BN/Prabhupada 0780 - আমরা পরম সত্যের জ্ঞানের এক ঝলক পেতে পারি



Lecture on SB 7.6.20-23 -- Washington D.C., July 3, 1976

শ্রীল প্রভুপাদঃ এই দেবী ধাম ভগবানের সবচাইতে শক্তিশালী বহিরঙ্গা শক্তি দুর্গাদেবী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। সৃষ্টি স্থিতি প্রলয় সাধনশক্তিরেকা (ব্রহ্মসংহিতা ৫/৪৪) কিন্তু তিনি পরমেশ্বর ভগবানের ছায়েব বা ছায়া হিসেবে কাজ করছেন সেই কথা ভগবদগীতাতেও প্রতিপন্ন করা হয়েছে

ময়াধ্যক্ষেণ প্রকৃতিঃ
সূয়তে স চরাচরম্‌
হেতুনানেন কৌন্তেয়
জগদ্‌ বিপরিবর্ততে
(গীতা ৯/১০)

এইভাবে আমরা যদি শাস্ত্রের আলোকে বিচার করব, দেখতে পাব সবকিছুই সেখানে দেয়া আছে যদি তুমি পরম সত্যকে খুঁজতে চাও, সেটি কীভাবে সম্ভব? শাস্ত্রচক্ষুষা (ভাগবত ১০/৮৪/৩৬) , শাস্ত্রের মাধ্যমে বৈদিক জ্ঞানের মাধ্যমে তোমাকে পরম সত্যকে জানতে হবে যদি আমরা এটি স্বীকার করি যে বেদ মানে জ্ঞান... বেত্থি বেদবিদা জ্ঞানে। বেদ মানে জ্ঞান। সুতরাং বেদান্ত - জ্ঞানের চূড়ান্ত স্তর। সমস্ত জ্ঞানের শেষ কথা হচ্ছে পরম সত্য। তোমাকে সেই পর্যন্ত যেতে হবে। সেই পরম সত্য সম্বন্ধে যদি তুমি জল্পনা করতে থাকো... পন্থাস্তু কোটিশতবৎসর সংপ্রগম্যো (ব্রহ্মসংহিতা ৫/৩৪)। সেটি সম্ভব নয় শতবৎসর সংপ্রগম্যো, শত শত বছর ধরে খুব বেগেও যদি যাও... কিসের বেগে? পন্থাস্তু কোটিশতবৎসর সংপ্রগম্যো বায়োরথাপি উড়োজাহাজ । বিমানে। বায়োরথাপি । কিসের বেগ? বায়োরথাপি । পন্থাস্তু কোটিশতবৎসর সংপ্রগম্যো বায়োরথাপি মনস বায়ুঃ বায়ু এবং মনের বেগে। মন অত্যন্ত শক্তিশালী। তুমি এখানে বসে আছ এক্ষুনি তুমি এখানে বসে দশ হাজার মাইল দূরের কথা চিন্তা করতে পার। এটি এতোই বেগবান। এমন কি মনের বেগেও তুমি পারবে না কোটি শত বৎসর ধরে মহাশুন্যের ওপর দিয়ে ভ্রমণ করে, কোটি কোটি বছর পরেও সেই পরম সত্য অজানাই থাকবে সুতরাং এটি পরম সত্যকে জানার পন্থা নয় কিন্তু আমরা যদি বৈদিক পন্থাকে গ্রহণ করি , অবরোহ পন্থা যখন জ্ঞান স্বয়ং পরম সত্য থেকে আসছে, তখনই কেবল তাঁকে জানা সম্ভব।

তাই আমরা কৃষ্ণ ভক্তেরা পরম সত্যের কৃপার দ্বারাই পরম সত্যকে জানবার চেষ্টা করি পরম সত্য হচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণ শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, মত্তঃ পরতরম্‌ নান্যৎ কিঞ্চিদস্তি ধনঞ্জয় (গীতা ৭/৭) "আমিই হচ্ছি পরম ব্রহ্ম" বেদৈশ্চ সর্বৈরহমেব বেদ্যম্‌ (গীতা ১৫/১৫) এইভাবে আমরা যদি শ্রীকৃষ্ণকে সেইভাবে বুঝতে চেষ্টা করি ঠিক যেভাবে তিনি আমাদেরকে বলছেন ঠিক যেভাবে শাস্ত্রে প্রতিপন্ন করা হয়েছে, সেভাবে আচার্যগণ বলেছেন তাহলে আমরা কিছুটা হলেও পরম সত্যকে অনুধাবন করতে পারব। ঠিক যেভাবে শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন,

অথবা বহুনৈতেন
কিম্‌ জ্ঞাতেন তবার্জুন
বাস্তভ্যহম্‌ ইদম্‌ কৃৎস্নম্‌
একাংশেন স্থিতো জগৎ
(গীতা ১০/৪২)

পরম সত্যের বিস্তার কীভাবে কাজ করছে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনের কাছে এই জড় জগত সম্পর্কে বলছেন যে, একাংশেন স্থিতো জগৎ। এই জগত এই জড় জগতটি কি? আমরা আমাদের দৃষ্টিতে কেবল একটি বিশ্ব দেখতে পাচ্ছি এইরকম কোটি কোটি ব্রহ্মাণ্ড আছে। যস্য প্রভা প্রভবতো জগদণ্ডকোটি (ব্রহ্মসংহিতা ৫/৪০) জগদণ্ড মানে একটা ব্রহ্মাণ্ড। এক একটা ব্রহ্মাণ্ডে, কোটিষ্ব অশেষ যস্য প্রভা প্রভবতো জগদণ্ডকোটি কোটিষ্বশেষু বিভূতি ভিন্নম্‌ এক একটা ব্রহ্মাণ্ডে কোটি কোটি গ্রহ আছে এবং সেগুলো এখানকার থেকে ভিন্ন। এই হচ্ছে ভগবানের সৃষ্টি সবকিছু একসঙ্গে। একাংশেন স্থিতো জগৎ এই জড় জগত ভগবানের সৃষ্টির এক চতুর্থাংশ এবং তিন চতুর্থাংশ হচ্ছে বৈকুণ্ঠ জগত বা চিন্ময় জগত তাই আমাদের জল্পনা কল্পনা এবং গবেষণার দ্বারা সেটি জানা অসম্ভব কিন্তু সেই পরম সত্যের জ্ঞানের কিছুটা আমরা উপলব্ধি করতে পারি যদি আমরা পরম সত্য, শ্রীকৃষ্ণের থেকেই তা জানি এটিই হচ্ছে কৃষ্ণ ভাবনামৃত আন্দোলন।

ধন্যবাদ সবাইকে।

ভক্তবৃন্দঃ জয় শ্রীল প্রভুপাদ।