BN/Prabhupada 0684 - ভগবাান বিষ্ণুর রূপে মন নিবদ্ধ করাই যোগের গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা
Lecture on BG 6.30-34 -- Los Angeles, February 19, 1969
বিষ্ণুজনঃ শ্লোক ৩২ঃ "হে অর্জুন, তিনিই আদর্শ যোগী যিনি জানেন আত্মা সর্বভূতে বিরাজমান, এই কথা জেনে তিনি সর্বভূতে প্রকৃত সমদর্শন করেন, সুখে এবং দুঃখে সমভাব দর্শন করেন। (গীতা ৬/৩২)
প্রভুপাদঃ এটিই হচ্ছে সার্বজনীন দৃষ্টিভঙ্গি। এমন নয় যে ভগবান কেবল তোমার হৃদয়েই রয়েছেন, কিন্তু বেড়াল বা কুকুর না গাভীর হৃদয়ে নেই। তিনি সকলের অন্তরে বিরাজ করছেন। বলা হয়েছে সর্বভূতানাম্। সর্বভূত মানে সমস্ত জীবপ্রজাতি। তিনি মানুষের হৃদয়ে অবস্থিত, তিনি পিপীলিকার হৃদয়ে অবস্থিত। তিনি কুকুরের হৃদয়ে রয়েছেন, তিনি সকলের হৃদয়েই বসে আছেন। কিন্তু কুকুর বেড়াল তা বুঝতে পারে না। সেটিই হচ্ছে পার্থক্য। কিন্তু একটি মানুষ , যদি সে চেষ্টা করে, যোগপদ্ধতির মাধ্যমে - সাংখ্যযোগ পদ্ধতি - ভক্তিযোগ পদ্ধতি , তাহলে সে তা বুঝতে পারবে। সেটিই হচ্ছে মানব জীবনের বিশেষ সুবিধা। আর আমরা যদি সেই সুযোগটি হারিয়ে ফেলি, আমরা যদি তা খুঁজে পাই, যদি আমরা ভগবানের সাথে আমাদের অস্তিত্ব চিহ্নিত করতে না পারি, তাহলে আমরা সেই সুযোগটি হারিয়ে ফেললাম। ৮৪ লক্ষ প্রজাতির মধ্য দিয়ে আসার এই পন্থায় আমরা এই মানব দেহটি পাই, আর আমরা যদি সেই সুযোগটিও হারিয়ে ফেলি তাহলে যে আমরা কতোটা ক্ষতিগ্রস্থ হলাম তা তুমি বুঝতে পারবে না। তাই আমাদের সেই ব্যাপারে সচেতন হওয়া উচিত, আমাদের সেই সুযোগটি হারানো উচিত নয়। তুমি একটি সুন্দর দেহ পেয়েছ, মানব দেহ, বুদ্ধিমত্তা, এবং সভ্য জীবন পেয়েছ। আমরা পশুদের মতো নই। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে চিন্তা করতে পারি, পশুদের মতো আমাদের জীবন এতোটা কঠিন সংগ্রামের নয়। তাই আমাদের সেটি কাজে লাগানো উচিত। সেটিই হচ্ছে ভগবদগীতার নির্দেশ। সুযোগটি হেলায় হারিও না। সদ্ব্যবহার কর। পড়ো।
বিষ্ণুজনঃ শ্লোক ৩৩ঃ অর্জুন বললেন, হে মধুসূদন, তুমি যেই যোগপদ্ধতির কথা সংক্ষেপে বললে, তা আমার কাছে খুব কঠিন এবং অবাস্তব মনে হচ্ছে কারণ আমার মন অত্যন্ত চঞ্চল এবং অস্থির। (গীতা ৬/৩৩)
শ্রীল প্রভুপাদঃ এখানে এটি হচ্ছে যোগ পদ্ধতির এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার যে যদি তুমি তোমার মনকে শ্রীবিষ্ণুর রূপে নিবদ্ধ করতে পার। পন্থাটি আগেই বলা হয়েছে যে তোমাকে এভাবে আসনে বসতে হবে, তোমার দৃষ্টি এইরকম থাকবে, তোমাকে এইভাবে জীবনধারণ করতে হবে, অনেক কিছু -- যা আমরা আগেই আলোচনা করেছি। কিন্তু অর্জুন বলছেন, "এসব আমার জন্য খুবই কঠিন।" এই বিষয়টি আমাদের বুঝতে হবে। তিনি বলছেন, "হে মধুসূদন, তুমি যেই যোগপদ্ধতির কথা বললে..." একে বলে অষ্টাঙ্গ যোগ, আটটি ভিন্ন অঙ্গসমন্বিত। যম, নিয়ম। সবার প্রথমেই ইন্দ্রিয় সংযম, নিয়ম কানুন মেনে চলা, তারপর আসন পদ্ধতি অভ্যাস। তারপর প্রত্যাহার বা শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি তারপর মন নিয়ন্ত্রণ। তারপর সেই রূপে মনকে নিমগ্ন করা। এইভাবে আটটি পন্থা রয়েছে, অষ্টাঙ্গ যোগ।
অর্জুন বলছেন "এই অষ্টাঙ্গ যোগ অনেক কঠিন" তিনি বলছেন, "অব্যবহারিক বা অবাস্তব" - "মনে হচ্ছে" যে তা বাস্তবে সম্ভব নয়। তাঁর জন্য। এটি আসলে অবাস্তব নয়। যদি এটি অবাস্তব হোত তাহলে, শ্রীকৃষ্ণ এতো সময় ধরে এই ব্যাপারে বলতেন না। এটি অবাস্তব নয়, কিন্তু মনে হয় যেন এমনটা ... আমার জন্য একটি বিষয় অবাস্তব মনে হতে পারে, কিন্তু তোমার জন্য তা ব্যবহারিক ও বাস্তব। সেটি আলাদা কথা। কিন্তু সাধারণত এই যোগপদ্ধতি সাধারণ লোকেদের জন্য অব্যবহারিক। অর্জুন নিজেকে সাধারণ মানুষ বলে উপস্থাপন করছেন, এই মনোভাব নিয়ে যে তিনি কোন ভিক্ষু নন বা গৃহ-পরিবারত্যাগী সন্ন্যাসী নন, অথবা তাঁর রুটি-রোজগারের সমস্যার সাথে কোন সম্পর্ক নেই। কারণ তিনি রাজ্যের কারণে যুদ্ধ করতে সেই ময়দানে রয়েছেন। তাই তিনি সাধারণ মানুষের মতোই আচরণ করতে হচ্ছে। তাই সাধারণ মানুষ যারা এই সব বৈষয়িক ব্যাপারে নিযুক্ত জীবিকা অর্জন, পরিবার জীবন, স্ত্রী-সন্তান ইত্যাদি অনেক সমস্যার মধ্যে, তার জন্য এসব ব্যবহারিক নয়। সেটিই এখানে বোঝানো হচ্ছে। এটি কেবল তার জন্য ব্যবহারিক যে ইতিমধ্যে সম্পূর্ণরূপে সবকিছু পরিত্যাগ করেছে। একটি নির্জন ও পবিত্র স্থানে, যেমন কোন পাহাড় বা পাহাড়ের গুহায় বসে। একদম একা। কোন জনমানুষের কোলাহল নেই। আজকালকার দিনে আমাদের মতো মানুষদের জন্য সেই রকম জায়গার বা সুবিধার অবকাশ কোথায়? বিশেষ করে এই যুগে? তাই এই যোগ পদ্ধতিটি ব্যবহারিকভাবে সম্ভব নয়। এটি অর্জুনের মতো মহান বীর স্বীকার করেছেন। তিনি এতোটাই উন্নত ছিলেন, তিনি রাজকীয় পরিবারে জন্মেছিলেন, অনেক কিছুতে অত্যন্ত পারদর্শী ছিলেন, তিনি বলছেন যে এটি ব্যবহারিকভাবে সম্ভব নয়। বোঝার চেষ্টা কর। আর আমরা অর্জুনের তুলনায় আর এমন কি? যদি আমরা এই পদ্ধতি অনুসরণ করি, তাহলে তা সম্ভব হবে না। আমাদের ব্যর্থতা নিশ্চিত। তাৎপর্য পড়তে থাকো।
বিষ্ণুজনঃ "ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনের কাছে যে যোগপদ্ধতির কথা বলেছেন, অর্জুন তা নাকচ করে দিয়েছেন... "
শ্রীল প্রভুপাদঃ হ্যাঁ। অর্জুন প্রত্যাখান করেছেন।
বিষ্ণুজনঃ "...তিনি তা করতে অক্ষম বলে। সকল সাধারণ মানুষের পক্ষে তার ঘরবাড়ি সব ছেড়ে নির্জন স্থানে যাওয়া সম্ভব না কলিযুগে কোন পাহাড় বা জঙ্গলে গিয়ে যোগ অনুশীলন করা সম্ভব না। বর্তমান যুগটি কেবল অল্প আয়ুসম্পন্ন জীবনে বেঁচে থাকার দুর্বার সংগ্রামের দ্বারা পীড়িত।"
শ্রীল প্রভুপাদঃ হ্যাঁ। সবার প্রথমে আমাদের আয়ু অত্যন্ত অল্প যদি তোমরা পরিসংখ্যান করবে তো দেখবে যে তোমাদের পূর্বপুরুষেরা ১০০ বছর, নব্বই বছর বা আশি বছর বাঁচত। এখন ষাট, সত্তর বছরেই মানুষ মরে যাচ্ছে। ক্রমে ক্রমে আমাকে ক্ষয় হতে হবে। এই যুগে মেধা, আয়ু, দয়া, এইসব আরও বহুকিছু হ্রাস পাবে। সেটিই এই যুগের বৈশিষ্ট্য। পড়ো।