BN/Prabhupada 0432 - যতক্ষণ তুমি এই পড়ছ, সূর্য তোমার আয়ু হরণ করতে পারবে না



Lecture on SB 2.3.17 -- Los Angeles, June 12, 1972

পাবকঃ। দহতি পাবকঃ (শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ২।২৩) আর আধুনিক বিজ্ঞানীরা, তারা বলছে যে সূর্যে কোন প্রাণী নেই। কিন্তু এটি সত্য নয়। সূর্য আসলে কি? এটি একটি জ্বলন্ত গ্রহ, এই যা। কিন্তু এই আত্মা আগুনের মধ্যেও বেঁচে থাকতে পারে এবং এটি একটি অগ্নিময় দেহ প্রাপ্ত হয়। ঠিক যেমন এখানে, এই পৃথিবীতে আমরা মাটির শরীর প্রাপ্ত হয়েছি। এটি দেখতে অনেক সুন্দর হতে পারে কিন্তু এটি হলো মাটি। প্রকৃতির দক্ষতা দ্বারা সহজেই। যেমন ভাবে আমরা এসেছি.. কারনধার আমাকে দেখিয়েছিল। প্লাস্টিকের কিছু গাছ। তারা সত্যিকারের গাছের মত করে প্লাস্টিকের গাছ তৈরী করেছিল। কিন্তু এটি গাছ নয়। অনুরূপভাবে, এই শরীরটি প্লাস্টিকের শরীরের মতোই। এর কোন মূল্য নেই। তাই ত্যক্ত্বা দেহম্। তাই যখন শ্রীকৃষ্ণ বলেন যে এই শরীর ত্যাগ করার পর.. কিন্তু এটি হলো প্লাস্টিকের শরীর। ঠিক যেমন আমরা তুলার শার্ট পাই, প্লাস্টিকের শার্ট পাই অথবা আরও অনেক রকম শার্ট পাই। তুমি এটি ত্যাগ করবে। এটি এই নয় যে তুমি মৃত্যুবরণ করবে। এটিও শ্রীমদ্ভগবদগীতায় ব্যাখ্যা করা হয়েছে। বাসাংসি জীর্ণানি যথা বিহায় (শ্রীমদ্ভগবদগীতা ২।২২) একজন যেমন পুরাতন বস্ত্র ত্যাগ করে নতুন বস্ত্র পরিধান করে, অনুরূপভাবে, মৃত্যু মানে এই প্লাস্টিকের শরীর ত্যাগ করা এবং অন্য আরেকটি প্লাস্টিকের শরীর গ্রহণ করা।

এটিই হলো মৃত্যু। আবার, এই প্লাস্টিকের শরীরের অধীনে তোমাকে কাজ করতে হয়। যদি তুমি সুন্দর একটি শরীর পাও, তাহলে তুমি সুন্দরভাবে কাজ করতে পারবে। যদি তুমি কুকুরের শরীর প্রাপ্ত হও, তাহলে তুমি কুকুরের মত কাজ করবে। এটি শরীর অনুসারে। তাই ত্যক্ত্বা দেহম্। শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন যে, "কেউ যদি আমাকে প্রকৃত রুপে বুঝতে পারে..." সুতরাং তোমারা কীভাবে বুঝবে? তোমরা যদি তাঁর সম্পর্কে শ্রবণ করো, তাহলে সহজেই তোমরা বুঝতে পারবে। তখন তোমরা বুঝতে পারবে। আর শ্রবণ করা খুব একটি কঠিন কাজ নয়। কিন্তু তোমাদেরকে অবশ্যই যথার্থ জ্ঞানী ব্যক্তির কাছ থেকে শ্রবণ করতে হবে। এটি হলো.. শতং প্রসজ্ঞান মম বিরহসম্বিদাঃ। যদি তোমরা কোন পেশাদার লোকের কাছ থেকে শ্রবণ কর, তাহলে সেটি কার্যকরী হবে না। শুনতে হবে অবশ্যই সাধুর কাছ থেকে, ভক্তের কিছ থেকে, ভক্তের শ্রীমুখ থেকে। ঠিক যেমন শুকদেব গোস্বামী মহারাজ পরিক্ষীত কে বলেছিলেন। তাই... এমনকি তোমরা যদি নিজে নিজে শুন, গ্রন্থ পড়, তোমরা তোমাদের জীবন রক্ষা করতে পারবে। তোমরা যদি লীলা পুরুষোত্তম শ্রীকৃষ্ণ অথবা শ্রীমদ্ভগবদগীতা অথবা শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য মহাপ্রভুর শিক্ষা পড়, তাহলে তোমরা জানতে পারবে.. যত তোমরা পড়তে থাকবে, সূর্য তোমাদের জীবন গ্রাস করতে পারবে না। সূর্যের পক্ষে তোমাদের জীবন গ্রাস করা সম্ভব নয়। সুতরাং তোমরা যদি প্রতিনিয়ত পড়, তাহলে সূর্যের আর তোমাদের জীবন গ্রাস করার সুযোগ কোথায়? তার মানে তোমরা অমর হয়ে যাচ্ছ। মানুষ অমর হওয়ার জন্য অনেক বেশি উদ্বিগ্ন । কেউ মরতে চায় না। প্রত্যেকেই জানে যে, "আমাকে মরতে হবে।" কিন্তু যদি এখানে, এখনই কোন বিপদ আসে, আগুন লাগে, সাথে সাথে তোমরা এই ঘর ত্যাগ করবে। কেন? কারন আমি মরতে চাই না। আমি মরতে চাই না। যদিও আমি জানি আমাকে অবশ্যই মরতে হবে। তারপরও, কেন আমি চলে যাচ্ছি? আমি জানি যে.. "ওহ, এখানে আগুন লেগেছে। আমাকে যেহেতু আজ অথবা কাল মরতে হবে। তাই আমাকে মরতে দাও।" না। আমি মরতে চাই না। সেজন্য আমি পালিয়ে যাই। এটি হলো মানসিকতা। তাই প্রত্যেকেই আজীবন বাঁচতে চায়। এটিই সত্য। সুতরাং যদি তুমি আজীবন বাঁচতে চাও, তাহলে তোমাকে কৃষ্ণভাবনামৃত গ্রহণ করতে হবে। এই কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলন এত গুরুত্বপূর্ণ এবং সুন্দর যে প্রত্যেকেই বাঁচতে চায়। তাই প্রকৃতপক্ষে, যদি তোমরা বাঁচতে চাও তাহলে কৃষ্ণভাবনামৃত গ্রহণ কর। এই শ্লোকটি এটি প্রমাণ করে। আয়ুঃ হরতি বৈপুম্সং উদয়েন অস্তং চ যেন আসৌ। সূর্য খুব সকালে উদিত হচ্ছে। যেহেতু এটি উদিত হচ্ছে, ধীরে ধীরে এটি তোমাদের জীবনকেও গ্রাস করছে।

এটিই। এটিই সত্য। যদি তোমরা সূর্যকে পরাস্ত করতে চাও.. সূর্য খুবই শক্তিশালী। এর সাথে সংগ্রাম করা খুবই কঠিন। কিন্তু তোমরা সংগ্রাম করতে পারবে। আর সেটি কিভাবে? সহজেই শ্রীকৃষ্ণ সম্পর্কিত কথা পড়ার মাধ্যমে। উত্তম শ্লোক বর্তায়ে। বর্তায়ে। উত্তম শ্লোক, শ্রীকৃষ্ণ। তাই এটি একটি সহজ পদ্ধতি। আজেবাজে কাছে তোমাদের সময় নষ্ট করা উচিত নয়। তাই শ্রীল রুপ গোস্বামী উপদেশ দিয়েছেন, অত্যহারাঃ প্রায়েশঃ চ প্রজ্বল্প নিয়মাগ্রহঃ। প্রজ্বল্পঃ।

অত্যহারঃ প্রায়েষশঃ চ
প্রজ্বল্প নিয়মাগ্রহঃ।
জন সঙ্গশঃ চ লৌল্যম্ চ
সদ্ বীর ভক্তিঃ বিনশ্যতি।
(উপদেশামৃত ২)

আমাদের ভক্তি জীবন শেষ হয়ে যেতে পারে, মানে আমরা হতভম্ব হতে পারি... যারা ভক্তি জীবনে আছে, কৃষ্ণভাবনামৃতে আছে, তারা ভাগ্যবান। এই ভাগ্য ছয়টি বিষয়ের মাধ্যমে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই খুব সতর্ক থাকতে হবে। সেগুলো কি? অত্যাহার মানে প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাওয়া, অথবা প্রয়োজনের অতিরিক্ত সংগ্রহ করা। আহার। আহার মানে সংগ্রহ করা। আমাদের কিছু অর্থ জমা করা প্রয়োজন, কিন্তু আমাদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্থ জমা করা উচিত নয়। এটি আমরা করতে পারি না। কারণ আমি যদি অনেক বেশি অর্থ পাই, তখন সাথে সাথে মায়া বলবে... "তোমরা কেন আমার জন্য খরচ করছ না?" হ্যাঁ। তাই প্রয়োজনের অতিরিক্ত সংগ্রহ করো না। তোমার যা প্রয়োজন তাই সংগ্রহ কর। অথবা একইভাবে, আহার মানে খাওয়া। প্রয়োজনের অতিরিক্ত খেয়ো না। প্রকৃতপক্ষে, আমাদের পরিমিত খাওয়া, ঘুম, বংশবৃদ্ধি এবং আত্মরক্ষার দৃষ্টিভঙ্গিতে আসতে হবে। এবং এটি সম্ভব নয় কারণ আমরা এই জড় শরীর প্রাপ্ত হয়েছি। কিন্তু যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করতে হবে।