BN/Prabhupada 0731 - ভাগবত ধর্ম ঈর্ষাপরায়ণ ব্যক্তিদের জন্য নয়
Departure Lecture -- London, March 12, 1975
ভক্তদের কাছে, সাহিত্য, তথাকথিত সাহিত্য, খুব সুন্দরভাবে লিখিত, আলঙ্করিক ভাষা সমৃদ্ধ, রূপক শোভিত আর এগুলো ... তৎ বাক্ বিসর্গঃ (শ্রীমদ্ভাগবত ১.৫.১১), ... যৎ বচঃ চিত্রপদম্ (শ্রীমদ্ভাগবত ১.৫.১০)। খুব সুন্দর ভাবে, আক্ষরিকভাবে খুব সুন্দর ভাবে সজ্জিত, ন যৎ বচঃ চিত্রপদম্ হরেঃ যশঃ জগৎ ন প্রগৃণীত কর্হিচিৎ, কিন্তু সেখানে শ্রীকৃষ্ণ এবং তাঁর মহিমা সম্পর্কিত কোন বর্ণনা নেই ...... ঠিক যেমন বিশেষ করে তোমাদের পশ্চিমা দেশ গুলোতে অনেক সংবাদপত্র রয়েছে। বড়, বড় গুচ্ছ পত্রিকা, কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ সম্পর্কে সেখানে একটি লাইনও নেই। একটিও না। সুতরাং ভক্তদের জন্য এগুলোকে আবর্জনার সাথে তুলনা করা হয়। তৎ বায়সম্ তীর্থম্ (শ্রীমদ্ভাগবত ১.৫.১০)। ঠিক যেমন বায়সম, মানে কাক। কাকেরা কোথায় একত্রীত হয়? যেখানে সমস্ত উপদ্রব ফেলে দেয়া হয়, তারা সেখানে একত্রিত হয়। তোমরা দেখতে পাবে। এটি হচ্ছে এক জাতীয় পাখির স্বভাব। যেখানে সমস্ত নোংরা ফেলে দেয়া হয়, সেখানে কাকেরা জড়ো হয়। আরেক ধরণের পাখি, হংস, তারা সেখানে যায় না। হংসরা পরিষ্কার জল সমন্বিত সুন্দর বাগানে একত্রিত হয়, পদ্ম ফুল, পাখির কূজন। তারা সেখানে জড়ো হয়। যেহেতু এখানে...... প্রকৃতিগতভাবেই বিভিন্ন ধরণের প্রাণী রয়েছে, এমনকি পাখি, পশু " একই পালকের পাখি একসাথে ঘুরে বেড়ায়।" তাই যেখানে কাকেরা যায়, সেখানে হংসেরা যায় না। আর যেখানে হংসেরা যায়, সেখানে কাকেরা যায় না।
একইভাবে, কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলন হচ্ছে হংসদের জন্য, কাকদের জন্য নয়। তাই হংস হওয়ার চেষ্টা কর, রাজহংস বা পরমহংস। হংস মানে রাজহাঁস। এমনকি যদিও তোমরা এই অল্প একটু জায়গা পেয়েছ, তবুও কাকেরদের জায়গায় যেওনা। তথাকথিত ক্লাব, রেস্টুরেন্ট, পতিতালয়, নাচের ক্লাব, আর ...... মানুষ ... বিশেষ করে পশ্চিমা দেশ গুলোতে, তারা এইসমস্ত জায়গা নিয়ে খুব ব্যস্ত। কিন্তু কাক হয়ে থেকোনা। শুধুমাত্র এই উপায়ে হংস হও, শ্রীকৃষ্ণ সম্পর্কে শ্রবণ এবং কীর্তন। এটিই হচ্ছে পরমহংস থাকার উপায়। ধর্মঃ প্রোজ্ঝিত কৈতবঃ অত্র পরমঃ নির্মৎসরাণাম্। ধর্মঃ প্রোজ্ঝিত কৈতবঃ অত্র পরমঃ নির্মৎসরাণাম্। (শ্রীমদ্ভাগবত ১.১.২)। এই ভাগবত ধর্ম, এই কৃষ্ণভাবনামৃত হচ্ছে পরমও নির্মৎসরাণাম্ -দের জন্য। মৎসর, মৎসরতা। মৎসর মানে হিংসা। আমি তোমাকে হিংসা করি, তুমি আমাকে হিংসা কর। এই হচ্ছে জড়-জগৎ। ঠিক যেমন এই কোয়ার্টারে অনেক হিংসুটে মানুষ আছে, আমাদের বিরুদ্ধে শুধু অভিযোগ দায়ের করে।এই ব্যাপারে আমাদের ভালো অভিজ্ঞতা আছে। সুতরাং ভাগবত ধর্ম হচ্ছে পরম নির্মৎসরদের জন্য। মৎসরতা মানে যে অন্যদের উন্নতি সহ্য করতে পারে না। এটাকে বলে মৎসরতা। এটি হচ্ছে প্রত্যেকের স্বভাব। প্রত্যকেই আরও বেশী উন্নতি করতে চায়। প্রতিবেশীরা হিংসা করেঃ " ওহ, এই ব্যক্তিটি এগিয়ে যাচ্ছে। আমি পারছি না।" এই হচ্ছে...... এমনকি যদি সে ভাই বা পুত্রও হয়, এটি হচ্ছে মানুষের স্বভাব......
সুতরাং এই ভাগবত ধর্ম এই সমস্ত হিংসুটে মানুষদের জন্য নয়। এটি হচ্ছে পরম নির্মৎসরদের জন্য, যারা পূর্ণরূপে এই সমস্ত হিংসুটে মনোভাব ত্যাগ করেছে। তো কি করে এটি সম্ভব? এটি সম্ভব শুধুমাত্র যখন তোমরা শিখবে কি করে শ্রীকৃষ্ণকে ভালবাসতে হয়। তখন এটি সম্ভব। তখন তুমি দেখবে যে " প্রত্যেকেই শ্রীকৃষ্ণের অবিচ্ছেদ্য অংশ।" সে কৃষ্ণভাবনামৃতের অভাবে কষ্ট পাচ্ছে। তার কাছে আমাকে শ্রীকৃষ্ণ সমন্ধে কথা বলতে দাও। তাকে শ্রীকৃষ্ণ সম্পর্কে কিছু গ্রন্থ উপহার দিতে দাও, যাতে করে সে একদিন কৃষ্ণভাবনাময় হবে এবং সুখী হবে।" এই হচ্ছে শ্রবণম্ কীর্তনম্ (শ্রীমদ্ভাগবত ৭.৫.২৩)- স্মরণম্ প্রক্রিয়া। আমাদের নিজেদেরও সবসময় প্রামাণিক শাস্ত্র এবং ব্যক্তির কাছ থেকে শ্রবণ করা উচিত। এবং সবসময় সেই একই জিনিস কীর্তন করে যাওয়া উচিত, পুনরাবৃত্তি। এই যা। তখন সবকিছু আনন্দময় হয়ে উঠবে। অন্যথায় আবর্জনার মধ্যে কাকেদের সম্মেলন চলবেই , আর কেউই সুখী হবে না।
অসংখ্য ধন্যবাদ।
ভক্তবৃন্দঃ সমস্ত মহিমা শ্রীল প্রভুপাদের! ( সমাপ্ত)