BN/Prabhupada 0700 - সেবা মানে তিনটি বিষয়। সেবক, সেব্য এবং সেবা



Lecture on BG 6.46-47 -- Los Angeles, February 21, 1969

প্রভুপাদঃ হ্যাঁ?

ভক্তঃ প্রভুপাদ আজকে সকালে যখন পড়ছিলাম ...

প্রভুপাদঃ না। সকালের কথা নয়। ঠিক আছে, বলতে পার কিন্তু প্রশ্ন এবং উত্তর অবশ্যই প্রাসঙ্গিক বিষয়ের ওপর হতে হবে নয়তো তুমি যদি সবকিছু নিয়ে আসো তাহলে প্রশ্নোত্তরের কোন শেষ থাকবে না, বুঝলে? যাই হোক , শেষ কর কি বলছিলে। হ্যাঁ, কোন প্রশ্ন আছে?

ভক্তঃ আপনি বলেছেন যে শ্রীকৃষ্ণের গোপসখারা তাঁর সঙ্গে খেলা করছিলেন এবং বলা হয়েছে তাঁরা তাদের পূর্ব জন্মে অনেক পুণ্য কর্ম করেছেন আমি বুঝি যে তাঁরা নিত্য পার্ষদ ছিলেন...

প্রভুপাদঃ না, যারা নিত্য পার্ষদ... তাঁদের কেউ কেউ নিত্য পার্ষদ, আবার কেউ রয়েছেন যারা সেই নিত্য পার্ষদের স্তরে উন্নীত হয়েছেন যেমন ধর তুমি যদি এখন ওখানে গিয়ে পার্ষদ হও, কৃষ্ণের খেলার সাথী হও তোমার স্থিতিও এখন তাহলে নিত্য হয়ে গেল যদি কেবল নিত্য পার্ষদেরাই শ্রীকৃষ্ণের সাথে খেলা করতে পারে, অন্যরা যদি তা না পারে তাহলে কৃষ্ণ ভাবনাময় হওয়ার মানে থাকলো? তুমিও তেমন হতে পার? কিভাবে? বহু বহু জন্মের পুঞ্জীভূত সুকৃতির দ্বারা তুমিও সেই অবস্থানে উঠতে পার। কৃতপুণ্যপুঞ্জাঃ (শ্রীমদ্ভাবত ১০/১২/১১) প্রকৃতপক্ষে শ্রীকৃষ্ণের এই জগতে ভৌম বৃন্দাবনে লীলা করার সময়ে যারা থাকেন তাঁরা বেশিরভাগই বদ্ধ জীবাত্মা ছিলেন যারা পরবর্তীতে কৃষ্ণ ভাবনামৃতের সিদ্ধিলাভের স্তরে পৌঁছেছেন। তাঁদেরকে প্রথমে শ্রীকৃষ্ণকে দেখতে দেয়া হয় যেই যেই গ্রহে কৃষ্ণলীলা চলছে সেই সেই স্থানে। আর তারপর তাঁদেরকে চিন্ময় গোলোক বৃন্দাবনে প্রবেশাধিকার দেয়া হয় তাই শ্রীমদ্ভাগবতে বলা হয়েছে কৃতপুণ্যপুঞ্জাঃ। তাঁরা সকলেই সেই স্তরে উন্নীত হয়েছেন কিন্তু যদিও তাঁদের সেই স্তরে আনা হয়েছে, কিন্তু এর ফলে এখন তাঁরা নিত্য পার্ষদ হয়ে গেছেন। বোঝা গেল এখন? হরে কৃষ্ণ। আর কোন প্রশ্ন?

ভক্তঃ প্রভুপাদ, কারো পক্ষে কি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সেবা না করেই কি ভক্তিযোগে যুক্ত হওয়া সম্ভব? ধরুন এমন কেউ...

প্রভুপাদঃ শ্রীকৃষ্ণ ছাড়া ভক্তির প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে?

ভক্তঃ কেউ হয়ত বুদ্ধ বা যিশু খ্রিষ্টকে আরাধনা করছেন...

প্রভুপাদঃ সেটি ভক্তিযোগ নয়। ভক্তিযোগ মানে কেবল শ্রীকৃষ্ণের সাথে সংযোগ স্থাপন ভক্তিযোগ আর কারও সঙ্গেই হতে পারে না। আর কারও সাথেই না। বৌদ্ধ দর্শনকে কিভাবে তুমি ভক্তিযোগে পরিণত করবে? ভক্তিযোগ মানে ভগবানকে জানা। ভক্ত্যা মাম্‌ অভিজানাতি (গীতা ১৮/৫৫) ভগবদগীতার অষ্টাদশ অধ্যায়ে এই কথা পাবে কেবল ভক্তিযোগের দ্বারাই পরমেশ্বর ভগবানকে জানা যায় কিন্তু বৌদ্ধ দর্শনে তো কোন ভগবানই নেই। তুমি জানো তো? তাহলে ওর মধ্যে ভক্তি কোথায় পেলে ?

ভক্তঃ খ্রিষ্টানদের ক্ষেত্রে কেউ কেউ যিশু খ্রিষ্টকে পূজা করে

প্রভুপাদঃ সেটি ভক্তিযোগ। কারণ তাঁরা ভগবানকে স্বীকার করে সবিশেষ ভগবানকে স্বীকার না করলে ভক্তিযোগের প্রশ্নই আসে না তাই খ্রিষ্টান ধর্মও বৈষ্ণবতা, কারণ তাঁরা ভগবানকে স্বীকার করে হয়তো, কোন একটা স্তরে আছে , ভিন্ন রূপে ভগবদুপলব্ধিরও বিভিন্ন স্তর আছে খ্রিষ্টান ধর্মে বলে ভগবান মহান। গ্রহণ করে নিচ্ছে। সেটি খুব ভাল। কিন্তু ভগবান কতোটা মহান সেই কথা তুমি জানতে পারবে ভগবদগীতা এবং শ্রীমদ্ভাগবত থেকে। কিন্তু ভগবান যে মহান সেই কথা ওরা স্বীকার করে। সুতরাং সেটি ভক্তিযোগের সূচনা সেখানে ভক্তি প্রয়োগ করা যায় এমন কি ইসলাম ধর্মেও। সেটিও ভক্তিযোগ যে কোন ধর্মে যেখানে ভগবান হচ্ছেন মূল লক্ষ্য , সেখানেই ভক্তিযোগের নীতি প্রয়োগ করা যায়। কিন্তু যখন কোন ভগবান নেই, নির্বিশেষবাদ, সেখানে ভক্তিযোগের প্রশ্নই আসে না ভক্তি মানে ভজ ধাতু থেকে এসেছে, ভজ সেবয়া সেবা। সেবা মানে তিনটি জিনিস। সেবক, সেব্য এবং সেবা সেবা গ্রহণ করার কাউকে থাকতেই হবে এবং সেবা করার জন্যও কাউকে থাকতেই হবে আর তাহলে সেখানে তাঁদের মাধ্যম হবে সেবার পন্থা। তাই ভক্তিযোগ মানে ভগবানের সেবা যদি সেবা গ্রহণ করারই কেউ না থাকে তাহলে তা ভক্তিযোগ হয় কিভাবে>? তাই যে কোন ধর্ম বা দর্শন যেখানে পরম পুরুষ ভগবানকে স্বীকার করা হয় না, সেখানে কোন ভক্তিযোগ প্রযোজ্য নয় ।