BN/Prabhupada 0991 - যুগল-পিরিতিঃ রাধা কৃষ্ণের প্রেমময় ব্যবহার



740724 - Lecture SB 01.02.20 - New York

ঠিক গোপীদের মত, সবথেকে উন্নত স্তরের ভক্তগণ, তাদের একমাত্র কাজ ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে সন্তুষ্ট করা। সেটাই ঠিক। তাই চৈতন্য মহাপ্রভু বলেছেন, রম্যা কাচিদ্‌ উপাসনা ব্রজ-বধূবর্গেন যা কল্পিতা (চৈতন্য মঞ্জুষা)। গোপীরা যে প্রক্রিয়াতে আরাধনা করেছিলেন, তার চেয়ে উন্নত আর কিছু হতে পারে না। তারা কোন কিছুর পরোয়া করতেন না। গোপীরা, তাদের মধ্যে কেউ গৃহস্থালীর কাজে নিযুক্ত ছিল, কেউ তাঁর স্বামীর সাথে কথা বলছিলেন, কেউ বাচ্চাদের যত্ন করছিলেন, কেউ দুধ জ্বাল দিচ্ছিলেন। কৃষ্ণের বংশী ধ্বনি আসার সাথে সাথেই সব কিছু ফেলে রেখে তারা ছুটে যেতেন। "তুমি কোথায় যাচ্ছ?" পতি, ভাই, পিতাঃ "তুমি কোথায় যাচ্ছ?" "না, তাতে কিছু যায় আসে না। কৃষ্ণের বাঁশী বাজছে; আমরা কিছু জানি না।" এটাই ভক্তি, উচ্চতম, সবথেকে উন্নত। চৈতন্য মহাপ্রভু... চৈতন্য মহাপ্রভু অত্যন্ত কঠোর ছিলেন যে কোন মহিলা তার খুব নিকটে প্রণাম জানাতে আসতে পারতেন না। একটু দূর থেকে করতেন। চৈতন্য মহাপ্রভু, সন্ন্যাসী হিসেবে, অত্যন্ত কঠোর ছিলেন। অবশ্যই, সেটাই নীতি হওয়া উচিত, কিন্তু বিশেষ করে তোমাদের দেশে, এটি খুব কঠোরভাবে পালন করা যায় না। তবে কমপক্ষে একজনকে খুব সতর্ক হওয়া উচিত। তাই চৈতন্য মহাপ্রভু এত কঠোর ছিলেন - তিনি শ্রীকৃষ্ণের প্রতি গোপীদের ভালবাসার প্রশংসা করেছেন। তাই গোপীদের শ্রীকৃষ্ণের প্রতি ভালবাসা কোন সাধারণ কিছু নয়।এতি চিন্ময়। অন্যথায়, চৈতন্য মহাপ্রভু কীভাবে প্রশংসা করেন? শুকদেব গোস্বামী কিভাবে কৃষ্ণলীলার প্রশংসা করেছিলেন? এই কৃষ্ণ-লীলা কোন সাধারণ জিনিস নয়। এটা পারমার্থিক। সুতরাং যতক্ষণ না কেউ দৃঢ়ভাবে ভক্তিযোগ পালন করছে, তাদের ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সাথে গোপীদের লীলা বুঝতে চেষ্টা করা উচিত নয়। সেটা ভয়ঙ্কর হবে। নরোত্তম দাস ঠাকুর বলেছেন,

রুপ-রঘুনাথ-পদে হবে আকুতি
কবে হাম বুঝাব সে যুগল-পিরিতি
( লালসাময়ি প্রার্থনা ৪)

যুগল-পিরিতিঃ রাধা কৃষ্ণের প্রেমময়ী ব্যবহার। যুগল, যুগল মানে "দম্পতি"; পিরিতি মানে "ভালবাসা"। তাই নরোত্তম দাস ঠাকুর, মহান আচার্য, তিনি বলেছেন, "কখন আমি বুঝতে পারব?" এমন নয় যে "আমি সবকিছু বুঝতে পেরেছি।" না "আমি সবকিছু বুঝতে পেরেছি।" এটিই ভাল। এটিই বিজ্ঞান, ভগবৎ-তত্ত্ব-বিজ্ঞানম। তাই আমাদের এই বিজ্ঞান বুঝতে অত্যন্ত যত্নবান হতে হবে। এবং এই বিজ্ঞান বোঝা যাবে গুরুদেবের আশীর্বাদে। তাই বিশ্বনাথ চক্রবর্তী ঠাকুর বলেছেন, যস্য প্রসাদাদ্‌ প্রথমে তোমার গুরুদেবকে সন্তুষ্ট করতে চেষ্টা কর। তারপর বুঝতে চেষ্টা কর। সুতরাং এটি একটি মহান বিজ্ঞান।

তদ বিদ্ধি প্রণিপাতেন
পরিপ্রশ্নেন সেবয়া
উপদেক্ষ্যন্তি তে জ্ঞানম্‌
জ্ঞানীনস্তত্ত্ব দর্শিনঃ
(গীতা ৪.৩৪)।

এটি প্রক্রিয়া। প্রথমত আত্মসমর্পণ করঃ "গুরুদেব, আমি আপনার কাছে সমর্পণ করব।" "ঠিক আছে." "এখন আমি এটা পছন্দ করি না।" এটা কি? এটা কোন ধরণের আত্মসমর্পণ? "এখন আমি এটা পছন্দ করি না"? তার মানে কোন আত্মসমর্পণ ছিল না। আত্মসমর্পণ মানে এই নয়, "এখন আমি আত্মসমর্পণ করি, এবং যদি আপনি আমাকে খুশি না করেন, যদি আপনি আমার ইন্দ্রিয়কে সন্তুষ্ট না করেন, তাহলে আমি পছন্দ করি না। " সেটা আত্মসমর্পণ নয়। শরণাগতি, ভক্তিবিনোদ ঠাকুর উদাহরণ দিয়েছেন : কুকুর। খুব ভাল উদাহরণ। কুকুর পুরোপুরি প্রভুর কাছে আত্মসমর্পণ করে। এমনকি তার প্রভু তাকে হত্যা করলেও, সে প্রতিবাদ করে না। এটি উদাহরণ।

বৈষ্ণব ঠাকুর, তোমার কুকুর
বলিয়া জানহ মোরে।

"বৈষ্ণব ঠাকুর, আমার প্রিয়, আমার শ্রদ্ধেয় গুরুদেব, আপনি বৈষ্ণব শিরোমণি। দয়া করে আমাকে আপনার কুকুর রূপে গ্রহণ করুন।" সেটা শরণাগতি।

তাই পূর্ণ শরনাগতি শুরু হয়,

ময্যাসক্তমনাঃ পার্থ
যোগং যুঞ্জন্মদাশ্রয়ঃ
(গীতা ৭.১)

আশ্রয়। আশ্রয় লইয়া ভজে কৃষ্ণ তারে নাহি ত্যাজে (নরোত্তম দাস ঠাকুর)। যিনি ভক্তিমূলক সেবা সম্পাদন করেন, সৎ গুরুর আশ্রয়ে থেকে, শ্রীকৃষ্ণ তাকে কখনো ছেড়ে দেবেন না। তিনি তাকে গ্রহণ করবেন। আশ্রয় লইয়া ভজে কৃষ্ণ তারে নাহি ত্যাগে আর সব মরে অকারণ(?) অন্যরা, তারা কেবল তাদের সময় নষ্ট করবে, এটাই। সুতরাং এটি হল ভগবদ-ভক্তি-যোগ। আদৌ গুর্বাশ্রয়ম্‌ সদধর্মপৃচ্ছা, সাধুমার্গঅনুগমনম্‌ (ভক্তিরসামৃত সিন্ধু ১.১.৭৪)।