BN/Prabhupada 0606 - আমরা ভগবদ্গীতার যথাযথ শিক্ষা দিচ্ছি, সেটিই হচ্ছে পার্থক্য
Room Conversation -- January 8, 1977, Bombay
ভারতীয় ভদ্রলোক-১ঃ এখানকার দৈনিক আয় কত? তাঁরা এটি তাঁদের নিজেদের দৈনিক আয় জানতে আগ্রহী, গ্রন্থ বিতরণের দৈনিক আয় জানতে আগ্রহী।
শ্রীল প্রভুপাদঃ ওহ, গ্রন্থ বিতরণ? পাঁচ থেকে ছয় লাখ।
ভারতীয় ভদ্রলোকঃ আচ্ছা।
শ্রীল প্রভুপাদঃ বিক্রি থেকে আপনি ধারণা করতে পারেন।
ভারতীয় ভদ্রলোক-১ঃ আর কত জন লোকের মাঝেই বা এটি যাবে। এই ম্যাগাজিনটি বড়জোর ১ ডলার। আমেরিকান টাকায় ১ টাকা। (হিন্দী)... তাঁদের জন্য ম্যগাজিন।
শ্রীল প্রভুপাদঃ এটি হল প্রামাণিক। আর এইসব ইউরোপীয়রা... তারা মূর্খ আর বদমাশ নয় যে তারা অন্য কোন ধর্মীয় বই কিনতে আগ্রহী, তাঁদের বাইবেলের কথা বলছি না। তাহলে দেখতে পাচ্ছ, এই গ্রন্থগুলো অনেক শক্তিসম্পন্ন। সুতরাং এই অবস্থায় আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা করা উচিত যেন এটি আরও সুসংবদ্ধভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। আমি এদের সাহায্য নিয়ে এটি একাই করে যাচ্ছি, কিন্তু কোনও ভারতীয়রা আসছে না। সেটিই হল সমস্যা। অশোক চুগানিঃ আপনার কথাতে সম্মান রেখেই আমার মনে হয়, অনেক ভারতীয়রাই তাদের নিজেদের গ্রামে বা নিজেদের শহরে এটি করতে চেষ্টা করছে।
শ্রীল প্রভুপাদঃ কেউই করছে না।
অশোক চুগানিঃ আসলে আমি বলতে চাইছি যদি আপনি ইদানিং ভরতপুর গিয়ে থাকেন তো, প্রায় ৫,২০০ শয্যা রয়েছে নেত্র-যজ্ঞ কর্মকাণ্ডে, চক্ষু অপারেশন করার জন্য।
শ্রীল প্রভুপাদঃ আমি জানি। কিন্তু আমি এই সংস্কৃতির ব্যাপারে বলছি। অশোক চুগানিঃ সংস্কৃতি, হ্যাঁ।
ভারতীয় ভদ্রলোক-১ঃ সেটি একধরণের প্রথাগত সাহায্য।
ভারতীয় ভদ্রলোক- ২ঃ (অস্পষ্ট)... কর্মের অংশ, কেউ তা দেখভাল করছে।
ভারতীয় ভদ্রলোক-১ঃ সেটি পারবে না... অশোক চুগানিঃ ভক্তিতে এবং...
শ্রীল প্রভুপাদঃ কিন্তু একটি ব্যাপার হচ্ছে আমরা ভগবদ্গীতা যথাযথ প্রচার করছি। ভগবদ্গীতার কোথাও নেই যে আপনি লোকেদের চোখের যত্ন নিন। এরকম কোনও উক্তি নেই। সেটি আপনারা তৈরি করেছেন। কিন্তু আমরা ভগবদ্গীতার জ্ঞান প্রচার করছি এবং সেটিই হল পার্থক্য। আমাদের প্রচার হচ্ছে কারোর চোখের রোগমুক্তি করার পরিবর্তে, এমনভাবে তার মুক্তি পাবার ব্যবস্থা করুন যাতে করে তাকে আর দেহ না পেতে হয় যেখানে আবারও চোখের সমস্যা থাকবে। এইসব সমস্যাগুলোর সমাধান আপনি দিতে পারবেন না। কেউ চোখের যত্ন নিচ্ছে, কেউ আঙ্গুলের যত্ন নিচ্ছে, কেউ চুলের যত্ন নিচ্ছে, কেউ অন্যকিছু, হয়তো উপস্থের বা ইত্যাদি বিভিন্ন অঙ্গের। এসবের মাধ্যমে এই সমস্যাগুলো যাবে না। সমস্যা হচ্ছে, ভগবদ্গীতায় যেমনটা বলা হয়েছে... জন্ম-মৃত্যু-জরা-ব্যাধি-দুঃখ-দোষানুদর্শনং (গীতা ১৩.৯) এই হচ্ছে প্রকৃত বুদ্ধিমত্তা। যেই মুহূর্তে আপনার জন্ম হচ্ছে, আপনি চোখ পেয়ে যাবেন, এবং চোখের সমস্যাও হবে, ব্যাধি। জন্ম-মৃত্যু-জরা-ব্যাধি। যদি আপনি জন্ম মৃত্যুকে গ্রহণ করেন, তাহলে এই দুইয়ের মধ্যবর্তী ব্যাধি ও জরাকেও আপনার গ্রহণ করতে হবে। আপনাকে তা গ্রহণ করতেই হবে। আপনি চাইলে কষ্ট কিছু তা লাঘব করতে পারেন মাত্র, কিন্তু এগুলো আপনাকে গ্রহণ করতেই হবে। সেটিই সমাধান নয়। সমাধান হচ্ছে কিভাবে এই জন্ম-মৃত্যু-জরা-ব্যাধিকে বন্ধ করা যায়। সেটি হল সমাধান। সেটি হল বৃহত্তর সমাধান। তাই আমরা সেই জিনিসটিই দিচ্ছি, আর কোন চক্ষু যন্ত্রণা নয়। আসল রোগ হল...ধরুন একজন রোগগ্রস্ত ব্যক্তি, কখনও সে মাথাব্যাথা অনুভব করছে, কখনও চোখ ব্যাথা, কখনও আঙ্গুল ব্যাথা, এবং আপনি মাথাব্যাথার জন্য কিছু ঔষধ দিলেন। সেটি আসল সমাধান নয়। সমাধান হল যে লোকটি যেহেতু রোগে ভুগছে, কিভাবে এটি সারানো যায়? সুতরাং ভগবদ্গীতা এই উদ্দেশ্যেই বলা হয়েছে। ত্যক্তা দেহং পুনর্জন্ম নৈতি (গীতা ৪.৯) এবং যেই মাত্র আপনি এই দেহ গ্রহণ করলেন, ক্লেশদা। ন সাধু মন্যে যতো আত্মন্যহং অসন্নাপি ক্লেশদ আস দেহঃ (ভাগবত ৫.৫.৪) অসন্নপি। এই দেহ চিরন্তন নয়। সুতরাং যেহেতু এই দেহটি চিরস্থায়ী নয়, তাই রোগটিও স্থায়ী নয়। তাই শ্রীকৃষ্ণ উপদেশ দিচ্ছেন, তাং তিতিক্ষস্য ভারত। মাত্রা-স্পর্শাস্তু কৌন্তেয় শীতোষ্ণ-সুখ-দুখঃদাঃ (গীতা ২.১৪) আপনি এর সমাধান করুন যা হচ্ছে সর্বোত্তম সমাধান, কিভাবে জন্ম-মৃত্যুর চক্র থেকে মউক্ত হওয়া যায়। কিন্তু তারা এটি জানে না যে চক্রটি রোধ করা যায়। তারা শুধুমাত্র তাদের ক্ষণস্থায়ী বন্দোবস্ত নিয়েই ব্যস্ত। আর তারা এটিকে খুব বিশাল কিছু মনে করছে। কি এমন বিশাল আছে এতে? ধরুন যদি এখানে আপনার একটা ফোঁড়া হয়, এটি কি কেবল ফুঁ দিয়েই সারানো সম্ভব ? সেখানে অস্ত্রোপাচার করতে হবে, পুঁজ বের করে দিতে হবে।
অতএব সেটিই এই আন্দোলনের উদ্দেশ্যে। এটি এই জন্ম মৃত্যু সারাবার জন্য নয়। ক্ষণস্থায়ী জরা-ব্যাধি। সেটিও ঠিক আছে। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, যদি আমরা শ্রীকৃষ্ণের উপদেশ গ্রহণ করি, ভগবদ্গীতা অনুযায়ী সেটি সমস্যা নয়। যদি কিছু অসুবিধা হয়, তাং তিতিক্ষস্ব ভারত। প্রকৃত সমস্যা হল জন্ম-মৃত্যু-জরা-ব্যাধি (গীতা ১৩.৯), সেটি বন্ধ করার চেষ্টা করুন। সেটিই হল প্রকৃত বুদ্ধি। ত্যক্তা দেহং পুনর্জন্ম নৈতি মামেতি কৌন্তেয় (গীতা ৪.৯) সেটিই হল সংস্কৃতি, সেটিই হল শিক্ষা - ক্ষণস্থায়ী কিছুর দ্বারা প্রভাবিত হওয়া নয়। সেটি খুব একটা বুদ্ধির পরিচয় নয়। তাদেরকে এই সংস্কৃতিটি দিন - কৃষ্ণভাবনামৃতের সংস্কৃতি। সুতরাং আমরা এই দেহটি পেয়েছি। যতক্ষণ এই দেহ রয়েছে আপনি হয়তো আপনার চোখকে আরাম দিতে পারেন, কিন্তু আরেকটি সমস্যা এসে জুড়বে। এমন কোন নিশ্চয়তা নেই যে কেবল চোখটিকে আরাম দিলেই অন্য সকল রোগ থেকে আরাম পাওয়া যাবে। সেটি চলতেই থাকবে... জন্ম-মৃত্যু...মাত্রা স্পর্শাঃ তু কৌন্তেয় (গীতা ২.১৪) তাই আরাম দিতে চাইলে, প্রকৃত আরাম বা মুক্তি হল, কিভাবে এটি বন্ধ করা যায়... সেটিই হল আমাদের বৈদিক সভ্যতা যে আপনার পিতা হওয়া উচিত নয়, মাতা হওয়া উচিত নয়, যদি আপনি আপনার সন্তানদের এই জন্ম-মৃত্যুর বন্ধন থেকে মুক্ত করতে না পারেন। পিতা ন স স্যাৎ জননী ন স স্যাৎ ন মোচয়েদ্ যঃ সমুপেত মৃত্যুং (ভাগবত ৫.৫.১৮)। সেটিই হল প্রকৃত সমস্যা। প্রকৃত সংস্কৃতি হচ্ছে যে "এই সন্তানটি আমার কাছে এসেছে, তাই আমাদের উচিত এমনভাবে তার যত্ন নেয়া যাতে করে তার আর এই জড় দেহ গ্রহণ করতে না হয়।" কারণ আমরা যখনি এই দেহ গ্রহণ করি... অবশ্যই এটি আমাদের বোঝার খুব কঠিন একটি বিষয়, কিন্তু ভগবদ্গীতা এই শিক্ষা দিচ্ছে, যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত (গীতা ৪.৭) যখনি লোকেরা এই সমস্যাগুলো ভুলে যায়, জন্ম-মৃত্যু-জরা-ব্যাধি, শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং এই শিক্ষা দিতে অবতীর্ণ হন যে "এটি হচ্ছে তোমার আসল সমস্যা।"