BN/Prabhupada 0925 - মদন সবাইকে আকৃষ্ট করে। আর শ্রীকৃষ্ণ মদনকে আকৃষ্ট করেন



730423 - Lecture SB 01.08.31 - Los Angeles

অনুবাদঃ যশোদা যখন তোমাকে বন্ধন করার জন্য রজ্জু গ্রহণ করেছিলেন, তখন তোমার নয়নদ্বয় অশ্রুর দ্বারা প্লাবিত হয়েছিল, এবং তা তোমার নয়নের অঞ্জন দ্বারা বিধৌত করেছিল। স্বয়ং ভয়েরও ভয়স্বরূপ তুমি যখন ভীত হয়েছিলে, তোমার সেই অবস্থা এখনও আমার কাছে বিমোহিতকর।"

প্রভুপাদঃ এটাও শ্রীকৃষ্ণের আরেকটি ঐশ্বর্য। কৃষ্ণ ছয়টি ঐশ্বর্যে পূর্ণ। এই ঐশ্বর্যটি হচ্ছে তাঁর সৌন্দর্য, সৌন্দর্যের ঐশ্বর্য। শ্রীকৃষ্ণের ছয় প্রকারঃ সমস্ত ধন, সমস্ত বীর্য, সমস্ত জ্ঞান, সমস্ত যশ, সমস্ত সৌন্দর্য ও সমস্ত বৈরাগ্য। তো এটাই হচ্ছে শ্রীকৃষ্ণের সৌন্দর্য। কৃষ্ণ সকলকেই চান...

ঠিক যেমন, আমরা শ্রদ্ধা ও সম্ভ্রম সহকারে ভগবান কৃষ্ণকে আমাদের প্রণাম অর্পণ করছি কিন্তু এখানে কেউই কৃষ্ণকে রজ্জু দ্বারা বন্ধন করতে আসে না। "কৃষ্ণ, তুমি একটা অপরাধী, আমি তোমাকে বাঁধব।" কেউই এই মনোভাবে আসে না। (হাসি) সেটা ভগবানের শুদ্ধ ভক্তদের আরেকটি বিশেষ দিক। হ্যাঁ, কৃষ্ণ তাই চান। কারণ তিনি ঐশ্বর্যে পরিপূর্ণ... এটাও ভগবানের আরেকটা ঐশ্বর্য। অণোরনীয়ান্‌ মহতো মহীয়ান্‌ সবচেয়ে বৃহত্তম থেকেও বৃহত্তর এবং সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম থেকেও ক্ষুদ্রতর।

তাই কুন্তিদেবী শ্রীকৃষ্ণের সেই ঐশ্বর্যের কথা ভাবছেন কিন্তু তিনি যশোদার মতো ভূমিকা নেয়ার সাহস করেন নি। তা সম্ভব নয়। যদিও কুন্তিদেবী শ্রীকৃষ্ণের পিসিমা, কিন্তু তিনি সেই রকম কোন সুযোগ পান নি... এই সুযোগ বিশেষভাবে যশোদামাতাকে দেয়া হয়েছে। কারণ তিনি এতোটাই উন্নত ভক্ত যে তিনি পরমেশ্বর ভগবানকেও শাসন করার অধিকার রাখেন সেটি তাঁর বিশেষ সৌভাগ্য। তাই কুন্তিদেবী তাঁর সেই বিশেষ সৌভাগ্যের স্মরণ করছেন যে তিনি কতোটাই সৌভাগ্যবতী এবং বিশেষ সুযোগপ্রাপ্ত যে তিনি ভগবানকে পর্যন্ত ধমক দিতে পারেন যাকে স্বয়ং ভয়ও ভয় পায়। ভীরপি যদ্‌ বিভেতি (ভাগবত ১/৮/৩১)। ভগবানকে কে ভয় পায় না? সবাই ভয় পায়। কিন্তু কৃষ্ণ নিজে যশোদামায়ীকে ভয় পান। এটিই শ্রীকৃষ্ণের চমৎকার বিশেষত্ব।

ঠিক যেমন কৃষ্ণের আরেক নাম হচ্ছে মদনমোহন। মদন মানে কামদেব, কামদেব সবাইকে মোহিত করেন। কামদেব। আর শ্রীকৃষ্ণ কামদেবকে মোহিত করেন। তাই তাঁর নাম মদনমোহন। তিনি এতোই সুন্দর যে এমনকি কামদেবও তাঁর রূপে মোহিত হন। কিন্তু আবার অন্য দিকে, কৃষ্ণ, যদিও তিনি অত্যন্ত সুন্দর যে তিনি কামদেবকেও তাঁর রূপে মোহিত করেন, তারপরও তিনি শ্রীমতী রাধারাণীর রূপে মোহিত হন। তাই শ্রীমতী রাধারাণীর নাম মদন-মোহন-মোহিনী। কৃষ্ণ কামদেবকে তাঁর রূপে মোহিত করেন এবং রাধারাণী মদনমোহনকে তাঁর রূপে মোহিত করেন। এগুলো কৃষ্ণভাবনামৃতের উন্নত স্তরের চিন্তা ভাবনা। এটি কোন গল্প অথবা কল্পনা নয়। এটি বাস্তব। এগুলো বাস্তব। আর প্রত্যেক ভক্ত এই সুযোগ পেতে পারে যদি সে আসলেই উন্নত হয় যদি তুমি...

ভেব না যে যেই বিশেষ সুযোগ মা যশোদাকে দেয়া হয়েছিল যদি ঠিক সেইরকমই নাও হয়, সবাই সেই সুবিধা পেতে পারে। যদি তুমি শ্রীকৃষ্ণকে তোমার পুত্ররূপে ভালবাস, তাহলেই তুমি সেই সুযোগ পাবে কারণ মা... সবচেয়ে বেশি ভালবাসেন। এই জগতে মায়ের ভালবাসার কোন তুলনা হয় না বিনিময়ে কিছু পাবার জন্য নয়। এমনকি এই জড় জগতেও মা তাঁর সন্তানকে কোন কিছু পাবার প্রত্যাশা না করেই ভালবাসে, সাধারণত। যদিও এই জগত এতোটাই কলুষিত যে এখানে এমনকি কখনও কখনও মায়েরাও ভাবে যে, "আমার সন্তান বড় হবে, অনেক ধনী হবে, সে অর্থ উপার্জন করবে, আর আমি তা পাব"। কিছুটা বিনিময়ের অনুভূতি থাকে কিন্তু কৃষ্ণকে ভালবাসার সময় এমন কোন অনুভূতি থাকে না। তা হচ্ছে শুদ্ধ অবিমিশ্র প্রেম। অন্যাভিলাষিতা শুন্যম্‌ (ভক্তিরসামৃতসিন্ধু ১/১/১১), সবধরনের জাগতিক বাসনা থেকে মুক্ত