BN/Prabhupada 0690 - ভগবান শুদ্ধ, তাঁর ধামও শুদ্ধ



Lecture on BG 6.35-45 -- Los Angeles, February 20, 1969

ভক্তঃ কিন্তু যখন যোগী আরও অগ্রগতি লাভের জন্য ঐকান্তিকভাবে প্রচেষ্টা করেন সমস্ত কলুষতা থেকে মুক্ত হন এবং চরমে বহু বহু জন্মের পর তিনি পরম লক্ষ্য অর্জন করেন। (গীতা ৬/৪৫)

শ্রীল প্রভুপাদঃ হ্যাঁ। এটি অভ্যাসের বিষয়। ঠিক যেমন একটি শিশু জন্মের পর জানে না কীভাবে ধূমপান করে, বা মদ খায় - কিন্তু সঙ্গপ্রভাবে সে একসময় মাতাল আর ধূমপায়ী হয়ে যায়। সঙ্গের কারণে। এটি সঙ্গের ব্যাপার। সঙ্গাৎ সঞ্জায়তে কামঃ (গীতা ২/৬২)। সঙ্গ যদি ভাল হয় - আমাদের সারা জীবনটাই নষ্ট হয়ে যায় কারণ আমরা সৎ সঙ্গ করি না তাই সেই কথা এখানে বলা হয়েছে যে, "কিন্তু যখন যোগী আরও অগ্রগতি লাভের জন্য ঐকান্তিকভাবে প্রচেষ্টা করেন ..." যেমন ব্যবসার ক্ষেত্রে, অনেক ধরণের সংস্থা থাকে, কর্পোরেশন থাকে কারণ সেই সংস্থার সদস্য হওয়ার মাধ্যমে সেই ব্যবসার উন্নতি হয় তাদের মধ্যে বিভিন্ন কিছুর আদান প্রদান হয়। তারা বিল, যোগান ইত্যাদির বিনিময় করে। তাই সঙ্গ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই যদি কেউ তাঁর চেতনার উন্নয়ন করতে ঐকান্তিক হয় তাহলে এইটিই হচ্ছে সেই সংস্থা - আমরা এই আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংস্থা গঠন করেছি কেবল এই পন্থা শিক্ষা দিচ্ছি যে কীভাবে কেউ চিন্ময় ভাবনাময় থাকতে পারে। সুতরাং এটিই হচ্ছে সেই ভাল সুযোগ। আমরা সবাইকে অংশগ্রহণ করতে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি, এবং সেই পন্থাটি অত্যন্ত সরল। কেবল হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্তন কর তাহলেই তুমি তা অনুভব করতে পারবে। কোন কঠিন কিছু নয়। শিশুরাও এতে অংশ নিতে পারে, এমনকি ওরা নিচ্ছেও। তোমার কোন পূর্ব যোগ্যতার দরকার নেই। এমন নয় যে তোমাকে স্নাতকোত্তর করতে হবে, ডিগ্রি পাশ করতে হবে, পরীক্ষা পাশ করতে হবে, এটা সেটা... তুমি যেমনই আছো, কেবল এই কৃষ্ণভাবনামৃতে যোগদান কর এবং কৃষ্ণভাবনাময় হও। এটাই হচ্ছে এই সংস্থার সুবিধা। একদম পরিষ্কার। এটি বোঝার চেষ্টা কর। পড়তে থাকো। তাৎপর্য?

ভক্তঃ "যে ব্যক্তি বিশেষ করে ধার্মিক, আভিজাত বা পুণ্যবান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি এই যোগ অনুশীলনের জন্য তাঁর অনুকূল পরিবেশের কথা সম্পর্কে সচেতন থাকেন। তাই তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে তাঁর অসম্পূর্ণ কার্য শুরু করেন, এবং এইভাবে তিনি সমস্ত জড় কলুষ থেকে মুক্ত হন। যখন তিনি সম্পূর্ণরূপে সমস্ত কলুষ থেকে মুক্ত হন, তখন জীবনের পরম পূর্ণতা কৃষ্ণভাবনামৃত লাভ করেন।"

শ্রীল প্রভুপাদঃ বোঝার চেষ্টা কর যে পরমেশ্বর ভগবান... তিনি পরম শুদ্ধ, তাঁর ধামও পরম শুদ্ধ, তাই যে কেউ সেখানে প্রবেশ করতে চাইবে না কেন তাঁকেও শুদ্ধ হতে হবে। সেটি খুবই স্বাভাবিক যে তুমি যদি কোন বিশেষ সংস্থায় প্রবেশ করতে চাও , তোমাকে নিজেকে সেই রকম গুণ অর্জন করতে হবে। ভগবদ্ধাম যেতে হলে কিছু নির্দিষ্ট গুণাবলী থাকা প্রয়োজন। সেই যোগ্যতা হচ্ছে তোমাকে জড় কলুষ থেকে মুক্ত হতে হবে। আর সেই কলুষতা কি? সেই কলুষতা হচ্ছে ইন্দ্রিয় তৃপ্তির বাসনা। অনিয়ন্ত্রিত ইন্দ্রিয়তৃপ্তি। সেটিই হচ্ছে জড় কলুষ। তোমাকে জড় কলুষতা থেকে মুক্ত হতে হবে। তবেই কেবল তুমি ভগবদ্ রাজ্যে প্রবেশের যোগ্য বলে বিবেচিত হবে। সমস্ত জড় কলুষ থেকে মুক্ত হবার এই পন্থাকে বলা হয় যোগ পন্থা। যোগ পন্থা মানে এই নয় যে কেবল মিনিট পনের বসে থাকা আর তথাকথিত ধ্যান করা, আর পাশাপাশি সব জড় কলুষতা বজায় রাখা। ঠিক যেমন তোমাকে যদি কোন একটি বিশেষ রোগ থেকে মুক্ত হতে হয়, তোমাকে ডাক্তারের দেয়া নিয়মাবলী মেনে চলতে হবে। ঠিক তেমনই এই অধ্যায়ে যোগ অভ্যাসের জন্য বলা হয়েছে, এবং কীভাবে তা করতে হবে অর্থাৎ যদি তুমি এই পন্থার অনুশীলন কর তাহলে সমস্ত জড় কলুষ থেকে মুক্ত হবে। তাহলেই তুমি প্রকৃতপক্ষে ভগবানের সঙ্গে যুক্ত আছো এর নাম কৃষ্ণ ভাবনামৃত।

আমাদের পন্থা হচ্ছে তোমাদের সরাসরি শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে যুক্ত করে দেয়া। সেটি ভগবান শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর বিশেষ পুরস্কার। জীবকে তৎক্ষণাৎ শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে যুক্ত করা। কারণ চরমে তোমাকে সেই স্তরেই পৌঁছাতে হবে, কৃষ্ণ ভাবনামৃত। তাই এখানে আমাদের পন্থাটি হচ্ছে সরাসরি ভাবে, তৎক্ষণাৎ... এবং সেটি ব্যবহারিকও বটে। যাদের কোন যোগ্যতা নেই, তারা কেবল এই সংস্থার সংস্পর্শে এসেই কৃষ্ণভাবনামৃতে অত্যন্ত অগ্রগতি লাভ করেছে। ব্যবহারিক পন্থা। আমাদের উচিত বর্তমান যুগের মানুষদের কাছে সরাসরি যুক্ত হবার এই সুযোগ পৌঁছে দেওয়া। কোন ধীরগতির পন্থায় কাজ হবে না, কারণ এই যুগের মানুষের আয়ু অনেক কম মন্দ ভাগ্য, অসৎ সঙ্গে নিমজ্জিত তাই সরাসরি পন্থা - হরের্নাম (চৈতন্য চরিতামৃত আদি ১৭/২১) ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাঁর দিব্য নামেই উপস্থিত থাকেন এবং সেই নাম শ্রবণ করা মাত্রই তুমি ভগবানের সঙ্গে যুক্ত হতে পারছ। স্বাভাবিক উপকরণ অর্থাৎ শ্রবণ পন্থা রয়েছে তোমার কাছে কেবল কৃষ্ণনাম শ্রবণ কর এবং তৎক্ষণাৎ কলুষ মুক্ত হয়ে যাও । পড়তে থাকো।