BN/Prabhupada 0675 - ভক্ত হচ্ছেন করুণা সাগর, তিনি করুণা বিতরণ করেন
Lecture on BG 6.25-29 -- Los Angeles, February 18, 1969
প্রভুপাদঃ ১৫৬ পৃষ্ঠা
বিষ্ণুজনঃ "ধীরে ধীরে, ধাপে ধাপে, পূর্ণ বিশ্বাস সহকারে, বুদ্ধির দ্বারা একজন ব্যক্তিকে পরম স্তরে স্থিত হতে হবে আর এইভাবে মন কেবল আত্মজ্ঞানে স্থির হবে, এবং অন্য কিছুই চিন্তা করবে না। (ভগবদ্গীতা ৬.২৫)
প্রভুপাদঃ হ্যাঁ। আত্ম... মন কেবল আত্মায় স্থিত হতে হবে। আমরা আত্মা এবং শ্রীকৃষ্ণও আত্মা। ঠিক যেমন তুমি যদি তোমার চোখকে সূর্যের দিকে স্থির কর, তাহলে তুমি সূর্যকেও দেখতে পারবে আর নিজেকেও। কখনও কখনও আমরা গভীর অন্ধকারে আমরা নিজেদেরকে পর্যন্ত দেখতে পারি না। সেই অভিজ্ঞতা তোমাদের রয়েছে। আমি অন্ধকারে আমার নিজের দেহকেও দেখতে পাই না। যদিও দেহটি আমার সঙ্গেই আছে, আমি হয়তো দেহটিই অথবা যাই হোক না কেন, আমি আমাকে দেখতে পাচ্ছি না। সেটি তোমরা অভিজ্ঞতা পেয়েছ। যদি তুমি সূর্যের আলোতে থাক, সূর্যের কিরণে, তাহলে তুমি সূর্যকে এবং সেই সাথে নিজেকেও দেখতে পাও। তাই না? সেই জন্য নিজেকে দেখা মানে প্রথমে ভগবানকে দেখা। পরমাত্মা হচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণ। বেদে, কঠোপনিষদে , বলা হয়েছে, নিত্যো নিত্যানাম্ চেতনঃ চেতনানাম্ (কঠোপনিষদ ২/২/১৩) পরমাত্মা হচ্ছেন সমস্ত নিত্য বস্তুর পরম নিত্য। সমস্ত চেতনের মধ্যে তিনি পরম চেতন। এই কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলন মানে হচ্ছে - আত্মচেতনায় স্থিত হওয়া। সেই একই উদাহরণ। যদি তুমি তোমার মন শ্রীকৃষ্ণে স্থির কর, তাহলে তুমি সবকিছুতেই মন নিবদ্ধ করতে পারবে। সেই একই উদাহরণ, যদি তুমি উদরের যত্ন নাও, তাহলে তোমার সারা শরীরেরই যত্ন নেয়া হয়ে গেল। যদি তোমার পেটে ভাল ভাল পুষ্টিকর খাবার দেয়া হয়, পেট সমস্ত সমস্যা থেকে মুক্ত থাকে, তাহলে তোমার স্বাস্থ্যও ভাল থাকবে। যদি তুমি গাছের গোঁড়ায় জল দাও, তাহলে সমস্ত শাখা-প্রশাখা সবকিছুরই যত্ন নিচ্ছ, পাতা, ফুল, শাখা, কাণ্ড, সবকিছুই।
স্বাভাবিকভাবেই। তেমনই যদি তুমি শ্রীকৃষ্ণের সেবা কর, তবে তুমি সকলের প্রতিই সর্বশ্রেষ্ঠ সেবা করছ। আপনা থেকেই। এই ছেলেগুলো, তারা কীর্তন দল নিয়ে যাচ্ছে। কারণ ওরা কৃষ্ণভাবনাময়। এমন নয় যে ওরা মন্দিরে অলস বসে থাকে। ওরা বাইরে যাচ্ছে, এই দর্শনটি প্রচার করছে। যাতে করে অন্যরা এর সুবিধাটি নিতে পারে সুতরাং একজন কৃষ্ণভাবনাময় ব্যক্তি অলস বসে থাকতে পারে না। তিনি মনে করেন যে এটি চমৎকার দর্শন, তাহলে কেন অন্যদেরকেও তা বিতরণ করব না। সেটিই তাঁর উদ্দেশ্য। যোগী কেবল তাঁর নিজের উন্নতি নিয়েই সন্তুষ্ট থাকেন। তিনি একটি নির্জন স্থানে বসে যোগাভ্যাস করে নিজেকে চিন্ময় স্তরে উন্নীত করেন। সেটি কেবল তাঁর নিজের চিন্তা। কিন্তু ভক্ত কেবল নিজের চিন্তা করেই সন্তুষ্ট থাকেন না, ব্যক্তিগত। আমরা বৈষ্ণবদের সম্মান করিঃ
- বাঞ্ছাকল্পতরুভ্যশ্চ
- কৃপাসিন্ধুভ্য এব চ
- পতিতানাম, পাবনেভ্যো
- বৈষ্ণবেভ্য নমো নমঃ
বৈষ্ণব বা ভক্তেরা অন্য জীবেদের প্রতি অত্যন্ত করুণাময় হন, কৃপাসিন্ধুভ্য এব চ। কৃপা মানে করুণা, সিন্ধু মানে সাগর। একজন ভক্ত হচ্ছেন কৃপার সাগর। তিনি কৃপা বিতরণ করতে চান।
ঠিক যেমন যীশু খ্রিস্টের মতো। তিনি ভগবদ্ভাবনাময়, কৃষ্ণ ভাবনাময় ছিলেন। কিন্তু তিনি তা নিজের মধ্যে রেখেই সন্তুষ্ট থাকেন নি। তিনি যদি তাঁর কৃষ্ণভাবনা কেবল নিজের মধ্যেই রাখতেন, তাহলে তাঁকে হয়তো ক্রূশবিদ্ধ হতে হোত না। কিন্তু না, তিনি অন্যদেরও যত্ন নিতে চেয়েছিলেন। অন্যরাও ভগবদ্ভাবনাময় হোক। অন্যেরাও কৃষ্ণভাবনাময় হোক। রাজা তাঁকে তা করতে বাধা দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েও তা করেছিলেন। সেটিই ভক্তের স্বভাব। সেই জন্যই প্রচারক ভক্তেরা ভগবানের সবচাইতে অধিক প্রিয়। সেটি শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাতে বলা হয়েছে। তাঁরা বাইরে যাচ্ছেন, প্রচার করছেন। তাঁদেরকে বিরুদ্ধ পরিবেশের সাথে মিশতে হচ্ছে। কখনও কখনও তাঁরা পরাজিত হচ্ছেন , কখনও বা হতাশ হচ্ছেন, কখনও আবার কাউকে বোঝাতে সক্ষম হচ্ছেন, বিভিন্ন ধরণের লোক রয়েছে। সুতরাং এমন নয় যে সকলেই সুদক্ষ। তিন শ্রেণীর ভক্ত রয়েছে। কিন্তু এই যে প্রচেষ্টা যে "আমি বাইরে যাব এবং কৃষ্ণ ভাবনামৃত প্রচার করব", এটিই হচ্ছে ভগবানের প্রতি সর্বশ্রেষ্ঠ সেবা। কারণ তাঁরা বিরুদ্ধ পরিবেশের মধ্য দিয়েও লোকদেরকে আত্মউপলব্ধির সর্বোচ্চ স্তরে নিয়ে আসতে চেষ্টা করছেন।
তাই তিনি দ্রষ্টা, যিনি আত্ম-উপলব্ধির স্তরে স্থিত, তিনি অলস বসে থাকতে পারেন না। তিনি অবশ্যই বাইরে বেড়িয়ে আসবেন। ... ঠিক যেমন রামানুজাচার্যের মতো। তিনি লোকসমক্ষে মন্ত্র ঘোষণা করেছিলেন। তাঁর পারমার্থিক গুরু তাঁকে বলেছিলেন যে এই মন্ত্র ... ঠিক যেমন ঐ মহর্ষি তোমাদের দেশে যখন এসেছিল। সে কিছু গোপনীয় মন্ত্র দিতে চেয়েছিল। যদি সেই মন্ত্রের কোন শক্তি থেকেই থাকবে, তবে সেটি গোপন হবে কেন? যদি সেই মন্ত্রের আদৌ কোন ক্ষমতা থেকেই থাকে, তাহলে সেটি কেন লোকসমক্ষে বলা হবে না যাতে করে সবাই সেটির সুবিধা নিতে পারে? সেটিই বাস্তব। এটি প্রতারণা, দেখতে পাচ্ছ? সুতরাং এখানে কোন প্রতারণার পন্থা নেই। আমরা বলি যে এই মহামন্ত্র তোমাকে রক্ষা করতে পারে, তাই আমরা এটি জনসমক্ষে প্রচার করছি (অস্পষ্ট) । বিনামূল্যে, কোন মূল্য ছাড়াই। কিন্তু লোকেরা এতোই মূর্খ যে তাঁরা এটি গ্রহণ করতে প্রস্তুত নয়। ওরা এই মন্ত্রের পেছনে ছুটবে, ঐ মহাঋষির পেছনে ছুটবে। ৩৫ ডলার দাও, আর গোপন মন্ত্র নাও, বুঝলে? সুতরাং লোকেরা ঠকতে চাইছে। আর এখানে, হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র। এই লোকগুলো এখানে তাঁর বিনামূল্যে প্রচার করছে। রাস্তায়, পার্কে, সর্বত্র তা ঘোষণা করছে, "এসো, এটি গ্রহণ কর।" "ওহ্ না, এটি ভাল নয়।" এই হচ্ছে মায়া। এটি হচ্ছে মায়ার ফাঁদ। আর যদি তুমি কিছু পয়সা নাও, ফালতু লোক ঠকাও, ওহ্, তাহলে লোকেরা তোমাকে অনুসরণ করবে। সচ্চা বোলে তুমহারা ... (?) একজন ভক্তের দ্বারা বলা এটি একটি হিন্দি শ্লোক। বলা হচ্ছে, এই কলি যুগ এতোই জঘন্য যে তুমি যদি সত্য বল, তাহলে লোকেরা লাঠি নিয়ে আসবে তোমাকে মারার জন্য। কিন্তু যদি তুমি তাদের প্রতারণা কর, ধাপ্পা দাও, তারা মোহিত হয়ে যাবে, আর ওটাই তারা পছন্দ করবে। যদি আমি বলি, 'আমি ভগবান, ওহ্ এইতো এই স্বামজি, উনি ভগবান।" ওরা খোঁজও নেবে না যে, "কীভাবে আপনি ভগবান হলেন? ভগবানের লক্ষণ কি? আপনার কি সেই সমস্ত লক্ষণ আছে?" কেউ জিজ্ঞেস করে না। সুতরাং এইগুলো ততক্ষণ ঘটে যদি না কেউ আত্মচেতনায় না থাকে। যদি কেউ না জানে প্রকৃত আত্ম বা আমি কে, যদি কেউ এটি না জানে যে পরমাত্মা কে, তাই যোগ মানে হচ্ছে এই আত্ম-উপলব্ধির পন্থাকে হৃদয়ঙ্গম করা। সেটিই হচ্ছে যোগ। পড়তে থাকো।