BN/Prabhupada 0557 - আমাদের হরিদাস ঠাকুরের মতো কৃষ্ণভাবনামৃতে অত্যন্ত দৃঢ় হতে হবে
Lecture on BG 2.62-72 -- Los Angeles, December 19, 1968
তমালকৃষ্ণ: "এটি কেবল সত্যটি বোঝা এবং গ্রহণ করার ব্যপার। মৃত্যুর মাত্র কয়েক মুহূর্ত আগে শ্রীকৃষ্ণের কাছে আত্মসমর্পণের মাধ্যমে খট্বাঙ্গ মহারাজ এই উচ্চতর পদ অর্জন করেছিলেন। নির্বাণ মানে জাগতিক জীবনের পরিসমাপ্তি। ভগবান বুদ্ধের দর্শন অনুসারে এই ভৌতিক জীবনের পরে কেবল শূন্যতা থাকে। তবে শ্রীমদ্ভগবদগীতা ভিন্নভাবে শিক্ষা প্রদান করে। প্রকৃত জীবন এই জাগতিক জীবন শেষ হওয়ার পরে শুরু হয়। স্থুল মায়াবাদীর পক্ষে এটি জানা পর্যাপ্ত যে একজনকে তার জাগতিক জীবনযাত্রার অবসান ঘটাতে হবে। তবে যে ব্যক্তিরা আধ্যাত্মিকভাবে উন্নত, তাদের এই জাগতিক জীবনের পরে আর একটি জীবন রয়েছে। সুতরাং, এই জীবন শেষ হওয়ার আগে যদি কেউ সৌভাগ্যক্রমে কৃষ্ণভাবনাময় হন, তিনি অবশ্যই তত্ক্ষণাৎ ব্রহ্মনির্বাণের স্তরে পৌঁছে যান। ভগবানের ধাম এবং তাঁর ভক্তিমূলক সেবার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। যেহেতু উভয়ই পরম স্তরে রয়েছে, ভগবানের প্রেমময়ী সেবায় নিযুক্ত হওয়া মানে তাঁর চিন্ময় ধাম অর্জন করা। জড়জগতে ইন্দ্রিয়তৃপ্তির ক্রিয়াকলাপ রয়েছে, পক্ষান্তরে চিন্ময় জগতে কৃষ্ণভাবনাময় ক্রিয়াকলাপ রয়েছে। সুতরাং এই জীবনকালে কৃষ্ণভাবনামৃত অর্জন করা হল ব্রহ্মের তাৎক্ষণিক প্রাপ্তি, এবং যিনি কৃষ্ণ ভাবনামৃতে অবস্থিত তিনি ইতিমধ্যে ভগবানের ধামে প্রবেশ করেছেন। শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর শ্রীমদ্ভগবদগীতার দ্বিতীয় অধ্যায়কে সংক্ষিপ্তসার করেছেন পুরো পাঠে বিষয়বস্তু হিসাবে। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার বিষয়বস্তু হল কর্ম যোগ, জ্ঞান যোগ ... "
প্রভুপাদঃ জ্ঞান যোগ।
তমাল কৃষ্ণ: "... জ্ঞান যোগ এবং ভক্তি যোগ। দ্বিতীয় অধ্যায়ে কর্ম যোগ এবং জ্ঞান যোগ সম্পর্কে সুস্পষ্ট আলোচনা করা হয়েছে, ভক্তি যোগের এক ঝলকও দেওয়া হয়েছে। ইতি - শ্রীমদ্ভাগবদগীতার দ্বিতীয় অধ্যায়ের বিষয়বস্তু বিষয়ক ভক্তিবেদান্ত তাৎপর্য সমাপ্ত। "
প্রভুপাদঃ ধন্যবাদ। কোনও প্রশ্ন? হ্যাঁ।
তমালকৃষ্ণঃ আমি বরাবরই বিভ্রান্ত হয়ে পড়ি ... এখানে বলা আছে যে হরিদাস ঠাকুরের মতো শুদ্ধ ভক্ত মায়াদেবীর প্রলোভনের শিকার হবেন না, এমনকি ভগবান ব্রহ্মা, ভগবান শিবও এর শিকার হতে পারেন। আমি সবসময় ভাবতাম যে তারা প্রভুর শুদ্ধ ভক্ত।
প্রভুপাদঃ না, তারা শুদ্ধ ভক্ত, তবে তারা গুণাবতার। ঠিক যেমন ভগবান ব্রহ্মা এই ভৌতিক মহাবিশ্বের সর্বোচ্চ ব্যক্তিত্ব। তিনি সমস্ত জীবসত্তার জনক। সুতরাং তারা ... অবশ্য, আমরা যদি খুব সূক্ষ্মভাবে অধ্যয়ন করি তবে হরিদাস ঠাকুর হলেন, ভক্তিমূলক সেবায়, ভগবান ব্রহ্মার চেয়ে বৃহত্তর পদে। যদিও তিনি ভগবান ব্রহ্মার অবতার, ব্রহ্ম হরিদাস হিসাবে বিবেচিত হন। সুতরাং আমরা যখন ভগবান ব্রহ্মা এবং ভগবান শিবকে সেইভাবে মোহিত হতে দেখি তখন আমাদের সন্দিগ্ধ হওয়া উচিত নয়। আমাদের এই শিক্ষাটি গ্রহণ করা উচিত যে, যদি ভগবান ব্রহ্মা, ভগবান শিব মাঝে মাঝে মায়ার শিকার হয়ে যান, তাহলে আমাদের আর কি কথা? অতএব আমাদের খুব, খুব সাবধান হতে হবে। এমনকি ভগবান ব্রহ্মা ও ভগবান শিবের স্তরেও পতনের সম্ভাবনা রয়েছে, সাধারণ লোকদের বিষয়ে আর কী বলার আছে। অতএব হরিদাস ঠাকুরের মতো কৃষ্ণভাবনামৃতের প্রতি আমাদের খুব দৃঢ়ভাবে অনুরক্ত হওয়া উচিত। তারপরে আমরা মায়ার আকর্ষণকে খুব সহজেই কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হব। এটা বুঝতে হবে। এমন নয় যে "ভগবান ব্রহ্মা দেখিয়েছিলেন," যাকে বলা হয়, "দুর্বলতা। তিনি দুর্বল বা তিনি কম।" না। এটি আমাদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য।