BN/Prabhupada 0750 - আমরা কেন আমাদের মা-কে সম্মান করি



Lecture on BG 9.10 -- Melbourne, April 26, 1976

মৃত্যুসংসারবর্ত্মনি কি , এটা গবেষণা করার জন্য এখানে কোন স্কুল, কলেজ বা প্রতিষ্ঠান নেই। আমরা এতোটাই পতিত যে আমরা অনুসন্ধানও করি না। ঠিক পশুদের মতো। পশুদেরকে কসাইখানায় নেয়া হয়, সবাই তা জানে। কিন্তু পশুর অনুসন্ধান করার ক্ষমতা নেই, "আমাকে কেন কসাইখানায় নেয়া হচ্ছে?" তার কোন ক্ষমতা নেই। তার কোন প্রতিবাদ করার সামর্থ নেই। কসাইখানায় নেওয়ার বিরুদ্ধে। মৃত্যসংসারবর্ত্মনি। আমাদের প্রত্যেকেই কসাইখানায় যাচ্ছি; কিন্তু মানুষকে যদি জোর করে কসাইখানায় নেওয়া হয়, সে অন্তত কিছু প্রতিবাদ করতে পারবে, কাঁদতে পারবে যে, "কেন এই মানুষটি আমাকে কসাইখানায় নিয়ে যাচ্ছে?" কিন্তু পশুর তা থাকে না... যদিও সে অনুভব করছে, সে কাঁদছে, তাদের চোখে জল থাকে, আমরা অনেক সময় দেখে থাকি। তারা জানে যে "কোন অপরাধ ছাড়াই তাদেরকে কসাইখানায় নেয়া হচ্ছে। আমরা কোন ক্ষতি করিনি।" ঠিক যেমন গাভী। তারা ঘাস খায়, আর বিনিময়ে আমাদেরকে সবচেয়ে পুষ্টিকর খাদ্য, দুধ দিয়ে থাকে। কিন্তু আমরা এতটা নিষ্ঠুর আর অকৃতজ্ঞ যে আমরা গাভীদের কসাইখানায় নিচ্ছি।

বৈদিক সভ্যতা অনুযায়ী গাভী হচ্ছে মা। কেন মা নয়? সে দুধ দিচ্ছে। মা কেন সম্মানীয় হন? কেন আমরা আমাদের মা কে সম্মান প্রদর্শন করি? কারণ যখন আমরা অসহায় থাকি, আমরা কোন কিছু খেতে পারিনা, মা তাঁর স্তন থেকে দুধ প্রদান করেন। মা মানে যিনি আহার দেন। তাহলে গাভী যদি খাদ্য দেয়, দুধ- দুধ খুব পুষ্টিকর আর ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার- তাই তিনি আমাদের মা। শাস্ত্রে বৈদিক সভ্যতা অনুযায়ী সাত জন মাতার কথা উল্লেখ রয়েছে। সপ্ত মাতা। একজন মা হচ্ছেন প্রকৃত মাতা, যার গর্ভ থেকে আমরা জন্ম নিয়েছি। আদৌ মাতা। তিনি হচ্ছেন প্রকৃত মাতা। গুরুপত্নী, গুরুদেব বা শিক্ষকের পত্নী, তিনি মাতা। আদৌ মাতা গুরুপত্নী ব্রাহ্মণী। ব্রাহ্মণের পত্নী, তিনিও মাতা। আসলে একজন সভ্য মানুষ তার নিজের পত্নী ছাড়া সব স্ত্রীলোকদের মা হিসেবে দেখেন। সাত, আট জন নয়- প্রত্যেককে।

মাতৃবৎ পরদারেষু
পরদ্রব্যেষু লোষ্ট্রবৎ
(চাণক্য শ্লোক ১০)।

একজন শিক্ষিত পণ্ডিত বলতে এটা বোঝায় না যে সে কতগুলো ডিগ্রি লাভ করেছে। একজন শিক্ষিত মানুষ বলতে বোঝায় যিনি সব নারীদের মা হিসেবে দেখেন। তো সব নারীদের বাদ দিলেও অন্তত সাত জনকে আমাদের মা হিসেবে দেখা উচিত। আদৌ মাতা গুরুপত্নী ব্রাহ্মণী। ব্রাহ্মণী। রাজপত্নীকা, রাণী। রাণীও মা, রাজপত্নীকা। ধেনু, গাভী। গোমাতা। আর ধাত্রী, নার্স, তিনি মা। ধেনুর ধরিত্রী তথা পৃথিবী। এবং পৃথিবী, তিনি আমাদের খাদ্যশস্য প্রদান করছেন।

তো এটি হচ্ছে দর্শন। তাই আমাদেরকে খুবই মানবিক হতে হবে, অন্তত গাভীর ক্ষেত্রে। যদি কেউ মাংসাহারে খুবই আসক্ত হয়, তাহলে সে নিম্নতর কোন পুশুদের হত্যা করতে পারে যেমন ছাগল, ভেরা, শুকর, মাছ। অন্যান্য পশু রয়েছে। কিন্তু ভগবতগীতায় এটি বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে,

কৃষিগৌরক্ষ্যবাণিজ্যং
বৈশ্যকর্ম স্বভাবজম্‌
(শ্রীমদ্ভগবতগীতা ১৮.৪৪)

গো-রক্ষা। সমাজে এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। গাভীদের রক্ষা করা এবং দুধ সংগ্রহ করা। দুগ্ধজাত বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য, বিশেষ করে ঘি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি জিনিস। ভারতবর্ষে এখনও প্রতিটি বাড়িতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘি এর প্রয়োজন হয়। কিন্তু তারা মাংসাহারি নয়। মাংসাহারিরা ঘি সহ্য করতে পারে না।