BN/Prabhupada 0695 - ওরা খুব সস্তায় ভগবান বানায়। ভগবান সস্তা হয়ে গেছে "আমি ভগবান, তুমি ভগবান"



Lecture on BG 6.46-47 -- Los Angeles, February 21, 1969

ভক্তঃ এই শ্লোকেও ভজন্তি শব্দটি ব্যবহার হয়েছে ভজন্তি কেবল পরমেশ্বর ভগবানের ক্ষেত্রেই ব্যবহার হয় আর পুজা শব্দটি দেবদেবীদের ক্ষেত্রে অথবা সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে অবজানন্তি শব্দটি ...

প্রভুপাদঃ অবজানন্তি মানে অবজ্ঞা করা ভগবান আবার কে? আমিই ভগবান।ভগবান কে? আমি কেন ভগবানের সেবা করব? এটি হচ্ছে অবজানন্তি । ঠিক যেমন অপরাধীদের মতো । "আহ্‌ সরকার আবার কি? আমি নিজেই আমার কাজ করতে পারি । আমি সরকারের পরোয়া করি না। এর নাম হচ্ছে অবজানন্তি। কিন্তু তুমি তা পারবে না। যদি আমি বলি, আমি সরকারের পরোয়া করি না। ব্যাস্‌, তুমি এটা বলতে পার, কিন্তু পুলিশ বিভাগ সেখানে রয়েছে। ওরা তোমাকে যন্ত্রণা দেবে, শাস্তি দেবে। জড়া প্রকৃতি তোমাকে ত্রিতাপ দুঃখের মধ্য দিয়ে শাস্তি দেবে। পড়তে থাকো।

ভক্তঃ শ্রীমদ্ভাগবতের এই শ্লোকে অবজানন্তি শব্দটি ব্যবহার হয়েছে এবং এটি ভগবদগীতাতেও দেখা যায় অবজানন্তি ...

প্রভুপাদঃ মাম্‌ মূঢ়া। শ্রীমদ্ভাগবতেও এই শব্দ ব্যবহার আছে অবজানন্তি স্থানাদ্‌ ভ্রষ্টাঃ পতন্ত্যি অধঃ (ভাগবত ১১/৫/৩) ঠিক একইভাবে ভগবদ্গীতাতেও একই শব্দ ব্যবহার হয়েছে । অবজানন্তি মাম্‌ মূঢ়াঃ (গীতা ৯/১১) মূঢ়া মানে বদমাশ্‌। কেবল বদমাশেরাই ভাবে , আমাকে পরোয়া করে না। বদমাশ। সে জানে না যে তাকে দুঃখভোগ করতে হবে, কিন্তু সে এই কথা বলার দুঃসাহস করে যে, "আমি পরোয়া করি না " সেটিই হচ্ছে অবজানন্তি মাম্‌ মূঢ়া মানুষীম্‌ তনুমাশ্রিতম্‌ পরম্‌ ভাবম্‌ অজানন্তঃ (গীতা ৯/১১) ভগবানের পরম অবস্থান না জেনে সস্তাভাবে, ওরা সস্তাভাবে ভগবান বানায়। ভগবান এখন অনেক সস্তা হয়ে গেছে। "আমি ভগবান, তুমি ভগবান"। ভগবান মানে কি? তুমি জান? যদি তুমি ভগবান হও , আমি ভগবান হই, তাহলে আর ভগবান শব্দের অর্থ কি থাকলো? তাই অবজানন্তি শব্দটি একদম সঠিক। অবজানন্তি মানে অবজ্ঞা করা। পরোয়া না করা কিন্তু ওরা মূঢ়াঃ। ওদের বলা হচ্ছে মূঢ় - মানে মূর্খ, কোন জ্ঞান নেই। অবজানন্তি মাম্‌ মূঢ়া মানুষীম্‌ তনুমাশ্রিতম্‌ (গীতা ৯/১১)

ভক্তঃ কেবল মূর্খ ও বদমাশেরাই পরমপুরুষ ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে অবজ্ঞা করে আর সেই ধরণের মূর্খেরাই কোন রকম সেবা মনোবৃত্তি ছাড়াই ভগবদ্গীতার ভাষ্য লেখার দুঃসাহস করে। যার ফলে ওরা ভজন্তি আর পুজা এই দুইটি শব্দের মধ্যে পার্থক্য করতে জানে না। তাই সমস্ত ধরণের যোগপদ্ধতির চরম পরিণতি হচ্ছে ভক্তিযোগ। সমস্ত ধরণের যোগ পদ্ধতির আসলে চরমে ভক্তিযোগে আনার জন্যই যোগ মানে প্রকৃতপক্ষে ভক্তিযোগ। বাকি সব যোগ পন্থা হচ্ছে চূড়ান্ত লক্ষ্যের দিকে নিয়ে যাবার জন্যই। শুরুতে কর্মযোগ থেকে চরমে ভক্তিযোগ আত্মোপলব্ধির এক দীর্ঘ পথ। ফলের আশা না করে যে কর্মযোগ তা হচ্ছে ভক্তির সূচনা যখন কর্মযোগ জ্ঞান ও বৈরাগ্যের মাধ্যমে প্রকাশ পায়, তাকে বলা হয় জ্ঞান যোগ যখন জ্ঞানযোগ বিভিন্ন শারীরিক পন্থার মাধ্যমে পরমাত্মার ধ্যানে পর্যবসিত হয় এবং পরমাত্মায় মন নিবদ্ধ করে, তখন তাকে বলে অষ্টাঙ্গ যোগ। এবং যখন কেউ অষ্টাঙ্গ যোগ পন্থাকে অতিক্রম করে এবং ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কাছে শরণ নেয়, তখন তাকে বলে ভক্তিযোগ

প্রভুপাদঃ হ্যাঁ। যোগের ক্রম পন্থা, কর্ম যোগ থেকে শুরু করে জ্ঞানযোগ কর্মযোগ মানে সাধারণ কাজকর্ম, সকাম কর্ম সাধারণ কাজকর্ম মানে পাপকর্মও বোঝায়। কিন্তু কর্মযোগ মানে পাপ কর্ম নয়। কেবল ভাল, পুণ্য কর্ম বা শাস্ত্র নির্দেশিত কর্ম। একে বলা হয় কর্ম যোগ তারপর, কর্মযোগ অনুশীলন করতে করতে কেউ জ্ঞানযোগের পন্থায় আসে এবং জ্ঞান থেকে অষ্টাঙ্গ যোগ। ধ্যান, ধারণা, প্রাণায়াম, আসন - এইভাবে যারা অষ্টাঙ্গ যোগ অনুশীলন করে আর তারপর অষ্টাঙ্গ যোগ থেকে মনকে শ্রীবিষ্ণুতে নিবদ্ধ করার কথা আসে, সেটি ভক্তিযোগের সূচনা যখন ভক্তিযোগের স্তরে আসে, সেটিই হচ্ছে যোগ পন্থা সার্থকতা এবং আমাদের এই কৃষ্ণভাবনামৃত মানে হচ্ছে একদম প্রথম থেকেই ভক্তিযোগের শুরু। পড়তে থাকো।