BN/Prabhupada 0449 - ভক্তির দ্বারা তুমি ভগবানকে নিয়ন্ত্রণ করতে পার, সেটিই একমাত্র উপায়



Lecture on SB 7.9.3 -- Mayapur, February 17, 1977

সুতরাং ব্রহ্মা, ব্রহ্মা দেব, তিনি এই ব্রহ্মাণ্ডের প্রথম জীব বলে মনে করা হয়। লক্ষ্মীদেবী ভয় পেয়েছিলেন; ব্রহ্মাও খুব ভয় পেয়েছিলেন। তাই ব্রহ্মাও প্রহ্লাদ মহারাজকে অনুরোধ করেছিলেন যে "প্রিয় পুত্র, তুমি এগিয়ে যাও এবং ভগবানকে শান্ত করো। তুমি করতে পারো, কারণ তোমার জন্যই তিনি এই ভয়ঙ্কর রূপে প্রকট হয়েছেন। তোমার পিতা তাঁকে বিক্ষুব্ধ করেছেন, তোমায় বিভিন্নভাবে বিরক্ত করে, তোমায় শাস্তি দিয়ে, তোমায় বিপদে ফেলে। তাই তিনি অত্যন্ত ক্রুদ্ধ প্রকট হয়েছেন। সুতরাং তুমি তাঁকে শান্ত করতে পারো। আমরা পারি না। এটা সম্ভব নয়। " প্রহ্লাদ প্রেষয়াম আস ব্রহ্ম অবস্থিত অন্তিকে। (শ্রীমদ্ভাগবতম্‌ ৭।৯।৩) তাই প্রহ্লাদ মহারাজ অত্যন্ত উন্নত ভক্ত হওয়ায় তিনি ভগবানকে শান্ত করতে পারতেন। ভক্ত্যা, ভক্তি দ্বারা, আপনি পরম ভোগোবানকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। এটাই একমাত্র উপায়। ভক্ত্যা মাম্‌ অভিজানাতি (শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ১৮।৫৫) সেই উপলব্ধিও ভক্তি দ্বারা হয় , এবং ভক্তির মাধ্যমে আপনি ভগবানকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। বেদেষু দুর্লভম্‌ অদুর্লভ আত্মভক্ত। বেদ অধ্যয়ন করে আপনি ভগবানকে বুঝতে পারবেন না। বেদেষু দুর্লভম অদুর্লভ আত্মভক্ত । তবে তাঁর ভক্তদের জন্য তিনি খুব সহজলভ্য। সুতরাং ভক্তিই একমাত্র উৎস। ভক্ত্যাহম্‌ একয়া গ্রাহ্যম্‌ কেবল ভক্তির মাধ্যমেই আপনি বন্ধুর মতো সমান স্তরে ভগবানের সাথে কথা বলতে পারেন তাঁর সান্নিধ্য পেতে পারেন। গোপবালকেরা, তারা শ্রীকৃষ্ণের প্রতি একেই মর্যাদার সাথে আচরণ করতো : "শ্রীকৃষ্ণ আমাদেরই মতো।" তবে তারা শ্রীকৃষ্ণকে খুব খুব তীব্রভাবে ভালবাসত। এটাই তাদের যোগ্যতা। তাই শ্রীকৃষ্ণ মাঝে মাঝে গোপবালকদের কাঁধে তুলতেও রাজি হতেন। সুতরাং এটিই ... শ্রীকৃষ্ণ চান যে, "আমার ভক্ত ... আমার ভক্ত হন এবং আমাকে নিয়ন্ত্রণ করুন। প্রত্যেকে আমাকে ভয় ও শ্রদ্ধার সাথে উপাসনা করে। আমি এমন একজনকে চাই যে এগিয়ে আসবে এবং আমাকে নিয়ন্ত্রণ করবে। " এমনটাই তিনি চান। তাই তিনি মাতা যশোদাকে তাঁর নিয়ন্তা হিসাবে গ্রহণ করেছেন। ভগবানকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়? ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণঃ (ব্রহ্মসংহিতা ৫।১ ) তিনি সর্বোচ্চ নিয়ন্তা। তাঁকে কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে? তা সম্ভব নয়। তবে তিনি তাঁর শুদ্ধ ভক্তের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে সম্মত হন। তিনি সম্মত হন, "হ্যাঁ মা, আমাকে নিয়ন্ত্রণ কর। আপনি আমাকে বাঁধো। তুমি আমাকে তোমার লাঠিটি দেখিও যাতে আমি ভয় পাই।"

সুতরাং সবকিছু আছে। ভগবানকে শূন্য ভাববেন না, না, শুন্যবাদী। তিনিই সব কিছু। জন্মাদি অস্য যথা (শ্রীমদ্ভাগবতম্‌ ১।১।১) অথাতো ব্রহ্ম জিজ্ঞাসা। আপনি ব্রহ্ম সম্পর্কে অনুসন্ধান করছেন। পরম্‌ ব্রহ্ম পরম্‌ ধাম পবিত্রম্‌ পরমম্‌ ভবান্‌ (শ্রীমদ্ভগবদগীতা ১০।১২) সুতরাং রাগ অবশ্যই থাকা উচিত, ভগবানের সর্বদা শান্ত থাকা উচিত নয়। তবে পার্থক্য হল তাঁর রাগ এবং তাঁর শান্তিপূর্ণ মনোভাব একই ফল প্রদান করে। প্রহ্লাদ মহারাজ, এক ভক্ত ... তিনি প্রহ্লাদ মহারাজের প্রতি অত্যন্ত সন্তুষ্ট, এবং তিনি তাঁর পিতার প্রতি অত্যন্ত অসন্তুষ্ট, তবে ফলাফল একইঃ উভয়ই মুক্তি পেয়েছেন। যদিও একজন ভক্ত সহযোগী হন, পক্ষান্তরে ভগবানের দ্বারা যে অসুরকে হত্যা করা হয়, সে সহযোগী হয় না - তিনি যোগ্য নন - তবে তিনি আধ্যাত্মিক জগতে প্রবেশ করেন। তিনি এই জড় বন্ধন থেকে মুক্তি পান। তাহলে কেন কোনও ভক্তের একই অবস্থান নেওয়া উচিত? অতএব, মাম্‌ এতি। ততো মাম্‌ তত্ত্বত জ্ঞাত্বা বিশতে তদন্তরম্‌। (শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ১৮।৫৫) বিশতে, আধ্যাত্মিক জগতে প্রবেশ করে, প্রবেশ করে। যারা মুক্তি পেয়েছে, তারাই প্রবেশ পেয়েছে।

ব্রহ্মভুতঃ প্রসন্নাত্মা
ন কাঙ্ক্ষতি
সমঃ সর্বেষু ভূতেষু
মদ্ভক্তিম্‌ লভতে...
(শ্রীমদ্ভগবতগীতা ১৮।৫৪)

তবে যারা ভক্ত, তাদের গ্রহে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, বৈকুণ্ঠ গ্রহ বা গোলোক বৃন্দাবন গ্রহ। এইভাবে একজন তার আসল অবস্থান পায়। তবে যদি আমরা ভক্তিতে না যাই, তবে আমরা ব্রহ্ম জ্যোতিতে প্রবেশ করতে পারি, তবে অধঃপতন হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আরুহ্য কৃচ্ছেন পরম পদম্‌ ততঃ পত্যন্তি অধো অনাদৃতয়ুষ্মদ অংঘ্রয়ঃ (শ্রীমদ্ভগবতম্‌ ১০।২।৩২)। সুতরাং যারা নৈর্ব্যক্তিক, তারা আধ্যাত্মিক জগতে প্রবেশ করতে পারে। তাকে বলে পরম্‌ পদম্‌। পদম্‌ পদম্‌ যদ্‌ বিপদাম্‌ (শ্রীমদ্ভগবতম্‌ ১০।১৪।৫৮)। তবে অধঃ পতন হওয়ার সম্ভাবনাও আছে । আরুহ্য কৃচ্ছেন । কঠোর ব্রত পালন ও তপস্যার পরেই কেউ ব্রহ্ম জ্যোতিতে প্রবেশ করতে পারেন। তবে যতক্ষণ না কেউ পরমপদমের তথ্য পাচ্ছে - সমাশ্রিত যে পদপল্লবপ্লবম - অধঃপতন হওয়ার সম্ভাবনা আছে। জড়জগতে ভূত্বা ভূত্বা প্রলীয়তে (শ্রীমদ্ভগবদ্গী‌তা ৮।১৯)।

তবে আধ্যাত্মিক জগতেও, যদি আপনি আধ্যাত্মিক জগতে প্রবেশ করেন, সেখান থেকেও, এমনকি কখনও কখনও এমনটা ঘটে। অবশ্যই, সেটি ভগবানের ইচ্ছা দ্বারা। ঠিক যেমন জয়-বিজয়। তারা ব্যক্তিগত সহযোগী ছিল। তবে ব্যাখ্যাটি হল শ্রীকৃষ্ণ চেয়েছিলেন যে "তাদের যাওয়া উচিত ..., হিরণ্যকশিপু ..., এই দুজন, জয়-বিজয়, তাদের জড় জগতে যাওয়া উচিত, এবং আমি অবশ্যই তাদের সাথে যুদ্ধ করব। কারণ সেই লড়াই, ক্রুদ্ধ হওয়া, সেই প্রবণতা আছে। তিনি কোথায় প্রদর্শিত করবেন? বৈকুণ্ঠে এই ক্রোধ ও যুদ্ধ প্রদর্শিত করার কোনও সুযোগ নেই। তা সম্ভব নয়। সুতরাং তিনি তাঁর ভক্তকে প্ররোচিত করেন "জড় জগতে যাও এবং আমার শত্রু হও, এবং আমি লড়াই করব। আমি ক্রুদ্ধ হব, "কারণ বৈকুণ্ঠে, আধ্যাত্মিক জগতে,এরকম করার কোনও সুযোগ নেই। সবাই সেবা করছে; সবাই বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করছে। কিছু সম্পর্ক ... লড়াইয়ের প্রশ্নই ওঠে না? তবে যুদ্ধ করার উদ্দীপনা আছে; ক্রোধ আছে। তিনি কোথায় প্রদর্শিত করবেন? এবং তাই শ্রীকৃষ্ণ অবতরণ হন, তিনি ক্রুদ্ধ হন এবং একজন ভক্ত তাঁর শত্রু হয়, এবং এটি হল কৃষ্ণ-লীলা, নিত্য-লীলা। এটা চলতে থাকে।

আপনাদের অনেক ধন্যবাদ।

ভক্তগণ: জয়! হরিবোল!