BN/Prabhupada 0691 - যে কেউ আমাদের সংস্থা থেকে দীক্ষা নিতে চায়, আমরা এই চার নিয়মের কথা বলি



Lecture on BG 6.35-45 -- Los Angeles, February 20, 1969

ভক্তঃ কৃষ্ণভাবনামৃত হচ্ছে সমস্ত জড় কলুষ থেকে মুক্ত সর্বোচ্চ সিদ্ধির স্তর এই কথা ভগবদগীতায় প্রতিপন্ন করা হয়েছে বহু বহু জন্ম ধরে পুণ্য কর্ম করার ফলে যখন সমস্ত জড় কলুষ এবং মোহময়ী দ্বন্দভাব থেকে মুক্ত হন তখন তিনি ভগবানের দিব্য সেবায় নিযুক্ত হন।

শ্রীল প্রভুপাদঃ হ্যাঁ। যেষাম্‌ তু অন্তগতং পাপং (গীতা ৭/২৮) ভগবদগীতায় সেই শ্লোক বলা হয়েছে যে যেষাম্‌ তু অন্তগতং পাপং পাপম্‌ মানে পাপ। যিনি সমস্ত পাপকর্ম থেকে মুক্ত হয়েছেন ... জনানাম্‌ পুণ্যকর্মণাম্‌ঃ যিনি কেবল পুণ্য কর্ম করেছেন সেই রকম ব্যক্তিই কেবল দ্বন্দ্বভাব থেকে মুক্ত হয়ে কৃষ্ণভাবনামৃতে দৃঢ় হয়েছেন। যেহেতু আমাদের মন চঞ্চল তাই দ্বন্দ্বভাব সবসময়ই আসবে। কোন একটা কিছু আমি গ্রহণ করব কি না। আমি কৃষ্ণভাবনাময় হব কিনা, এইসব সংশয় সবসময়ই থাকবে কিন্তু কেউ যদি পূর্ব জন্মগুলোতে পুণ্যকর্মের দ্বারা উন্নত হয়ে থাকেন তখনই কেবল তিনি কৃষ্ণভাবনামৃতে দৃঢ় হতে পারেন, "আমি কৃষ্ণভাবনাময় হবই"। এই হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্তনের পদ্ধতি এমনকি যদি তুমি পূর্বজন্মে খুব একটা পুণ্য কর্ম নাও করে থাকো, সেটা কোন ব্যাপার নয় তুমি যদি কেবল এই পন্থাটি গুরুত্বসহকারে গ্রহণ কর তবে এই হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্তনের মাধ্যমে তৎক্ষণাৎ পবিত্র হতে পারবে কিন্তু দৃঢ়তা থাকা চাই যে তুমি আর কোন পাপকর্ম করবে না।

ঠিক যেমন আমাদের সংস্থায় চারটি নিয়ম আছে যে ব্যক্তিই এও সংস্থা থেকে দীক্ষা নিতে চায়, আমরা তাকে এই চারটি নিয়ম পালন করতে বলি কোন অবৈধ যৌন সঙ্গ নয়। আমরা যৌনজীবনকে না করি এমন নয়, কিন্তু আমরা বলি কোন অবৈধ যৌনাচার নয়। বিয়ে কর এবং সন্তান উৎপাদনের জন্য তুমি স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হতে পার। অন্য কোন উদ্দেশ্যে নয় কোন অবৈধ যৌনসঙ্গ নয়, মাদকদ্রব্য বা নেশা করা নয় আমাদের ছাত্ররা এমনকি ধূমপানও করে না, চা খায় না, কফি খায় না অন্য কিছুর কথা আর কিই বা বলা আছে? তারা এতোটাই শুদ্ধ কোন দ্যূতক্রীড়া নয়, আমিষাহার নয় । ব্যাস্‌ তুমি যদি কেবল এই চারটি নিয়ম মেনে চল তাহলে তুমি তৎক্ষণাৎ কলুষ মুক্ত হতে পারবে। তৎক্ষণাৎ। আর কোন প্রচেষ্টা ছাড়াই এই কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলন এতোটাই চমৎকার যে যেইমাত্র তুমি যোগ দেবে তুমি সঙ্গে সঙ্গে কলুষ মুক্ত হয়ে যাবে কিন্তু পুনরায় নিজেকে কলুষযুক্ত করো না। তাই এই নিয়মগুলো আছে। কারণ আমাদের কলুষতা এই চার প্রকার পাপ থেকেই শুরু হয় কিন্তু যদি আমরা নিয়ন্ত্রণ করি, তাহলে কলুষ পাবার কোন প্রশ্নই আসে না। যেই মাত্র আমি কৃষ্ণভাবনামৃত গ্রহণ করব, আমি মুক্ত হয়ে যাবো। এখন যেহেতু আমি এই চারটি নিয়ম সাবধানে মেনে চলতে প্রস্তুত সুতরাং আমি এখন মুক্ত। এবং আমি এইভাবেই কলুষ মুক্ত থাকা চালিয়ে যাব। এটিই হচ্ছে আমাদের পন্থা। কিন্তু তুমি যদি ভাব যে যেহেতু কৃষ্ণভাবনামৃত আমাকে মুক্ত করে দিচ্ছে তাই আমি এসব পাপকর্ম চালিয়েও যেতে পারি আর পরে না হয় হরে কৃষ্ণ জপ করে নেব আর মুক্ত হয়ে যাব। সেটি হচ্ছে প্রতারণা। প্রতারণা। তা অনুমোদন করা হয় নি। যখন তুমি মুক্ত তখন আবার এসব পাপ করতে যাবে না। কিন্তু তুমি যদি এমন ভাবো যে, "আমি পাপও করব আবার নিজেকে মুক্তও করব ..."

ঠিক যেমন কিছু কিছু ধর্মপন্থায় বলা হয়েছে যে তুমি যা খুশি পাপ করে যাও কেবল গির্জায় গিয়ে তা স্বীকার কর, তাহলেই তুমি মুক্ত এইভাবে পাপ করা আর স্বীকার করা, পাপ করা আর স্বীকার করা এসব চলছে। কিন্তু এখানে তা চলবে না। যদি তুমি পাপ মুক্ত, ভাল কথা। কিন্তু আবারো সেই একই পাপ করতে যাবে না। সেটিই হচ্ছে মূলত পাপ স্বীকার করার মূল উদ্দেশ্য। তুমি যদি স্বীকারই করছ যে "আমি এই পাপকর্মটা করে ফেলেছি", তাহলে আবার কেন তা করতে যাবে? উদাহরণস্বরূপ ধর, পকেট কাটা। তুমি যদি মনেই কর যে পকেট কাটা পাপ। এই কথা যদি স্বীকারই কর, তাহলে কেন তুমি আবার তা করতে যাবে? এটা বুঝতে গেলে কিছুটা বুদ্ধির দরকার আছে এমন নয় যে কেবল স্বীকার করার মাধ্যমেই আমি মুক্ত হয়ে গেলাম। আমি বারবার করতেই থাকব এবং বারবার স্বীকার করতেই থাকব। না। সেটা কোন ভাল কাজ নয়। যদি তা ভাল কাজ নাই হয়, এবং তুমিও তা স্বীকার করেছ যে এটা ভাল নয়, তাহলে তোমার আর সেই কাজ করা উচিত নয়। সেইটিই হচ্ছে প্রকৃত পন্থা। এমন নয় যে কেবল পাপ করে যাও আর স্বীকার করে যাও, পাপ কর আর স্বীকার কর। এই ধরণের কাজ ভাল নয়। তাই আমাদেরকে কৃষ্ণভাবনামৃতে সতর্ক হতে হবে যে এই চার নিয়ম যদি তুমি ভঙ্গ কর, তাহলে তুমি অশুদ্ধ হয়ে যাবে। কিত্নু তুমি যদি এই চার নিয়ম পালনে সতর্কতা অবলম্বন কর... আমরা এমন কথা বলি না, কোন যৌনজীবনই নয়। করতে পার। কিন্তু এই উদ্দেশ্যে, বাজে উদ্দেশ্যে নয়। ঠিক তেমনই তুমি খাও, কিন্তু এইভাবে খাও, ঐভাবে নয়।

প্রতিরক্ষা। শ্রীকৃষ্ণও অর্জুনকে প্রতিরক্ষা করতে বলেছেন । প্রতিরক্ষাকে শাস্ত্রে না করা হয় নি, কিন্তু তা হতে হবে সঠিক উদ্দেশ্যে। এইভাবে আমরা যদি কৃষ্ণভাবনামৃতে আসি তৎক্ষণাৎ আমরা সমস্ত কলুষ থেকে মুক্ত হতে পারি। এবং আমরা যদি এই চার নিয়মের সতর্কতা গ্রহণ করি, তাহলে আমাদের জীবন শুদ্ধ হবে। আর এই শুদ্ধ জীবন যদি আমরা মৃত্যু পর্যন্ত চালিয়ে যেতে পারি তাহলে নিশ্চিতভাবে তুমি মৃত্যুর পর ভগবদ্ধামে ফিরে যাবে। এর পর থেকে পড়ো। সেই কথা ভগবদগীতায় বলা হয়েছে। তোমরা ইতিমধ্যেই তা পড়েছ। পূর্ণরূপে কৃষ্ণভাবনাময় ব্যক্তি দেহ ত্যাগ করার পর আর এই জড় জগতে ফিরে আসেন না। এই সব যোগীরা যারা ভাল বংশে পরিবারে, ধার্মিক বা অভিজাত পরিবারে আসছে, তারা ফিরে আসছে কিন্তু তুমি যদি কৃষ্ণভাবনামৃতে সিদ্ধ হতে পার, তাহলে তোমাকে আর কখনও ফিরে আসতে হবে না। তুমি চিদাকাশে গোলোক বৃন্দাবনে ফিরে যাবে। তাই আমাদের চেষ্টা করা উচিত যাতে আর ফিরে আসতে না হয়। কারণ আমি যদি ফিরে আসি, ধর, আমি খুব ভাল সুযোগ পেলাম যে আমি খুব ভাল ঘরে, ধনী পরিবারে জন্ম নিলাম । কিন্তু আমি যদি সেই সুযোগ কাজে লাগাতে না পারি, তাহলে আমাকে আবারো নিম্নতর যোনিতে প্রবেশ করতে হবে। তাহলে শুধু শুধু কেন আমরা এই ঝুঁকি নিতে যাব? বরং ভাল এই জন্মেই কৃষ্ণভাবনামৃত সম্পূর্ণ করে যাওয়া। এটি খুবই সরল ব্যাপার। এটা বোঝা খুব কঠিন কিছু নয়। তোমার চিন্তা কেবল কৃষ্ণভাবনাময় রাখ। ব্যাস্‌। খুবই সরল ব্যাপার। তাহলে নিশ্চিত যে তুমি পরবর্তী জন্মে চিজ্জগতে ফিরে যাবে। ভগবানের ধামে বা গোলোক বৃন্দাবনে। হ্যাঁ।