BN/Prabhupada 0900 - ইন্দ্রিয়কে যখন ইন্দ্রিয়ের সেবায় নিযুক্ত করা হয়, তখন সেটি মায়া



730415 - Lecture SB 01.08.23 - Los Angeles

ইন্দ্রিয়কে যখন ইন্দ্রিয়ের সেবায় নিযুক্ত করা হয়, তখন সেটি মায়া আমি দাবী করছি "এটি আমার হাত, আমার পা, আমার কান" এমনকি ছোট শিশুরাও বলে। ওদের জিজ্ঞাসা কর, "এটি কি? এটি আমার হাত"। আমরা দাবী করতে পারি, কিন্তু আসলে এটি আমার হাত নয়। এটি আমাকে দেয়া হয়েছে। কারণ আমি আমার হাতকে অনেকভাবে ব্যবহার করতে চেয়েছি তাই কৃষ্ণ আমাকে এই হাতগুলো দিয়েছেনঃ "ঠিক আছে, এই নাও। ব্যবহার কর।" তাই এটি ভগবানের উপহার

তাই একজন সুস্থ মানুষ সর্বদা সচেতন যে, "আমার অধিকারে যা কিছুই আসে না কেন দেহ, ইন্দ্রিয়, এইসব কিছু আসলে আমার নয়। এই অধিকারগুলো আমাকে দেয়া হয়েছে ব্যবহার করার জন্য তাই যদি চরমে যদি সবকিছুই কৃষ্ণের, তাহলে আমি কেন সেসব তাঁর সেবাতেই লাগাচ্ছি না?" এই হচ্ছে কৃষ্ণ ভাবনামৃত। সেটি হচ্ছে কৃষ্ণভাবনামৃত। সেটি হচ্ছে বুদ্ধিমত্তা যদি সত্যিই এই ইন্দ্রিয়গুলো আমার ব্যবহারের জন্য, আমার ভোগের জন্য দেয়া হত কিন্তু আসলে তা সব কৃষ্ণের ... মমৈবাংশো জীবভূতাঃ (গীতা ১৫/৭) সকলেই কৃষ্ণের অংশ। তাই সবার ইন্দ্রিয় প্রকৃতপক্ষে কৃষ্ণের। তাই এই ইন্দ্রিয়গুলো যখন শ্রীকৃষ্ণের সেবায় নিযুক্ত করা হয়, সেটি হচ্ছে জীবনের সার্থকতা। আর যতক্ষণ তা আমার সেবায় লাগানো হয়, তা মায়া। তাই ভক্তি মানে হৃষীকেন হৃষীকেশ সেবনম্‌ ভক্তিরুচ্যতে (চৈতন্য চরিতামৃত মধ্য ১৯.১৭০) হৃষীকেন, ইন্দ্রিয়ের দ্বারা। হৃষীকেশ সেবনম্‌... যখন তুমি হৃষীকেশের সেবা কর, ইন্দ্রিয়ের প্রকৃত প্রভুর সেবা কর, সেটিই হচ্ছে ভক্তি ভক্তির খুব সরল সংজ্ঞা দেয়া হচ্ছে হৃষীকেন হৃষীকেশ সেবনম্‌ (চৈতন্য চরিতামৃত মধ্য ১৯/১৭০) হৃষীকেশ সেবনম্‌। হৃষীক সেবনম্‌ নয়। হৃষীক মানে ইন্দ্রিয়। যখন ইন্দ্রিয়গুলি ইন্দ্রিয়তৃপ্তির কাজে লাগানো হয়, সেটি মায়া। আর যখন ইন্দ্রিয়গুলো ইন্দ্রিয়াধিপতির সেবায় যুক্ত হয়, তখন তা হচ্ছে ভক্তি খুবই সরল সংজ্ঞা। যে কেউই তা বুঝতে পারে।

সাধারণত এই জগতে প্রত্যেকেই তাঁর ইন্দ্রিয়গুলোকে ইন্দ্রিয়ের তৃপ্তির কাজে ব্যবহার করছে ব্যাস্‌। সেটাই তাঁদের বন্ধন। সেটি মায়া। এবং যখন সে কৃষ্ণ ভাবনামৃতে আসে, শুদ্ধ হয়, যখন সে বুঝতে পারে যে, এই ইন্দ্রিয়গুলো আসলে ইন্দ্রিয়ের অধিপতির সেবায় লাগানোর জন্য, তখনই সে মুক্ত। মুক্ত পুরুষ। ইহার্যস্য হরের্দাস্যে কর্মণা মনসা বাচা যখন কেউ এই অবস্থানে আসতে পারে যে, "আমার ইন্দ্রিয়গুলো আসলে ইন্দ্রিয়ের অধিপতি, হৃষীকেশের সেবায় লাগানোর জন্য..." ইন্দ্রিয়ের স্বামী আমাদের হৃদয়ের অভ্যন্তরে বসে আছেন ভগবদ্গীতায় প্রতিপন্ন হয়েছে, সর্বস্য চাহম্‌ হৃদি সন্নিবিষ্টঃ "আমি সকলের হৃদয়ে উপবিষ্ট" মত্তঃ স্মৃতিঃ জ্ঞানম্‌ অপোহনম্‌ চ (গীতা ১৫/১৫) "আমার থেকেই স্মৃতি, বিস্মৃতি, জ্ঞান আসে" এইরকম কেন? কারণ কৃষ্ণ এতোই করুণাময় যে... আমি যদি আমার ইন্দ্রিয়গুলোকে এক ভাবে ব্যবহার করতে চাই. - আমার ইন্দ্রিয় নয়, এগুলো কৃষ্ণের, তাঁর দেয়া - তাই কৃষ্ণ এই সুযোগ দিয়েছেনঃ "ঠিক আছে, ব্যবহার কর" ধর, আমার জিহ্বা রয়েছে। যদি আমি চাই, "কৃষ্ণ, আমি বিষ্ঠা খেতে চাই। আমি বিষ্ঠার স্বাদ পেতে চাই", "হ্যাঁ" কৃষ্ণ বলবেন, "ঠিক আছে, এই শুকরের দেহ গ্রহণ কর এবং বিষ্ঠা খাও।" প্রভু রয়েছেন, শ্রীকৃষ্ণ।

তাই কৃষ্ণ বলেছেন, মত্তঃ স্মৃতিঃ জ্ঞানম্‌ অপোহনম্‌ চ (গীতা ১৫/১৫) তিনি এই দেহ দিয়েছেন, তোমাকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন "হে জীব, তুমি বিষ্ঠা খেতে চেয়েছিলে? এখন তুমি একটি যথার্থ দেহ পেয়েছ, নাও এখন এটার ব্যবহার কর। এই বিষ্ঠা খাও"। ঠিক তেমনই, তুমি যদি দেবতা হতে চাও, সেটিও কৃষ্ণ তোমাকে সুযোগ দেবে। যে কোন কিছু... ৮৪ লক্ষ প্রজাতির জীবন আছে যদি তোমার দেহ এক ধরণের দেহে যুক্ত করতে চাও কৃষ্ণ তোমাকে সেই সুযোগ দিচ্ছেন, "এসো, এই হচ্ছে তোমাদের দেহ। নাও।" কিন্তু আমরা আমাদের ইন্দ্রিয়গুলো ব্যবহার করে করে ক্লান্ত হয়ে পড়ি শেষ পর্যন্ত আমরা মূর্খ হয়ে পড়ি। তাই শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, সর্বধর্মান্‌ পরিত্যাজ্য মামেকম্‌ শরণম্‌ (গীতা ১৮/৬৬) "এরকম কোর না, তোমার ইন্দ্রিয় আমার সেবা করার জন্য। তুমি এই ইন্দ্রিয়ের অপব্যবহার করছ। আর এই অপব্যবহারের কারণে তুমি এক দেহ থেকে অন্য দেহে আবদ্ধ হয়ে পড়ছ। তাই এই ক্লান্তিকর ভোগ থেকে মুক্তি পেতে অথবা একটার পর আরেকটা দেহ, তারপর, আরেকটা, আবার আরেকটা... এই জড় জগতেই তা চলতে থাকবে। তুমি যদি এই ইন্দ্রিয়তৃপ্তির পন্থা ত্যাগ কর এবং আমার কাছে শরণাগত হও, তাহলে তুমি রক্ষা পাবে।" এই হচ্ছে কৃষ্ণ ভাবনামৃত