BN/Prabhupada 0402 - বিভাবরী শেষ - তাৎপর্য প্রথম ভাগ



Purport to Vibhavari Sesa

এই গানটি ভক্তিবিনোদ ঠাকুর গেয়েছেন। তিনি সবাইকে খুব সকালে তাড়াতাড়ি উঠতে বলছেন। বিভাবরী শেষ- রাত্রি শেষ হয়ে গেছে, আলোক প্রবেশ- সূর্যের প্রকাশের ঝলক আসছে, এখন তুমি উঠে পড়ো। নিদ্রা ছাড়ি উঠ জীব- আর ঘুমিয়ে থেকো না। এই হচ্ছে বৈদিক জীবন। আমাদেরকে সূর্যোদয়ের পর আর শুয়ে থাকা উচিত নয়। সূর্যোদয়ের পূর্বে উঠা উচিত। এটা স্বাস্থ্যকর জীবনও বটে। তারপর অবিলম্বে বিছানা থেকে উঠার পর, আমাদেরকে ভগবানের পবিত্র নাম জপ করতে হবে। এখানে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, বলো হরি হরি, এখন আপনি হরে কৃষ্ণ মন্ত্র জপ করুন, মুকুন্দ মুরারি, কৃষ্ণের বিভিন্ন নাম।

মুকুন্দ মানে যিনি মুক্তি দান করেন। মুরারি, মুরারি মানে মুর নামের অসুরের শত্রূ কৃষ্ণ। রাম হচ্ছে আরেকটি নাম, প্রসিদ্ধ, রাম, কৃষ্ণ। হয়গ্রীব, হয়গ্রীব হচ্ছে কৃষ্ণের আরেকজন অবতারের নাম। একইভাবে নৃসিংহ, নর-হরি, অর্ধেক সিংহ, অর্ধেক মানুষ রূপ, নৃসিংহ দেব। বামন অবতার, নৃসিংহ বামন, শ্রী-মধুসূদন। মধুসূদন, মধু এবং কৈতব নামে অসুর ছিল, ব্রহ্মার সৃষ্টির পর তারা তাঁকে গিলে ফেলতে এসেছিল, তাই তাদের হত্যা করা হয়েছিল। তাইজন্য কৃষ্ণের আরেকনাম হচ্ছে মধুসূদন। মধুসূদন নামটি ভগবদ গীতায় অনেক জায়গায় খুঁজে পাওয়া যায়। মধুসূদন মানে মধু নামক দৈত্যের নিধনকারী। কৃষ্ণ দুইই বন্ধু এবং শত্রু।। তিনি প্রকৃতপক্ষে সকলের বন্ধু, কিন্তু তাদের জন্য তিনি শত্রু হয়ে যান, যারা কৃষ্ণের সাথে শত্রুর মতো ব্যবহার করে। তিনি কারো শত্রু নন, কিন্তু যদি কেউ তাকে শত্রু হিসেবে দেখতে চায় তবে তারা শত্রুর মত দেখতে পায়। এটাই পরম। অসুররা, তারা কৃষ্ণকে শত্রু রূপে দেখতে চায়। তাই, অসুরদের ইচ্ছা পালন করার জন্য, তিনি তাদের সামনে শত্রুরূপে আর্বিভূত হন, তাকে হত্যা করেন এবং মুক্তি প্রদান করেন। এটি কৃষ্ণের পূর্ণ লীলা, মধুসূদন ব্রজেন্দ্র-নন্দন শ্যাম। প্রকৃতপক্ষে ভগবানের কোন নাম নেই, কিন্তু তার নাম তার লীলা অনুযায়ী নির্বাচন করা হয়। যেমন এই মধুসূদন নামটি তাকে দেওয়া হয়েছে কারণ তিনি মধু নামক অসুরকে হত্যা করেছেন বলে।

একইভাবে, তিনি ব্রজেন্দ্র-নন্দন নামে পরিচিত, ব্রজের পুত্র, বৃন্দাবন, কারণ তিনি যশোদা ও নন্দ মহারাজের পুত্র রূপে আর্বিভুত হয়েছেন, ব্রজেন্দ্র-নন্দন। শ্যাম, তার দেহের রং কালো, তাই তাকে শ্যামসুন্দর বলা হয়। পুতনা-ঘাতন, কৈতব-শাতন, জয় দাশরথি -রাম। তাই যেহেতু তিনি অসুর পুতনাকে হত্যা করেছেন, তার নাম পুতনা ঘাতন। ঘাতন মানে হত্যাকারী। কৈতব-শাতন, এবং তিনি সব ধরনের বিপদকে শাস্তি দেন। জয়-দাশরথি-রাম। রাবণকে হত্যা করার সম্বন্ধে তার জয় জয়কার হয়, জয় দাশরথি। দাশরথি মানে, তার পিতার নাম ছিল দশরথ, তাই তিনি দাশরথি, দাশরথি-রাম। যশোদা-দুলাল গোবিন্দ-গোপাল। যশোদা-দুলাল মানে মা যশোদার পালিত পুত্র। গোবিন্দ-গোপাল, এবং তিনি হচ্ছেন গোপ বালক, গোবিন্দ, গাভীদের আনন্দ প্রদান করেন। বৃন্দাবন-পুরন্দর, বৃন্দাবনের ভূমির মুখ্য। তিনি বৃন্দাবনে সবার জন্য আকর্ষণের কেন্দ্র বিন্দু। রাবণান্তকর গোপী-প্রিয়-জন, তিনি গোপীদের খুব প্রিয়, গোপী প্রিয়। রাধিকা-রমণ, এবং তিনি সর্বদা রাধারাণীকে আনন্দ প্রদান করেন, তাইজন্য তার নাম রাধিকা-রমণ। ভুবন-সুন্দর-বর। তিনি এত গোপীদের আর্কষণ করেছেন, এর মানে হল যে তিনি সমগ্র বিশ্বের কাছে আকর্ষণীয়। এই বিশ্বের মধ্যে কৃষ্ণের চেয়ে আরও আকর্ষণীয় কেউ নেই, বা অন্য কোথাও, তাই তাকে ভুবন-সুন্দর-বর নামে অভিহিত করা হয়। বর মানে প্রধান। রাবণান্তকর, মাখন-তস্কর, গোপী-জন-বস্ত্র-হারী।