BN/Prabhupada 0676 - মনের নিয়ন্ত্রনাধীন হওয়া মানে হচ্ছে ইন্দ্রিয়ের নিয়ন্ত্রের অধীন থাকা



Lecture on BG 6.25-29 -- Los Angeles, February 18, 1969

বিষ্ণুজনঃ শ্লোক ২৬ঃ "মন যে যে বিষয়ে ধাবিত হয়, মনের চঞ্চল ও অস্থির স্বভাবের কারণে, সেই সেই বিষয় থেকে নিবৃত্ত করে একে আত্মার বশে আনতে হবে (ভগবদ্গীতা ৬/২৬)

প্রভুপাদঃ এটিই হচ্ছে পন্থা। এই হচ্ছে যোগ পন্থা। ধর, তুমি তোমার মনকে শ্রীকৃষ্ণে নিবদ্ধ করতে চাইছো, আর তোমার মন অন্য দিকে চলে যাচ্ছে, এখানে ওখানে, কোন সিনেমা হলের দিকে। তোমাকে তা নিবৃত্ত করতে হবে। "না, ওখানে নয়, দয়া করে এখানে থাকো।" এই হচ্ছে যোগ অনুশীলন। মনকে কৃষ্ণ ছাড়া অন্য কিছুতে যেতে না দেয়া। যদি তুমি পার, তাহলে এটিই কেবল অনুশীলন কর। তোমার মনকে শ্রীকৃষ্ণ থেকে অন্য কোথায় যেতে দিও না। আর যেহেতু আমরা আমাদের মনকে কেবল এক জায়গায় বসে থেকে স্থির করতে পারি না... সেটি অত্যন্ত উন্নত প্রশিক্ষণের দরকার। এক জায়গায় বসে থেকে শ্রীকৃষ্ণে মন দেয়া, সেটি খুব সহজ নয়। যার সেই অভ্যাস নেই, সে যদি কেবল অনুকরণ করে, তাহলে সে সংশয়ের মধ্যে পড়ে যাবে। আমাদের নিজেদেরকে সর্বদা কৃষ্ণভাবনামৃতে যুক্ত রাখতে হবে। আমরা যাই করছি না কেন তা অবশ্যই শ্রীকৃষ্ণের দিকে নিয়ে যেতে হবে। আমাদের সারা দিনের কাজগুলো এমন ভাবে করতে হবে যে তা যেন সবকিছুতেই কৃষ্ণের জন্য হয়। তাহলেই তোমার মন কৃষ্ণে লাগবে। যখন তুমি উন্নত অবস্থায় নেই, তখন কৃত্রিমভাবে যদি তুমি তোমার মনকে কৃষ্ণে দিতে চাও, সেই যোগ পন্থা এখানে বলা হচ্ছে, তোমাকে এইরকম সোজা হয়ে বসতে হবে, তোমার দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে হবে তোমার নাসিকার অগ্রভাগে একটি নির্জন স্থানে বসতে হবে... কিন্তু এসবের সুযোগ কোথায়? আজকালকার দিনে এইসব সুযোগ সুবিধা পাবার জায়গা কোথায়? তাই এটিই হচ্ছে একমাত্র পন্থা। উচ্চৈঃস্বরে হরিনাম জপ কর। হরে কৃষ্ণ। যদি তোমার মন অন্য কিছুতে থাকেও, তা বাধ্য হবে কৃষ্ণনামের শব্দে আসতে। তোমার মনকে অন্য কিছু থেকে জোর করে আনার কিছু নেই। আপনা থেকেই তা প্রত্যাহার হবে। কারণ সেই শব্দধ্বনি । (পাশে মোটর গাড়ি যাচ্ছে)। ঠিক যেমন মোটর গাড়ির শব্দ হচ্ছে। আপনা থেকেই তোমার মনোযোগ ঐ দিকে চলে যাচ্ছে। ঠিক তেমনই, যদি আমরা হরে কৃষ্ণ জপ করি তাহলে আমাদের মন আপনা থেকেই স্থির হবে। অন্যথায় আমি আমার মনকে অন্য বহু জায়গায় দিতেই অভ্যস্ত। যোগ অনুশীলন মানে মনকে অন্য বিষয় থেকে নিবৃত্ত করে শ্রীকৃষ্ণে লাগানো। এই কীর্তনের ধ্বনি আপনা থেকেই সেই যোগ পদ্ধতিতে আমাদের সাহায্য করে। পড়।

বিষ্ণুজনঃ তাৎপর্যঃ মনের স্বভাব হচ্ছে চঞ্চল ও অস্থির। কিন্তু আত্মতত্ত্বজ্ঞ যোগীর কর্তব্য হচ্ছে সেই মনকে নিয়ন্ত্রণ করা, মনের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়া কখনই তাঁর উচিত নয়।

প্রভুপাদঃ হ্যাঁ। সেটিই হচ্ছে যোগ সাফল্য। এই মুহূর্তে মন আমাকে নিয়ন্ত্রণ করছে, গো-দাস। মন আমাকে নির্দেশ দিচ্ছে যে, "কেন তুমি দয়া করে ঐ সুন্দরী মেয়েটির দিকে তাকাচ্ছো না।" আর আমিও যাচ্ছি। ... "কেন সেই চমৎকার মদটি খাচ্ছো না? "হ্যাঁ"। "কেন ঐ দারুন সিগারেটটি খাচ্ছো না? "হ্যাঁ"। "ঐ দারুন রেস্টুরেন্ট-এ যাচ্ছো না কেন?" "এটা কেন করছো না"? এইভাবে বহু কিছু নির্দেশ দিচ্ছে। আর আমরা সেটিই পালন করে চলেছি। এই বর্তমান অবস্থাটি হচ্ছে ... আমি মনের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছি। জড় জাগতিক জীবনের মানে হচ্ছে মনের দ্বারা বা ইন্দ্রিয়ের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়া। মন হচ্ছে সমস্ত ইন্দ্রিয়ের কেন্দ্রবিন্দু। তাই মনের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়া মানে হচ্ছে ইন্দ্রিয়ের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়া। ইন্দ্রিয়সমূহ হচ্ছে মনের অধীন সহকারী। কর্তা মন নির্দেশ দেয়, "যাও আর ওটা দেখ"। আমার চোখ তাই দেখে। সুতরাং আমার চোখ, এই চক্ষু ইন্দ্রিয়টি মনের নির্দেশের অধীন। আমার পা গুলো চলছে। তাই পাগুলো মনের নির্দেশ মনে চলছে। তাই মনের নির্দেশের অধীন হওয়া মানে আসলে ইন্দ্রিয়ের নির্দেশের অধীন হওয়া। তাই যদি তুমি মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পার, তাহলে তুমি ইন্দ্রিয়ের অধীনও আর হবে না।