BN/Prabhupada 0719 - সন্ন্যাস গ্রহণ- এটি অত্যন্ত নিখুঁতভাবে পালন করা উচিৎ



Excerpt from Sannyasa Initiation of Viraha Prakasa Swami -- Mayapur, February 5, 1976

শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু এই স্থানের বাসিন্দা ছিল যেখানে তোমরা আজকে সন্ন্যাস নিচ্ছ। তাঁর সন্ন্যাস গ্রহণের উদ্দেশ্য কি ছিল? তিনি অত্যন্ত সম্ভ্রান্ত, নিমাই পণ্ডিত। চিরায়ত কাল ধরে এই নবদ্বীপ ধাম শিক্ষিত ব্রাহ্মণদের স্থান হিসেবে সুপরিচিত। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু অত্যন্ত সম্মানিত এক ব্রাহ্মণ প্রবারের সন্তান ছিলেন। জগন্নাথ মিশ্রের ছেলে, নীলাম্বর চক্রবর্তীর পৌত্র। তাঁরা অত্যন্ত সম্ভ্রান্ত ও সম্মানিত ব্রাহ্মণ ছিলেন। মহাপ্রভু সেই পরিবারে আবির্ভূত হয়েছিল। ব্যক্তিগতভাবে তিনি খুব সুদর্শন ছিলেন। তাই তাঁর নাম ছিল গৌরসুন্দর। তিনি অত্যন্ত বিদগ্ধ পণ্ডিত ছিলেন, তাই তাঁর আরেক নাম ছিল নিমাই পণ্ডিত। এবং তাঁর সংসার জীবনে বিষ্ণুপ্রিয়া নামে এক অপরূপা সুন্দরী স্ত্রী ছিল এবং অত্যন্ত স্নেহশীলা মাতা ছিল এবং তিনি নিজেও অত্যন্ত প্রভাবশালী ছিলেন। তোমরা এসব জানো। একদিন তিনি লক্ষ লোক সহযোগে স্থানীয় কাজির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শোভাযাত্রা করেছিলেন। এইভাবে তাঁর সামাজিক অবস্থান অত্যন্ত অনুকূল ছিল। ব্যক্তিগত অবস্থান অত্যন্ত অনুকূল ছিল। তারপরও তিনি গৃহত্যাগ করেছিলেন। কেন? দয়িতয়েঃ জগতের বদ্ধ জীবদের প্রতি করুণা প্রদর্শন করার জন্যে।

তিনি বলে গিয়েছেন, যে ব্যক্তিই এই ভারতবর্ষে জন্ম গ্রহণ করেছেন

ভারত ভূমিতে মনুষ্য জন্ম হৈল যার,
জন্ম সার্থক করি কর পরোপকার
(চৈতন্য চরিতামৃত আদিলীলা ৯/৪১)

তিনি স্বয়ং আচরণ করে শিক্ষা দিয়ে গিয়েছেন কীভাবে পরোপকার করতে হয় বদ্ধজীবদের প্রতি কীভাবে করুণা করতে হয় তাই সন্ন্যাস মানে হচ্ছে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর পদাঙ্ক অনুসরণ করা

আমার আজ্ঞায় গুরু হইয়া তার দেশ,
যারে দেখ তারে কহ কৃষ্ণ উপদেশ
(চৈতন্য চরিতামৃত মধ্য ৭.১২৮)

এমনকি ... আমরা এমন একটি অবস্থান তৈরি করতে চাইছি যেখানে কেবল ভারতীয়রাই এই দায়িত্ব পালন করবে না, বরং মহাপ্রভুর কথা অনুসারে পৃথিবীতে আছে যত নগরাদি গ্রাম (চৈতন্য ভাগবত অন্ত্যখণ্ড ৪.১২৬) তাঁদের উচিৎ এই দায়িত্ব গ্রহণ করা সমস্ত আমেরিকান ছেলে এবং মেয়েরা, আমি তোমাদের সবার কাছে কৃতজ্ঞ এবং তোমরা সকলেই খুব ঐকান্তিকভাবে কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলনকে গ্রহণ করেছ কিন্তু শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর কৃপায় তোমাদের কেউ কেউ সন্ন্যাস নিচ্ছ। এটি খুব যত্নসহকারে পালন কর, নগরে নগরে, গ্রামে গ্রামে গিয়ে প্রচার কর সারা বিশ্বজুড়ে কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলন প্রচার কর যাতে সকলেই সুখী হতে পারে। লোকেরা অনেক দুঃখভোগ করছে কারণ তাঁরা মূঢ়, বদমাশ ওরা জানে না কীভাবে মানব জন্ম নির্বাহ করতে হয় এটি সর্বত্র ভাগবত ধর্ম প্রচার এই মনুষ্য জন্ম কুকুর, বেড়াল বা শুকরের হওয়ার জন্য নয় তোমার উচিৎ আদর্শ মানুষ হওয়া, শুদ্ধয়েৎ সত্ত্ব। তোমার অস্তিত্বকে শুদ্ধ করা। কেন আমাদেরকে জন্ম মৃত্যু জরা ব্যাধির দ্বারা বাধ্য হতে হচ্ছে? কারণ আমরা অশুদ্ধ হয়ে গিয়েছি। এখন আমরা যদি আমাদের অস্তিত্বকে শুদ্ধ করতে পারি, তাহলে জন্ম মৃত্যু জরা ব্যাধির মতো কিছুই থাকবে না সেটিই হচ্ছে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু এবং শ্রীকৃষ্ণের অভিমত কেবল শ্রীকৃষ্ণ উপলব্ধির দ্বারাই তুমি শুদ্ধ হতে পারবে এবং জন্ম মৃত্যু জরা ব্যাধির এই চক্র থেকে মুক্ত হতে পারবে

তাই সাধারণ লোকদেরকে, দার্শনিক, ধর্মবিদ্‌দের এই ব্যাপারে বোঝাতে হবে আমাদের সাম্প্রদায়িক কোন দৃষ্টিভঙ্গি নেই যে কেউ আমাদের এই আন্দোলনে যোগ দিতে পারে এবং নিজেকে শুদ্ধ করতে পারে। জন্ম সার্থক করি কর পরোপকার (চৈতন্য চরিতামৃত আদি ৯/৪১) তাই আমি খুব আনন্দিত যে তোমরা এই আন্দোলনে ইতিমধ্যেই অনেক সেবা করছ এবং এখন তোমরা সন্ন্যাস নিয়ে সারা পৃথিবীতে প্রচার কর যাতে করে লোকদের মঙ্গল হতে পারে। অনেক ধন্যবাদ। ভক্তবৃন্দঃ জয় শ্রীল প্রভুপাদ।