BN/Prabhupada 0625 - জীবনের সমস্ত প্রয়োজনীয়তাগুলি পরমেশ্বর ভগবান সরবরাহ করছেন



Lecture on BG 2.13 -- Pittsburgh, September 8, 1972

আমরা সভ্য মানুষেরা, তা সে আমেরিকান, ভারতীয়, জার্মান অথবা ইংরেজ-ই হোক না কেন, সেটি কোন ব্যপার নয়। আমরা সংখ্যায় অত্যন্ত কম। আমাদের অর্থনৈতিক সমস্যা রয়েছে। আমরা চাইছি আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি করতে। সেই অর্থনৈতিক অবস্থাটি কি? আহার, নিদ্রা, মৈথুন এবং আত্মরক্ষা। আমরা সবসময়েই ব্যস্ত, কিন্তু পশুরাও সবসময় আহার, নিদ্রা, আত্মরক্ষা এবং মৈথুন সুখভোগ নিয়েই ব্যস্ত থাকে। আমাদের সমস্যা রয়েছে। সুতরাং এটি বোঝার চেষ্টা কর যে, যদি সমগ্র জীবকুলের অধিকাংশেরই কোন সমস্যা না থাকে, তাদের জীবনের চাহিদাগুলি পরম শ্বাশ্বত ভগবান কর্তৃক সরবরাহ করা হচ্ছে। ঠিক যেমন একটি হাতি। আফ্রিকার জঙ্গলে লক্ষ লক্ষ হাতি রয়েছে। তারা একসাথে ৫০ কিলো পরিমাণের খায়। কিন্তু তারা ঠিক তাদের আহার পাচ্ছে। একইভাবে, একটি ছোট্ট পিঁপড়ের একদানা চিনি প্রয়োজন। সেও তার খাবার পাচ্ছে। সুতরাং পরম শ্বাশ্বত ভগবান তাদের আহারের ব্যবস্থা করছেন। অথবা তাদের অর্থনৈতিক সমস্যাগুলি প্রকৃতি সমাধান করছে। তারা কোন ব্যবসা করে না। তারা স্কুল কলেজেও যায় না এরকম প্রযুক্তি শিখে তাদের জীবন চালাতে। কিন্তু এই সব কিছু তাদের সরবরাহ করা হচ্ছে। তারা স্বাস্থ্যবান, কোন রোগও নেই।

সুতরাং আমাদের এই সভ্যতার উন্নতি মানে হচ্ছে আমরা শুধু সমস্যাই তৈরি করছি। ব্যাস্। এই হচ্ছে আমাদের সভ্যতা উন্নয়ন। আর আমরা এও জানি না আত্মা কিভাবে গঠিত হয়, কিভাবে এটি এক দেহ থেকে অন্য দেহে ভ্রমণ করছে, পরজন্ম কি, আমরা কি পরজন্মে মানুষ দেহ পাব না কি তার চেয়ে উন্নত জন্ম না কি তার চেয়ে নিম্নতর কোন জন্ম। আর যদি তাই হয়, তাহলে কিভাবে পরজন্মে আমরা সেই ধরণের দেহ পাব? আর আমরা নিত্য, আমরা এই দেহটি পরিবর্তন করছি। আমরা এও জানি না যে দুধরণের দেহ রয়েছে, স্থুল দেহ এবং সূক্ষ্ম দেহ। এই স্থুল দেহ মাটি, জল, আগুন, বায়ু এবং আকাশ দ্বারা গঠিত। আর সূক্ষ্ম দেহটি মন, বুদ্ধি এবং অহঙ্কার নির্মিত। সূক্ষ্ম দেহের অভ্যন্তরে আত্মা বিরাজ করছেন। যখন এই স্থুল দেহ ব্যবহারের অযোগ্য বা অকেজো হয়ে যাবে, তখন সূক্ষ্ম দেহ আমাকে আরেকটি স্থুল দেহে বহন করে নিয়ে যাবে। একে বলা হয় 'আত্মার দেহান্তরকরণ'। কিন্তু আমরা সূক্ষ্ম দেহ দেখতে পাই না। আমরা প্রত্যেকেই তা জানি, আমরা জানি যে আমাদের মন রয়েছে, কিন্তু আমরা তা দেখতে পাই না। না আমরা বুদ্ধিকে দেখতে পাই, না দেখতে পাই অহঙ্কার-কে। কিন্তু তাদের অস্তিত্ব রয়েছে। তাই সবকিছুই যে আপনি আপনার ভ্রমাত্মক চোখে দেখতে পারবে এমন কোন কথা নেই। চোখদুটো, সেগুলো নির্ভুল নয়। ঠিক যেমন এই হলঘরটির আরেক পাশে ঘন অন্ধকার হয়ে আছে, আমি আপনাদের দেখতে পাচ্ছি না যদিও আমার চোখ রয়েছে। তাই যদিও আমাদের চোখ রয়েছে, এটি অত্যন্ত খুঁতযুক্ত। এটি সব ধরণের অবস্থায় দেখতে পারে না। কয়েকটি নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতেই কেবল সে দেখতে পারে। তাই আমাদের শুধু চোখে দেখার ওপরেই বিশ্বাস করা উচিত নয়। কিন্তু একটি ব্যপার যে যদিও আমি আপনাদের দেখতে পাচ্ছি না, কিন্তু আপনারা আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন, অথবা আমি বুঝতে পারছি যে আপনারা আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন। কানদুটি চোখদুটির চেয়ে বেশি শক্তিশালী। তাই যেসব জিনিস বা ব্যাপার আমাদের অভিজ্ঞতার বাইরে, সেগুলোর সম্পর্কে আমরা শুনতে পারি। এমন কি যদিও আমরা দেখতে পাই না, তবুও এমন নয় যে কোন একটি জিনিসের অস্তিত্ব নেই। একই উদাহরণঃ যদিও আমরা দেখতে পারছি না যে মন কি, বুদ্ধি কি বা অহঙ্কার কি, কিন্তু আমি এসব সম্পর্কে শুনতে পারি। সেজন্য খাঁটি জ্ঞান শ্রবণের মাধ্যমেই লাভ হয়। অতএব আমরা সঠিক জ্ঞানটি শ্রবণের মাধ্যমে গ্রহণ করি। আরেকটি উদাহরণঃ ধরুন একজন ব্যক্তি ঘুমোচ্ছেন। ঠিক সে সময় যদি কেউ তাকে খুন করতে আসে; সে জানে না, সে ঘুমোচ্ছে। কিন্তু যদি তার কোন বন্ধু তাকে সতর্ক করে দেয়, " হে আমার প্রিয় অমুক বাবু... কেউ একজন আপনাকে হত্যা করতে আসছে। উঠুন!" সে জেগে উঠতে পারে এবং সতর্কতাও গ্রহণ করতে পারে। সেজন্য যখন আমাদের অন্যান্য ইন্দ্রিয়গুলো কাজ করতে পারে না, আমাদের কান অত্যন্ত শক্তিশালী থাকে। অতএব বলা হয়েছে যে উপযুক্ত ব্যক্তির কাছ থেকে শুনতে চেষ্টা কর। শিক্ষাব্যবস্থাও সে রকম। কেন আপনারা স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন? একজন অভিজ্ঞ অধ্যাপকের কাছ থেকে শুনতে। তিনি জানেন আর আপনি তার কাছ থেকে শুনে শুনে জ্ঞানলাভ করতে আসেন।