BN/Prabhupada 0644 - কৃষ্ণভাবনামৃতে সবকিছুই রয়েছে
(Redirected from BN/Prabhupada 0644 - কৃষ্ণভাবনামৃতে সবকিছুই রয়েছে।)
Lecture on BG 6.1 -- Los Angeles, February 13, 1969
শ্রীল প্রভুপাদঃ কার্যকলাপ?
ভক্তঃ চিত্তবিনোদন।
ভক্তঃ একজন কৃষ্ণভাবনাময়
ভক্তের জন্য চিত্ত-বিনোদন বা আমোদপ্রমোদ কি হবে?
শ্রীল প্রভুপাদঃ চিত্ত-বিনোদন?
ভক্তঃ হ্যাঁ।
শ্রীল প্রভুপাদঃ নৃত্য করা। (হাস্য) এসো, আমাদের সঙ্গে নৃত্য কর। এটি কি বিনোদন নয়? আর যখন তুমি ক্লান্ত অনুভব করবে তখন প্রসাদ গ্রহণ কর। তোমরা কি এর চেয়েও বেশি বিনোদন চাও? তুমি কি বল? এটি বিনোদন নয়?
ভক্তঃ হ্যাঁ। আমার মনে হয় সে সব ভক্তদের জন্য এটি কঠিন হবে যারা এমন জায়গা থেকে এসেছে যে...
শ্রীল প্রভুপাদঃ কঠিন কেন হবে? নৃত্য করা কি কঠিন কিছু? কীর্তন করা এবং নৃত্য করা?
ভক্তঃ মন্দিরে থাকে এমন ভক্তের জন্য এটি সহজতর। শ্রীল প্রভুপাদঃ ওহ, কিন্তু যেমন তুমি এসেছো, ঠিক তেমনি যে কেউই এতে আসতে পারে। আমরা সবাইকেই স্বাগত জানাই। এই নৃত্য করার জন্য আমরা তো কোন পয়সা নিই না। যদি তুমি বল্ নাচ বা যে কোনও অন্য নাচের জন্য যাবে তার জন্য পয়সা খরচ করতে হবে। কিন্তু আমরা কোন পয়সা নিই না। আমরা শুধুমাত্র, এই ছেলেগুলো শুধু কিছু ভিক্ষা করে কারণ আমাদের তো চলতে হবে। আমরা কোন ভাড়া নিচ্ছি না। তাই যদি তুমি বিনোদনের জন্য এখানে এসে নৃত্য কর, তবে তা খুবই ভাল। কৃষ্ণভাবনামৃতে সবকিছুই রয়েছে। আমরা গান চাই, এখানে গানও আছে। আমরা নাচতে চাই, এখানে নৃত্যের ব্যবস্থাও আছে। তোমরা তোমাদের ভালো ভালো বাদ্যযন্ত্রগুলো নিয়ে আসতে পার, এখানে এসে যোগদান করতে পার। আমরা খুব সুস্বাদু খাবারও বিতরণ করি। তাই বাস্তবে এটি শুধুমাত্র বিনোদনেরই সব ব্যবস্থা মাত্র। (হাস্য) হ্যাঁ। যদি তুমি ভালো করে তা ভেবে দেখ, তুমি দেখবে এই পন্থায় কোনও পরিশ্রম নেই। শুধুই আমোদপ্রমোদ। সু-সুখম্। (গীতা ৯.২) ভগবদগীতার নবম অধ্যায়ে তা উল্লেখ করা হয়েছে। তুমি দেখবে সেখানে আছে, "সু-সুখম্।" - এখানে সবকিছুই আনন্দময় এবং সুখপূর্ণ। আমাদের সম্পূর্ণ ব্যবস্থায় এমন কিছু খুঁজে বের কর যেটি ঝামেলাপূর্ণ। বাস্তবে বিচার করে কেউ আমাকে যে কোন একটি বিষয় বল যে, "এটি খুব কষ্টসাধ্য"। তোমার কি যুক্তি আছে বল। শুধুই আনন্দের। এটি শুধুই আমোদপূর্ণ। ব্যাস। তোমরা শুধু একটি দিক বল যে, স্বামীজি, আপনাদের এই জিনিসটি বিনোদনপূর্ণ নয়, এটি একটি দুঃখপূর্ণ বিষয়।" এমন কিছুই নেই।
লোকেরা যা খুশী চায়। সেটি তাদের স্বভাব, ঠিক যেমন ছোট শিশুদের ন্যায়। যখন তারা দেখে যে অন্যান্য ছেলে-মেয়েরা নাচছে, তখন তারাও নাচে। স্বাভাবিকভাবেই। এটি স্বতঃস্ফূর্ত, এটিই জীবন। আর ভগবদ্ধামেও সেটিই আমাদের প্রকৃত জীবন। সেখানে কোন দুশ্চিন্তা নেই। সেখানে সকলেই শুধু নৃত্য করছে, গান করছে আর ভাল ভাল খাচ্ছে। ব্যাস। সেখানে কোন কল-কারখানা নেই, শ্রমিক নেই, কোনও প্রযুক্তিগত প্রতিষ্ঠানও নেই। এসবের ওখানে কোনও দরকারই নেই। এ সব কিছুই কৃত্রিম। আনন্দময়োভ্যাসাৎ (বেদান্ত সূত্র ১.১.১২) এবং বেদান্তে বলা হয়েছে যে, সমস্ত জীব, ভগবান সকলেই আনন্দময়, সুখ আর আনন্দে পরিপূর্ণ, আর আমরা ভগবানের অবিচ্ছেদ্য অংশ, আমাদেরও সেই একই গুণ রয়েছে। আনন্দময়োভ্যাসাৎ। তাই আমাদের এই পুরো প্রক্রিয়াটিই হচ্ছে সেই পরম আনন্দময় শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে তাঁর নৃত্য গোষ্ঠীতে যোগ দেয়া। সেটিই আমাদের প্রকৃত অর্থে সুখী করবে। এখানে আমরা কৃত্রিমভাবে সুখী হওয়ার চেষ্টা করছি। আর আমরা তাই হতাশও হচ্ছি। কিন্তু তোমরা যদি প্রকৃতপক্ষেই কৃষ্ণভাবনামৃতে স্থিত হও, শুধুমাত্র তোমার আসল স্বরূপটি ফিরে পাও, শুধুই আনন্দ আর আনন্দময়। আনন্দময়োভ্যাসাৎ। এগুলো বেদান্তের পরিভাষা। কারণ আমাদের স্বাভাবিক প্রকৃতিই হচ্ছে আমরা আনন্দময়। সকলেই এটিই খুঁজে পেতে চেষ্টা করছে । এই লা সিনেগা এভিনিউ-তে অনেক রেস্তোরাঁ আছে, কত কিছু রয়েছে, কত ধরণের বিজ্ঞাপন বোর্ড আছে। কেন? ওরা বিজ্ঞাপন দিচ্ছে, "এসো, এসো, এখানেই আনন্দ, এখানেই আনন্দ।" তারা বিজ্ঞাপন দিচ্ছে, আমরাও একই কাজ করছি। "আনন্দ পেতে এখানে এসো"। তাই সকলেই আনন্দের পেছনে ছুটছে। কিন্তু বিভিন্ন ধরণের বা মাত্রার আনন্দ রয়েছে। একই জিনিস। কেউ হয়তো জাগতিক দৃষ্টিকোণ থেকে আনন্দ পেতে চাইছে, কেউ জল্পনা কল্পনা করে আনন্দ পেতে চাইছে, বিভিন্ন দর্শন বা কবিতা বা শিল্পকলার মাধ্যমে, আর কেউ বা চিন্ময় স্তরে আনন্দ লাভ করতে চাইছে। সকলেই আনন্দ খুঁজছে। সেটিই আমাদের একমাত্র কাজ। তোমরা কেন দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করছ? কারণ তুমি জানো, "রাতে আমি ঐ মেয়েটির সঙ্গসুখ ভোগ করব?" অথবা "আমার স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হয়ে আমি উপভোগ করব। সকলেই সেই আনন্দ পাওয়ার জন্য সব ধরণের কষ্ট স্বীকার করছে।
আনন্দই হচ্ছে চরম লক্ষ্য। কিন্তু আমরা জানি না আনন্দ কোথায়। সেটিই হচ্ছে আমাদের ভ্রম। প্রকৃত আনন্দ হচ্ছে আমাদের স্বরূপে শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে। তোমরা সবসময়ই শ্রীকৃষ্ণকে আনন্দময় দেখবে। অনেক ছবিতেই তোমরা দেখতে পাবে। আর তোমরা যদি তাতে অংশ নাও, তুমিও আনন্দময় হবে। ব্যাস। তোমরা কি কোনও ছবিতে শ্রীকৃষ্ণকে বড় বড় যন্ত্র নিয়ে কাজ করতে দেখেছ? (হাস্য) অথবা কোন ছবিতে দেখেছ যে তিনি ধূমপান করছেন? স্বভাবতই আনন্দময়, বুঝলে? আনন্দ। তাই তোমাকে এমনভাবেই নিজেকে আবিষ্কার করতে হবে এবং তুমিও আনন্দ পাবে। আনন্দে পরিপূর্ণ। ব্যাস। আনন্দময়োভ্যাসাৎ (বেদান্ত সূত্র ১.১.১২) স্বভাবতই আনন্দের। কৃত্রিমভাবে নয়।
আনন্দ-চিন্ময়-রস-প্রতিভাবিতাভিঃ । ব্রহ্মসংহিতায় তোমরা এটা পাবে।
- আনন্দ-চিন্ময়-রস-প্রতিভাবিতাভি
- স্তাভির্য এব নিজরূপতয়াকলাভিঃ
- গোলকেবনিবসতি অখিলাত্মভূত
- গোবিন্দং আদি পুরুষং তমহম্ ভজামি
- (ব্রহ্মসংহিতা ৫.৩৭)
আনন্দ-চিন্ময়-রস। রস মানে হচ্ছে স্বাদ। ঠিক যেমন আমরা মিষ্টির স্বাদ পেতে চাই, রসগোল্লা বা যে কোন কিছু। কেন? কারণ তাতে খুব স্বাদ আছে। তাই সকলেই সবকিছু থেকেই কিছু না কিছু আনন্দ পেতে চাইছে। আমরা যৌনজীবন উপভোগ করতে চাই। ওতে কিছু স্বাদ আছে। সেটিকে বলা হয় আদিরস। এরকম অনেক ধরণের রস রয়েছে। ব্রহ্মসংহিতায় বলা হচ্ছে, আনন্দ-চিন্ময়-রস। সেই রস, জাগতিক রস, তুমি হয়তো তাতে কিছু স্বাদ পেতে পার, কিন্তু তা খুব দ্রুতই শেষ হয়ে যাবে। তৎক্ষণাৎ শেষ হয়ে যাবে। অথবা ধর কয়েক মিনিট। যেমন ধর তুমি খুব সুস্বাদু একটি মিষ্টি পেলে। তুমি এটির স্বাদ নিলে। তুমি ভাবছো, "এটি খেতে তো খুবই ভাল।" "আরেকটি খাই"। "ঠিক আছে" আরেকটি? "না না, আর চাই না"। ব্যাস শেষ। দেখলে? তাই জাগতিক স্বাদ নিঃশেষ হয়ে যায়। এটি অফুরন্ত নয়। কিন্তু প্রকৃত রস অসীম, অফুরন্ত। যদি একবার তুমি তা আস্বাদন করতে পার, তুমি তা ভুলতে পারবে না। এটি চলতেই থাকবে, চলতেই থাকবে, বাড়তেই থাকবে, বাড়তেই থাকবে। আনন্দাম্বুধি বর্ধনং। শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু বলেছেন, সেই "আনন্দ শুধু বাড়তেই থাকে।" যদিও সমুদ্রের মতো বিশাল, তবুও তা শুধু বাড়তেই থাকে। এখানেও তোমরা সমুদ্র দেখেছ। এটি সীমিত। তোমাদের প্রশান্ত মহাসাগর কখনও ফুলে ওঠে, কিন্তু আয়তনে কখনও বৃদ্ধি পায় না। যদি এটি কখনও বৃদ্ধি পেত, তাহলে সেটি ধ্বংস নিয়ে আসতো। দেখেছ তোমরা? কিন্তু প্রকৃতির নিয়মে, ভগবানের নির্দেশে, এটি সীমানা অতিক্রম করে আসে না। এটি সীমার মধ্যেই থাকে। কিন্তু শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু বলছেন যে একটি আনন্দের সমুদ্র রয়েছে, চিন্ময় রসের সমুদ্র, যেটি সবসময়ই বর্ধিত হচ্ছে। আনন্দাম্বুধি বর্ধনং প্রতিপদং পূর্ণামৃত আস্বাদনং... সর্বাত্মস্নপনং পরম্ বিজয়তে শ্রীকৃষ্ণ সঙ্কীর্তনং সেই আনন্দদায়িনী শক্তি এই হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্তনের দ্বারাই অধিক থেকে অধিকতর হয়ে বৃদ্ধি পাবে।