BN/Prabhupada 0555 - পারমার্থিক উপলব্ধির বিষয়ের মধ্যে ঘুমানো



Lecture on BG 2.62-72 -- Los Angeles, December 19, 1968

প্রভুপাদঃ আমাদের নীতিটি হল তৎপরত্বেন নির্মলম (শ্রী চৈতন্য চরিতামৃত মধ্য ১৯। ১৭০)। তুমি কৃষ্ণভাবনামৃতে নিয়োজিত হয়ে ইন্দ্রিয়ের ক্রিয়াকলাপ গুলো শুদ্ধ করতে পার। তখন ইন্দ্রিয়গুলি তোমাকে বিরক্ত করবে না। তুমি যদি ইন্দ্রিয়গুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাও তবে তোমাকে সর্ব প্রথম জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তখন তুমি খুব সহজেই অন্যান্য ইন্দ্রিয়গুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবে। সুতরাং তুমি জিহ্বাকে হরেকৃষ্ণ জপ করার এবং কৃষ্ণপ্রসাদ পাওয়ার কাজে নিযুক্ত কর - তুমি দেখতে পাবে যে তোমার অন্যান্য ইন্দ্রিয়গুলি ইতিমধ্যেই নিয়ন্ত্রিত হয়ে গেছে। এটি আমাদের ইন্দ্রিয়গুলিকে, জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রিত করার মূল চাবিকাঠি। আর তুমি যদি জিহ্বাকে বিশেষত্ব এবং প্রশ্রয় দাও, তবে তুমি কখনই অন্য ইন্দ্রিয়গুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। এটি হল ইন্দ্রিয়গুলিকে নিয়ন্ত্রিত করার রহস্য। চালিয়ে যাও।

তমালকৃষ্ণঃ (শ্রীমদ্ভগবদগীতা ২।৬৯) : "সমস্ত জীবের পক্ষে যা রাত্রি সেটা হল স্থিতপ্রজ্ঞের জন্য জাগরণের সময়, এবং সমস্ত জীবের জাগরণের সময় হল তত্ত্বদর্শী মুনির জন্য রাত্রি স্বরূপ।" তাৎপর্যঃ "বুদ্ধিমান লোকের দুটি শ্রেণি রয়েছে। একজন ইন্দ্রিয় ভোগতৃপ্তির উদ্দেশ্যে বৈষয়িক ব্যাপারে বুদ্ধিমান, এবং অন্যজন আত্মানুসন্ধানী এবং আত্ম-তত্ত্বজ্ঞান লাভের চেষ্টায় সদা জাগ্রত। আত্মানুসন্ধানী সাধু বা চিন্তাশীল মানুষের কাজকর্ম জড়-জাগতিক ভাবে আচ্ছন্ন মানুষদের কাছে রাত্রি বলে মনে হয়। আত্ম-উপলব্ধি সম্পর্কে অজ্ঞতার জন্যই জড়জাগতিক মানুষেরা তেমন রাত্রে ঘুমিয়ে থাকে। কিন্তু তত্ত্বদর্শী মুনি জড়জাগতিক মানুষদের রাত্রিতে সজাগ থাকেন।

প্রভুপাদঃ রাত মানে যখন মানুষ ঘুমায় এবং দিনের অর্থ যখন তারা জেগে থাকে। এটাই হল দিন এবং রাতের বোঝাপড়া। সুতরাং জড়-জাগতিক মানুষ, তারা আধ্যাত্মিক উপলব্ধির বিষয়ে ঘুমিয়ে থাকে। আমরা জড়জাগতিক মানুষদের দিনের বেলায় যে ক্রিয়াকলাপগুলি দেখতে পাই তা আসলে রাত। আধ্যাত্মিক মানুষের ক্ষেত্রে, তারা দেখেন যে, এই সমস্ত জাগতিক লোকেরা, তারা আত্ম-উপলব্ধির যে সুযোগ পেয়েছে এই দুর্লভ মানব জীবন, কিভাবে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে তারা তা নষ্ট করছে। আর জড়বাদী লোকেরা দেখছে, "ওহ, এই কৃষ্ণভাবনাময় তরুণ ছেলেরা, তারা সবকিছু ছেড়ে দিয়েছে এবং তারা হরেকৃষ্ণ জপ করছে। কেমন অর্থহীনতা। তারা ঘুমাচ্ছে। " সুতরাং দেখো? জড়-জাগতিক ব্যক্তির দৃষ্টিতে এই ক্রিয়াকলাপগুলি রাত, ঘুমানো। এবং আত্ম-উপলব্ধ ব্যক্তির জন্য, এই ক্রিয়াকলাপগুলি হল ঘুমানো। শুধু দেখ। ঠিক বিপরীত। কৃষ্ণভাবনাময় ব্যক্তিকে তারা সময় নষ্ট করতে দেখছে কৃষ্ণভাবনাময় ব্যক্তি তাদেরকে সময় নষ্ট করতে দেখছে। এটাই হল অবস্থান। চালিয়ে যাও।

তমালকৃষ্ণঃ "সেই সাধুরা আধ্যাত্মিক সংস্কৃতির ক্রমশ অগ্রগতিতে চিন্ময় আনন্দ অনুভব করেন, পক্ষান্তরে জড়-জাগতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত মানুষ আত্ম-উপলব্ধি করার ক্ষেত্রে ঘুমিয়ে থাকার কারণে, বিভিন্ন ধরণের ইন্দ্রিয়তৃপ্তির স্বপ্ন দেখেন।

প্রভুপাদঃ হ্যাঁ। তারা স্বপ্ন দেখছে, "এখন আমরা এটি করব তারপরের বার, আমার এটি থাকবে। পরের বার, আমার এটা থাকবে। পরের বার, আমি সেই শত্রুকে হত্যা করব। পরের বার, আমি এটি করব। " তারা সেভাবে পরিকল্পনা করছে। চালিয়ে যাও।

তমালকৃষ্ণঃ "... কখনও কখনও তারা ঘুমের ঘোরে সুখী এবং কখনও কখনও দুঃখিত বোধ করে। এই সমস্ত জড়-জাগতিক সুখ-দুঃখের প্রতি আত্মানুসন্ধানী ব্যক্তি সর্বদাই উদাসীন থাকেন।

প্রভুপাদঃ আত্ম-উপলব্ধির কাজে সচেষ্ট যে আত্মানুসন্ধানী ব্যক্তি তিনি খুব ভাল করেই জানেন, "ধর আমি যদি ভবিষ্যতে এরকম এবং ঐরকম বড় ব্যবসা করি, বা এই জাতীয় ... আমি এই ধরনের বড় আকাশচুম্বী বাড়ি নির্মাণ করতে পারি।" কিন্তু তিনি আত্মানুসন্ধানী হওয়ার কারণে, তিনি জানেন যে "এই সমস্ত জিনিসগুলি দিয়ে আমি কি করব? আমি মঞ্চ থেকে প্রস্থান করার সাথে সাথে এখানে সবকিছু থেকে যাবে, এবং আমি আরেকটা শরীর গ্রহণ করলে, আবার অন্য জীবন শুরু হবে। " এটি হল আত্মানুসন্ধান।