BN/Prabhupada 1068 - বিভিন্ন গুণ অনুসারে তিন প্রকারের কর্ম সাধিত হয়



660219-20 - Lecture BG Introduction - New York

বিভিন্ন গুণ অনুসারে তিন প্রকারের কর্ম সাধিত হয় পরমেশ্বর ভগবান হচ্ছে পূর্ণ(পূর্ণম্), তার জড়া প্রকৃতির নিয়মের দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার কোন প্রশ্নই নেই। তাই ভগবানকে জানার জন্য যথেষ্ট বুদ্ধিমান হওয়া উচিত, কেউই জড় ব্রহ্মাণ্ডের কোন কিছুর মালিক নয়। এটাই ভগবদ্গীতাতে বর্ণনা করা হয়েছে: অহং সর্বস্য প্রভবো মত্তঃ সর্বং প্রবর্ততে। ইতি মত্বা ভজন্তে মাং বুধা ভাবসমন্বিতাঃ।। (BG 10.8)।

পরমেশ্বর ভগবানই আদি স্রষ্টা। ব্রহ্মাকে তিনিই সৃষ্টি করেছেন। তিনিই সৃষ্টা… এটাই বর্ণনা করা হয়েছে, তিনিই ব্রহ্মাকে সৃষ্টি করেছেন। ভগবদ্গীতার একাদশ অধ্যায়ে ভগবানকে প্রপিতামহ বলে বর্ণনা করা হয়েছে।(ভ.গী. ১১.৩৯) কারণ ব্রহ্মাকে পিতামহ বলে সম্বোধন করা হয়েছে, কিন্তু তিনি পিতামহের ও স্রষ্টা। কাজেই আমাদের কখনই মনে করা উচিত নয় আমরা কোন কিছুর মালিক, তাই জীবন ধারণ করার জন্য যেটুকু প্রয়োজন এবং আমাদের জন্য ‍যতটুকু নির্ধারিত করে রেখেছেন, ঠিক ততটুকুই আমাদের গ্রহণ করা উচিত। আমাদের জন্য ভগবান যতটুকু নির্ধারণ করে রেখেছেন, তা কিভাবে সদ্ব্যবহার করতে হবে তার অনেক সুন্দর সুন্দর উদাহরণ আছে। ভগবদ্গীতাতে এর ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের প্রারম্ভে অর্জুন ঠিক করেন তিনি যুদ্ধ করবেন না। এটি ছিল তাঁর নিজের সিদ্ধান্ত। অর্জুন পরমেশ্বর ভগবানকে বলেন যে, সেই যুদ্ধে নিজের আত্মীয়-পরিজনদের হত্যা করে রাজ্যভোগ করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। দেহাত্মবুদ্ধির ফলে তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি মনে করেছিলেন যে, তাঁর প্রকৃত স্বরূপ হচ্ছে তাঁর দেহ, এবং তাঁর দেহজাত আত্মীয়-পরিজন, ‍ভাই, ভাইপো ভগ্নীপতি, পিতামহ প্রভৃতিকে তিনি তাঁর আপনজন বলে মনে করেছিলেন। তাই তিনি তাঁর দেহের দবিগুলি মেটাতে চেয়েছিলেন। তাঁর ঐ ভ্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তন করার জন্যই ভগবান্‌ ভগবদ্গীতার দিব্যজ্ঞান তাঁকে দান করেন। এবং পরমেশ্বর ভগবানের পরিচালনায় যুদ্ধ করতে ব্রতী হন। এবং তিনি বললেন, করিষ্যে বচনং তব (ভ.গী. ১৮.৭৩)

এই পৃথিবীতে মানুষ কুকুর-বেড়ালের মতো ঝগড়া করে দিন কাটাবার জন্য আসেনি। তাকে তার বুদ্ধিমত্তা দিয়ে মানব-জীবনের যথার্থ উদ্দেশ্য সম্বন্ধে সচেতন হতে হবে এবং একটি পশুর মতো জীবন যাপন করা বর্জন করতে হবে। তার উচিত… মানুষকে যথার্থ মানব-জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য বোঝা উচিত। বৈদিক শাস্ত্র মানব-জীবনের যথার্থ উদ্দেশ্য সম্বন্ধে নির্দেশ দিচ্ছে, এবং বৈদিক জ্ঞানের সারাংশ ব্যক্ত হয়েছে ভগবদ্গীতাতে। বৈদিক সাহিত্য মানুষের জন্য পশুদের জন্য নয়। কোন পশু যখন অন্য পশুকে হত্যা করে, তাতে তার পাপ হয় না। কিন্তু মানুষ যদি তার বিকৃত রুচির তৃপ্তি সাধনের জন্য কোন পশুকে হত্যা করে. তখন সে প্রকৃতির নিয়ম ভঙ্গ করার অপরাধে অপরাধী হয়। ভগবদ্গীতাতে বিশদভাবে ব্যাখ্যা করে বলা হয়েছে যে, তিন রকমের কর্ম সাধিত হয় বিভিন্ন গুণ অনুসারে: সত্ত্বগুণের প্রভাবে কর্ম, রজোগুণের প্রভাবে কর্ম, তমোগুণের প্রভাবে কর্ম। তেমনি আহার্য বস্তুও তিন ধরনের আছে: সত্ত্বগুণের আহার, রজোগুণের আহার এবং তমোগুণের আহার। এই সবই পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করা আছে এবং যদি আমরা ভগবদ্গীতার এইসব নির্দেশ যথার্থভাবে কাজে লাগাই, তা হলে আমাদের সারা জীবন পবিত্র হয়ে উঠবে এবং পরিণামে আমরা পরম গন্তব্যস্থলে উপনীত হতে পারব। যদ্‌ গত্বা ন নিবর্তন্তে তদ্ধাম পরমং মম(ভ.গী. ১৫.৬)

ভগবদ্গীতাতে তাহাই বর্ণনা করা হয়েছে, যাহা জড় জগতের আকাশের উর্ধ্বে, সেই শাশ্বত অপ্রাকৃত জগৎ, এই পরম গন্তব্যস্থলের নাম সনাতন ধাম। এই জড় জগতের আকাশে, এই আবৃত আকাশে, আমরা যা দেখতে পাই সব কিছু অস্থায়ী। তাদের প্রকাশ হয়, কিছুকালের জন্য তারা অবস্থান করে, কিছু ফল প্রসব করে, ক্ষয় প্রাপ্ত হয় এবং তারপর এক সময় তারা অদৃশ্য হয় যায়। আপনি এই শরীরের দৃষ্টান্ত নিন, অথবা একটা ফল বা অন্য কিছু, শেষ পর্যন্ত সব কিছুই ধ্বংস প্রাপ্ত হবে। এই অস্থায়ী জড় জগতের অতীত আর একটি জগৎ আছে যার তথ্য দেওয়া হয়েছে, যে পরস্তস্মাত্তু ভাবঃ অন্যঃ (ভ.গী. ৮.২০)। অন্য একটি শ্বাশত, সনাতন প্রকৃতি আছে, ‍যাহা শ্বাশত। এবং জীব, জীবও সনাতন হিসাবে বর্ণিত হয়েছে। মমৈবাংশো জীবলোকে জীবভূতঃসনাতনঃ(ভ.গী. ১৫.৭)। সনাতন, সনাতন মানে শ্বাশত। এবং ভগবদ্গীতার একাদশ অধ্যায়ে বলা হয়েছে, ভগবান সনাতন। তাই ভগবানের সঙ্গে আমাদের অন্তরঙ্গ সম্পর্ক রয়েছে, এবং আমরা সকলে গুণগতভাবে এক… সনাতন ধাম, সনাতন ভগবান এবং সনাতন জীব, গুণগতভাবে এক। তাই ভগবদ্গীতার একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে আমাদের সনাতন বৃত্তিকে পুনর্জাগরিত করা বা সনাতন, এটাকেই বলা হয় সনাতন ধর্ম, বা জীবের সনাতন বৃত্তি। অস্থায়ীভাবে আমরা নানা কর্মে নিয়োজিত রয়েছি, এবং এই সমস্ত কর্ম শুদ্ধ হচ্ছে। যদি আমরা এই সমস্ত অস্থায়ী কর্ম বর্জন করতে পারি, সর্বধর্মান পরিত্যজ্য(ভ.গী. ১৮.৬৬) আর পরমেশ্বর ভগবানের নির্দেশ মতো কর্মভার গ্রহণ করি, এরই নাম পবিত্র জীবন।