BN/Prabhupada 0788 - আমাদের এটি বুঝতেই হবে যে আমরা কেন অসুখী – কারণ আমরা জড় দেহে রয়েছি



Lecture on BG 4.10 -- Vrndavana, August 2, 1974

বীতরাগভয়ক্রোধা
মন্ময়া মাম্‌ উপাশ্রিতঃ
বহবো জ্ঞানতপসা
পূতা মদ্ভাবম্‌ আগতঃ
(গীতা ৪/১০)

ভাবম্‌ শব্দের আরেকটি অর্থ প্রকৃতি ঠিক যেমন আমরা বলি স্বভাব। মদ্‌ভাবম্‌... এটি হচ্ছে একটি প্রকৃতি, জাগতিক প্রকৃতি এটিও শ্রীকৃষ্ণের ভাবম্‌ মানে তাঁর প্রকৃতি কোন কিছুই শ্রীকৃষ্ণের চেয়ে উর্ধ্বে নয়, কিন্তু এটি তাঁর বহিরঙ্গা প্রকৃতি ভূমিরাপনলো বায়ুঃ... (গীতা ৭/৪) ভিন্না প্রক্রিতিঃ অষ্টধা ভিন্না অর্থ ভিন্ন শক্তি। সেই শক্তি ক্রিয়াশীল। যদিও এটি শ্রীকৃষ্ণের শক্তি, তবু তা ভিন্ন।

ঠিক যেমন আমি কথা বলছি, এটি রেকর্ড করা হচ্ছে এটি যখন চালানো হবে, তখন তোমরা এই একই শব্দ শুনবে, আমার শব্দ। কিন্তু তবু তা আমার থেকে ভিন্ন। ঠিক তেমনই, এই জড়া প্রকৃতিও ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রকৃতি

কোনকিছুই তাঁর থেকে স্বতন্ত্র বা ঊর্ধ্বে নয়। তাঁর দু ধরণের শক্তি রয়েছেঃ চিন্ময় শক্তি এবং জড়া শক্তি জড়া শক্তি মানে বহিরঙ্গা শক্তি এবং চিন্ময় শক্তি মানে অন্তরঙ্গা শক্তি আর আমরাও চিন্ময় প্রকৃতি, তটস্থা শক্তি আমরা হয় জড়া প্রকৃতিতে বা চিন্ময় প্রকৃতিতে থাকতে পারি তাই আমাদের বলা হয় তটস্থা শক্তি তিন ধরণের প্রকৃতিঃ বহিরঙ্গা, অন্তরঙ্গা এবং তটস্থা যতক্ষণ আমরা এই জড়া প্রকৃতি বা বহিরঙ্গা প্রকৃতিতে থাকবো, আমরা সুখী নই এই হচ্ছে অবস্থা

ঠিক যেমন একটি মাছেকে যদি জল থেকে তুলে রাখা হয়, সে সুখী নয়, অথবা এক সময় মরে যাবে ঠিক তেমনই, তোমাকে একজন ডাঙ্গার প্রাণী হিসেবে যদি জলে রাখা হয়, তুমি সুখী হবে না, এবং চরমে মৃত্যু হবে, কারণ যেহেতু আমরা ভগবানের চিন্ময় প্রকৃতির অংশ ... এই কথা ভগবান বলেছেন যে এই জড়া প্রকৃতি হচ্ছে অপরা অপরা মানে নিকৃষ্ট, আমাদের জন্য উপযুক্ত নয়। তাই আমরা অসুখী আমরা যতদিন এই জাগতিক প্রকৃতির অধীনে থাকবো , আমরা অসুখী হয়েই থাকবো

যেমন এই দেহ। এই দেহটি জড়া প্রকৃতিজাত। আমরা এই দেহের মধ্যে অবস্থান করছি। দেহিনোস্মিন যথা দেহে কৌমারম, যৌবনম্‌ জরা (গীতা ২/১৩) আমরা যখন থেকে এই দেহ পেয়েছি, আমরা অসুখী। প্রথমে আমাদের এটি বুঝতে হবে যে আমরা এখানে অসুখী আমরা অসুখী কারণ আমরা এই দেহে রয়েছি আর সুখ কি? প্রকৃত সুখ হচ্ছে জন্ম, মৃত্যু, জরা এবং বার্ধক্যের অবসান ঘটানো। (গীতা ১৩/৯) জন্ম নেয়া এবং আবার মৃত্যু বরণ করা এবং যতদিন আমরা বেঁচে রয়েছি আমাদেরকে কিছু না কিছু রোগে ভুগতেই হবে এবং আমাদের বার্ধক্য আসবেই। সরল সত্য।

তাই বুদ্ধিমান ব্যক্তিকে এই জড় জগতের দুর্দশাপূর্ণ অবস্থাটি প্রথমে বুঝতে হবে এবং চেষ্টা করতে হবে এর থেকে বেরিয়ে আসতে। কোন সন্দেহ আছে? আহ্‌! এটাই সত্য! তাই আমাদের একমাত্র কাজ হচ্ছে এই জড় অস্তিত্ব থেকে বেরিয়ে আসা সেটিই আমাদের একমাত্র কাজ। এমন নয় যে এখানে বিভিন্ন পরিস্থিতি এবং জিনিসের মধ্যে সমন্বয় করে নিয়ে সুখী হবার চেষ্টা করা । তাদের বলা হয় কর্মী, মূর্খ। এটি একটি বাস্তব সত্য যে যতক্ষণ তুমি এক জগতে থাকবে তুমি যতই চেষ্টা করে যাও না কেন এখানে সুখী হবার জন্য তা কখনই সম্ভব হবে না। কখনই তা হবে না। ওরা পাশ্চাত্য জগতে সুখী হবার চেষ্টা করছে ওরা জানেই না আসলে সুখ কি। কিন্তু জাগতিক সুখ মানে মৈথুন জীবন। তাই ওরা প্রতিদিন মৈথুন জীবন ভোগ করে চলেছে তা সত্ত্বেও ওরা নগ্ন নাচ দেখতে যাচ্ছে যদি কিছু সুখ পাওয়া যায় তো। ওখানে সুখ থাকবে কেন? কোনভাবেই ওখানে সুখ থাকতে পারে না। কিন্তু ওরা কেবল আপোষের চেষ্টা করছে। এই ভাবে, ওই ভাবে কেবল চেষ্টাই করে যাচ্ছে। ব্যাস্‌।