BN/Prabhupada 0403 - বিভাবরী শেষ - তাৎপর্য দ্বিতীয় ভাগ
যেমন রাম, যখন তিনি ভগবান রামচন্দ্র রূপে আর্বিভুত হয়েছিলেন, তিনি রাবণকে হত্যা করেন, রাবণান্তকর। মাখন-তস্কর, এবং বৃন্দাবনে তিনি মাখন চোর নামে পরিচিত। তার বাল্যলীলাতে, তিনি গোপীদের পাত্র থেকে মাখন চুরি করতেন। এটা ছিল তার লীলার আনন্দ, সেইজন্য তাকে মাখন-তস্কর বলা হয়, মাখন চোর। গোপী-জন-বস্ত্র-হারী এবং তিনি গোপীদের পোষাক চুরি করেন, যখন তারা স্নান করছিলেন। এটি অত্যন্ত রহস্যপূর্ণ লীলা। প্রকৃতপক্ষে, গোপীরা কৃষ্ণকে চান তাঁরা কাত্যায়নী দেবীর কাছে প্রার্থনা করেন, দেবী কাত্যায়নী, কারণ তিনি তাঁর বয়সের সকল মেয়েদের কাছে আর্কষণীয় ছিলেন, তারা কৃষ্ণকে পতি হিসাবে পেতে চেয়েছিলেন। তাই, বাইরে থেকে দেখতে, কৃষ্ণ একই বয়সের ছিলেন, এবং কিভাবে তিনি সব গোপীদের স্বামী হতে পারেন? কিন্তু তিনি গ্রহণ করেছিলেন, কারণ গোপীরা চাইছিলেন কৃষ্ণের স্ত্রী হতে। সেইজন্য কৃষ্ণ তাদের অনুরোধ স্বীকার করেন। তাদের প্রতি কৃপা করতে, তাদের বস্ত্র হরণ করেন, কারণ একজন স্বামীই কেবল তাঁর স্ত্রীর অঙ্গ অনাবরণ করতে পারেন অন্য কেউই স্পর্শ করতে পারে না। তাই এটা ছিল অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য, কিন্তু মানুষ সেটি জানে না। এ কারণেই কৃষ্ণ লীলা একজন আত্ম উপলব্ধ ব্যক্তির কাছ থেকে শুনা উচিত, অন্যথায় এই প্রসঙ্গ এড়িয়ে চলতে হবে অন্যথায় আমরা ভুল করে ভাবব যে, কৃষ্ণ জোর করে বস্ত্র হরণ করেছিলেন এবং তিনি অত্যন্ত অধঃপতিত, নারী-শিকারী ইত্যাদি। কিন্তু আসলে তা নয়। তিনি হচ্ছেন পরম পুরুষ। তিনি প্রত্যেক ভক্তের ইচ্ছা পূর্ণ করেন। তাই কৃষ্ণের গোপীদেরকে নগ্ন দেখার কোন দরকার ছিল না, কিন্তু তাঁরা যেহেতু তাঁর স্ত্রী হতে চেয়েছিলেন, তাই তিনি তাঁদের ইচ্ছা পূরণ করেন। একটি চিহ্নস্বরূপ, "হ্যাঁ, আমি তোমাদের স্বামী, আমি তোমাদের বস্ত্র হরণ করেছি। এখন তোমরা তোমাদের জামাকাপড় নিয়ে বাড়ি যাও। "তাই তিনি গোপীজন-বস্ত্রহারী নামে পরিচিত। ব্রজের রাখাল, গোপবৃন্দপাল, চিত্তহারী বংশীধারী। ব্রজের রাখাল, বৃন্দাবনের গোপ বালক,এবং গোপবৃন্দপাল, তার উদ্দেশ্য ছিল গোপদের কিভাবে সন্তুষ্ট করা যায়, তাঁর পিতা, কাকা, তাঁরা সবাই গাভী রাখতেন, তাঁদের আনন্দ দিতে, তাই তাকে গোপবৃন্দপাল বলা হয়। চিত্তহারী বংশীধারী এবং যখন তিনি বাঁশি বাজাতেন, প্রত্যেকের হৃদয় জিতে নিতেন, চিত্তহারী। তিনি প্রত্যেকের হৃদয় চুরি করে নিতেন। যোগীন্দ্রবন্দন, যদিও তিনি বৃন্দাবনে একটি ছোট গোপ বালক হিসাবে কৃষ্ণ খেলা করতেন, ঠিক যেন গ্রামের ছেলে বন্ধুদের সাথে মজা করছেন। কিন্তু তারপরও, তিনি হলেন যোগীন্দ্রবন্দন। যোগীন্দ্র মানে সর্বশ্রেষ্ঠ যোগী ধ্যানাবস্থিত তদ্গতেন মনসা পশ্যন্তি যেন যোগিনা (শ্রী.ভা. ১২.১৩.১) যোগিনা, ধ্যান, তারা কি খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন? এই কৃষ্ণ। তারা কৃষ্ণকে খুঁজছেন তাই যতদিন তারা কৃষ্ণের উপর তাদের মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার পর্যায়ে না আসেন তাদের যোগ নীতি, বা যৌগিক শক্তি, অর্থহীন। যোগিনাম্ অপি সর্বেষাম্ মদগত অন্তর (ভ.গী. ৬.৪৭) যোগী, সর্বশ্রেষ্ঠ যোগী, নিজেদের হৃদয়ের ভিতর কৃষ্ণকে সবসময় দেখা উচিত। এটাই যোগের সিদ্ধি। এজন্যই তাকে বলা হয় যোগীন্দ্রবন্দন, শ্রী-নন্দনন্দন, ব্রজজনভয়হারী। যদিও তিনি মহান মনীষীদের দ্বারা পুজিত হন, তবুও তিনি বৃন্দাবনে নন্দ মহারাজের পুত্র রূপে থাকেন। এবং বৃন্দাবন অধিবাসীরা, তারা কৃষ্ণের সুরক্ষায় নিরাপদ বোধ করেন। নবীন নিরদ, রূপ মনোহর, মোহন বংশীবিহারী। নবীন নিরদ - নিরদ মানে মেঘ, তার গায়ের রং নতুন মেঘের মতো। নতুন মেঘ, কালো মত চেহারা, তবুও সে দেখতে খুব সুন্দর। সাধারণত কালো রঙ এই জড় জগতে খুব সুন্দর বলে বিবেচনা করা হয় না, কিন্তু তার শরীর দিব্য, কারণ, যদিও তিনি কালো, তিনি সর্বজনীন আকর্ষণীয়, রূপ মনোহর। মোহনবংশীবিহারী, যখন তিনি তার বাঁশীর সাথে দাঁড়িয়ে থাকেন। তিনি, যদিও তিনি কালো, তিনি সবার কাছে এত আকর্ষণীয় হয়ে ওঠেন। যশোদা-নন্দন, কংস-নিসূদন, তিনি মা যশোদার পুত্র রূপে প্রসিদ্ধ, তিনি কংসের হত্যাকারী, এবং নিকুঞ্জ-রাস-বিলাসী, এবং তিনি নৃত্য করতেন, রাস নৃত্য, নিকুঞ্জ বনে, বংশীবটে, নিকুঞ্জে। কদম্বকানন, রাসপরায়ণ, অনেক কদম্ব গাছ আছে। কদম্ব একটি প্রকারের ফুল যা বিশেষ করে বৃন্দাবনে জন্মে, অত্যন্ত সুগন্ধযুক্ত এবং সুন্দর, নিটোল বৃত্তাকার ফুল, তাই কদম্ব-কানন, তিনি কদম্ব গাছের নিচে রাস নৃত্যের আনন্দ নিতেন। আনন্দবর্ধন প্রেমনিকেতন, ফুলশরযোজক কাম। অতএব তিনি গোপীদের প্রেমের ইচ্ছাকে জাগ্রত করেছিলেন এবং তাদের দিব্য আনন্দ বর্ধন করেছিলেন। আনন্দবর্ধন প্রেমনিকেতন, কারণ তিনি সম্পূর্ণ আনন্দের আধার গোপীরা আনন্দ উপভোগ করতে আসতেন, কারণ তিনি ছিলেন সমস্ত আনন্দের আধার যেমন আমরা জল আনতে সরোবরে যাই, যেখানে জল থাকে। সুতরাং একই ভাবে, যদি আমরা সত্যিই একটি আনন্দময় জীবন চাই, তাহলে আমাদের এটা সমস্ত আনন্দের আধার, কৃষ্ণের থেকে নিতে হবে। আনন্দ-বর্ধন, সেই আনন্দ বর্ধিত হবে। জড় আনন্দ কম হবে। আপনি একটি দীর্ঘ সময়ের জন্য আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন না, এটি কম হয়ে যাবে। কিন্তু আধ্যাত্মিক আনন্দ, যদি তুমি সব আনন্দ কৃষ্ণের থেকে নিতে চাও, তাহলে সেটি বৃদ্ধি হবে। আনন্দ শক্তি বৃদ্ধি হবে, এবং আপনি আরও আরও সুখ পাবেন। আপনার আনন্দ শক্তি বা পাবার ইচ্ছা যত বৃদ্ধি করবেন, সেই সরবরাহও নিরবচ্ছিন্ন থাকবে। কোন সীমা থাকবে না। ফুলে-শর-যোজক কাম, তিনি দিব্য কামদেব। কামদেব, তার তীর আর ধনুকের সাথে, জড় জগতে তিনি কামুক ইচ্ছা বৃদ্ধি করেন। একইভাবে আধ্যাত্মিক জগতে, তিনি পরম কামদেব। তিনি গোপীদের কাম ইচ্ছাকে বৃদ্ধি করেন। তারা সেখানে আসতেন, এবং উভয়ের মধ্যে, কোন ঘাটতি ছিল না। তাঁরা তাদের ইচ্ছা বৃদ্ধি করছিলেন, এবং কৃষ্ণ তাদের সরবরাহ করছিলেন, জীবনের কোনও জড় ধারণা ছাড়াই। তাঁরা কেবল নৃত্য করছিলেন, ব্যাস্। গোপাঙ্গনাগণ, চিত্তবিনোদন, সমস্ত গুণগণধাম। তিনি বিশেষ করে আকর্ষণীয়, গোপাঙ্গনা। গোপাঙ্গনা মানে ব্রজধামের নর্তকীরা। গোপাঙ্গনা-গণ, চিত্তবিনোদন, তারা কেবল কৃষ্ণের চিন্তায় লীন থাকত। তারা কৃষ্ণের প্রতি এত আকৃষ্ট ছিল, তারা তাঁর অস্তিত্বকে, তাঁর রূপকে তাঁদের হৃদয়ে এক মূহুর্তের জন্যও ত্যাগ করতে পারে নি। চিত্ত-বিনোদন, তিনি গোপীদের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন, চিত্ত-বিনোদন। সমস্ত-গুণ-গণ-ধাম, তিনি সমস্ত দিব্য গুণের ভাণ্ডার। যমুনাজীবন, কেলিপরায়ণ, মানস-চন্দ্র-চকোর। মানস-চন্দ্র-চকোর, চকোর নামে একটা পাখি আছে সে চন্দ্রের দিকে তাকিয়ে থাকে অনুরূপভাবে, তিনি গোপীদের মধ্যে চাঁদ ছিলেন, এবং তারা কেবল তাঁকে দেখতেন এবং তিনি যমুনা নদীর জীবন, কারণ তিনি যমুনা নদীতে বিহার করে আনন্দ পেতেন নামসুধারস, গাও কৃষ্ণযশ, রাখো বচন। তাই ভক্তিবিনোদ ঠাকুর প্রত্যেককে অনুরোধ করছেন, "এখন তুমি ভগবানের সমস্ত নাম জপ করো এবং আমাকে রক্ষা কর।" রাখো বচন মনঃ "আমার প্রিয় মন কৃপা করে আমার কথা শোন না করো না, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সমস্ত পবিত্র নাম জপ কর।"