BN/Prabhupada 0768 - মুক্তি মানে আর কোন জড়দেহ নয়। তার নাম মুক্তি



Lecture on BG 8.1 -- Geneva, June 7, 1974

প্রভুপাদঃ এটি হচ্ছে কৃষ্ণভাবনামৃতের চূড়ান্ত পরিসমাপ্তি, যে অন্তকালে, মৃত্যুর সময়... জীবনের শেষে, অন্তকালে চ মাম্‌, "আমার ওপর," অন্তকালে চ মাম্‌ এব (শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ৮.৫), "নিশ্চিতরূপে," স্মরণ, "মনে করা।" শ্রীবিগ্রহ পূজা বিশেষভাবে এই কারণে উদ্দিষ্ট, যদি তোমরা রাধাকৃষ্ণের শ্রীবিগ্রহ আরাধনা চালিয়ে যাও, স্বাভাবিকভাবেই তোমরা শ্রীরাধাকৃষ্ণকে তোমাদের হৃদয়ের অভ্যন্তরে স্মরণ করতে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে। এই অভ্যাসের প্রয়োজন। অন্তকালে চ মাম্‌ এব স্মরন্ মুক্তা (শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ৮.৫)। এটি হচ্ছে মুক্তি। মুক্তি মানে আর কোন জড় দেহ নয়। এটিকে বলে মুক্তি। আমরা এখন জড় দেহের বন্ধনে আবদ্ধ রয়েছি। জড়-জগতে, আমরা একটার পর একটা দেহ পরিবর্তন করছি। কিন্তু কোন মুক্তি নেই। এখানে কোন মুক্তি নেই। মুক্তি হচ্ছে... শুধু দেহ পরিবর্তন করেই আমরা মুক্ত হতে পারিনা। মুক্ত মানে এই দেহ পরিবর্তন করে আমরা আর কোন জড় দেহ ধারণ করবো না। কিন্তু আমরা আমাদের নিজেদের চিন্ময় দেহে অবস্থান করবো। ঠিক যেমন তুমি যদি অসুস্থ হও, তুমি জ্বরে ভুগছ, তো যখন আর কোন জ্বর থাকবে না, তখন তুমি তোমার প্রকৃত সুস্থ দেহে অবস্থান করবে, এটিকে বলে মুক্তি। এটি এমন নয় যে মুক্তি মানে নিরাকার হয়ে যাওয়া। না। একই উদাহরণঃ তুমি জ্বরে ভুগছ। জ্বর থেকে মুক্ত হওয়া মানে তুমি নিরাকার হয়ে যাওনি। আমি কেন নিরাকার হয়ে যাব? এখানে আমার রূপ রয়েছে, কিন্তু আমার রূপ আর জ্বরে ভোগে না, জ্বরাক্রান্ত হয় না। এটিকে বলে মুক্তি। রোগমুক্ত, অসুখ থেকে মুক্ত। তাই এটিকে বলে মুক্তাকলেবরম। ঠিক যেমন সাপ। তারা মাঝে মাঝে দেহের বাইরের খোলসটা ত্যাগ করে। দেখেছ তোমরা?

ভক্তবৃন্দঃ হ্যাঁ, হ্যাঁ।

প্রভুপাদঃ কিন্তু সে দেহেই থাকে। দেহের মধ্যেই থাকে। কিন্তু বাইরের যে আবরণটা ছিল, যেটা সে ধারণ করছিল, সে এটাকে একবার ত্যাগ করলে এটা চলে যায়। সবকিছু, সব শিক্ষাই প্রকৃতির অধ্যয়নে রয়েছে। আমরা দেখতে পাই, সাপ তার খোলস ত্যাগ করে, কিন্তু সে তার রূপের মধ্যেই রয়ে যায়। একইভাবে , আমরা... মুক্তাকলেবরম মানে এই বাহ্যিক... ঠিক এই পোশাকটির মতো, এটি হচ্ছ আবরন। আমি এটি ত্যাগ করতে পারি, কিন্তু আমি আমার আসল দেহে রয়ে যাব। একইভাবে, মুক্তি মানে... আমার প্রকৃত দেহ ইতোমধ্যেই রয়েছে, এটি এই জড় কোটের দ্বারা আচ্ছাদিত। তো যখন আর কোন জড় আবরন থাকবে না, সেটিকে বলে মুক্তি। এটি তখনই লাভ করা যাবে যখন তুমি শ্রীকৃষ্ণের কাছে, নিত্য আলয়ে, ভগবদ্ধামে ফিরে যাবে। তখন তুমি নিরাকার হয়ে যাবে না। রূপ বা আকার থাকবেই। যেমন আমি একজন স্বতন্ত্র ব্যক্তি, একইভাবে, যখন আমি শ্রীকৃষ্ণের কাছে যাব, শ্রীকৃষ্ণেরও তাঁর স্বতন্ত্র রূপ রয়েছে, আমারও আলাদা রূপ রয়েছে... নিত্যো নিত্যানাং চেতনশ্চেতনানাম (কঠোপনিষদ ২.২.১৩)। তিনি সমস্ত জীবেদের প্রধান। সুতরাং এটিকে বলে মুক্তি।

আর এই মুক্তি তুমি লাভ করতে পার যদি মৃত্যুর সময় তুমি শ্রীকৃষ্ণকে স্মরণ করতে পার। তাই এটি সম্ভব। যদি তুমি সর্বদাই শ্রীকৃষ্ণকে চিন্তা করতে অভ্যস্ত হও, স্বাভাবিকভাবে, মৃত্যুর সময়, এই দেহাবসান কালে, যদি তুমি শ্রীকৃষ্ণকে স্মরণ করার মতো সৌভাগ্যবান হও, তাঁর রূপের, তখন তুমি জড় বন্ধন থেকে মুক্তি লাভ করবে, আর কোন জড় দেহ নয়। এই হচ্ছে কৃষ্ণভাবনামৃত। অনুশীলন।