BN/Prabhupada 0879 - এই দৈন্যভাব ভগবৎসেবার জন্য অতি উত্তম
730412 - Lecture SB 01.08.20 - New York
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু বলেছেন,
- পৃথিবীতে আছে যত নগরাদি গ্রাম
- সর্বত্র প্রচার হইবে মোর নাম
- (শ্রীচৈতন্য ভাগবত অন্ত্যখণ্ড ৪/১২৬)
পৃথিবীর প্রতিটি নগরে ও গ্রামে তাঁর সংস্কৃতি প্রচার হবে। তাঁর সংস্কৃতিটি কি? এর মানে কি ইউরোপিয়ান এবং আমেরিকানরা ব্রাহ্মণ হবে না? কারণ বৈষ্ণব সংস্কৃতি মানে ব্রহ্মণ্যসংস্কৃতিরও আগে, ব্রহ্মণ্যসংস্কৃতিরও ঊর্ধ্বে ।
- মাম্ চ যোহব্যভিচারেণ
- ভক্তিযোগেন সেবতে
- স গুণান্ সমতিত্যৈতান্
- ব্রহ্মভূয়ায় কল্পতে
ভক্তিযোগ... যিনি ভক্তিযোগ গ্রহণ করেন, তিনি তৎক্ষণাৎ চিন্ময় স্তরে অধিষ্ঠিত হন, ব্রহ্মভূত (ভাগবত ৪/৩০/২০) ব্রাহ্মণের আর কি কথা? এইসব বদ্ধমূল সঙ্কীর্ণ ধারণা বৈদিক সংস্কৃতিকে নাশ করে দিয়েছে বর্তমানে আমরা তা পুনরায় জগ্রত করছি। এটি সকলের জন্য শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন,
মাম্ হি ব্যাপাশ্রিত
যেহপি স্যুঃ পাপযোনয়ঃ
স্ত্রীয়ো শুদ্রস্তথা বৈশয়
স্তেহপি যান্তি পরাং গতিম্
যদিও আমরা সাধারণত স্ত্রীলোকেদের শুদ্র এবং বৈশ্যদের নিম্নশ্রেণীর বলে গণ্য করি, কিন্তু যখন তাঁরা ভক্ত হন, ... সেই পুরুষ বা নারী আর নিম্নস্তরে থাকেন না। তেহপি যান্তি পরাং গতিম্ ভগবৎভক্তিযোগ এতোই চমৎকার যে, যে কেউ... সাধারণত নারীদের অল্প বুদ্ধিসম্পন্ন বলে ধরা হয় শুদ্রকে এবং বৈশ্যকেও অল্প বুদ্ধিসম্পন্ন ধরা হয় কিন্তু যদি তাঁরা কৃষ্ণভাবনামৃত গ্রহণ করেন, তিনি সবচেয়ে বুদ্ধিমান কৃষ্ণ যেই ভজে সেই বড় চতুর। সেটি শ্রীচৈতন্য চরিতামৃতের কথা যে ব্যক্তি কৃষ্ণভাবনামৃত গ্রহণ করেছেন, তিনি সবচেয়ে বুদ্ধিমান এবং শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু বলেছেন, গুরুকৃষ্ণকৃপায় পায় ভক্তিলতা বীজ (চৈতন্য চরিতামৃত মধ্য ১৯/১৫১) কোন ভাগ্যবান জীব। এই রূপে ব্রহ্মাণ্ড ভ্রমিতে কোন ভাগ্যবান জীব কৃষ্ণ ভাবনামৃত আন্দোলন কোন দুর্ভাগা শ্রেণীর মানুষদের জন্য নয়। না। এটি সবচেয়ে ভাগ্যবানদের জন্য উদ্দিষ্ট। যে ব্যক্তি কৃষ্ণভাবনামৃত গ্রহণ করেছেন, তিনি অত্যন্ত ভাগ্যবান বলে বুঝতে হবে। কারণ তিনি এমন কার্যক্রমের মধ্যে আছেন যার দ্বারা তাঁর জীবন সার্থক হবে
এই কারণে যিনি কৃষ্ণ ভাবনাময় হয়ে তাঁর কর্তব্যকর্ম পালন করছেন তিনি সবচেয়ে ভাগ্যবান, সবচেয়ে আদর্শ ব্যক্তি। সেই কথা কুন্তীদেবী বিনয় সহকারে বলেছেন যদিও তিনি স্ত্রীদেহে ছিলেন, কিন্তু তিনি ভক্ত ছিলেন তিনি কোন সাধারণ অল্পবুদ্ধিসম্পন্ন স্ত্রীলোক ছিলেন না, তিনি সবচেয়ে... তিনি শ্রীকৃষ্ণকে চিনতে পেরেছিলেন যে তিনি পরমেশ্বর ভগবান। "যদি তিনি জাগতিকভাবে আমার কাছে এসেছেন আমার ভ্রাতুষ্পুত্র হিসেবে আমাকে সম্মান জানাতে, কিন্তু তিনি স্বয়ং পরমেশ্বর ভগবান" তাই পূর্ববর্তী শ্লোকে তিনি বলেছেন, অলক্ষ্যম্ সর্বভূতানাম্ অন্তঃবহিঃ অবস্থিতম্ (ভাগবত ১/৮/১৮) "আপনি সাধারণ মানুষদের দৃষ্টির অগোচর। যদিও আপনি সকলের অভ্যন্তরে ও বাইরে অবস্থিত"। আরেকটি শ্লোকেও, ন লক্ষ্যসে মূঢ়-দৃশা (ভাগবত ১/৮/১৯) "বুদ্ধিহীন ও মূর্খেরা আমাকে দেখতে পারে না"। তার মানে কুন্তীদেবী তাঁকে দেখেছিলেন। যদি তিনি কৃষ্ণকে যথার্থভাবে দর্শন করতে পারেন নি, তাহলে তিনি কীভাবে এই কথা বলতেন যে, ন লক্ষ্যসে মূঢ়-দৃশা ? এবং তিনি বলেছেন প্রকৃতে পরম্, "আপনি এই জড় সৃষ্টির অতীত"
তাই এখানেও তিনি তাঁর দৈন্যভাব প্রকাশ করছেন এই দৈন্যভাব ভগবৎসেবার জন্য অতি উত্তম। তাই শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন, তৃণাদ্ অপি সুনীচেন তরোরপি সহিষ্ণুনা তৃণের থেকেও সুনীচ এবং তরুর থেকেই সহনশীল হতে হবে, যদি পারমার্থিক জীবনে উন্নতি করতে চাই। কারণ অনেক অনেক প্রতিবন্ধকতা আসবে কারণ মায়া... আমরা বাস করছি... ঠিক যেমন সমুদ্রের মতো। তাই সমুদ্রে তুমি কোন শান্তিপূর্ণ অবস্থা আশা করতে পার না। তা সবসময়ই প্রচণ্ড ভয়ংকর অবস্থায় থাকে। এমনকি বড় বড় জাহাজেও অবস্থা খুব একটা ভাল অবস্থায় থাকে না যে কোন মুহূর্তেই এখানে দুর্ধর্ষ ঢেউ থাকবে। তাই জড় জগতে তোমাকে সর্বদা বিপদ প্রত্যাশা করতেই হবে এই জড় জগতে তুমি খুব শান্তিপূর্ণ জীবন আশা করতে পার না পদম্ পদম্ যদ্বিপদাম্ (ভাগবত ১০/১৪/৫৮) শাস্ত্র বলছেন, প্রতি পদে পদেই এখানে বিপদ। কিন্তু যদি ভক্ত হয়ে যাও, তাহলে তুমি এর থেকে উত্তীর্ণ হতে পারবে। মায়ামেতাম্ তরন্তি তে (গীতা ৭/১৪)