BN/Prabhupada 0688 - সম্মোহিনী শক্তি মায়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা



Lecture on BG 6.35-45 -- Los Angeles, February 20, 1969

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জুনের মধ্যে আলোচনায় যোগপন্থার ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এখন ধর আমি যোগ অভ্যাস করছি প্রকৃত যোগ - আমি কোন মিছা যোগের কথা বলছি না আর সেটি আমি ঠিকভাবে শেষ করতে পারলাম না, তাহলে তার ফল কি দাঁড়াবে? ধর, আমি আমার ব্যবসা বাদ দিয়ে, পেশা বাদ দিয়ে যোগ অনুশীলন করতে শুরু করলাম কিন্তু কোনও না কোন ভাবে তা শেষ হল না, অসম্পূর্ণ থেকে গেল তাহলে তার ফলাফল কি দাঁড়াবে? অর্জুন সেই প্রশ্নটি করলেন ভগবান সেই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। সেটি কি? পড়তে থাকো। অর্জুন বললেন...

ভক্তঃ হে কৃষ্ণ, সেই রকম ব্যক্তির গতি কি হবে যিনি প্রথমে শ্রদ্ধা সহকারে যোগে যুক্ত থেকে পরবর্তীতে চিত্তচাঞ্চল্যের কারণে ভ্রষ্ট হয়ে যোগে সিদ্ধিলাভ করতে পারেন না? (গীতা ৬/৩৭) তাৎপর্যঃ ভগবদগীতায় আত্মউপলব্ধির পন্থা বা যোগপন্থা বর্ণনা করা হয়েছে। আত্ম উপলব্ধি বলতে সেই জ্ঞানকে বোঝায় যার দ্বারা বোঝা যায় যে এই জড় দেহটি জীবের স্বরূপ নয় বরং সে এর থেকে ভিন্ন, তাঁর স্বরূপ হচ্ছে সৎ, চিৎ ও আনন্দময় আত্মা।"

শ্রীল প্রভুপাদঃ আত্ম উপলব্ধির স্তরে আসার আগে পর্যন্ত এটি কথাটি মেনে নিতেই হবে যে সেই কথা ভগবদগীতার শুরুতেই বলা হয়েছে, যে জীব এই জড় দেহটি নয় জীব এই জড় দেহ নয় বরং এর থেকে আলাদা কিছু এবং প্রকৃত সুখ রয়েছে নিত্য জীবনের মধ্যে। এই জীবনটি নিত্য জীবন নয়। যোগসিদ্ধি কথাটির অর্থ হচ্ছে নিত্য, চিন্ময় ও আনন্দময় জীবন লাভ করা । সেইটি হচ্ছে সিদ্ধি। যেই যোগ পন্থাই আমরা অনুশীলন করি না কেন, সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই আমাদের তা করতে হবে। এমন নয় যে আমি আমার মেদভুঁড়ি কমাবার জন্য কিছু যোগ ক্লাস অংশ নিলাম বা ভাল করে ইন্দ্রিয় তৃপ্তি করতে দেহকে ঠিক রাখার জন্য যোগ অনুশীলন করব সেটি যোগের উদ্দেশ্য নয়। কিন্তু মানুষকে এইভাবেই শিক্ষা দেয়া হয় যে, "যদি তুমি এই যোগ অনুশীলন কর..." এইসব অভ্যাস করলে তুমি তোমার শরীরকে খুব ভাল রাখতে পারবে। বহু ধরণের শারীরিক কসরত আছে, স্যন্ডো পদ্ধতি, ভার উত্তোলন পদ্ধতি এটা সেটা... অনেক ধরণের খেলাধূলাও আছে শরীরকে ঠিক রাখার জন্য এসব করে ওরা খুব ভাল ভাল খেতেও পারে, শরীরের মেদও কমাতে পারে সেসব করতে যোগ অনুশীলনের কোন দরকার নেই প্রকৃত উদ্দেশ্য হচ্ছে এই কথা উপলব্ধি করা যে আমি এই দেহ নই। আমি নিত্য আনন্দ পেতে চাই, আমি পূর্ণ জ্ঞান পেতে চাই, আমি নিত্য জীবন লাভ করতে চাই। সেটিই হচ্ছে যোগ পন্থার চরম সীমা। পড়ো।

ভক্তঃ এই স্বরূপ অপ্রাকৃত, তা দেহ ও মনের অতীত। জ্ঞানযোগ, অষ্টাঙ্গ যোগ বা ভক্তিযোগের মাধ্যমে আত্মউপলব্ধির অন্বেষণ করতে হয়। এই সব কয়টি পন্থাতেই অনুশীলনকারীকে জানতে হয় জীবের স্বরূপ কি, ভগবানের সাথে তার সম্পর্ক কি, এবং কীভাবে ভগবানের সাথে সেই হারানো সম্পর্কের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা যায় এবং এইভাবে কৃষ্ণভাবনামৃতের স্তরে অধিষ্ঠিত হওয়া যায় । এই তিনটি পথের যে কোন এক্তিকে অবলম্বন করে, সর্বান্তকরণে তার অনুশীলন করতে শুরু করলে এক সময় না এক সময় গন্তব্যস্থলে পৌঁছানো যায়। এই কথা ভগবদগীতার দ্বিতীয় অধ্যায়ে ভগবান কর্তৃক নিশ্চিত করা হয়েছে। পরমার্থ সাধনের পথে স্বল্প প্রচেষ্টাও মহৎ ভয় থেকে পরিত্রাণ করে বিশেষ করে এই কলিযুগে, কারণ ভগবানকে জানার এইটিই হচ্ছে সবচেয়ে সহজ পথ। মন থেকে সমস্ত সংশয় দূর করার জন্য অর্জুন আবারও ভগবানকে সেই কথা জিজ্ঞেস করছেন। যথেষ্ট নিষ্ঠার সঙ্গে কেউ আত্মউপলব্ধির জন্য জ্ঞানযোগ বা অষ্টাঙ্গযোগের পন্থা গ্রহণ করতে পারে কিন্তু এই কলিযুগে আত্মজ্ঞান লাভের জন্য তা অত্যন্ত কঠিন। তাই ঐকান্তিক চেষ্টা থাকলেও সিদ্ধিলাভ নাও হতে পারে - নানা কারণে পদস্খলন হতে পারে। প্রথমত কেউ হয়তো যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে পন্থাটি অনুশীলন নাও করতে পারে পরমার্থ সাধনে ব্রতী হওয়া মায়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করারই সামিল।"

শ্রীল প্রভুপাদঃ যখনই আমরা আত্ম উপলব্ধির কোন পন্থা গ্রহণ করি তা বাস্তবিক পক্ষে মায়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করার সামিল। যখনই মায়ার সাথে যুদ্ধ করার কথা আসছে, মায়া নিশ্চিতভাবেই বহু ধরণের প্রতিকূলতা দেবে। তাই পথভ্রষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। কিন্তু অনুশীলনকারীকে অত্যন্ত দৃঢ় হতে হবে। পড়ো।

ভক্তঃ "অতএব কেউ যখন জড় বন্ধন থেকে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করে জড়া প্রকৃতি তাকে নানাভাবে প্রলোভিত করে বিপথগামী করার চেষ্টা করে। বদ্ধ জীব এমনিতেই জড়া প্রকৃতির গুণের দ্বারা মুগ্ধ হয়ে আছে, তাই পরমার্থ সাধনের সময় পুনরায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। একে বলা যোগাচ্চলিতমানসঃ -

শ্রীল প্রভুপাদঃ চলিত মানাসঃ চলিত মানসঃ মানে যোগ অভ্যাস থেকে মনকে বিপথে নিয়ে যাওয়া। যোগাচ্চলিত মানসঃ। যোগাৎ মানে যোগ অনুশীলনের পন্থা থেকে এবং চলিত মানস মানে বিচ্যুত হওয়া। মানসঃ মানে মন। যোগাচ্চলিত মানসঃ প্রতি পদে পদে অধঃপতনের সম্ভাবনা থাকে। প্রত্যেকেরই সেই অভিজ্ঞতা আছে। তোমরা হয়তো কোন একটা গ্রন্থ পড়তে চাইছ, কিন্তু মন তা পড়তে দিচ্ছে না। বারবার বিরক্ত করছে। তাই এই মনকে নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। সেটিই হচ্ছে প্রকৃত অনুশীলন। পড়ো।

ভক্তঃ "...যোগের পথ থেকে ভ্রষ্ট হয়ে পড়া। এভাবে যোগপথ থেকে ভ্রষ্ট হয়ে পড়লে তার পরিণাম কি অর্জুন সেই কথা জানতে চাইছেন।"

শ্রীল প্রভুপাদঃ হ্যাঁ। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। কেউ হয়তো কোন এক যোগ পন্থা অনুশীলন শুরু করেছে, অষ্টাঙ্গ যোগ বা জ্ঞানযোগ ইত্যাদি অথবা ভক্তিযোগও কিন্তু কেউ যদি সেই যোগে সিদ্ধি লাভ না করতে পারে, তাহলে তার পরিণাম কি? সেটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। অর্জুন জিজ্ঞাসা করছেন এবং ভগবান তার উত্তর দেবেন।