BN/Prabhupada 0626 - বাস্তবিকভাবে বিষয়গুলো বুঝতে হলে আপনার উচিত একজন আচার্যের কাছে শরণাগত হওয়া



Lecture on BG 2.13 -- Pittsburgh, September 8, 1972

সুতরাং এই শ্রবণের পন্থাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের এই কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলন এই কথাটি প্রচার করার জন্যই যে, "আপনি উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ, শ্রীকৃষ্ণের কাছ থেকে শুনুন।" শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন পরম পুরুষোত্তম ভগবান। এটি বর্তমান যুগে এবং অতীতেও স্বীকার করে নেয়া হয়েছে। প্রাচীনযুগে মহান মহান ঋষিরা, যেমন নারদ, ব্যাস, অসিত, দেবল, ইত্যাদি অত্যন্ত মহান বিখ্যাত পণ্ডিত ও সাধুব্যক্তিরা তা এটি গ্রহণ করে নিয়েছেন। মধ্যযুগে, ধরুন প্রায় ১৫০০ বছর আগে, সমস্ত আচার্যেরা যেমন শঙ্করাচার্য, রামানুজাচার্য, মধ্বাচার্য, নিম্বার্ক... বাস্তবিকভাবেই, ভারতীয় বৈদিক সভ্যতা এখনও এই সমস্ত মহান আচার্যদের অনুমোদিত সিদ্ধান্তের দ্বারাই চলছে। এবং ভগবদ্গীতাতে এই নির্দেশ দেয়া হয়েছে যেঃ 'আচার্যোপাসনম্'। যদি আপনি সঠিকভাবে বিষয়গুলো শিখতে চান, তাহলে আপনাকে আচার্যের শরণাগত হতে হবে। আচার্যবান্ পুরুষো বেদা; "যিনি আচার্যের শরণ গ্রহণ করেছেন, তিনি যথাযথভাবে বিষয়গুলো জানেন"। আচার্যবান্ পুরুষো বেদা। তাই আমরা আচার্যদের মাধ্যমে এই জ্ঞান গ্রহণ করছি। শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছিলেন। অর্জুন ব্যাসদেবকে বলেছিলেন। অর্জুন আসলে ব্যাসদেবকে বলেন নি, ব্যাসদেব তা শ্রবণ করেছিলেন। শ্রীকৃষ্ণ বলছিলেন এবং তিনি তা তাঁর মহাভারত গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেছিলেন। এই ভগবদ্গীতা মহাভারতের অন্তর্গত। তাই আমরা ব্যাসদেবের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। এবং ব্যাস থেকে মধ্বাচার্য; এইভাবে মাধবেন্দ্রপুরী পর্যন্ত গুরু পরম্পরা ধারায় অনেকেই রয়েছেন। তারপর মাধবেন্দ্রপুরী থেকে ঈশ্বরপুরী, ঈশ্বরপুরী থেকে ভগবান শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু; শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু থেকে ষড় গোস্বামীগণ, ষড় গোস্বামী থেকে শ্রী কৃষ্ণদাস কবিরাজ; তাঁর থেকে শ্রীনিবাস আচার্য; তাঁর থেকে বিশ্বনাথ চক্রবর্তী, তাঁর থেকে জগন্নাথ দাস বাবাজী; তারপর গৌরকিশোর দাস বাবাজী; ভক্তিবিনোদ ঠাকুর; আমার গুরু মহারাজ। এই একই জিনিস আমরা প্রচার করছি। এই হচ্ছে কৃষ্ণভাবনামৃত। এটি নতুন কিছু নয়। এটি আদি বক্তা শ্রীকৃষ্ণ থেকে গুরু পরম্পরা ধারায় নেমে এসেছে। তাই আমরা এই ভগবদ্গীতা পড়ছি। এটি এমন নয় যে, আমি কিছু একটা নতুন বই বানালাম আর তা এখন প্রচার করছি। না। আমি ভগবদ্গীতা থেকে প্রচার করছি। সেই একই ভগবদ্গীতা যা চার কোটি বছর আগে সর্বপ্রথম সূর্যদেবকে বলা হয়েছিল, আর তারপর আবার তা পাঁচ হাজার বছর আগে অর্জুনকে পুনরায় বলা হয়েছিল। একই বস্তু গুরু পরম্পরা ধারায় নেমে এসেছে এবং সেই একই বস্তু আপনাদের কাছে উপস্থাপন করা হচ্ছে। কোন পরিবর্তন নেই।

তাই কর্তৃপক্ষ বলছেন,

দেহিনোহস্মিন্ যথা দেহে
কৌমারং যৌবনং জরা,
তথা দেহান্তরপ্রাপ্তি
র্ধীরস্তত্র ন মুহ্যতি
(ভগবদ্গীতা ২.১৩)

তাই আমরা লোকেদের শুধু অনুরোধ করছি তারা যেন যথাযথ কর্তৃপক্ষের এই জ্ঞান গ্রহণ করে এবং আপনাদের বুদ্ধির দ্বারা তা বিচার করতে চেষ্টা করুন। এটি এমন নয় যে আপনি আপনার সব যুক্তি আর বুদ্ধি স্তব্ধ করে দিয়ে অন্ধভাবে এটি গ্রহণ করবেন। না। আমরা মানব প্রজাতি, আমাদের বুদ্ধি রয়েছে। আমরা পশু নই যে আমাদের কিছু গ্রহণ করার জন্য জোর করা হবে, না। তদবিদ্ধি প্রণিপাতেন পরিপ্রশ্নেন সেবয়া (গীতা ৪.৩৪) এটি এই ভগবদ্গীতাতেি আপনি পাবেন। আপনি বুঝতে চেষ্টা করুন। তদবিদ্ধি। বিদ্ধি মানে 'বোঝার চেষ্টা করা'। প্রণিপাত। প্রণিপাতেন মানে শরণাগত হন, প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়। একজন ছাত্রকে তার গুরুদেবের কাছে অত্যন্ত বিনয়ী হতে হবে। অন্যথায় সে হতবুদ্ধি হয়ে যাবে। বিনয়ের সাথে গ্রহণ করতে হবে। আমাদের পন্থাটি হচ্ছে...

তস্মাদ্ গুরুং প্রপদ্যতে,
জিজ্ঞাসু শ্রেয়ঃ উত্তমম্,
শাব্দে পরে চ নিষ্ণাতং,
ব্রহ্মণি উপশমাশ্রয়ং
(শ্রীমদ্ভাগবত ১১.৩.২১)

এটি হচ্ছে বৈদিক নির্দেশ। যদি আপনি এমন কিছু জানতে চান যা আপনার ধারণার অতীত, আপনার ইন্দ্রিয়ানুভূতির অতীত, তাহলে আপনাকে অবশ্যই একজন সদ্গুরুদেবের কাছে শরণাগত হতে হবে।