BN/Prabhupada 0149 - কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলন মানে পরম পিতাকে খোঁজা
Tenth Anniversary Address -- Washington, D.C., July 6, 1976
সুতরাং এই কৃষ্ণ ভাবনামৃত আন্দোলন মানে পরম পিতাকে খোঁজা। পরম পিতা। এটা এই আন্দোলনের সমষ্টি এবং তত্ত্ব। যদি আমরা না জানি কে আমাদের পিতা, যেটা খুব ভাল অবস্থান নয়। অন্তত, ভারতে, এটি একটি রীতি, যদি কেউ তার বাবার নাম বলতে পারে না, তবে সে খুব সম্মানজনক নয়। এবং এটি আদালতের একটি পদ্ধতি যে আপনি আপনার নাম লিখুন, আপনাকে অবশ্যই আপনার বাবার নাম লিখতে হবে। এটা ভারতীয়, বৈদিক পদ্ধতি এবং নাম, তার নিজের নাম, তার পিতার নাম এবং তার গ্রামের নাম। এই তিনটি একসঙ্গে মিলিত। আমি মনে করি এই পদ্ধতি অন্যান্য দেশে প্রচলিত হতে পারে, কিন্তু ভারতে, এটাই পদ্ধতি। প্রথম নাম তার নিজের নাম, দ্বিতীয় নাম তার পিতার নাম, এবং তৃতীয় নামটি গ্রাম বা দেশ যেখানে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। এই পদ্ধতি। তাই বাবার ..., আমাদের পিতা কে তা অবশ্যই জানতে হবে এটাই কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলন। যদি আমরা আমাদের পিতাকে ভুলে গিয়ে থাকি, তাহলে এটা খুব ভাল অবস্থান নয়। এবং কি ধরনের পিতা? পরম ব্রহ্ম পরম ধাম (ভ.গী. ১০.১২) অনেক ধনী। দরিদ্র পিতা নয় যে তার সন্তানদের খাওয়াতে পারে না। এটা সেই ধরনের পিতা নয়। একো বহুনাম বিদধতি কামান। সেই পিতা খুব সমৃদ্ধ যে তিনি একা লক্ষ লক্ষ এবং কোটি কোটি জীবকে খাওয়াচ্ছে। আফ্রিকাতে হাজার এবং লক্ষ হাতি আছে। তিনি তাদের খাবার দিচ্ছেন। এবং এই ঘরে গর্ত আছে, সেখানে হতে পারে লক্ষ লক্ষ পিপঁড়ে আছে। তিনি তাদেরকেও খাবার দিচ্ছেন। একো যো বহুনাম্ বিদধতি কামান্। নিত্যো নিত্যানাম্ চেতনশ্চেতনানাম্ (কঠোপনিষদ ২.২.১৩) এই হচ্ছে বৈদিক নির্দেশ।
তাই মনুষ্য জীবন, এর মানে কে পিতা সেটা বোঝা, কি তার নিয়ম, কে ভগবান, আমাদের সঙ্গে তার সম্পর্ক কি? এই হচ্ছে বেদান্ত। বেদান্তের অর্থ এই নয় যে, কিছু অর্থহীন কথা বলা এবং পিতার সাথে কোন সম্পর্ক নেই। শ্রম এব হি কেবলম। যদি তুমি না জান কে তোমার পিতা...
- ধর্ম স্বনুষ্ঠিতাঃ পুংসম্
- বিষ্বকসেন কথাসু যঃ
- নোৎপাদয়েৎ যদি রতিং
- শ্রম এব হি কেবলম
এমনটা চাই না। কৃষ্ণ বলেছেন, বেদেশ্চ সর্বৈ অহমেব বেদ্য (ভ.গী. ১৫.১৫) তাই আপনি বেদান্তিক হন, এটা খুব ভাল। বেদান্তের প্রথমে বলা হয়েছে যে পরম সত্য হচ্ছে যেখান থেকে সব কিছু আসছে। অথাতো ব্রহ্ম জিজ্ঞাসা। এটাই প্রথম। এখন মানুষ্য জীবন মানে পরম সত্যকে জানা, জিজ্ঞাসা। একজনের উচিত পরম সন্মন্ধে অনুসন্ধান করা। এটা মানুষ্য জীবন, পরম সত্যকে খোঁজা। তাই পরের সূত্র অবিলম্বে বলছেন যে পরম সত্য হচ্ছে যে সবকিছুর উৎস। আর সবকিছু কি? আমরা খুঁজে পাই দুই জিনিসঃ সজীব এবং র্নিজীব। ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা। তাদের মধ্যে কিছু সজীব এবং কিছু র্নিজীব। দুটো জিনিস। এখন আমরা বিভিন্ন ধরনের বিস্তার করতে পারি। এটা অন্য জিনিস। কিন্তু দুটি জিনিস আছে। তাই এই দুটো জিনিস, আমরা সেখানে এই দুটি জিনিসের নিয়ন্ত্রক দেখতে পাই, সজীব এবং র্নিজীব। তাই আমাদের এখন জিজ্ঞাসা করতে হবে এই দুই জিনিসের উৎস কোথায়, সজীব এবং র্নিজীব, অবস্থান কোথায়? অবস্থান শ্রীমদ্ভাগবতমে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, জন্মাদাস্য যতো অন্বয়াৎ ইতোরতো চ অর্থেশু অভিজ্ঞ (শ্রী.ভা.১.১.১)
এই হচ্ছে ব্যাখ্যা। সবকিছুরই মূল উৎস হচ্ছে অভিজ্ঞ। কিভাবে? আন্বয়াৎ ইতোরতো চার্থেষু। যদি আমরা কিছু সৃষ্টি করি, আমি জানি সবকিছু, সব বিবরণ। আন্বয়াৎ, সরাসরি বা পরোক্ষভাবে, আমি জানি। যদি আমি কিছু বানাই ... ধরুন আমি যদি কিছু বিশেষ রান্নার কথা জানি, তাহলে আমি কিভাবে এটি করতে হয় তা সব বিস্তারিত জানি। এটা মূল। সুতরাং সেই মূল হচ্ছে কৃষ্ণ। কৃষ্ণ বলেছেন, বেদাহং সমতীতানিঃ(ভ.গী.৭.২৬)" আমি সবকিছু জানি-অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যত।" মত্তঃ সর্বং প্রবর্ততে। অহমাদির্হি দেবানাং (ভ.গী. ১০.২) সৃষ্টি তত্ত্ব অনুযায়ী ... না তত্ত্ব, আসলে। ব্রহ্মা, বিষ্ণু,মহেশ্বর। তাই এগুলি দেবতাগণের মূলনীতি। সুতরাং বিষ্ণু হচ্ছে মূল। অহমাদির্হি দেবানাং। প্রথম সৃষ্টি মহা বিষ্ণু, তারপর মহা বিষ্ণু থেকে গর্ভোদকশায়ী বিষ্ণু। গর্ভোদকশায়ী বিষ্ণু থেকে ক্ষীরোদকশায়ী বিষ্ণুর বিস্তার এবং তাঁর কাছ থেকে ব্রহ্মা এসেছে। ব্রহ্ম জন্মগ্রহন করেন পদ্মফুলের উপর গর্ভোদকশায়ী বিষ্ণু থেকে, তারপর তিনি রুদ্রকে জন্ম দেন। এই সৃষ্টি ব্যাখ্যা। তাই কৃষ্ণ বলেছেন অহমাদির্হি দেবানাং। তিনি বিষ্ণুর উৎসের কারন, শাস্ত্র বলছে, কৃষ্ণস্তু ভগবান স্বংয় (শ্রী.ভা.১.৩.২৮) মূল ব্যাক্তিত্ত্ব পুরুষ হচ্ছেন কৃষ্ণ। এবং কৃষ্ণের প্রথম বিস্তার বলরাম। তারপর তার থাকে এই চর্তুবূহ, বাসুদেব, সংকর্ষণ,অনিরুদ্ধ এই ভাবে। তারপর নারায়ণ। নারায়ন থেকে দ্বিতীয় চর্তুবূহ এবং দ্বিতীয় চর্তুবূহ থেকে সংকর্ষণ, মহা বিষ্ণু। এই ভাবে আপনি শাস্ত্রকে জানতে পারেন। প্রকৃতপক্ষে আপনি খুঁজে পাবেন, যেটা শাস্ত্রে বলা হয়েছে, কৃষ্ণস্তু ভগবান স্বংয়। এবং কৃষ্ণ বলেছেন, অহমাদির্হি দেবানাং (ভ.গী. ১০.২) অহং সর্বস্য প্রভবো মত্ত সর্বং প্রবর্ততে (ভ.গী. ১০.৮) এবং অর্জুন গ্রহন করেছেন পরম ব্রহ্ম পরম ধাম পবিত্রম পরমং ভবান (ভ.গী ১০.১২) তাই আমাদেরকে শাস্ত্রকে গ্রহণ করতে হবে। শাস্ত্র-চক্ষুসাৎঃ আপনাকে দেখতে হবে শাস্ত্র দিয়ে। এবং যদি আপনি শাস্ত্র শেখেন, তারপর আপনি দেখতে পাবেন কৃষ্ণস্তু ভগবান স্বংয়।
তাই এই কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলন মানে পরম পুরুষ ভগবানের কাছে মানুষ্য জাতিকে উপস্থিত করা। এই কৃষ্ণ ভাবনামৃত আন্দোলন। তাই আমরা এই আন্দোলন শুরু করি ১৯৬৬ সালে, নিবন্ধিত হয়। আমাদের রুপানুগ প্রভু ইতিমধ্যে ব্যাখ্যা করেছেন। সুতরাং এই আন্দোলনটি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করুন। একই, কৃষ্ণ, পাঁচ হাজার বছর আগে ঐতিহাসিকভাবে শুরু হয়েছিল। এবং তিনি এই আন্দোলন শুরু করেন তার শিষ্য অর্জুনের সহিত। তারপর চৈতন্য মহাপ্রভু, পাঁচশ বছর আগে, তিনি আবার একই আন্দোলন পুনর্জাগরিত করেন। তিনি কৃষ্ণ নিজে এবং এটা চলছে। এরকম চিন্তা করো না যে এটি তৈরী করা আন্দোলন। না। এটা অনুমোদিত আন্দোলন এবং কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিশ্চিত। মহাজন যেন গত স পন্থা (চৈ.চ.মধ্য ১৭.১৮৬) মহাজনদের শাস্ত্রে বর্ণনা করা হয়েছে। সুতরাং কৃষ্ণ ভাবনামৃত আন্দোলনে স্থির থাকুন এবং কৃষ্ণকে বুঝতে চেষ্টা করুন। আমাদের অনেক সাহিত্য আছে, অনুমোদিত সাহিত্য আছে এবং আপনার জীবন সাফল্য করুন। আপনাদের অনেক ধন্যবাদ।