BN/Prabhupada 0671 - ভোগ মানে কেবল দুইটি বিষয় -শ্রীকৃষ্ণ আর তুমি



Lecture on BG 6.16-24 -- Los Angeles, February 17, 1969

ভক্তঃ "শুদ্ধ অন্তঃকরণের দ্বারা নিজেকে দর্শন করার ও আনন্দ লাভের সামর্থ্যের ভিত্তিতে এটি প্রকাশ পায় ..."

শ্রীল প্রভুপাদঃ শুদ্ধ অন্তঃকরণ। এটি শুদ্ধ চিত্তে হয়। শুদ্ধ অন্তঃকরণ মানে এটি উপলব্ধি করতে পারা যে "আমি শ্রীকৃষ্ণের"। সেটিই হচ্ছে শুদ্ধ মন। বর্তমানে আমার মন কলুষিত আছে, কেন? কারণ আমি ভাবছি আমি এর, আমি ওর, আমি এই বস্তুটির ... কিন্তু যখন আমার মন এই ভাবনায় স্থির যে "আমি শ্রীকৃষ্ণের" সেটিই হচ্ছে পূর্ণতা। হ্যাঁ।

ভক্তঃ "...এবং আত্মাতেই আনন্দ লাভ করা। সেই আনন্দের অবস্থায় এক অসীম... "

শ্রীল প্রভুপাদঃ নিজেতে এই আনন্দ পাওয়া মানে হচ্ছে শ্রীকৃষ্ণ বা পরমাত্মাতে আনন্দ পাওয়া। যোগ অভ্যাস যে আমি ব্যক্তি আত্মা। যখন আমি ভগবান শ্রীবিষ্ণুর ধ্যানে মগ্ন, সেটিই তখন আমার মনের স্থিরতা। তাই আত্মা এবং পরমাত্মা যখন আনন্দ ভোগ করে। আনন্দ একা একা হতে পারে না। সেখানে অবশ্যই দুজন হতে হবে। তুমি কখনও একা একা উপভোগের অভিজ্ঞতা পেয়েছ? না। তাই একাকী আনন্দ উপভোগ সম্ভব নয়। উপভোগ মানে দুইজন - শ্রীকৃষ্ণ এবং তুমি। পরমাত্মা ও জীবাত্মা। সেটিই হচ্ছে সঠিক পন্থা। তুমি একাকী উপভোগ করতে পারবে না। সেটি তোমার অবস্থান নয়। হ্যাঁ, পড়তে থাকো।

ভক্তঃ সেই অবস্থায় যোগী অনন্ত আনন্দের স্তরে স্থিত হন এবং চিন্ময় ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে আনন্দ উপভোগ করেন। এইভাবে স্থিত হয়ে তিনি কখনও সত্য থেকে চ্যুত হন না। এবং তা লাভ করে তিনি চিন্তা করেন যে এর থেকে আর উচ্চতর কোন আনন্দও হতে পারে না। এই রকম অবস্থায় স্থিত হয়ে কেউ বিচলিত হয় না, এমনকি চরম বিপদজনক পরিস্থিতিতেও।

শ্রীল প্রভুপাদঃ চরম বিপদের মুহূর্তে যদি তুমি এই কথা সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাস কর যে "আমি শ্রীকৃষ্ণের অবিচ্ছেদ্য অংশ," তাহলে সেই চরম বিপদের মুহূর্তটিও তোমার জন্য শ্রীকৃষ্ণের কাছে আত্মসমর্পণের পরিস্থিতি বানিয়ে তোলে। তুমি জান যে শ্রীকৃষ্ণ তোমাকে সুরক্ষা দেবেন। তুমি তোমার সর্বোচ্চ চেষ্টা কর, তোমার বুদ্ধিকে কাজে লাগাও কিন্তু তুমি একই সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণে বিশ্বাস রাখ। বালস্য নেহ পিতরৌ নৃসিংহ (ভাগবত ৭/৯/১৯) । যদি শ্রীকৃষ্ণ উপেক্ষা করেন তাহলে কোনকিছুই তোমাকে রক্ষা করতে পারবে না। অন্য কোন কিছুই তোমাকে বাঁচাতে পারবে না। ধর কারোর রোগ হয়েছে। অনেক অনেক সুদক্ষ চিকিৎসক তার চিকিৎসা চালাচ্ছে। ভাল ভাল ঔষধও দেয়া হচ্ছে। সেগুলি তার জীবন রক্ষার নিশ্চয়তা দেবে? না। সেটি কোন নিশ্চয়তা নয়। যদি শ্রীকৃষ্ণ উপেক্ষা করেন তাহলে ঐ সব ডাক্তার এবং ঔষুধ সত্ত্বেও সে মারা যাবে। আর যদি শ্রীকৃষ্ণ তাকে রক্ষা করেন তাহলে এমন কি সে যদি কোন উন্নত চিকিৎসা নাও পায়, তবু সে বেঁচে যাবে। সুতরাং সে ব্যক্তি শ্রীকৃষ্ণে পূর্ণরূপে শরণাগত... শরণাগতির একটি অঙ্গ হচ্ছে অবশ্য রক্ষিবে কৃষ্ণ বিশ্বাস পালন। তখন তুমি সুখী হবে। ঠিক শিশুর ন্যায় সেই ব্যক্তি পরম পিতা-মাতার কাছে পূর্ণরূপে শরণাগত এবং তাই সে নিশ্চিত যে "আমার পিতা রয়েছেন, আমার মাতা রয়েছেন"। তাই তিনি সুখী। কদাহম্‌ ঐকান্তিকম্‌ নিত্য কিঙ্করঃ (স্তোত্র রত্ন ৪৩) যদি তুমি জানো যে কেউ একজন রয়েছে যে আমার পৃষ্ঠপোষক, আমার রক্ষাকর্তা , তাহলে কি তুমি সুখী হবে না? কিন্তু যদি তোমাকে সব কিছু নিজ দায়িত্বেই করতে হয়, তুমি কি তাহলে সুখী ? ঠিক সেইরকম যদি তুমি কৃষ্ণভাবনামৃতে বিশ্বাস কর যে, "শ্রীকৃষ্ণ আমাকে সুরক্ষা দেবেন" এবং যদি তুমি শ্রীকৃষ্ণের প্রতি বিশ্বস্ত থাকো, তাহলেই সেটিই হচ্ছে সুখের মানদণ্ড। আর কোনওভাবে তুমি সুখী হতে পার না। তা সম্ভব নয়। একো বহুনাম্‌ বিদধাতি কামান্‌ (কঠোপনিষদ ২/২/১৩) ।

সেটিই হচ্ছে বাস্তব সত্য। এমন কি তোমার এই বর্তমান বিদ্রোহী অবস্থাতেও শ্রীকৃষ্ণ তোমাকে সুরক্ষা দিচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণের সুরক্ষা ছাড়া তুমি এক মুহূর্তও বাঁচতে পারবে না। তিনি এতোই কৃপাময়। কিন্তু যখন তুমি সেটি স্বীকার করবে তখন তিনি প্রীত হন। এখনও শ্রীকৃষ্ণ তোমাকে সুরক্ষা দিচ্ছেন কিন্তু তুমি সেটি জান না, কারণ তুমি তোমার জীবনটি এখন নিজের ঝুঁকিতে চালাচ্ছ। তাই তিনি তোমাকে স্বাধীনতা দিয়েছেন। "ঠিক আছে, তোমার যা ইচ্ছে কর। যতদূর সম্ভব আমি তোমাকে রক্ষা করব।" কিন্তু যখন তুমি পূর্ণরূপে আত্মসমর্পণ করবে, তখন সম্পূর্ণ দায়িত্ব শ্রীকৃষ্ণের। সেটি একটি বিশেষ কৃপা। বিশেষ সুরক্ষা। ঠিক যেমন পিতার মতো। শিশু যখন বড় হয়ে ওঠে তখন সে বাবার কোনও পরোয়া করে না। নিজের মতো স্বাধীনভাবে চলে। পিতা তখন কিই বা করতে পারেন? "ঠিক আছে, তোমার যা খুশি কর"। কিন্তু যেই সন্তান পিতার কাছে পূর্ণ শরণাগত থাকে, তিনি সেই সন্তানকে অধিক যত্ন করেন।

সেটিই ভগবদগীতায় বলা হয়েছে, "সমোহহম্‌ সর্বভূতেষু" (গীতা ৯/২৯) "আমি সকলের প্রতি সমভাবাপন্ন"। ন মে দ্বেষ্যঃ । কেউই আমার শত্রু নয়।" তিনি কি ভাবে কারও শত্রু হতে পারেন? প্রত্যেকেই তো শ্রীকৃষ্ণের সন্তান। জীব কিভাবে শ্রীকৃষ্ণের শত্রু হতে পারে ? সে সন্তান। তা সম্ভব নয়। তিনি সকলের বন্ধু। কিন্তু আমরা তাঁর এই বন্ধুত্বের সুযোগ গ্রহণ করছি না। সেটিই আমাদের রোগ। সেইটিই আমাদের রোগ। তিনি সকলেরই বন্ধু। সমোহহম্‌ সর্বভূতেষু। কিন্তু যে সেই কথা স্বীকার করে, সে বুঝতে পারে, "শ্রীকৃষ্ণ আমাকে এইভাবে সুরক্ষা দিচ্ছেন"। সেইটিই হচ্ছে সুখলাভের পন্থা। পড়তে থাকো।