BN/Prabhupada 0652 - পদ্মপুরাণ হচ্ছে সাত্ত্বিক গুণসম্পন্ন মানুষদের জন্য



Lecture on BG 6.6-12 -- Los Angeles, February 15, 1969

ভক্তঃ তাৎপর্যঃ "পরম তত্ত্বের অনুভূতি না হলে পুঁথিগত বিদ্যার কোন সার্থকতা নেই। পদ্মপুরাণে বলা হয়েছে...

শ্রীল প্রভুপাদঃ হ্যাঁ। পদ্মপুরাণ। আঠারোটি পুরাণ আছে মানুষেরা তিন গুণের মধ্যেই ক্রিয়াশীল। সত্ত্বগুণ, রজোগুণ এবং তমোগুণ। বিভিন্ন ধরণের জীবনে থাকা এই সব বদ্ধ আত্মাদের পুনরুদ্ধারের জন্য বিভিন্ন ধরণের পুরাণ উপস্থাপন করা হয়েছে। সত্ত্বগুণে যারা রয়েছে তাদের জন্য ছয়টি পুরাণ আছে। রজোগুণের মানুষদের জন্য ছয়টি পুরাণ নির্দিষ্ট। আর আরও ছয়টি পুরাণ আছে যেগুলো তমোগুণের লোকেদের জন্য উদ্দিষ্ট। এই পদ্মপুরাণ হচ্ছে সত্ত্বগুণসম্পন্ন মানুষদের জন্য। বৈদিক রীতিনীতি ব্যবস্থায় অনেক ধরণের ভিন্ন ভিন্ন রীতিনীতি অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা আছে। এর কারণ ভিন্ন ভিন্ন ধরণের মানুষ আছে। ঠিক যেমন তোমরা শুনেছ যে বৈদিক শাস্ত্রে দেবী কালীর সম্মুখে যজ্ঞে ছাগবলি দেয়ার রীতি আছে। কিন্তু এই মার্কন্ডেয় পুরাণটি হচ্ছে তমোগুণের মানুষদের জন্য।

ঠিক যেমন হয়তো একটি লোক মাংস খাবার প্রতি খুব আসক্ত। এখন, যদি হঠাৎ করেই তাকে নির্দেশ দেয়া হয় যে মাংস খাওয়া ভালো নয়... অথবা কেউ খুব মদ্যপানে আসক্ত তাকে যদি তৎক্ষণাৎ বলা হয়, মদ্যপান করা ভাল নয়, সে তা মেনে নিতে পারবে না। তাই আমরা পুরাণগুলোতে এমন কথা দেখি যে, "ঠিক আছে, যদি তুমি মাংস খেতেই চাও, তুমি কালীপুজা কর, দেবী কালীর সামনে ছাগ বলি দাও এবং সেই মাংস তুমি খেতে পার। কিন্তু তুমি কোন কসাইখানা বা মাংসের দোকান থেকে মাংস কিনে খেতে পারবে না। তোমাকে এইভাবে খেতে হবে।" অর্থাৎ বিধিবদ্ধ করে দেয়া। কারণ যদি তুমি দেবী কালীর সামনে বলি দিতে চাও, তাহলে তার জন্য নির্দিষ্ট সময় আছে, নির্দিষ্ট উপকরণ লাগবে, আর তোমাকে সেগুলো আয়োজন করতে হবে। আর সেই পুজা অমাবস্যার রাতেই কেবল অনুমোদিত। অতএব অমাবস্যা মানে মাসে একদিন। আর সেখানে এই মন্ত্র উচ্চারণ করা হব; সেই বলির ছাগের সামনে বলা হবে, "তুমি দেবী কালীর সামনে তোমার এই জীবন উৎসর্গ করছ, অতএব তুমি এক্ষুনি মানব দেহে উন্নীত হবে।" আর প্রকৃত অর্থেই তা হোত। কারণ মানব জন্মের পর্যায়ে আসতে গেলে একটি জীবকে বহু বহু জীবনের বিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। কিন্তু দেবী কালীর সামনে বলি হতে যে ছাগলটি রাজি হয় অথবা তাকে জোর করে বলি দেয়া হয়, সে তৎক্ষণাৎ মানবদেহে উন্নীত হয়। এবং সেই মন্ত্রে বলা হয় যে, "যে ব্যক্তিটি এই জন্মে তোমাকে বলি দিচ্ছে সেই ব্যক্তিটিকেই হত্যা করার অধিকার তোমাকে দেয়া হল।" মাংস। মাম্ স। মাংস মানে হচ্ছে, তুমিও পরবর্তী জন্মে সেই ব্যক্তিটির মাংস খাবে। সুতরাং এইভাবে যে ব্যক্তিটি বলি দিচ্ছে তার চেতনা ফিরে আসবে, "কেন আমি এর মাংস খাব? তাহলে তো আমাকে আবার আমার মাংস দিয়ে এর প্রতিদান দিতে হবে। তাই কেনই বা আমি এই কাজটি করতে যাব?" বুঝলে? সমস্ত প্রক্রিয়াটির উদ্দেশ্যই হচ্ছে নিয়ন্ত্রণ করা।

সুতরাং বিভিন্ন ধরণের পুরাণ রয়েছে। আঠারোটি পুরাণ আছে, কারণ বৈদিক শাস্ত্রের উদ্দেশ্যই হচ্ছে সবধরনের মানুষদের উদ্ধার করা। এমন নয় যে যারা মাংস খায় বা মাতাল তাদের বাদ দেয়া হয়েছে। না। সবাইকেই গ্রহণ করা হয়, কিন্তু, ঠিক যেমন তুমি যখন ডাক্তারের কাছে যাচ্ছো বিভিন্ন ধরণের রোগের ওপর নির্ভর করে তিনি তোমাকে বিভিন্ন ধরণের ঔষধ দেবেন। এমন নয় যে, কেউ এলো; তার একধরণের রোগের জন্য একটি ঔষধ দেয়া হল আর তারপর আর যারাই এলো সবাইকেই সেই ঔষুধটিই দেয়া হল। না। সেটিই হচ্ছে আসল চিকিৎসা। ক্রমে ক্রমে। কিন্তু সাত্ত্বিক পুরাণে সরাসরিভাবে তৎক্ষণাৎ ভগবানের পুজা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কোন ক্রমান্বয়িক পন্থা নয়। কিন্তু যারা ক্রমে ক্রমে এই স্তরে আসতে চায় তাদের জন্য এই নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অতএব পদ্মপুরাণ হচ্ছে সাত্ত্বিক পুরাণগুলোর একটি। পদ্মপুরাণ কি বলছে? পড়।