নার সব ধুলো পরিষ্কার হয়ে যায়, অবিলম্বে আমরা মুখ দেখতে পারি, এটা কি? সেই মুখটা প্রকৃত পরিচয়। হরে কৃষ্ণ মন্ত্র জপ করে আমরা বুঝতে পারব যে আমরা এই দেহ নই। এটা আমাদের ভুল বোঝা। ধুলা মানে এই ভুল বিশ্বাস, এই শরীর বা মনকে স্বংয় ভাবা। আসলে, আমরা এই শরীর বা মন নই। আমরা আত্মা। অতএব, যত তাড়াতাড়ি আমরা বুঝতে পারি যে আমরা এই দেহ নই, আমরা অবিলম্বে ভব-মহা-দাবাগ্নি-নির্বাপনম। জড় অবস্থার আগুন জ্বলছে, অথবা জড় কষ্টের আগুন জ্বলছে, অবিলম্বে বন্ধ হয়ে যায় আর কোন দুঃখ থাকে না। অহম ব্রহ্মাস্মি। ভগবদ গীতায় এটা বলা হয়েছে ব্রহ্ম-ভূত প্রসন্নাত্মা (ভ.গী ১৮.৫৪)। অবিলম্বে তিনি একটি আত্মা হিসাবে তার সত্য পরিচয় বুঝতে পারেন, তিনি খুশি হন। আমরা খুশি নই আমাদের জড় সঙ্গের কারণে, আমরা সবসময় উদ্বেগ পূর্ণ। হরে কৃষ্ণ মন্ত্র জপ করে, আমরা সুখী জীবনের স্তরে অবিলম্বে আসব। ভব-মহা-দাবাগ্নি-নির্বাপনম। এবং একে মুক্তি বলা হয়। আমরা যখন খুশি হই, সমস্ত উদ্বেগ থকে মুক্ত হই, সেই পর্যায়কে বাস্তব মুক্তি বলা হয়। কারণ প্রতিটি প্রাণী, আত্মা স্বাভাবিকভাবেই সুখী। বেঁচে থাকার জন্য পুরো সংগ্রাম হল যে তিনি জীবনের যে আনন্দদায়ক স্তর অনুসন্ধান করছেন, কিন্তু তিনি সমস্যা ভুলে যাচ্ছে্ন। অতএব, আমরা একটি সুখী জীবনের জন্য সম্ভাব্য প্রচেষ্টায় পরাজিত হচ্ছি। এই লাগাতার পরাজয় সত্বর দূর করা যায় হরে কৃষ্ণ মন্ত্র জপ দ্বারা। এটা এই দিব্য শব্দতরঙ্গের প্রভাব। এবং মুক্তির পর, সুখী হওয়ার পরে, জড় আনন্দ হ্রাস পায়। যা খুশি আপনি অনুভব করতে চান, এটি হ্রাস পায়। উদাহরণস্বরূপ, খাওয়ার জন্য। যদি আমরা কিছু ভাল খাবার খেতে চাই, তবে কিছু খাওয়ার পর আমরা আর বেশি খেতে পছন্দ করি না। মানে এখানে জড় জগতে, যেই সুখই আমরা স্বীকার করি, এটি হ্রাস পাবে কিন্তু আধ্যাত্মিক আনন্দ, ভগবান চৈতন্য বলছেন, "আনন্দম্বুধি বর্ধনম, আধ্যাত্মিক আনন্দ একটি সমুদ্রের মত। কিন্তু এখানে জড় জগতে, আমরা অভিজ্ঞতা পেয়েছি যে সমুদ্রের কোন বৃদ্ধি নেই। মহাসাগর তার সীমার মধ্যে থাকে। কিন্তু আধ্যাত্মিক আনন্দের মহাসাগর বৃদ্ধি পায়। আনন্দমম্বুধি-বর্ধনম। শ্রেয়-কৈরব-চন্দ্রিকা-বিতরণম্‌। কিভাবে এটি বৃদ্ধি পায়? তিনি উদাহরণ দিচ্ছেন উদিত চন্দ্রের মতন। ক্রমবর্ধমান চাঁদের আলোর মতন। যেমন চাঁদ নতুন চাঁদের দিন থেকে নতুন চাঁদের রাতে, প্রথম দিন এটি একটি ছোট বক্ররেখা লাইনের মত। কিন্তু দ্বিতীয় দিনে, তৃতীয় দিনে এটি বৃদ্ধি পায়, ধীরে ধীরে এটি বৃদ্ধি পায়। একইভাবে, আধ্যাত্মিক জীবন, আধ্যাত্মিক আনন্দিত জীবন বৃদ্ধি পায়, দৈনিক দৈনিক চাঁদের রশ্মির মত, যতক্ষণ না এটি পূর্ণ চন্দ্র রাতে পৌঁছায়, হ্যাঁ। তাই চেত-দর্পন-মার্জনম ভব-মহা-দাবাগ্নি-নির্বাপনম, শ্রেয়-কৈরব-চন্দ্রিকা-বিতরনম বিদ্যা বধু -জীবনম। এবং জীবন জ্ঞান দ্বারা ভরে যায়, কারণ আধ্যাত্মিক জীবন মানে শাশ্বত জীবন, আনন্দ পূর্ণ এবং জ্ঞান পূর্ণ। তাই আমরা আমাদের সুখের পরিমাণ বৃদ্ধি করি, কারণ অনুপাত দ্বারা আমরা আমাদের জ্ঞানের পরিমাণ বৃদ্ধি করি। শ্রেয়-কৈরব-চন্দ্রিকা-বিতরনম বিদ্যা-বধু-জীবনম, আনন্দম্বুধি-বর্ধনম। এটি একটি সমুদ্রের মত, কিন্তু তবুও এটি বৃদ্ধি পায়। আনন্দমম্বুধি-বর্ধনম, সরবাত্ম-স্নাপনম। এটা এত সুন্দর যে একবার এই জীবনের এই স্থিতীতে পৌঁছালে, আমরা মনে করি, "আমি সম্পূর্ণভাবে সন্তুষ্ট।" সর্বাত্ম স্নপনম্‌। যেমন কেউ যদি জলে ডুবে স্নান করে থাকে,তাহলে তিনি অবিলম্বে তরতাজা অনুভব করেন। একইভাবে, এই আধ্যাত্মিক জীবনে দৈনন্দিন আনন্দ বাড়ায়, অনুভব করায় যে সে সম্পূর্ণরূপে সন্তুষ্ট।