BN/Prabhupada 0687 - শুন্যে মন স্থির করা অত্যন্ত কঠিন ব্যাপার



Lecture on BG 6.35-45 -- Los Angeles, February 20, 1969

ভক্তবৃন্দঃ শ্রীল প্রভুপাদের জয় হোক।

ভক্তঃ শ্লোক ৩৫ঃ "ভগবান বললেন, হে মহবাহো অর্জুন, নিঃসন্দেহে চঞ্চল মনকে নিগ্রহ করা অত্যন্ত কঠিন কিন্তু নিরন্তর অভ্যাস ও বৈরাগ্যের দ্বারা তাকে বশীভূত করা সম্ভব (গীতা ৬.৩৫)

শ্রীল প্রভুপাদঃ হ্যাঁ। এখন শ্রীকৃষ্ণ বলছেন, "হ্যাঁ"। তিনি বলেননি এটি কঠিননয়, তিনি বললেন, হ্যাঁ এটি কঠিন কিন্তু নিরন্তর অভ্যাসের দ্বারা তা সম্ভব। নিরন্তর এই অভ্যাস হচ্ছে এমন কিছুতে আমাদের মনকে নিযুক্ত রাখা যা আমাদের কৃষ্ণস্মরণ করাবে। কিছু না কিছু কর... তাই আমাদের অনেক ধরণের কার্যকলাপ আছে কেবল কীর্তনই নয়, মন্দিরের সেবা, প্রসাদ তৈরি ও পরিবেশন, মুদ্রণ সেবা ইতায়দি বহু কিছু প্রত্যেকেই কিছু না কিছুতে যুক্ত আছে এবং সেই সবকিছুই কৃষ্ণকেন্দ্রিক। তাই যে ব্যক্তি শ্রীকৃষ্ণের জন্য টাইপ করছে, সেও যোগপন্থার মধ্যেই আছে যে শ্রীকৃষ্ণের জন্য রান্না করছে, সেও যোগী যে ভক্ত রাস্তায় সংকীর্তন করছে, গ্রন্থাবলী বিতরণ করছে, সেও কৃষ্ণভাবনায় রয়েছে তাই আমাদের স্বাভাবিক অভ্যাসবশতই আমরা যুক্ত থাকি যেমনটা আমাদের জাগতিক জীবনে আমরা অনেক কিছুতেই নিযুক্ত থাকি যদি আমরা আমাদের জীবনকে শ্রীকৃষ্ণের সম্পর্কে যুক্ত রাখি, তাহলে আমাদের সমস্ত কার্যকলাপই কৃষ্ণভাবনাময় হবে এবং তাই এই যোগ অভ্যাস ইতিমধ্যেই হয়ে যাচ্ছে। এরপর পড়ো।

ভক্তঃ শ্লোক ৩৬ঃ অনিয়ন্ত্রিত মনের ব্যক্তির জন্য আত্মউপলব্ধি অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার। কিন্তু যার মন সংযত এবং যিনি যথার্থ উপায় অবলম্বন করে মনকে বশ রাখতে চেষ্টা করেন, তিনি অবশ্যই সিদ্ধি লাভ করেন। সেটিই আমার অভিমত। (গীতা ৬/৩৬) তাৎপর্যঃ ভগবান আমাদের জানিয়ে দিচ্ছে যে জড় বিষয় থেকে মনকে অনাসক্ত করার যথার্থ চিকিৎসা গ্রহণ না করলে কখনই যোগ সাধনায় সিদ্ধিলাভ করা যায় না। মনকে সুখভোগে নিয়োজিত রেখে যোগ অনুশীলন করাটা জল ঢেলে আগুন জ্বালাবার চেষ্টা করার সামিল। ঠিক তেমনই মনকে সংযত না রেখে যোগ অনুশীলন করা কেবল সময়ের অপচয়।

শ্রীল প্রভুপাদঃ কারণ যখন ধ্যান করার বসা হয়, ধ্যান মানে ভগবান শ্রীবিষ্ণুতে মনসংযোগ করা। তা অত্যন্ত ভাল। কিন্তু অনেক ধরণের যোগ সোসাইটি আছে, তারা তাদের শিক্ষার্থীদের শুন্য বস্তু বা কোন একটা রঙে মনসংযোগ করতে বলে ভগবান বিষ্ণুতে নয়। তা অত্যন্ত কঠিন কাজ। সে কথাও ভগবদগীতায় বলা হয়েছে, ক্লেশোহধিকতরঃ তেষাম্‌ অব্যক্তাসক্ত চেতসাম্‌ (গীতা ১২/৫) যিনি নির্বিশেষ কিছুতে বা শুন্যে মনসংযোগ করার চেষ্টা করেন তা অত্যন্ত কঠিন এবং কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এই মন্দিরে ভক্তরা তাঁদের মনকে কমপক্ষে শ্রীকৃষ্ণে অর্পণ করার চেষ্টা করছে কিন্তু শুন্যে মন সংযোগ করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য স্বভাবতই মন চঞ্চল শুন্য কিছু খোঁজার চেয়ে মন অন্য কিছুই খুঁজতে চাইবে কারণ মন অবশ্যই কিছু না কিছুতে যুক্ত হবেই, যদি তা শ্রীকৃষ্ণে না হয়, তাহলে অবশ্যই মায়াতে যাবে তাই যদি তুমি সেটি করতে না পার, তাহলে এই সমস্ত আসন প্রাণায়াম অভ্যাস কেবল সময়ের অপচয় মাত্র

ভক্তঃ "এই ধরণের যোগ সাধনা জাগতিকভাবে অর্থ উপার্জন করার একটি আকর্ষণীয় উপায় হতে পারে, কিন্তু পরমার্থ সাধনের ব্যাপারে তা সম্পূর্ণ নিরর্থক।

শ্রীল প্রভুপাদঃ হ্যাঁ, জাগতিকভাবে অর্থ উপার্জনের জন্য বেশ আকর্ষণীয়। ধর, আমি যদি এইরকম একটা যোগ ক্লাস খুলি, এবং আসন অভ্যাস করাতে পাঁচ ডলার করে নিই, তোমাদের দেশে টাকা খুব একটা কঠিন বিষয় নয়। এসো, কিন্তু আমি কেবল সামান্য একটা আসন অভ্যাস দিয়ে দিলাম, অথবা নাক টেপা ইত্যাদি... কিন্তু যদি তুমি বাস্তব বস্তু অর্জন করতে না পার, অর্থাৎ যোগের প্রকৃত ফল লাভ করতে না পার তাহলে তুমি কেবল তোমার সময়ের অপচয় করেছ মাত্র এবং আমি টাকা নিয়ে তোমাকে প্রতারণা করেছি মাত্র ব্যাস্‌। সেই ফল লাভ সম্ভব নয়। সেটি সম্ভব নয়। ভগবান শ্রীবিষ্ণুর কোন রূপে কাউকে তাঁর মন নিরন্তর যুক্ত রাখার অভ্যাস করতে হবে। তার নাম সমাধি। সেই একই কাজ এই যুগে ভিন্নভাবে করা হচ্ছে অর্থাৎ কৃষ্ণভাবনামৃত। পড়ো।

ভক্তঃ তাই নিরন্তর ভগবানের প্রেমময়ী সেবায় নিয়োজিত করে মনকে সংযত করতে হয়

শ্রীল প্রভুপাদঃ হ্যাঁ।

ভক্তঃ কৃষ্ণভাবনামৃত বা ভগবৎ সেবা ছাড়া মনকে কখনও সংযত করা যায় না। কৃষ্ণভাবনাময় ভগবদ্ভক্ত আলাদা কোন প্রচেষ্টা ছাড়াই অনায়াসে যোগ সাধনার সমস্ত ফল লাভ করেন। কিন্তু কৃষ্ণভাবনাময় না হয়ে যোগ অনুশীলনকারী কখনই তাঁর যোগ সাধনায় সিদ্ধিলাভ করতে পারে না।

শ্রীল প্রভুপাদঃ তারপর? পড়ো।