BN/Prabhupada 0430 - চৈতন্য মহাপ্রভু বলেছেন ভগবানের প্রতিটি নামই শক্তিশালী



Lecture on BG 2.11 -- Edinburgh, July 16, 1972

নাম্নামকারী বহুধা নিজসর্ব শক্তি
স্তত্রার্পিতা নিয়মিত স্মরণে ন কালঃ
এতাদৃশী তব কৃপা ভগবন্মমাপি
দুর্দৈবম্‌ ঈদৃশম্‌ ইহাজনি নানুরাগঃ
(চৈতন্য চরিতামৃত অন্ত্য ২০/১৬)

শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু বলেছেন যে ভগবানের প্রতিটি নামই ভগবানের মতোই শক্তিশালী। কারণ ভগবান পরম, তাই তাঁর নাম, রূপ, লীলার মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। ভগবানের থেকে কিছুই আলাদা নয়। এটাই পরম জ্ঞান। অদ্বয় জ্ঞান। সুতরাং আপনি যদি ভগবানের পবিত্র নামটি উচ্চারণ করেন তবে এর অর্থ আপনি সরাসরি ভগবানের সাথে যোগাযোগ রাখছেন। কারণ নামটি ভগবানের থেকে আলাদা নয়। বোঝার চেষ্টা করুন একইভাবে, আপনি যদি আগুন স্পর্শ করেন তবে সেটি কাজ করবে। আপনি যদি না জানেন, বা জানেনও, আগুনের গুণগত মান কী, তাতে কোনও কিছু যায় আসেনা। আপনি যদি আগুন স্পর্শ করেন তবে সেটি কাজ করবে। একইভাবে, আপনি যদি সত্যই ভগবানের পবিত্র নাম জপ করেন তবে তা কার্যকর হবে। উদাহরণটি হল, যেমন আপনি আগুনে লোহার রড রেখেছিলেন, এটি উষ্ণ, উষ্ণতর এবং ধীরে ধীরে লাল গরম হয়ে যায়। আগুনের সহযোগিতায় লোহার রডটি আগুনে পরিণত হয়। লোহার রড আগুন নয়। তবে আগুনের সাথে সঙ্গ করে তা আগুনের মতোই হয়ে যায়, যাতে এটি গরম হয়ে লাল হলে আপনি যে কোনও জায়গায় স্পর্শ করুন, লোহার রডটি আগুন জ্বালিয়ে দেবে। একইভাবে, আপনি যদি সর্বদা ভগবানের সাথে যোগাযোগ রাখেন তবে ধীরে ধীরে আপনি দৈব স্বভাবের হবেন আপনি ভগবান হয়ে যাবেন না, তবে আপনি ভগবানের মতোই হয়ে যাবেন। এবং যেই মাত্র আপনি ভগবানের মতোই গুণাবলী লাভ করেন, আপনার সমস্ত দৈব গুণাবলী সমূহ প্রকাশ পেতে থাকবে এটাই বিজ্ঞান। বোঝার চেষ্টা করুন। আমরা ভগবানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রতিটি জীবই। ভগবান কে, আপনি কে এসব আপনি নিজেই অধ্যয়ন করতে পারেন কারণ আমি অংশ, এবং ঠিক যেমন, এক বস্তা চাল থেকেও যদি আপনি কয়েক দানা চাল নেন, বস্তাটিতে কী মানের চাল রয়েছে তা আপনি বুঝতে পারবেন। একইভাবে ভগবান মহান। ঠিক আছে কিন্তু আমরা যদি আমাদের সম্পর্কে পর্যবেক্ষণ করি, আমরা ভগবানকেও বুঝতে পারব আপনি যেমন সমুদ্র থেকে এক ফোঁটা জল নিয়ে যান। সমুদ্রের রাসায়নিক উপাদান কী তা আপনি বুঝতে পারবেন। আপনি বুঝতে পারবেন। সুতরাং একে বলা হয় ধ্যান, নিজেকে অধ্যয়ন করার জন্য, "আমি কী?" যদি কেউ নিজেই অধ্যয়ন করে থাকে তবে সে ভগবানকেও বুঝতে পারে। এখন ধরুন, "আমি কি?" এমনকি আপনি নিজের উপর পর্যবেক্ষণ করলেও বুঝতে পারবেন যে আপনি একজন স্বতন্ত্র ব্যক্তি। স্বতন্ত্র ব্যক্তি মানে আপনার নিজের মতামত আছে ,আমার নিজের মতামত আছে। তাই মাঝে মাঝে আমরা অসম্মতি প্রকাশ করি। কারণ আপনি স্বতন্ত্র, আমি স্বতন্ত্র। এবং কারণ আমরা সকলেই ভগবানের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে পৃথক, ভগবানকেও অবশ্যই পৃথক হতে হবে। এটিই হচ্ছে পর্যবেক্ষণ। আমি যেমন একজন ব্যক্তি, তেমনি ভগবানও ব্যক্তি। ভগবানকে নকল করা যায় না। আমরা যদি ভগবানকে আদি পিতা, পরম পিতা হিসাবে গ্রহণ করি ... খ্রিস্টান ধর্ম বিশ্বাস করে। অন্য সমস্ত ধর্ম বিশ্বাস করে। এবং আমরাও বিশ্বাস করি, শ্রীমদ্ভগবদগীতা। কারণ শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন,অহম্‌ বীজপ্রদ পিতা (শ্রীমদ্ভগবদ্গী‌তা ১৪।৪), "আমি সমস্ত জীবের আসল পিতা।" সুতরাং ভগবান যদি সমস্ত জীবের পিতা হন এবং আমরা সকলেই জীব, আমরা সকলেই স্বতন্ত্র ব্যক্তি, ভগবান কীভাবে নির্বিশেষ হলেন? ভগবান একজন ব্যক্তি। এটাকে বলা হয় দর্শন; একে যুক্তি বলা হয়।

এখন, এই পৃথিবীতে, আমরা অভিজ্ঞতা পেয়েছি যে আমরা কাউকে ভালবাসতে চাই। যে কেউ। এমনকি প্রাণী রাজ্যেও। একটি সিংহও বাচ্চাদের ভালোবাসে। সেই ভালোবাসাটা আছে । প্রেম, এটাকে প্রেম বলে। সুতরাং ভগবানের মধ্যেও এই প্রেমময় বিষয়টি আছে। এবং যখন আমরা ভগবানের সংস্পর্শে আসি তখন আমাদের আদানপ্রদানগুলি কেবল প্রেমের ভিত্তিতে হয়। আমি শ্রীকৃষ্ণ বা ভগবানকে ভালবাসি এবং শ্রীকৃষ্ণ আমাকে ভালোবাসেন। এটি আমাদের অনুভূতির বিনিময়। সুতরাং এইভাবে ভগবানের বিজ্ঞান এমনকি কোনও বৈদিক সাহিত্য না পড়েও - অবশ্যই এটি আপনাকে সহায়তা করবে - আপনি যদি গভীরভাবে অধ্যয়ন করেন তবে ভগবানকে বুঝতে পারবেন। কারণ আমি ভগবানের নমুনা, আমি ক্ষুদ্র কণা। যেমন স্বর্ণখণ্ডও স্বর্ণ। সমুদ্রের জলের ফোটাও নোনতা। সমুদ্রও নোনতা, আপনি বুঝতে পারবেন। একইভাবে, আমাদের স্বতন্ত্রতা অধ্যয়ন করে, আমাদের প্রবণতাগুলি অধ্যয়ন করে আমরা ভগবান কী তা বুঝতে পারি। এটি একটি দিক। এবং এখানে ভগবান ব্যক্তিগতভাবে নিজেকে উপস্থাপন করছেন শ্রীকৃষ্ণ রূপে । তিনি বলেছেন "যদা যদা হি ধর্মস্য ... (বিরতি) ... সাধু ভক্ত এবং অসুরদের বধ করার জন্য, আমি আবির্ভূত হই। " তবে মনে রেখ যে, ভগবান পরম। তাঁর ভক্তদের উদ্ধার, বা অসুরদের বিনাশ, দুটোই সমান। কারণ আমরা বৈদিক সাহিত্য থেকে শিখি যে পরম ভগবান দ্বারা নিহত হওয়া দানবরা, তারাও একই পরিত্রাণ, মুক্তির স্তরে যায়। কারণ ভগবান তাকে হত্যা করেছেন, ভগবান তাকে স্পর্শ করেছেন।

সুতরাং এটি একটি মহান বিজ্ঞান। এটি কোনও ভাবালুতা নয়। এটি দর্শন এবং প্রামাণিক বৈদিক সাহিত্যের উপর ভিত্তি করে। সুতরাং আমাদের একটাই অনুরোধ আপনি এই আন্দোলনটিকে খুব গুরুত্ব সহকারে নেওয়ার চেষ্টা করুন এবং আপনি সুখী হবেন।