BN/Prabhupada 0607 - আমাদের সমাজে তোমরা সকলেই গুরুভ্রাতা-গুরুভগ্নী
Lecture on SB 1.3.13 -- Los Angeles, September 18, 1972
ঋষভদেব শিক্ষা দিয়েছেছিলেন, "হে আমার প্রিয় পুত্রগণ, এই মানব জন্মটি কুকুর-শুকরের ন্যায় নষ্ট করার জন্য নয়।" ইন্দ্রিয় সুখভোগ এমনকি শুকরদের মধ্যেও রয়েছে - উন্নততর ব্যবস্থা। কোন বিধিনিষেধ নেই। কোন মানা নেই। মানব সমাজে অন্ততপক্ষে কিছু আনুষ্ঠানিক বিধিনিষেধ রয়েছে। মাত্রা স্বস্রা দুহিত্রা। সমস্ত শাস্ত্রে এটি বলা হয়েছে, "এটি করা উচিত নয়..." কিন্তু হ্যাঁ, কিছু সমাজ রয়েছে। আমরা সেসব এখানে আলোচনা করতে চাই না, যাদের মধ্যে এমন কি মা, বোন এবং কন্যাদের সঙ্গেও যৌন সম্পর্ক রয়েছে। এমন কি আনুষ্ঠানিকভাবেও। এমনটা নয় যে, খুব স্বাভাবিক। কিন্তু শাস্ত্রে বলা হয়েছে, মাত্রা স্বস্রা দুহিত্রা বা নাবিবিক্তাসনো ভবেৎ (ভাগবত ৯.১৯.১৭) "কোন নির্জন স্থানে এমন কি নিজের মা, বোন এবং কন্যার সঙ্গেও একাকী বসা উচিত নয়"। সুতরাং লোকে বলতে পারে যে শুধু মুর্খ আর নীচ ব্যক্তিরাই কেবল মাতা, ভগ্নী এবং কন্যার সান্নিধ্যেও উত্তেজিত হতে পারে, না। শাস্ত্রে বলা হয়েছে, বলবান ইন্দ্রিয়-গ্রামো বিদ্বাংসংমপি কর্ষতি।
"ইন্দ্রিয়গুলো এতোটাই শক্তিশালী যে এমনকি অত্যন্ত বিদ্বান ব্যক্তিও উত্তেজিত হতে পারে। এমন কি মা, বোন এবং কন্যার উপস্থিতিতেও তিনি উত্তেজিত হতে পারেন। ইন্দ্রিয়সমূহ এতোই শক্তিশালী। বলবান ইন্দ্রিয়গ্রামঃ এটি একটি নিষিদ্ধ কার্য। অন্যদের কথা আর কিই বা বলার আছে। অতএব সাধারণ নৈতিক শিক্ষা এবং বৈদিক সভ্যতানুযায়ী নিজের পত্নী ব্যতীত সকল স্ত্রীলোককে মায়ের মতো গ্রহণ করা উচিত। মাতৃবৎ পরদারেষু। পর-দারেষু। প্রত্যেকটি স্ত্রীলোক বিবাহিতা হওয়াটাই উচিত। 'দার' মানে হচ্ছে স্ত্রী। পরদারেষু, অন্যের স্ত্রী। সে বয়সে ছোট কি বড় তাতে কিছু আসে যায় না। কিন্তু তার সঙ্গে মায়ের মতোই আচরণ করতে হবে। সেজন্য এটি বৈদিক সংস্কৃতি যে যখনি কেউ অন্য কারোর স্ত্রীকে দেখবে, সে তাকে 'মা' 'মাতাজী' বলে সম্বোধন করবে। তৎক্ষণাৎ 'মা' দৃষ্টি। সেটিই সঠিক সম্পর্ক তৈরি করবে। একজন স্ত্রীলোক ওপর একজন অপরিচিত পুরুষকে পুত্রের ন্যায় দেখবেন এবং একজন পুরুষ ওপর একজন অপরিচিত স্ত্রীলোককে মায়ের মতো দেখবেন। এটি হচ্ছে বৈদিক সভ্যতা। তাই আমাদের অত্যন্ত সতর্ক থাকা উচিত। আমাদের সমাজে তোমরা সকলেই গুরুভ্রাতা ও গুরুভগ্নী। অথবা যারা বিবাহিতা তাঁরা মায়ের মতো। তাই তোমাদের অত্যন্ত সাবধান হওয়া উচিত। তাহলেই তোমরা 'ধীর' সংযত থাকতে পারবে। সেটি হচ্ছে ব্রাহ্মণের যোগ্যতা, ব্রহ্মণ্য সংস্কৃতি। এমন নয় যে, "যেহেতু আমি এইসব সুন্দরী মেয়েদের সঙ্গে মেলামেশার সুযোগ পেয়েছি, সুতরাং আমি সেই সুযোগ নিয়ে এঁদের ভোগ করব। অথবা মেয়েরাও যদি এমনটা ভাবে... না। তাই আমাদের বিধিবদ্ধ নিয়ম রয়েছেঃ কোনও রকম অবৈধ যৌন সম্পর্ক চলবে না।
প্রত্যেককে 'ধীর' হতে হবে। তবেই ভগবৎচেতনার প্রশ্ন আসবে। পশুদের ভগবৎচেতনা থাকে না। অতএব এটি বিশেষ করে উল্লেখ করা হয়েছে 'ধীরানাং'। 'বর্ত্ম'। তিনি (ঋষভদেব) যে পথ প্রদর্শন করে গিয়েছেন, সেটি ধীর ব্যক্তিদের জন্য। অধীর-দের জন্য নয়। ধীরানাং। তাই এটি এতোই চমৎকার যে, সর্বাশ্রমা-নমস্কৃতং। সকল আশ্রমের লোকেরাই সম্মান করবে এবং প্রণাম করবে। সকল আশ্রম মানে ব্রহ্মচারী, গৃহস্থ, বানপ্রস্থ এবং সন্ন্যাস। সুতরাং মহিলাদের সঙ্গে ব্যবহার... বিশেষ করে পুরুষদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সমস্ত শাস্ত্র, সমগ্র বৈদিক শাস্ত্র বিশেষ করে পুরুষদের উপদেশ দেয়ার জন্যই। স্ত্রী কেবল তার পতির অনুসরণ করবে। ব্যাস্। স্বামী তাঁর স্ত্রীকে উপদেশ-নির্দেশ দেবে। এমন কোন ব্যবস্থা নেই যে মেয়েরা ব্রহ্মচারী হওয়ার জন্য বিদ্যালয়ে যাব, অথবা উপদেশ নিতে গুরুদেবের কাছে যাবে। সেটি বৈদিক ব্যবস্থা নয়। বৈদিক ব্যবস্থা হল একজন পুরুষ পূর্ণরূপে শিক্ষাপ্রাপ্ত হন, এবং স্ত্রীলোক, মেয়েদের অবশ্যই একজন পুরুষের সাথে বিবাহিতা হতে হবে। এমন কি পুরুষদের বহু স্ত্রী থাকতে পারে, বহুবিবাহ, তা সত্ত্বেও প্রত্যেকটি স্ত্রীলোককে বিবাহিতা হতে হবে। আর সে তার স্বামীর কাছ থেকে উপদেশ গ্রহণ করবে। এটিই হল বৈদিক ব্যবস্থা। স্ত্রীলোকেরা বিদ্যালয়, কলেজ কিংবা গুরুদেবের কাছে যাবার জন্য অনুমোদিত নয়। কিন্তু স্বামী ও স্ত্রী দীক্ষা গ্রহণ করতে পারে। সেটি বৈদিক ব্যবস্থা।
তাই ধীরানাং বর্ত্ম। কারণ মানুষকে সর্বপ্রথমে ভদ্র হতে হবে। তারপর কৃষ্ণভাবনা বা ভগবৎ চেতনার কথা আসবে। যদি সে একটি পশুই হয়, তাহলে সে কি বুঝবে? এটি হচ্ছে বৈদিক পন্থা। ধীরানাং। 'ধীর' মানে তাকে অবশ্যই ভদ্র হতে হবে, সম্পূর্ণ ভদ্র। সকল স্ত্রীলোকেদের অবশ্যই 'মা' বলে সম্বোধন করতে হবে। মাতৃবৎ পরদারেষু, পরদ্রব্যেষু লোষ্ট্রবৎ। এটি হচ্ছে আসল প্রশিক্ষণ যে একজন ব্যক্তি অন্যের পত্নীকে মাতৃরূপে বিবেচনা করবেন, এবং অন্যের সম্পদ বা টাকা-কে রাস্তায় পড়ে থাকা আবর্জনা হিসেবে দেখবেন, যা কেউ পরোয়াও করে না। একইভাবে অন্যের টাকা কখনও স্পর্শও করা উচিত নয়। এমন কি যদি কেউ তার মানিব্যাগটি ভুলেও যায়, রাস্তায় পড়ে থাকা মানিব্যাগ, কেউই তা স্পর্শ করবে না। যার টাকা সে ফেরে এসে নিক। এই হচ্ছে প্রকৃত সভ্যতা। পর-দ্রব্যেষু লোষ্ট্রবৎ আত্মবৎ সর্বভূতেষু। অন্য সকলের সঙ্গে 'আত্মবৎ-নিজের মতো ' আচরণ করা। কেউ যদি আমাকে চিমটি কাটে, আমি ব্যাথা অনুভব করি। তাহলে আমি কেন অন্যকে চিমটি কাটবো? যদি কেউ আমার গলা কেটে দিত, আমি কতোটা দুঃখ বা যন্ত্রণা পেতাম, তাহলে আমি কেন অন্য প্রাণীদের গলা কাটবো? এটি হচ্ছে সভ্যতা। এটি বৈদিক সভ্যতা। এমন না যে নির্বিচারে পশু হত্যা চালিয়ে যাবে, যত্রতত্র নারী উপভোগ করবে আর অর্ধনগ্না নারীদের নিয়ে ব্যবসা চলবে। এটি সভ্যতা নয়। এটি কখনই মানব সভ্যতা নয়।