BN/Prabhupada 0683 - বিষ্ণু সমাধিতে থাকা যোগী আর কৃষ্ণভাবনাময় ব্যক্তির মাঝে কোন পার্থক্য নেই



Lecture on BG 6.30-34 -- Los Angeles, February 19, 1969

বিষ্ণুজনঃ শ্রীকৃষ্ণ পরমাত্মা রূপে প্রত্যেকের হৃদয়ে বিরাজমান। অধিকন্তু, অসংখ্য জীবের হৃদয়ে অবস্থিত অসংখ্য পরমাত্মার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। কোন পার্থক্য নেই...

শ্রীল প্রভুপাদঃ উদাহরণটি আকাশে থাকা ঠিক একটি সূর্যের মতো। কিন্তু তুমি যদি মাটিতে লক্ষ লক্ষ জলভরা পাত্র রাখো, তাহলে প্রতিটি পাত্রেই সেই সূর্যের প্রতিফলন দেখতে পারবে। অথবা আরেকটি উদাহরণ দেয়া যেতে পারে, দুপুরবেলা তোমার কোন বন্ধুকে জিজ্ঞেস কর যে হয়তো তোমার থেকে দশ হাজার মাইল দূরে আছে যে, "সূর্য কোথায়?" সে বলবে, "আমার মাথার ওপর।" এভাবে লক্ষ কোটি মানুষ তাদের প্রত্যেকের নিজের মাথার ওপরে সূর্যকে দেখতে পাবে, কিন্তু সূর্য কিন্তু একটিই। আর আরেকটি উদাহরণ, জল্ভরা পাত্রের। একটি মাত্র সূর্য থাকলেও, লক্ষ লক্ষ জল পাত্রের সবকটিতেই তুমি সেই সূর্যের প্রতিফলন দেখতে পাবে। ঠিক তেমনই অসংখ্য কোটি জীব থাকতে পারে। গণনার বাইরে। জীবস্য অসংখ্য। বৈদিক ভাষায় বলা হয়েছে যে, জীব অসংখ্য। অগুনিত। তেমনই শ্রীবিষ্ণু হলেন... যদি সূর্যের মতো একটি জড় বস্তু প্রতিটি জলপাত্রে প্রতিফলিত হতে পারে, তাহলে প্রতিটি জীবের হৃদয়ে অবস্থিত পরমেশ্বর ভগবান শ্রীবিষ্ণু কেন তা হতে পারবেন না? এটি বোঝা মোটেই কঠিন নয়। তিনি চেতন । সেই কথা বলা হয়েছে আর যোগীকে সেই বিষ্ণুরূপে মনসংযোগ করতে বলা হয়েছে। এই বিষ্ণু রূপ হচ্ছে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অংশ বা কলা।

তাই যিনি কৃষ্ণভাবনাময়, তিনি ইতিমধ্যেই যোগী। সেই কথা ব্যাখ্যা করা হবে। তিনি আদর্শ যোগী। সেটি আমরা এই অধ্যায়ের শেষ শ্লোকে ব্যাখ্যা করব। পড়ো।

বিষ্ণুজনঃ "ভগবানের প্রেমময়ী যেবায় নিযুক্ত একজন কৃষ্ণভাবনাময় ব্যক্তি এবং পরমাত্মার ধ্যানে নিযুক্ত এক আদর্শ যোগীর মাঝে কোন পার্থক্য নেই।"

শ্রীল প্রভুপাদঃ কোন পার্থক্য নেই। শ্রীবিষ্ণুর রূপে একজন সমাধিমগ্ন যোগী এবং একজন কৃষ্ণভাবনাময় ব্যক্তির মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। পড়ো।

বিষ্ণুজনঃ "কৃষ্ণভাবনাময় যোগী, জড় জাগতিক অস্তিত্বে থাকার দরুন আপাতদৃষ্টিতে অন্য কাজে যুক্ত বলে মনে হলেও তিনি আসলে সর্বক্ষণ শ্রীকৃষ্ণেই স্থিত। কৃষ্ণভাবনামৃতে নিরন্তর যুক্ত ব্যক্তি আপনা থেকেই মুক্ত।"

শ্রীল প্রভুপাদঃ এই কথা আমরা শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় দ্বাদশ অধ্যায়ে পাচ্ছি যে, যিনি ...

মাম্‌ চ যোহব্যভিচারেণ
ভক্তিযোগেন সেবতে
স গুণান্‌ সমতীত্যৈতান
ব্রহ্মভূয়ায় কল্পতে।
(ভগবদগীতা ১৪/২৬)

বলা হয়েছে যে, যিনি আমরা একনিষ্ঠ প্রেমময়ী সেবায় যুক্ত তিনি ইতিমধ্যেই জড়া প্রকৃতির তিন গুণের উর্ধে ব্রহ্মভূয়ায় কল্পতে। তিনি ব্রহ্ম স্তরে রয়েছেন। মানে মুক্তাবস্থা। মুক্ত হওয়ার মানে হচ্ছে ব্রহ্মভূত স্তরে থাকা। তিনটি স্তর আছে। দেহগত বা ইন্দ্রিয়গত স্তর, মানসিক স্তর এবং পারমার্থিক বা চিন্ময় স্তর। সেই চিন্ময় স্তরকে বলা হয় ব্রহ্মভূত স্তর। তাই মুক্ত স্তরে থাকা মানে ব্রহ্মভূত স্তরে থাকা। বদ্ধ জীবেরা আমরা বর্তমানে দেহগত বা ইন্দ্রিয়গত স্তরে আছি। যারা এর থেকে একটু উন্নত স্তরে আছে তাঁরা মানসিক স্তরে রয়েছে, জল্পনা-কল্পনার স্তরে, দার্শনিক ইত্যাদি। এবং তার ঊর্ধ্বের স্তরটি হচ্ছে ব্রহ্মভূত স্তর। এসব আপনারা ভগবদগীতায় দ্বাদশ অধ্যায়ে পাবেন অথবা মনে হয় চতুর্দশ অধ্যায়ে। যিনি কৃষ্ণভাবনাময় তিনি ইতিমধ্যেই ব্রহ্মস্তরে অবস্থান করছেন। তার মানে মুক্ত। পড়ো।

বিষ্ণুজন: " এই কথা নারদীয় পঞ্চরাত্রে এইভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, "কোন ব্যক্তি তার মনোযোগ ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অপ্রাকৃত রূপে দেয়ার মাধ্যমে সেই ভগবানের যিনি স্থান কালের ঊর্ধ্বে এবং সর্বব্যাপ্ত তাঁর চিন্তায় মগ্ন হওয়ার মাধ্যমে তিনি চিন্ময় আনন্দের স্তর প্রাপ্ত হন এবং তাঁর চিন্ময় সান্নিধ্য লাভ করতে পারেন।" যোগের সর্বোচ্চ অবস্থা হচ্ছে কৃষ্ণভাবনামৃত। শ্রীকৃষ্ণ সকলের হৃদয়ে পরমাত্মা রূপে বিরাজ করছেন, এই কথা জানার ফলে যোগী সমস্ত ত্রুটি থেকে মুক্ত হন। ভগবানের সেই অচিন্ত্য শক্তির কথা বেদে এই ভাবে বলা হয়েছেঃ "শ্রীবিষ্ণু এক কিন্তু তিনি সর্বব্যাপ্ত। তাঁর অচিন্ত্য শক্তির প্রভাবে তিনি এক হয়েও সর্বত্র ব্যাপ্ত এবং বিরাজ করেন। ঠিক যেইভাবে সূর্য এক জায়গায় উদিত হয়েও যুগপৎ সর্বত্র বিরাজ করেন।"

শ্রীল প্রভুপাদঃ হ্যাঁ আমি ইতিমধ্যেই এই উদাহরণটি দিয়েছি। সূর্য যেমন এক স্থানে থেকেই যুগপৎ সব জায়গায়তে থাকতে পারেন তেমনই, শ্রীবিষ্ণু বা শ্রীকৃষ্ণ একই সাথে সকলের হৃদয়ে অবস্থান করেন। তিনি আসলেই বিরাজ করেনঃ ঈশ্বর সর্বভূতানাম্‌ হৃদ্দেশেহর্জুন (গীতা ১৮/৬১) তিনি অবস্থান করছেন, তাঁর অবস্থানের কথা বলা হচ্ছে, হৃদ্দেশে । মানে হৃদয়ের অভ্যন্তরে। তাই যোগের সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া মানে শ্রীবিষ্ণু হৃদয়ে কোথায় অবস্থান করছেন তা খুঁজে বার করা। শ্রীবিষ্ণু সেখানে উপবিষ্ট আছেন। পড়ো।