BN/Prabhupada 0898 - যেহেতু আমি ভক্ত হয়ে গেছি, তাই আমার কোন বিপদ থাকবে না, ভোগান্তি থাকবে না। না



730417 - Lecture SB 01.08.25 - Los Angeles

প্রভুপাদঃ কৃষ্ণ ভাবনামৃত কোন ধরণের পরিস্থিতির কারণেই বিচলিত হবে না এমন কি অত্যন্ত কঠিন ভোগান্তি থাকলেও না। সেটিই কুন্তীদেবীর উপদেশ। কুন্তীদেবী বিপদকে স্বাগত জানিয়েছেন , বিপদ সন্তুঃ তত্র ... দুঃখ থাকুক... কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ জয়ের পূর্বে পাণ্ডবেরা অনেক ধরণের বিপদের সম্মুখীন হয়েছিলেন। আগের শ্লোকেই তা আলোচনা হয়েছে কখনও তাঁদেরকে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল, কখনও বা লাক্ষাগৃহে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করা হয়েছিল। কখনও কখনও বড় বড় অসুর, রাক্ষস, যোদ্ধাদের সাথে যুদ্ধ করতে হয়েছে প্রত্যেক বার... তাঁরা রাজ্য হারিয়েছিলেন, স্ত্রীর অপমান সইতে হয়েছে, তাঁদের সম্মান হারিয়েছিলেন বনে পাঠাল হল, এইভাবে বিপদে পরিপূর্ণ। কিন্তু এই সমস্ত বিপদের সময় কৃষ্ণ তাঁদের সাথে ছিলেন, যখন দ্রৌপদির বস্ত্রহরণ করার চেষ্টা হয়েছিল, শ্রীকৃষ্ণ তাঁকে বস্ত্র সরবরাহ করেছেন শ্রীকৃষ্ণ সর্বদাই তাঁদের সঙ্গে ছিলেন।

তাই ভীষ্মদেব মৃত্যুর সময়... তিনি ছিলেন পাণ্ডবদের পিতামহ। যখন পাণ্ডবেরা তাঁর মৃত্যুশয্যায় তাঁকে দেখতে এলেন তিনি কান্না করে বলছিলেনঃ "আমার এই পৌত্ররা সকলেই অত্যন্ত ধর্মপরায়ণ মহারাজ যুধিষ্ঠির ছিলেন সবচেয়ে ধার্মিক তাঁকে বলা হত ধর্মরাজ, ধার্মিকতার রাজা। তিনি ছিলেন সকলের বড় ভাই এবং ভীম ও অর্জুন ছিলেন মহান যোদ্ধা তাঁরা যুদ্ধে হাজার হাজার লোক মারতে পারতেন। এতোই শক্তিশালী ছিলেন সেখানে যুধিষ্ঠির ছিলেন, ভীম ছিলেন অর্জুন ছিলেন, আর দ্রৌপদী সাক্ষাৎ লক্ষ্মীর প্রকাশ এমন একটা বর ছিল যে যেখানে দ্রৌপদী থাকবেন, সেখানে কোন আহারের অভাব পড়বে না। এইভাবে তাঁদের সকলে মিলে এতোই ভাল একটা সম্মিলন ছিল এবং তদুপরি শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং তাঁদের সাথে ছিলেন, তারপরও তাঁদের ভুগতে হয়েছে" এইভাবে ভীষ্মদেব কাঁদতে লাগলেন, "আমি জানি না কৃষ্ণের কি আয়োজন যে, এতো ধার্মিক মানুষদের, এইরকম ভক্তদের, তাঁদের এতো দুঃখ ভোগ করতে হয়েছে" তাই কখনও এটা ভাববে না যে, আমি ভক্ত হয়ে গেছি, তাই আমার আর কোন দুঃখ থাকবে না, বিপদ থাকবে না"। প্রহ্লাদ মহারাজ অনেক ভোগান্তি নিয়েছেন। পাণ্ডবেরা কত দুঃখ ভোগ করেছেন। হরিদাস ঠাকুর এত দুঃখ ভোগ করেছেন। কিন্তু আমাদের সেই দুঃখগুলোর দ্বারা বিচলিত হওয়া উচিৎ নয়। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস থাকা উচিৎ যে, "শ্রীকৃষ্ণ রয়েছেন, তিনি আমাকে রক্ষা করবেন"। কৌন্তেয় প্রতিজানীহি ন মে ভক্তাঃ প্রণশ্যতি (গীতা ৯/৩১) শ্রীকৃষ্ণ ছাড়া আর কারও আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা কর না।

সর্বদা কৃষ্ণের শরণ নাও। ভগবান বলেছেন, ন মে ভক্তাঃ প্রণশ্যতি । "হে অর্জুন, তুমি দৃপ্তকণ্ঠে ঘোষণা করতে পার যে আমার ভক্তের কখনও বিনাশ নেই" কেন অর্জুনকে দিয়ে এই ঘোষণা করানো হল? তিনি নিজে কেন ঘোষণা করলেন না? এর মধ্যে কারণ আছে যদি কৃষ্ণ এই প্রতিজ্ঞা করেন, কখনও বা এটা ভেঙ্গে যেতে পারে, কেননা কখনও কখনও দেখা গেছে যে ভগবান কৃষ্ণ তাঁর নিজের প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করেছেন কিন্তু যদি তাঁর ভক্ত প্রতিজ্ঞা করেন তাহলে তা কখনও ভাঙ্গবে না। সেটাই কৃষ্ণের কাজ "ওহ্‌ আমার ভক্ত ঘোষণা করেছে, তাহলে তো আমাকে তা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে"। সেটাই শ্রীকৃষ্ণের অবস্থান। তিনি তাঁর ভক্তের প্রতি এতোটাই আসক্ত। তাই তিনি বলেছেন, "তুমি ঘোষণা কর, যদি আমি করি তাহলে লোকেরা তা বিশ্বাস নাও করতে পারে"। কিন্তু যদি তুমি ঘোষণা কর, তাহলে তাঁরা তা বিশ্বাস করবে কারণ তুমি ভক্ত। তোমার ঘোষণা কখনই ... "

যস্য প্রসাদাদ্‌ ভগবৎ প্রসাদঃ। শ্রীকৃষ্ণ দেখতে চান যেঃ "আমার ভক্তের প্রতিজ্ঞা পূর্ণ হয়েছে"। আমার প্রতিজ্ঞা পূর্ণ নাও হতে পারে, ভেঙ্গেও যেতে পারে।" এই হচ্ছে কৃষ্ণ ভাবনামৃত। আমাদের সবসময় কৃষ্ণভাবনামৃতের সাথে যুক্ত থাকতে হবে, সমস্ত পরিস্থিতিতে, এমনকি সবচাইতে বিপদজনক পরিস্থিতিতেও শ্রীকৃষ্ণের চরণে আমাদের বিশ্বাস থাকতেই হবে। তাহলে আর কোন বিপদ থাকবে না।

অনেক ধন্যবাদ।

ভক্তবৃন্দঃ জয় শ্রীল প্রভুপাদ।