BN/Prabhupada 0450 - ভগবৎ সেবায় কোন জড় বাসনা এনো না



Lecture on SB 7.9.4 -- Mayapur, February 18, 1977

প্রদ্যুম্ন: অনুবাদ - "নারদ মুনি বললেন: হে রাজন যদিও উন্নত ভক্ত প্রহ্লাদ মহারাজ তিনি কেবল ছোট্ট বালক ছিলেন, তিনি ব্রহ্মদেবের কথা মেনে নিয়েছিলেন। তিনি ধীরে ধীরে ভগবান নরসিংহদেবের দিকে অগ্রসর হন, এবং হাতজোড় করে তাঁকে শ্রদ্ধা সহকারে প্রণাম করেন।"

শ্রীল প্রভুপাদঃ

তথেতি শনকৈ রাজন
মহাভাগবতোর্ভাকঃ
উপেত্যা ভুবি কায়েন
ননাম বিধৃতাঞ্জলী
(শ্রীমদ্ভাগবতম্‌ ৭।৪।৯)

সুতরাং প্রহ্লাদ মহারাজ হলেন মহাভাগবত, তিনি সাধারণ ভক্ত নন। অর্ভকাঃ। অর্ভকাঃ অর্থাৎ নিষ্পাপ শিশু, পাঁচ বছরের ছোট বালক। কিন্তু মহাভাগবত। তিনি বালক বলেই নয় ...অহৈতুকী অপ্রতিহতা (শ্রীমদ্ভাগবতম্‌ ১।২।৬)। একটি ছোট শিশু মহাভাগবতে পরিণত হতে পারে এবং খুব বিদ্বান পন্ডিত অসুর হয়ে উঠতে পারে। ভক্তি এত উন্নত যে এগুলি পরস্পরবিরোধী। অর্ভকাঃ। অর্ভ অর্থাৎ বোকা বা শিশুবৎ, তবে একই সাথে মহাভাগবত। তা সম্ভব। মহাভাগবত অর্থাৎ ... আমাদের অবশ্যই বিভিন্ন প্রকারের ভক্তদের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করা উচিতঃ কনিষ্ঠ অধিকারী, মধ্যম-অধিকারী এবং মহাভাগবত, উত্তম অধিকারী। উত্তম অধিকারী।

সুতরাং প্রহ্লাদ মহারাজ হলেন মহাভাগবত, মহাভাগবত, তাঁর বয়স এখন পাঁচ বছর বলে নয় ...না। তিনি মায়ের গর্ভ থেকেই মহাভাগবত ছিলেন। যখন তাঁর মাকে দেবতারা আক্রমণ করেছিলেন, গ্রেপ্তার করেছিলেন এবং দেবতারা তাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন, নারদ মুনি সেখান থেকে যাচ্ছিলেন: "আপনারা কি করছেন?" এবং "তিনি হিরণ্যকশিপুর স্ত্রী এবং তার গর্ভে সন্তান আছে। তাই আমরা সেই শিশুটিকেও হত্যা করতে চাই। " নারদ মুনি সঙ্গে সঙ্গে তাদের বললেন, "না, না, না, না তিনি সাধারণ শিশু নন। তিনি মহাভাগবত। সুতরাং স্পর্শ করবেন না। " তাই তারা রাজি হলেন। নারদ মুনি ... এই হলেন দেবতা। যদিও কিছু ভুল হয়েছে, যখন নারদ মুনি তাদের এই আদেশ করলেন যে "ক্ষতি করার চেষ্টা করবেন না। তিনি মহাভাগবত,"অবিলম্বে... সুতরাং নারদ মুনি বললেন, "প্রিয় পুত্রী, তোমার স্বামী ফিরে না আসা পর্যন্ত তুমি আমার সাথে এসো।" হিরণ্যকশিপু দেবতাদের পরাজিত করার জন্য অত্যন্ত কঠোর তপস্যা করতে গিয়েছিল। এটি দৈত্যের অপস্যা । হিরণ্যকশিপু খুব কঠোর ধরণের তপস্যায় নিযুক্ত ছিল। উদ্দেশ্য কি? কিছু জাগতিক উদ্দেশ্য।

তবে সেই ধরণের তপস্যা অনর্থক। শ্রম এব হি কেবলম্‌ (ভাগবত ১।২।৮) জড়বাদী, তপস্যা করে। যদি তারা তা না করে তবে তারা ব্যবসার ক্ষেত্রে বা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বা রাজনৈতিক ক্ষেত্রে উন্নতি করতে পারে না। তাদের খুব, খুব কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। ঠিক যেমন আমাদের দেশে, মহান নেতা মহাত্মা গান্ধী, তাঁকে খুব কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছিল। ডারবানে কুড়ি বছর তিনি তাঁর সময় নষ্ট করেছিলেন এবং ত্রিশ বছর ভারতে। আমি বলব তার সময় নষ্ট করেছে। কিসের জন্য? কিছু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে। তার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কী? "এখন আমরা ভারতীয় নামের একটি গোষ্ঠী বলে পরিচিত । আমাদের অবশ্যই ইংরেজদের তাড়িয়ে দিতে হবে এবং সর্বোচ্চ প্রভুত্ব নিতে হবে।" এটি হল উদ্দেশ্য। সুতরাং এটি হল অন্যাভিলাষিতাশুন্যম্‌ (শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত মধ্য ১৯।১৬৭)। এই উদ্দেশ্য কি? আজ আপনি ভারতীয়, আগামীকাল আপনি অন্য কিছু হতে পারেন। তথা দেহান্তরপ্রাপ্তিঃ (শ্রীমদ্ভাগবদ্গী‌তা ২।১৩)। আপনাকে নিজের শরীর পরিবর্তন করতে হবে। তাহলে পরবর্তী শরীর কী? আপনি কি আবার ভারতীয় হতে চলেছেন? নিশ্চয়তা নেই। এমনকি যদি আপনি ভারতের প্রতি খুব স্নেহশীল হন, ঠিক আছে, আপনার কর্ম অনুসারেই আপনি দেহ পাবেন। এমনকি যদি আপনি কোনও গাছের ভারতীয় দেহ পান তবে আপনি পাঁচ হাজার বছর ধরে দাঁড়িয়ে থাকবেন। লাভ কী? শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন তথা দেহান্তরপ্রাপ্তিঃ। তিনি বলেন না যে কোনও মানুষ আবার মানুষ হতে চলেছে। কোন নিশ্চয়তা নেই। কিছু বদমাশ বলে যে একবার এই মানবদেহ পাওয়ার পরে অধঃপতিত হয় না। না। তা সত্য নয়। সত্যটি হল ৮,৪০০,০০০ বিভিন্ন প্রজাতির জীবনের মধ্যে , আপনার কর্ম অনুযায়ী আপনি একটি শরীর পাবেন। এখানেই শেষ। কোনও নিশ্চয়তা নেই যে আপনার ... এমনকি আপনি যদি ভারতীয় দেহও পান, তবে কেই বা আপনার পরোয়া করবে?

তাই কৃষ্ণভাবনামৃত ছাড়া যা কিছু তপস্যা, ব্রত আমরা করি, তা কেবল সময়ের অপব্যয়। আমাদের জানা উচিত। কেবল সময়ের অপচয়। কারণ আপনাকে নিজের দেহ পরিবর্তন করতে হবে। সব কিছু বদলে যাবে। আপনি নগ্ন হয়ে এসেছিলেন; আপনাকে নগ্ন হয়েই যেতে হবে। আপনি লাভ করতে পারবেন না। মৃত্যুঃ সর্বহরশ্চাহম্‌ (শ্রীমদ্ভগবদ্গী‌তা ১০।৩৪)। সর্বহরশ্চাহম্‌ আপনি যা অর্জন করেছেন, সমস্ত কিছু কেড়ে নেওয়া হবে। মৃত্যু ... ঠিক হিরণ্যকশিপুর মতো। হিরণ্যকশিপু, যা কিছু সে অর্জন করেছিল, প্রহ্লাদ মহারাজ বলেছিলেন, "এক ক্ষণের মধ্যে, আপনি সব নিয়ে নিয়েছেন। সুতরাং, হে প্রভু, আপনি আমাকে কেন এই জাগতিক বর দিচ্ছেন? এর মূল্য কী? আমি আমার পিতাকে দেখেছি: কেবলমাত্র তার ভ্রুকূটির দ্বারাই দেবতারা ভয় পেতেন। তেমন অবস্থান আপনি একটি ক্ষণেই শেষ করেছেন। সুতরাং এই জাগতিক অবস্থানটির প্রয়োগ কি? "

সুতরাং যেহেতু যারা শুদ্ধ ভক্ত, তারা কোন বস্তুর কামনা করেন না। এটা তাদের নয় ...

অন্যাভিলাষিতাশূন্যম্‌
জ্ঞানকর্মাদি অনাবৃতম্‌
আনুকূল্যেন কৃষ্ণানু
শীলনম্‌ ভক্তিঃ উত্তমা
(ভক্তিরসামৃতসিন্ধু ১।১।১১)

আমাদের সর্বদা তা মনে রাখা উচিত। ভক্তিমূলক সেবা কার্যকর করার ক্ষেত্রে কোনও জাগতিক আকাঙ্ক্ষা আনবেন না। তবে তা শুদ্ধ নয়। না সাধু মন্যে যতো আত্মনোহম্‌ অসন্নপি ক্লেশদাসঃ দেহ শ্রীমদ্ভাগবতম্‌ ৫।৫।৪)। যেই মুহূর্তে আপনি জাগতিক আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আসবেন, তখন আপনি আপনার সময় নষ্ট করবেন। কারণ আপনাকে একটি দেহ পেতে হবে। আপনার ইচ্ছা পূরণ হবে। শ্রীকৃষ্ণ অত্যন্ত দয়ালু - যে যথা মাম প্রপদ্যন্তে তাম্‌ তথৈব ভজামি (শ্রীমদ্ভগবদ্গী‌তা ৪।১১) আপনি যদি ভক্তি দ্বারা কিছু আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে চান, শ্রীকৃষ্ণ অত্যন্ত দয়ালু: "ঠিক আছে।" তবে আপনাকে অন্য একটি দেহ নিতে হবে। এবং যদি আপনি শুদ্ধ হন, কেবল, ত্বাওয়া দেহম পুনর্জন্ম নৈতি মাম এতি (শ্রীমদ্ভগবতগীতা ৪।৯)। এটাই আবশ্যক, শুদ্ধ ভক্ত। তাই আমরা সবাইকে শুদ্ধ ভক্ত হওয়ার পরামর্শ দিই। শুদ্ধ ভক্ত ... এই উদাহরণ, মহা-ভাগবত। এই পাঁচ বছর বয়সী ছেলেটি, শ্রীকৃষ্ণের শুদ্ধ ভক্ত হয়ে তাঁকে সন্তুষ্ট করা ছাড়া তাঁর আর কোনও উদ্দেশ্য ছিল না।