BN/Prabhupada 0787 - মানুষ ভগবদগীতাকে সাধারণ যুদ্ধ বা হিংসা বলে মনে করে



Lecture on BG 1.44 -- London, July 31, 1973

প্রদ্যুম্নঃ অনুবাদ - হায়, কি অদ্ভুত, জাগতিক রাজকীয় সুখভোগ লাভের বাসনার দ্বারা আমরা ভয়ঙ্কর সব পাপকর্ম করার জন্য নিজেদেরকে প্রস্তুত করছি।

প্রভুপাদঃ

অহো বত মহৎ-পাপম্‌
কর্তুম্‌ ব্যবসিতা বয়ম্‌
যদ্‌ রাজ্য-সুখ-লোভেন
হন্তুম্‌ স্বজনম্‌ উদয়তঃ
(গীতা ১/৪৪)

অর্জুনকে কখনও কখনও দোষ দেয়া হয়, ভগবদগীতাকেও দোষ দেয়া হয় যে, "ওখানে হিংসার কথা বলে হয়েছে, হিংসা করতে বলা হয়েছে। ভগবদগীতা হিংসায় পূর্ণ।" হ্যাঁ, এটি সম্পূর্ণ হিংসা। যুদ্ধক্ষেত্র কিন্তু বৈষ্ণব ভাবছে অর্জুন ভেবেছিলেন যে এই যুদ্ধ তাঁর রাজ্যসুখ ভোগের জন্য আয়োজন করা হয়েছিলেন যদ্‌রাজ্যসুখ লোভেন। লোভেন। এটি অর্জুনের প্রীতির জন্য আয়োজন করা হয়েছিল যাতে করে এরপর তিনি রাজ্য সুখ ভোগ করতে পারেন । কিন্তু আসলে তা নয়। এটি শ্রীকৃষ্ণের সন্তুষ্টির জন্য আয়োজন করা হয়েছিল, অর্জুনের সন্তুষ্টির জন্য নয়। এই হচ্ছে সাধারণ কাজ এবং ভগবৎসেবার মধ্যে পার্থক্য। ভগবৎ সেবা এবং সাধারণ কাজ দেখতে প্রায় একই রকম ঠিক যেমন আমরা এই বাড়িতে বাস করছি । প্রতিবেশীরা ভাবতে পারে যে, "কিছু মানুষ এই বাড়িতে থেকে নাচছে, গাইছে, আমরাও তো নাচছি। আমরাও কখনও কখনও গান গাইছি আমরাও খাচ্ছি। ওরাও খাচ্ছে। তাহলে আমাদের মধ্যে পার্থক্যটি কি? তারা ভাবতে পারে যে, "ভক্তি করা আর সাধারণ কাজ করার মধ্যে পার্থক্যটি কি আছে?" দেখতে তো প্রায় একই রকম এই জন্য মানুষ ভগবদগীতাকে সাধারণ যুদ্ধবিবাদের বই মনে করে ভুল ভাবে। কিন্তু আসলে তা নয়। এটি শ্রীকৃষ্ণের দ্বারা আয়োজন করা হয়েছে তাঁর নিজের উদ্দেশ্য পূর্ণ করতে তাঁর উদ্দেশ্য হচ্ছে পরিত্রাণায় সাধুনাম্‌ বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম্‌ (গীতা ৪/৮) সেটি হচ্ছে তাঁর সন্তুষ্টি, অর্জুনের নয়, বা অন্য কারোরও নয়। ভগবানের পরিকল্পনা। তিনি এই জগতে অবতরণ করেন ধার্মিক জীবনের নীতিগুলো স্থাপনা করতে এবং যারা সেই ধর্মনীতি এবং জীবনের মূল উদ্দেশ্যের বিরোধী তাদের বিনাশ করতে। সেটিই তাঁর উদ্দেশ্য। একইসঙ্গে দুটো কাজ পরিত্রাণায় সাধুনাম্‌ বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম্‌ (গীতা ৪/৮) ।

স্বজনম্‌

অহো বত মহৎ পাপম্‌
কর্তুম্‌ ব্যবসিতা বয়ম্‌
যদ্‌রাজ্য-সুখ-লোভেন
হন্তুম্‌ স্বজনম্‌ উদয়তঃ
(গীতা ১/৪৪)

স্বজন মানে আপনজন স্বজন কথাটি উচ্চতর অর্থে কেবল আমার নিজের ভাই বা বোন, বা আমার বাবা এবং কাকাকেই বোঝায় না না। স্বজন মানে সমস্ত জীব। কারণ যিনি কৃষ্ণভাবনাময় নন, সাধারণ চেতনায় বা জড় চেতনায় থাকা। সেই ব্যক্তি এভাবে ভাবতে পারবে না যে, "সমস্ত জীবেরা আমার স্বজন" , সে তা ভাবতে পারে না আসলে সবাই আমাদের স্বজন, কারণ ভগবান আমাদের পিতা যেমনটা ভগবান বলেছেন, "অহম্‌ বীজপ্রদ পিতা" , যদি তিনিই আমাদের পরম পতা হন... শুধু তিনিই বলছেন এমন নয়, যে কোন যথাযথ ধর্মব্যবস্থাই এই কথা বলবে যে "ভগবান হচ্ছে মূল পিতা"। সেটিই হচ্ছে চরম সত্য। অহম্‌ সর্বস্য প্রভবো মত্তঃ সর্বম্‌ প্রবর্ততে (গীতা ১০/৮) সকলেই তাঁর থেকেই এসেছে। তিনিই আমাদের পরম পিতা তাই যদি শ্রীকৃষ্ণ পরম পিতা হন, তিনি সকলের পিতা হন। সর্বযোনিষু কৌন্তেয় (গীতা ১৪/৪) সব ধরণের জীব প্রজাতিই আমাদের স্বজন। কেন নয়? কারণ কৃষ্ণ আমাদের পরম পিতা । এই হচ্ছে কৃষ্ণভাবনামৃত। তাই ভগবানের ভক্ত কোন জীবের প্রতিই ক্ষতি করতে চান না এই হচ্ছে কৃষ্ণভাবনামৃত