BN/Prabhupada 0796 - মনে কোর না যে আমি বলছি। আমি কেবল যন্ত্র। প্রকৃত বক্তা হলেন ভগবান



Lecture on BG 6.1-4 -- New York, September 2, 1966

এখানে বলা হয়েছে, শ্রী ভগবান উবাচঃ পরমেশ্বর ভগবান বলছেন তিনি বলছেন তিনি পূর্ণ জ্ঞানে বলছনে। তাঁর জ্ঞানে কোন ত্রুটি নেই আমাদের জ্ঞান অনেক অনেক ত্রুটিপূর্ণ। আমরা ভুল করি, আমরা মোহগ্রস্ত আমরা কখনও কখনও মুখে কিছু বলি আর আমাদের হৃদয়ে অন্য কথা থাকে। এর অর্থ আমরা প্রতারণা করি। আমাদের সমস্ত অভিজ্ঞতাই অপূর্ণ কেননা আমাদের ইন্দ্রিয়গুলো অপূর্ণ। অতএব আমি তোমাকে কিছু বলতে পারি না। তোমরা বলে পার, "তাহলে স্বামীজী আপনি যখন কথা বলেন সেগুলো কি?" আমি কেবল তাই বলছি যা পরমেশ্বর ভগবান বলেছেন আমি কেবল সেই একই কথার পুনরাবৃত্তি করছি। ব্যাস্‌। এটা ভেব না যে আমি নিজের থেকে কিছু বলছি। আমি কেবল যন্ত্র মাত্র প্রকৃত বক্তা হচ্ছেন পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, যিনি আমার ভেতরে বাইরে সর্বত্র আছেন তিনি কি বলছেন? তিনি বলছেন, অনাশ্রিতম্‌...

অনাশ্রিতম্‌ কর্মফলম্‌
কার্যম্‌ করোতি যঃ
স সন্ন্যাসী চ যোগী চ
ন নিরগ্নির্ণ চাক্রিয়ঃ
(গীতা ৬/১)

অনাশ্রিতঃ। অনাশ্রিত মানে কোন কিছুর আশ্রয় না করেই কর্মফলম্‌ , সবাই কাজ করছে আর কিছু একটা ফলাফল প্রত্যাশা করছে তুমি যে কাজই করছ না কেন, কিছু না কিছু ফলের আশা করছ এখানে পরমেশ্বর ভগবান বলছেন, "যে ব্যক্তি ফলের আশা না করেই কর্তব্য সম্পাদন করেন..." তিনি কর্ম করেন। তাহলে যদি তিনি ফলের আশা নাই করেন, তবে কাজ করছেন কেন? ধর... আমি কাউকে বললাম যে এই কাজটা এইভাবে কর তখন সে কিছু একটা আশা করবে, একটা ফল, পারিশ্রমিক, পুরষ্কার, অথবা বেতন এটাই হচ্ছে এই জগতে কাজ করার পন্থা। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ বলছেন অনাশ্রিতঃ কর্মফলম্‌ "যে ব্যক্তি কোন পুরষ্কার বা ফলের প্রত্যাশা না করেই কর্ম করে, কেন তিনি কর্ম করবেন? কার্যম্‌ - এটি আমার কর্তব্য। ফলের জন্য নয়। এটি কর্তব্য "আমার কর্তব্য এটা করা"। কার্যম্‌ করোতি যঃ এই মনোভাবে যদি কেউ কাজ করেন, তাহলে 'স সন্ন্যাসী'। তিনি আসলে সন্ন্যাসী।

বৈদিক সংস্কৃতি অনুযায়ী জীবনের চারটি স্তর আছে। এটি আমি অনেকবার তোমাদের ব্যাখ্যা করেছি। ব্রহ্মচারী, গৃহস্থ, বানপ্রস্থ এবং সন্ন্যাসী। ব্রহ্মচারী মানে ছাত্র জীবন। পারমার্থিক জ্ঞানের চর্চা। পূর্ণরূপে কৃষ্ণ ভাবনায় প্রশিক্ষণ নেয়া। তাঁকে বলা হয় ব্রহ্মচারী। তারপর পূর্ণ প্রশিক্ষণের পর সে স্ত্রী গ্রহণ করতে পারে, গৃহস্থ হতে পারে, এবং সন্তানসন্ততি সহ সংসারে বাস করতে পারে। একে বলা হয় গৃহস্থ। তারপর পঞ্চাশ বছর হয়ে গেলে সে গৃহ ও সন্তানদের পরিত্যাগ করে স্ত্রীকে নিয়ে বিভিন্ন তীর্থ স্থানে ভ্রমণ করে। একে বলা হয় বানপ্রস্থ। অবসর জীবন। আর অবশেষে সে স্ত্রীকে প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদের রক্ষণাবেক্ষণে রেখে চলে যাবে। একাকী থাকবে। একে বলা হয় সন্ন্যাস বা বৈরাগী জীবন। এইভাবে জীবনের চারটি স্তর আছে।

ভগবান কৃষ্ণ বলছেন, কেবল পরিত্যাগ করাটাই সব কিছু নয় ত্যাগ করাটাই সবকিছু না। কর্তব্যও থাকতে হবে। কার্যম্‌। কার্যম্‌ মানে "আমার কর্তব্য" সেই কর্তব্য কি? তিনি তাঁর সংসার জীবন ত্যাগ করেছেন কীভাবে তাঁর স্ত্রী এবং সন্তানদের চালাবেন সেই বিষয়ে তাঁর আর কোন চিন্তা নেই। তাহলে তাঁর কর্তব্য কি? সেই কর্তব্য অনেক দায়িত্বসম্পন্ন - কৃষ্ণের জন্য কর্ম করা। কার্যম্‌। কার্যম্‌ মানে প্রকৃত কর্তব্য। আমাদের জীবনে দুই ধরণের কর্তব্য আছে। একটা হচ্ছে মায়াকে সেবা করা, আরেকটি হচ্ছে বাস্তবতার সেবা করা যখন তুমি বাস্তব বস্তুর সেবা করবে, সেটি হচ্ছে প্রকৃত সন্ন্যাস। এবং যখন মোহময়ী বস্তুর সেবা করবে, তার নাম মায়া। হয় বাস্তব বস্তুর সেবা নয়তো মোহময়ী বস্তুর সেবা। আমি এমনই একটি অবস্থায় আছি আমাকে সেবা করতেই হবে। আমার অবস্থান প্রভু হওয়া নয়, বরং সেবক হওয়া। সেটিই আমার স্বরূপগত অবস্থান।