BN/Prabhupada 0693 - যখন আমরা সেবার কথা বলছি, সেখানে কোন উদ্দেশ্য নেই, সেবা মানে প্রেম



Lecture on BG 6.46-47 -- Los Angeles, February 21, 1969

ভক্তঃ ভজ্‌ ধাতু থেকে ভজতে শব্দটি উৎপত্তি হয়েছে। সেবা অর্থে এই শব্দটি ব্যবহার হয়। পূজা করা এবং ভজনা করা এই দুটি শব্দের অর্থ এক নয়। পূজা করার অর্থ পূজ্য ব্যক্তিকে অভিবাদন জানানো। কিন্তু ভজনা করার অর্থ হচ্ছে প্রেম ও ভক্তি সহকারে সেবা করা যা কেবল ভগবানের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হয়।

শ্রীল প্রভুপাদঃ পূজা এবং সেবা এই দুটো ভিন্ন অর্থ। পূজা মানে তাতে কোন একটা কিছু পাবার উদ্দেশ্য আছে। আমি কোন বন্ধু ও বা হোমরাচোমরা কাউকে পূজা করি। কারণ আমার কিছু উদ্দেশ্য আছে যে সেই হোমরাচোমরা লোকটি বড় কোন ব্যবসায়ী তাই আমি যদি তাকে খুশি করতে পারি তাহলে তিনি আমাকে কিছু ব্যবসায় লাগাতে পারেন। আর আমি কিছু লাভের ফায়দা তুলে নিতে পারি। দেবতাদের পূজাও এইরকম। তারা বিভিন্ন উদ্দেশ্যে দেবতাদের পূজা করে অষ্টম অধ্যায়ে তোমরা পাবে যে সেটি ভগবদগীতায় নিন্দা করা হয়েছে। কামৈস্তৈস্তৈ হৃত জ্ঞানাঃ প্রপদ্যন্তে অন্যদেবতাঃ (গীতা ৭.২০) কাম বাসনার দ্বারা যাদের জ্ঞান অপহৃত হয়েছে তারাই বিভিন্ন উদ্দেশ্য চরিতাতার্থ করতে দেবতাদের শরণাগত হয় যখনই আমরা পূজার কথা বলি সেখানে কোন একটা স্বার্থ থাকে কিন্তু যখন সেবার কথা বলি তখন কোন স্বার্থ থাকে না। সেবা মানে ভালবাসা। যেমন মা সন্তানের সেবা করে। কোন স্বার্থ নেই তাতে। এটি কেবল ভালবাসা মাত্র। প্রত্যেকেই সেই শিশুকে অবহেলা করতে পারে। কিন্তু মা তা করেন না। কারণ সেখানে ভালবাসা রয়েছে ঠিক তেমনই ভজ্‌ ধাতু। যখনই সেবার কথা আসছে কোন স্বার্থ থাকছে না এবং সেটিই হচ্ছে কৃষ্ণভাবনামৃতের সিদ্ধি।

সেই কথা শ্রীমদ্ভাগবতে বলা হয়েছে যে সেটিই হচ্ছে প্রথম শ্রেণীর ধর্ম। কি রয়েছে? স বৈ পুংসাম্‌ পরো ধর্ম যতো ভক্তিঃ অধোক্ষজে (ভাগবত ১/২/৬) এই ভক্তি, এবং ভজ, একই উৎস থেকে উৎপত্তি সেই ধর্ম হচ্ছে প্রথম শ্রেণীর সেটি কি? যতো ভক্তিঃ অধোক্ষজে যা অনুষ্ঠান করার দ্বারা ভগবানের প্রতি শুদ্ধ প্রেম লাভ হয়। ব্যাস্‌ যদি তুমি ভগবানের প্রতি ভালবাসা লাভ করতে পার, তাহলে যে কোন ধর্ম আচরণ করতে পার, সেটা কোন ব্যাপার নয়। কিন্তু তোমাকে অবশ্যই ভগবানকে ভালবাসতে হবে... আসল পরীক্ষাটা হচ্ছে তুমি কতোটা ভগবানের প্রতি তোমার ভালাবাসা বৃদ্ধি করতে পারছ কিন্তু তোমার যদি ব্যক্তিস্বার্থ থাকে যেমন এই ধর্ম আচরণ করার মাধ্যমে আমার জাগতিক উদ্দেশ্য পূর্ণ হবে, সেটি প্রথম শ্রেণীর ধর্ম নয়। সেটি তৃতীয় শ্রেণীর বা সবচেয়ে নিম্নমানের ধর্মাচরণ। সর্বোত্তম বা প্রথম শ্রেণীর ধর্ম হচ্ছে যার দ্বারা তুমি ভগবানের প্রতি ভালবাসা বাড়াতে পার। অহৈতুকী অপ্রতিহতা। কোন কারণ ছাড়াই, কোন বাধার দ্বারা প্রতিহত না হওয়া ছাড়াই সেটিই হচ্ছে সর্বোত্তম বা প্রথম শ্রেণীর ধর্ম। সেই ধর্মের কথা বলা হচ্ছে এই যোগ পদ্ধতি বা কৃষ্ণভাবনামৃত, এটি যদি কেবল ধর্মের দৃষ্টিকোণ থেকেও গ্রহণ কর তবুও তা সর্বশ্রেষ্ঠ। কারণ এতে কোন স্বার্থ নেই তারা কৃষ্ণসেবা এই কারণে করছে না যে ভগবান তাদের কিছু দেবে। না। এটা সেটার অভাব থাকতে পারে। কিন্তু সেটি কোন ব্যাপার নয় তারা এতেই যুক্ত আছে। এটা সেটার কোন অভাব নেই। তারা সবকিছুই পেয়ে যাচ্ছে। এমনটা ভেবো না যে কৃষ্ণভাবনাময় হলে কেউ গরীব হয়ে যাবে। না। যদি কৃষ্ণ থাকেন , তো সবকিছুই আছে। কারণ শ্রীকৃষ্ণই সবকিছু কিন্তু আমাদের শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে কোন ব্যবসা সম্পর্কে থাকা উচিত নয় "ওহ্‌ কৃষ্ণ, আমাকে এটা দাও, ওটা দাও,"। শ্রীকৃষ্ণ তোমার থেকে ভাল জানেন। ঠিক যেমন ছোট্ট শিশু বাবা মায়ের থেকে কিছু দাবী করে না "আমার প্রিয় বাবা, প্রিয় মা, আমাকে এটা দাও, ওটা দাও,"। না। বাবা জানেন তাঁর সন্তানের কি দরকার। তাই ভগবানের কাছে কিছু চাওয়া ভাল কাজ নয় "এটা দাও, ওটা দাও"। আমি কেন এসব চাইব? যদি ভগবান সর্বশক্তিমান হন , তিনি নিশ্চয়ই আমার চাওয়া জানেন, তিনি আমার কি প্রয়োজন তা জানেন। আর সেই কথা বেদেও বলা হয়েছে একো বহুনাম্‌ বিদধাতি কামান্‌ এক ভগবান কোটি কোটি মানুষের প্রয়োজনীয়তা মেটাচ্ছেন, অসংখ্য জীবের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করছেন।

তাই আমাদের কেবল শ্রীকৃষ্ণকে ভালবাসা উচিত। কোন কিছু দাবী করেন না। সমস্ত প্রয়োজনীয়তা ইতিমধ্যেই সরবরাহ করা হচ্ছে। এমনকি কুকুর বেড়ালেরও চাহিদা পূরণ করা হচ্ছে। ভগবানের কাছে কিছু পাবার জন্য ওরা গির্জায় যায় না, কিন্তু ওরা পাচ্ছে তাহলে ভক্ত কেন পাবেন না? যদি কুকুর বেড়ালও ভগবানের কাছে কিছু না চেয়েই পেয়ে থাকে, তাহলে আমি কেন ভগবানের কাছে কিছু চাইব, এটা দাও, ওটা দাও না। আমাদের কেবল তাঁকে ভালবাসার চেষ্টা করা উচিত। সেটিই সমস্ত চাহিদা পূরণ করে দেবে। সেটি হচ্ছে যোগের সর্বোচ্চ স্তর। পড়ো। ভক্তঃ পূজ্য ব্যক্তি বা দেবতাদের পূজা না করলে মানুষ কেবল শিষ্টাচারহীন অভদ্র বলে পরিগণিত হয় কিন্তু ভক্তি ও ভালবাসার সাথে ভগবানের সেবা না করাটা নিন্দনীয় অপরাধ প্রতিটি জীবই হচ্ছে ভগবানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই প্রতিটি জীবের ধর্ম হচ্ছে ভগবানের সেবা করা।"

শ্রীল প্রভুপাদঃ হ্যাঁ। সেটিই স্বাভাবিক। যদি আমি ভগবানের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে থাকি আমার কর্তব্য হচ্ছে তাঁর সেবা করা আমি এই উদাহরণটি অনেক বার দিয়েছি যে ঠিক যেমন আঙ্গুলটি দেহের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাহলে এই আঙ্গুলের ধর্ম কি? আঙ্গুলের ধর্ম হচ্ছে সারা দেহের সেবা করা। ব্যাস্‌ । যদি আমার দেহের কোথাও আমি চুলকানি অনুভব করি, সঙ্গে সঙ্গে আমার আঙ্গুল কাজ করতে শুরু করে। দেখলে? আমি যদি দেখতে চাই, সঙ্গে সঙ্গে চোখ দেখতে শুরু করে। যদি হাঁটতে চাই, সঙ্গে সঙ্গে পা দুটো আমাকে নিয়ে যায়। তাই ঠিক যেমনটা আমার দেহের অংশগুলো পুরো দেহের সেবায় কাজে লাগে আর আমি কেবল খাচ্ছি , আমার পাকস্থলী কেবল খাচ্ছে ঠিক তেমনই ভগবান কেবল আমাদের সবার থেকে সেবা নেয়ার জন্যই। তিনি আমাদের সেবা করার জন্য নন। যদি দেহের অঙ্গগুলো সবাই একসঙ্গে দেহের সেবা করে তাহলে আপনা থেকেই সারা দেহ শক্তি পাবে। ঠিক তেমনই যদি আমরা সকলেই কৃষ্ণসেবা করি , আমাদের সকল চাহিদা পূরণ হবে। সবাই শক্তি পাবে, আপনা থেকেই যথা তরোর্মূলনিষেচনেন (ভাগবত ৪.৩১.১৪) ঠিক যেমন গাছের গোঁড়ায় জল ঢাললে তৎক্ষণাৎ সারা গাছের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গে, পাতায়, কাণ্ডে, ডালপালায় জল শক্তি ছড়িয়ে যায় ঠিক তেমনই কেবল কৃষ্ণসেবা করেই বাকী সবকিছুর সেবা করা হয়ে যায়। আলাদা ভাবে সেবা করার দরকার নেই সবকিছু আপনা থেকেই হয়ে যাবে সবকিছু। সহানুভূতি কেবল মানুষের জন্য নয়, এমনকি পশুদের জন্যও আসবে। ভগবদ্ভাবনা বা কৃষ্ণভাবনামৃত এতোই চমৎকার। ভগবদ্ভাবনামৃত বা কৃষ্ণভাবনামৃত ছাড়া আলাদা করে জীবের প্রতি সহানুভূতি সীমিত, অসম্পূর্ণ। কিন্তু কৃষ্ণভাবনামৃতের সঙ্গে অন্য জীবের প্রতি সহানুভূতি হচ্ছে পূর্ণ। সেটিই হচ্ছে পন্থা। পড়ো।